মুর্খদের সাথে তর্ক করতে ভাল্লাগেনা,মুর্খ দের এভয়েড করতে ভাল্লাগে গত হয়ে যাওয়া বাংলাদেশের অন্যতম(অনেকের মতে সেরা)চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের "রানওয়ে" দেখলাম। আমি সাধারন দর্শকের চোখ দিয়ে এই ছবির রিভিউ লিখতে চাই। আসলে সিনেমা দেখা ছাড়াও আমি আরেকটা কাজ করি সেটা সিনেমা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা। কেন?কি জন্যে?কি কারনে? চলচ্চিত্রকার আমাদের এটা দেখাচ্ছেন। সেকারনেই আমি" রানওয়ে" দেখার পর থেকেই ভাবছিলাম কি দেখলাম?কেন দেখলাম?কি বলছেন তারেক মাসুদ সাহেব?কেন বলছেন?সেটা অবশ্য আলাদা কথা।
এখন রিভিউ করি আসুনঃ
সিনেমার প্রথম দৃশ্যই অসাধারণ। প্লেনের আওয়াজে সব কাপছে। আসলে মনে রাখার মত অপেনিং সিন। মিশুক মুনীর ও তারেক মাসুদ এভাবেই প্রায় পুরো সিনেমাতে দৃশ্যায়নে মুন্সিয়ানার ছাপ রেখেছেন। প্রতিদিন সকালে সবাই উঠছে ঘুম থেকে।
গরুর দুধ দোয়াচ্ছেন মা। সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য গূলোর একটি হল গুলতি তাক করে প্লেনের দিকে পাথর মারার দৃশ্য। যদিও সেটা আমার পারসপেক্টিভ থেকে সবচেয়ে মিসলিডিং সিন। সে কথায় পরে আসছি। প্রথমে সিনেমার পজিটিভ দিক গুলোই বলে শেষ করতে চাই।
প্লেন উঠানামার দৃশ্যগুলোর কথা আসলেই বলে শেষ করা যাবেনা। সম্পূর্ণ রকমের ভিন্ন ধাচের একটা দৃশ্য। চরের দৃশ্যগুলোও অসাধারন। বিভিন্ন এংগেলের বিভিন্ন ধাচের সব শট অসাধারন। যদিও ক্লিশে টাইপ হয়ে গিয়েছে আয়নার সিনটা।
মানে একটু “ভিন্নধারার ফিল্ম” হলেই নিজের সাথে কথা বলা লাগবে?যদিও বাংলাদেশের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ভালো লেগেছে। তবে spike lee এর “25th hour”http://www.imdb.com/title/tt0307901/
এ এডওয়ার্ড নর্টনের আয়নার সিনটার কাছে দেশী-বিদেশী সব নিজের সাথে কথা বলার সিনগুলো হাস্যকর লাগে। ওই ধরনের ইন্টেন্সিটি আমি কোথাও দেখিনাই। থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বারেও না। তবে তুলনা করা উচিত না আসলে।
তাও চলে আসলো কথায় কথায়। তবে অনেক লিমিটেশন নিয়েও অনেক ভালো একটা সিন। দৃশ্যায়ন সবমিলিয়ে শুধু মানানসই নয়,ক্রিয়েটিভ,ভালো ও চমতকার। আর সেই সাথে সংগীতের ব্যবহার। আবহ ও গান দুটোরই ব্যবহার চমতকার।
সিনেমার শেষে ক্রেডিটস এর সাথে যে গান “আগে যদি জানতাম”। সত্যই বেশ ভালো ব্যবহার সংগীতের পুরো ছবিতে। ভোরের আলো উঠার সময় এত চমতকার দেশীয় ক্ল্যাসিকালের ব্যবহার। সত্যই অসাধারন।
এবার অভিনয়ের ব্যাপারে বলি।
বাংলাদেশে ভালো অভিনেতা-অভিনেত্রী অনেক। তারেক মাসুদ সাহেব এই ছবিতে যাদের দিয়ে চরিত্রগুলি করিয়েছেন তারা আসলেই মানিয়ে গিয়েছেন। শুধু মানাননি তারা এক কথায় অসাধারন সব পারফরম্যান্স দিয়ে গিয়েছেন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। শুধুমাত্র রুহুলের চরিত্র করছিলেন যে ব্যক্তি তাকে নড়বড়ে লাগছিলো। বিশেষ করে ‘আমি ঘুমাবো’ বলে তার শুয়ে পড়ার ভংগি টা পুরোই মেকি লেগেছে।
