আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ তসলিমা নাসরিন। আমার দেখা অসাধারন মানুষদের মধ্যে একজন। একটা দেশের আত্মা হলো- সেই দেশের কবি সাহিত্যিকেরা। কিছু কুৎসিত মানুষের জন্য আমাদের দেশের আত্মা আজ আমাদের দেশে নেই। তসলিমা নাসরিন সত্য কথা বলতে কখনও ভয় পাননি।
সত্য কথা বলার জন্য আজ আমার প্রিয় মানুষটি দেশে নেই। তসলিমা নাসরিন কোন অপরাধ করেননি। সত্য কথা বলা কোন অপরাধ না। এই দেশের কিছু জঘন্য মানুষ অনেক বড় বড় অপরাধ করে মাথা উচু করে চলা-ফেরা করছে।
এই সরকারের উচিত যোগ্য সম্মান দিয়ে তসলিমা নাসরিনকে দেশে ফিরিয়ে আনা।
আর তার কাছে ভুল স্বীকার করা। তসলিমা নাসরিন আমাদের এই দেশকে অনেক ভালোবাসেন। দেশের জন্য তিনি প্রতিটা মুহুর্ত চোখের জল ফেলেন। এখানে একটা ব্যাপার আমি উল্লেখ করতে চাই- বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক নারী ভাস্কর্য শিল্পী(মেধাবী,দুঃসাহসী,রহস্যময়ী)নভেরা আহমেদ। ১৯৫৭ সালে হামিদুর রহমানের সাথে জলাধার-অলংকরনে বৃক্ষ ও পত্র পল্লবের সমারোহসহ তিনি যেভাবে শহীদ মিনারের প্রকৃত নকশা দিয়েছিলেন তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি।
নভেরা অভিমান করে সেচ্ছা নির্বাসন নেন। চলে যান প্যারিসে। ১৯৬০ সালের পর নভেরা আর বাংলাদেশে ফেরেননি। কারো সাথে কোন যোগাযোগও রাখেননি। এমনকি যখন ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার ভাস্কর্যে অবদান স্বরুপ নভেরা আহমেদকে একুশে পদক দিয়ে সম্মানিত করেন,তখন সেই পুরস্কার নিতেও তিনি দেশে আসেননি।
এই মহান শিল্পীর জন্ম ১৯৩০ সালে চট্রগ্রামে। )
যারা তসলিমা নাসরিনকে ঠিক করে জানেন না, বুঝেন না-এমনকি তার লেখা কোন বইও পড়েননি, তারাই বড় বড়(মিথ্যা)কথা বলেন। আপনারা আগে সত্য টা জানুন। তারপর মন্তব্য করুন। হুজুগে মাতবেন না।
এমনও হতে পারে সবাইকে অবাক করে দিয়ে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারও পেতে পারেন তসলিমা নাসরিন।
আমি একটা ব্যাপার বুঝি না,এই দেশে এখনও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলো না,তারা এখনও বড় বড় কথা বলে বেড়ান। আর তসলিমা নাসরিন...!তাহলে কি এই দেশে সত্য কথা বলা যাবে না?কবি সাহিত্যিক'রাই তো তাদের লেখায় দেশের ভালো মন্দ তুলে ধরবেন। সত্য কথা বললেই কি তাদের দেশ থেকে ভয় ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দিতে হবে?
যারা দেশকে সত্যিকারভাবে ভালোবাসেন,তারা সবাই চান তসলিমা নাসরিন ফিরে আসুক। তিনি এই দেশকে ভালোবাসেন।
দেশের মানুষকে ভালোবাসেন। তসলিমা নাসরিনের কিছু কবিতার লাইন পড়লেই বোঝা যায় তিনি দেশকে কত ভালোবাসেন। দেশের জন্য তার বুকের ভেতর কত হাহাকার।
"সারা প্যারিস ঘুমিয়ে যায়,জেগে থাকি সারারাত
সারারাত অপ্রকৃতিস্থ বালিকার মতো বৃষ্টিতে ভিজি,
আসলে,কেউ বোঝে না,মনে মনে ভিজি আমি বহু দূরে রেখে আসা গ্রহন ব্রহ্মপুত্রে।
কিন্তু হৃৎপিন্ডে হাত পড়তেই
হ্যা হৃৎপিন্ডে হাত পড়তেই স্পষ্ট বুঝলো ওরা,কিছু আছে এতে।
রাক্ষুসে দাঁতে নখে ছিঁড়ে দেখলো ভেতরে একটি দেশ,বাংলাদেশ নাম।
আসলে ভাত স্পর্শ করলে ভাত নয়,হাতের মুঠোয় থোকা থোকা বাংলাদেশ উঠে আসে।
বাংলাদেশ শোন,আমি ফিরবো।
আমি ফিরবো- ভালোবাসতে,হাসতে,জীবনের সুতোয় আবার স্বপ্ন গাঁথতে।
যদি মানুষ হয়ে না পারি,পাখি হয়েও ফিরবো একদিন।
সিগাল,তোমার ডানায় করে একদিন খুব ভোরে,চুপ চুপ করে,কেউ জানবে না,
নেবে আমাকে ভূমধ্যসাগর থেকে আমার বঙ্গোপসাগরে একদিন?
এই বাংলার জন্য যত জল আমার দুচোখে আছে দিলাম,
কোনওদিন একদিন যেন উর্বর হয় মাটি,যেন জন্ম নেয় মানুষ,
যেন দুর্ভাগা-বাংলা মানুষের বাসযোগ্য হয় কোনওদিন একদিন।
আমার দেশটি তাকিয়ে তাকিয়ে আমার যন্ত্রনা দেখছে আজ এক যুগেরও বেশি
দূরবীন লাগিয়ে দেখছে,বেজায় হাসছে,
আমার দেশ আগে এমন ছিল না।
আমার দেশে এককালে প্রান ছিল খুব।
এখন কবিকে মাঝরাত্রিরে নিশ্চিন্তে ফাঁসি দিয়ে ফেলে গোটা দেশ,
এক যুগেরও বেশি ঘুম নেই,উন্মাদের মতো দেশ দেশ করে দেশের কিনারে এসে
দেশকে স্পর্শ করতে দু'হাত বাড়িয়ে আছি।
আমি তবু দেশ বলে তোমাকে ডাকি,বড়ো ভালোবেসে ডাকি।
কিছু সত্য উচ্চারণ করেছি বলে আমি দেশদ্রোহী,
আর যা কিছুই থাক বা না থাক,দেশ বলে কিছু থাকতে নেই আমার।
আমার জীবন থেকে,তুমি দেশ,হৃদয় খুঁড়ে নিয়ে গেলে আমারই স্বদেশ। "
আমি চাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক আর তসলিমা নাসরিন দেশে ফিরে আসুক। আমি পারলে কবেই এই দুইটা কাজ করে ফেলতাম। আমি অপেক্ষায় আছি।
অপেক্ষা করতে আমার ভালোই লাগে। তসলিমা নাসরিনের জন্য এক আকাশ ভালোবাসা আছে থাকবে সারা জীবন। হে ঈশ্বর তুমি আর কত দিন চোখ বুঝে থাকবে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।