জীবনের মানে কি? ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। জীবনের লক্ষ্যটা কি? সেটাও কি কখনও বুঝে উঠেত পেরেছি। অফিসে নিজের চেয়ারে বসে বসে ভাবতে থাকে জন। এই ছোট্ট জীবনটাতে চাওয়া পাওয়া আর দেনা পাওনার অনেক হিসাব বাকি আছে জনের। কখনো কখনো জন ভাবে টাকাটাই বুঝি জীবনের সব।
আবার কখনো মনে হয় , না টাকা পয়সা আসলে কিছুই না।
জীবনের বড় এক জটিল ঘোরের মধ্যে সময় কাটাচ্ছে জন। নানা রকম সমস্যা যেন অক্টোপাশের মতো আকড়ে ধরে রাখতে চাই জনকে।
অফিস থেকে বেরিয়ে এসে নিচের লিটনের চায়ের দোকান থেকে একটা গোল্ডলিফ নেয় জন। কারওয়ান বাজারের এই জায়গটাকে মাঝে মাঝে মনে হয় পৃথীবির ব্যস্ততম জায়গার একটি।
রাত নামলেই এখানে নানা রকমের চরিত্র ঘোরাঘুরি করতে থাকে। জনের অফিস থেকে নিচে নামলে দেখে ক্লান্ত শ্রান্ত শ্রমিক কোনো রকমে একটা ডালার ভেতরে গোল হয়ে শুয়ে আছে। নানা রকমের মেয়েরা ঘোরে এখানে। কেউ তরকারি কুড়ায়। কেউ পানি টানে।
পান খেয়ে মুখ লাল টকটক করে রাখে পিঠা বিক্রির খালা। খালার এক ছেলে নেশা করে। কয়েকবার ছেলেকে পুলিশ ধরেও নিয়ে গিয়েছিল। অনেক টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে এনেছিল খালা। জনকে কাছে পেয়ে সে কি কান্না খালার! মাঝে মাঝে খালার সঙ্গে লিমন কথা বলে।
শুধু কথা, খালা কেমন আছেন? ব্যস। এতটুকুতেই খালা যেন নিজের ছেলের মতো মনে করে জনকে।
জন অনেক বড় চাকরি করে। অফিস থেকে তাকে গাড়ি দিয়েছে। কিন্ত এখনো জন নিজেকে এলিট শ্রেণীর কেউ ভাবতে পারে না।
জন যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো তখন থাকতো বাসাবোতে। টিউশনি করতো সারা ঢাকা শহর। সারা শহরই তো! মিরপরু স্টেডিয়ামের পাশের বিল্ডিংয়ে পড়াতো দুই ভাই আর এক বোনকে। সে অনেক আগের কথা। তখন রাতে হেটে বাসাবোর মেসে ফিরতো ।
ক্লান্ত জন যখন শাজাহানপুর কলোনির ভেতর দিয়ে রাতজাগা পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে হাটতো , নিজেকে ওদেরই একজন মনে করতো। শুধু ওর পেটে বিদ্যা আছে, গার্মন্টেসের মেয়েদের পেটে তা নেই। তফাত এটুকুই।
এখনো তাই ফাক পেলেই খেটে খাওয়া মানুষদের সঙ্গে কথা বলে নিজের মনটাকে হালকা করার চেষ্টা করে। এখনো হোটেল আল ছালাদিয়া রেস্টুরেন্টে খেতে বসে।
তবে ঢুকার আগে দেখে নেয় কেউ জনকে ফলো করছে কি না। অথবা কেউ জনকে পাছে চিনে ফেলল কি না। তাহলে যে কেলেঙ্কারি হয়ে যেতে পারে। হকি স্টেডিয়ামের মুখোমুখি মার্কেটের ঠিক পেছনে এমন অনেক খাবার হোটেল আছে। সেদিন জন দুপুরে খেতে গেল এমনই একটাতে।
দেখে দশ-বারো বছরের এক পিচ্চি পানি দিচ্ছে আর টেবিল মুছছে। জন বলে কিরে তোর নাম কি? রুবেল। লেখাপড়া বাদ দিয়ে কামে ঢুকছস? স্যার আজ পনের দিন হলো ঢাকায় এসেছি। ময়মনসিংহের আঞ্চলিক টান দিয়ে বলেল আইছুইন, খাইছুইন। শুনতে মজাই লাগছিল।
যা বলল তার সার সংক্ষেপ , বুড়ো সৎ বাবা তৃতীয় বিয়ে করার পর থেকেই আর বাড়িতে টিকতে পারছিল না রুবেল। মা মরেছে অনেক আগে। আপন এক ভাই ঢাকা থাকে। কিন্তু কোনো যোগাযোগ নেই তার সঙ্গে। মা শুধু মারে।
বাবা কিছু বলতে পারে না। ছেলের পক্ষ নিলে বাবাকেও গালমন্দ শুনতে হয়। অগত্যা বুড়া বাপই একদিন ভোর হওয়ার আগে হাতে একশ টাকা ধরায়ে দিয়ে বলে যেদিকে চোখ যায় চলে যা....। এক চাচার সঙ্গে এরপর ঢাকা চলে আসে রুবেল।
রুবেলের গল্প শুনতে শুনতে কখন যে ভাত শেষ সেটা বুঝতে পারেনি জন।
(চলবে.......) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।