আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

“বয়াতি ভাল নাই রে বয়াতি ভাল নাই”। অকালেই কি চলে যাবেন বয়াতি গানের বটবৃক্ষ আব্দুর রহমান বয়াতি ?

"আব্দুর রহমান বয়াতি"। “জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা এই ভবে” গাইতেছিলেন বিছানায় শুয়ে শুয়ে একেবারে কাঠভাঙ্গা গলায়। তবে এই গলা দিয়েই একদিন ধরতেন মরমী সুর। বাউল গান, জারি-সারি,লালন,হাসন সহ এক কথায় বাংলা আঞ্চলিক ও বাউল গানের প্রায় সকল শাখায় তার বিচরন। দেশ ও বিদেশের লাখো বাঙ্গালির মনে আদৌ গেথে আছেন এই বয়াতি।

তিনি তার জীবনে দিয়েছেন অনেক, এক কথায় উদার করে দিয়েছেন নিজেকে আর আমাদের সত্যিকারের যেই সংস্কৃতি সেটিকে করেছেন সমৃদ্ধ এবং পরিচিত সকলের কাছে। তবে আজ এই মানুষটি ভাল নেই অবস্থা খুবই শোচনীয় । হয়ত এই হতদরিদ্রের খবরটি আপনাদের চোখে পরেনি অনেক আভিজাত্ত আর নানা সমস্যার ভারে। একটি খাটে কম্বল গায়ে দিয়ে কাটে তার দিন, একেবারেই অবশ হওয়ার পথে তার বাম হাত এবং পা। হৃদরোগ এবং শ্বাসকষ্টে ভুগছেন প্রচন্দ্রভাবে ।

চোখে দেখতে পাননা প্রায় একেবারেই । ডাক্তার যেই অপারেশন করতে বলেছেন সেটা করতে পারছেন না টাকার অভাবে। বলা চলে তাদের জন্য এটা এখন স্বপ্ন। মিডিয়াগুলি নিসচুপ এই ক্ষেত্রে জানিনা কোন এক অজানা কারনে। হয়ত কারন হতে পারে যে এই গ্রামবাংলার বয়াতি আর বয়াতি গান দিয়ে আর যাই হোক বাণিজ্য সম্ভব হবে না বা তার কাছে আমাদের আর কিছু পাবার নেই।

হয়ত আমি ভুলও হতে পারি তবে মিডিয়া এর আগে যেই ভাবে বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের জন্য দাঁড়িয়েছিল সেই ভাবে এই ক্ষেত্রে তারা নিসচুপ ভুমিকা পালন করছে তা বোঝাই যাচ্ছে। হয়ত মিডিয়ার প্রতি আশা আমাদের কিছুটা বেশী তাই সেই দাবি থেকে একটু বেশী বলে ফেললাম। যাই হোক মিডিয়া হয়ত আমাদেরকে জানাতে পারতেন, তবে জানিয়ে কি বেশী একটি লাভ হত? মনে হয় না। কারন মানুষ যে আজ বড়ই পাষাণ। আব্দুর রহমানের ছেলে জানান বিভিন্ন সময় সবাই পাশে দাঁড়িয়েছে কিন্তু পড়ে সেটা চালিয়ে যেটা পারেননি।

সজল চোখে বলেন যে ডাক্তার বলেছে তার পিতাকে যদি বিদেশে নেয়া সম্ভব হত একটু উন্নত চিকিৎসা দেয়ার জন্য তাহলে হয়ত আরও কিছু দিন বাচে থাকতেন এই নিঃস্বার্থ মানুষটি। কিন্তু একজন বয়াতির ছেলের আর্তনাদ কি আমাদের উচুতলার মানুষের কানে পৌঁছুবে? রাখেন উচুতলার মানুষ আপনার আমার মতন মধ্যম তলার মানুষগুলি কি এগিয়ে আসবে ১০০টা টাকা নিয়ে? হয়ত কিছু আসবে তবে এই রকম কি ১০০০০ জন মানুষ পাবেন আপনি? এখন কথা হল কেন দিব? পরকাল কেউ দেখেনি বয়াতিও জানেনা তার কি হবে মরলে পরে। তবে আমাদের এই চেষ্টা যদি দেখে যেতে পারেন আর সেই কল্যাণে যদি আর কয়টা দিন বেশী বাচতে পারে তাহলে হয়ত মরার সময় তার গলায় দুঃখ আর গ্লানির বদলে আনন্দের সুর থাকবে। একবার চিন্তা করেন ভাই স্বার্থের চিন্তায় আমরা যেখানে এতই মগ্ন যে সব কিছুই এর চিন্তা থেকেই করি আর সেখানে এই মানুষটি ভালবেসেছেন শুধুই গানকে। সংস্কৃতির চর্চা করে গেছেন সাধকের মতন কোন কিছু পাওয়ার চিন্তা করেননি আর এখানেই বয়াতি করেছেন ভুল।

আসুন না এগিয়ে যাই একটু। আমার সামর্থ্য নেই বয়াতিকে এত টাকা দেয়ার। তবে পরিমাণটা হয়ত আমার জন্য অনেক বিশাল তবে আমাদের দেশের এমন অন্তত দশ শতাংশ মানুষ আছেন যাদের একেকজনের জন্য আসলেই একজন আব্দুর রহমান বয়াতিকে বাঁচানো হাতের মুয়ার মতন। আর এমন অন্তত পঞ্চাশ ভাগ মানুষ আছি আমরা যারা যদি একটু একত্রিত হই তাহলে হয়ত “বয়াতি” বাচবে । মানবতার টানে মানুষ মাননিক বলেই সে মানুষ।

তাই শুধু এতোটুকুই বলবো “বয়াতি ভাল নাই রে বয়াতি ভাল নাই” ।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।