সংলাপ প্রদানের সময়েও তাকে দুর্বল মনে হচ্ছিল খুব। কিন্তু সব মিলিয়ে তার অভিনয় আমার কাছে মানানসই মনে হয়েছে পুরো ছবি দেখার পর। তবে যেটা সমস্যা মনে হচ্ছিল সেটা আরিফ(জঙ্গী)এর অভিনয়ের দ্যুতির কারনে রুহুল কে খুজে পাওয়া যাচ্ছিলনা। ভয়ানক স্মুথ অভিনয় করেছেন আলী আহসান। পুর ছবিতেই অসাধারন লেগেছে তাকে।
তিশার ছোট দৃশ্যটাও ভালো ছিল। উর্দু ভাই ও চমতকার। সিরাজগঞ্জ এলাকার টান চমতকার ভাবে দিয়েছেন সংলাপে। মামার চরিত্রে জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় বরাবরের মতন অসাধারন। দাদাসহ অন্যান্য ছোটখাটো চরিত্ররাও ভালোই ছিলেন।
তবে মা এর চরিত্রে রহিমা আক্তার মনির অভিনয় পুরো ছবির সব মিলিয়ে সেরা। অসাধারন তার সবকিছুই। সবচেয়ে রিয়ালিস্টিক চরিত্র পুরো সিনেমার। অসাধারন এক্সপ্রেশন,সংলাপ প্রদান। কোন তুলনা হয়না এক কথায় উনার।
সবার সামনে মূল চরিত্রটাকে দূর্বল লাগছিল বারবার।
এবার সিনেমার কাহিনীর কথা বলি। প্রথমতই ইসলামকে উনি উনার দৃষ্টিভংগীতে তুলে ধরেছেন। সেটা নিয়ে কিছু বলা উচিত না। ধর্ম নিয়ে অনেক কচলাকচলি হচ্ছে,আর না।
অনেকে অনেক কিছু বলতে পারেন কিন্তু আমার মতে কাহিনী খুবই দূর্বল লেগেছে আমার কাছে। কিছুদিন আগে মুভিলাভারজ ব্লগে একজন “amazing spider-man” নিয়ে লিখেছিলেন স্পাইডারম্যানের যখন যা দরকার হচ্ছে সব পেয়ে যাচ্ছে সে। কি অদ্ভুত! “রানওয়ে” দেখার সময় আমার এরকম মনে হচ্ছিল। কত সহজে জংগী হয়ে গেলাম। আবার কত সহজে পুলিশ ধরে ফেলল আমাকে।
আসলেই আমার কাছে খুব হাল্কা মনে হয়েছে কাহিনীটা। মনে হচ্ছিল আমি কোন বই নয়,বইয়ের রিভিউ পড়ছি। গভীরে যেতে পারেনি কাহিনী আমার মতে। আর কিছু সত্য বিমুখ মনে হয়েছে গার্মেন্টস কর্মীদের জ়ীবনের উপরে যা দেখানো হয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে উনারা কত সুখে আছেন।
হাসিমুখে কাজ করছেন আর সিনেমা দেখছেন। ব্যাপারটা যে আসলে কেমন সেটা সবারই জানা। আর সাইবার ক্যাফেতে বসে থেকে এত সহজে জঙ্গী হয়ে গেলে কেউ দেশের সবাই জংগী হয়ে যেত। তারেক মাসুদ সাহেব জ্ঞানী-গুনী মানুষ উনি কেন এধরনের প্রতিচ্ছবি আকলেন বাংলাদেশের সেটা উনি যানেন। সিনেমা হলের বম্বিং টা এত হাল্কা ভাবে দেখালেন উনি।
আমি অবাক। বিভিন্ন সাব প্লট গুলোও বেশ দূর্বল মনে হয়েছে। রুহুল ও শিউলির প্রেম,শ্রমিকদের ইস্যু দুর্বল লেগেছে। আর আমাদের গোয়েন্দা বিভাগ ও পুলিশ বিভাগ এত ততপর কবে থেকে?এসব মিলিয়ে কাহিনী দূর্বল লেগেছে আমার।
সংলাপ আমার কাছে আহামরি কিছু মনে হয়নি।
মানে কাজ চালিয়ে নেওয়ার মত। কিছু সংলাপ ভালো ছিল। মা এর কিছু সংলাপ অসাধারন লেগেছে আমার কাছে। সব মিলিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়ার মতন। বিশেষ কিছু নাই সংলাপ গুলোতে।
হালকার উপর।
সব মিলিয়ে আমার রেটিং-৬/১০ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।