তোশী আমাকে প্রায়ই অভিযুক্ত করছে, ‘তুমি তো আমাকে বকমোহনা নদীর পাড়ে বেড়াতে নিয়ে গেলে না!’
কী বলব আমি? কিন্তু মনে মনে একটা ভাবনা প্রশ্ন হয়ে আসে, ‘বকমোহনা নদীটা ঠিক কোন দিকে?’ আমার উত্তরটা গুছিয়ে উঠতে চেষ্টা করি। এরমধ্যেই, তোশী ফের প্রশ্ন ছুড়ে মারে, ‘তুমি না বললে একদিন জঙ্গলে নিয়ে যাবে?’
‘কোন জঙ্গলে?’
‘রাত্রিবেলার ছাদে, ছাদের জঙ্গলে’ তোশী আরও যুক্ত করে, ‘কেন, ছাদে বসেই না লেখা_'নগরীর মহৎ রাত্রিকে মনে হয় লিবিয়ার জঙ্গলের মতো!’
বললাম ‘ছাদে বসে লেখা, কে বলল?’
‘লাইফটাইম ক্লাস টুতে পড়া একটা ছেলে বলেছে:’
বুঝছি, তোশীকে ট্যাক্স দিতে হবে। বললাম, ‘তুমি কি এখন লিবিয়ার জঙ্গলে যেতে চাও?’
ঘাড় ঝাঁকায় তোশী, ‘হুম’।
বললাম, ‘এত রাতে এখন লিবিয়ান ভিসা পাবো কোথায়?’
........................তারপর...................
‘ওহ্-হ। ’ এ কী করছে মেয়েটি! ঘরে মাত্র আমরা দুজন, আমি আর তোশী।
তোশীর হঠাৎ কী হলো? এক ঝটকায় আবক্ষ-বস্ত্র উন্মোচিত করল, বলল, ‘শোনো, আমার বুকের মধ্যে সারি সারি সব দূতাবাস, কাম অন, লিবিয়ান জঙ্গলের ভিসা নিয়ে নাও’
আমি মুগ্ধ হতে পারি, বিস্মিত হতে পারি, বিমূঢ় হতে পারি। আমি লিবিয়ান ভিসার জন্য তোশীর দিকে এগিয়ে যেতে পারি। ভাবি, আমার বুকের মধ্যে কি কোনো দূতাবাস নেই? বুকটা কি এখনই জাদুঘর হয়ে গেল? বুকের মধ্যে কি শুধুই ভাঙা বাড়ি-খাট-পালঙ্ক-মুদ্রা জমে উঠেছে?
বকমোহনা নদীটা আছে, জীবনানন্দ দাশের কবিতায় আর আমার পাঁজরে! তোশীকে আমি কোথায় নিয়ে যাব? তার আগে, এখন, লিবিয়ার জঙ্গলে যেতে চাই।
তোশীর সঙ্গে আমার আলাপ, আট মাস আগের একদিন।
তোশীকে আমি শুনিয়েছি, আট বছর আগের একদিন।
কবিতাটি আমার মুখস্থ। পাঠ্যবইয়ের বাইরে আমার এই একটি কবিতাই মনে আছে, মনে থেকে।
তোশীর সঙ্গে ঝগড়া হয়ে গেল। কথা বন্ধ, দেখা বন্ধ। ‘বনধ' চলছে।
এরমধ্যেই, তোশীর একটা টেক্সট মেসেজ পেয়েছি, ‘চমৎকার! ধরা যাক দু’একটা ইঁদুর এবার’ এর মানে কী? বাইশ অক্টোবর আমাদের দেখা হবে। সারারাত একসঙ্গে থাকব। কারণ, আমার ফরেন অ্যাফেয়ার্সের সকল অফিস ওর বুকে, তোশীও প্রত্নপৃথিবীর স্মারক ভাণ্ডার খুঁজে দেখবে আমার বুকে কিংবা জীবনানন্দ দাশের কবিতায়। আর এটা তো খুবই ঠিক যে, আমি এবং তোশী, আমাদের দুজনেরই খুব জানার ইচ্ছা, কেন, ‘সারাটি রাত্রি তারাটির সাথে তারাটিরই কথা হয়!’
প্যারাফিন লণ্ঠনের আলোয় আমরা ওই কালবেলা অবেলার কবিকে জিজ্ঞেস করব, ‘অমরতা কাকে বলে?’
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।