আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টেনশানে গলা শুকাইয়া আসতাছে। এক পোস্টে এত ভুল

inside you're ugly ugly like me শফিক সাহেবের আজ খুব দুখের দিন। তেরো বছর আগের এই দিনে তার স্ত্রী মারা যান। কিন্তু শফিক সাহেবের স্মৃতিতে বোধহয় এতদিনে ধূলার স্তর অনেক পুরো হয়েছে। তাকে যতটা দুঃখিত হওয়া উচিত তিনি ততটা দুঃখিত নন। বরং অন্যান্য দিনের চেয়ে তাকে আজ একটু বেশীই ফুরফুরে মনে হচ্ছে।

তার সামনে একটা খবরের কাগজ। এ বাড়িতে সাধারনত খবরের কাগজ রাখা হয় না। কিন্তু বিশেষ বিশেষ উপলক্ষে আনানো হয়। যেমন পহেলা বৈশাখ, এক জানুয়ারি ইত্যাদি। কাগজ পড়ার মত কেউ নাই বলেই রাখা হয় না।

আরো একটা উপলক্ষে খবরের কাগজ আনা হয়। তা হল প্রাইজবন্ডের ড্র। শফিক সাহেবের কাছে ২১৬টা প্রাইজবন্ড আছে। প্রত্যেকবার ড্রয়ের পর এগুলো তিনি মিলিয়ে দেখেন। এই সময়টাতে তার চোখ চিকচিক করতে থাকে।

দেখা পর্ব শেষ হয়ে গেলে তিনি গোমড়া গোমড়া মুখ করে বসে থাকেন। কোন নাম্বার মিললো নাকি জিজ্ঞেস করলে আলতোভাবে মাথা নাড়েন। যেন প্রাইজবন্ডের নাম্বার না মিলাতে তার বিরাট পাপ হয়ে গেছে। এই সময় নিতু বলে, মন খারাপ করো না বাবা। দেখো পরেরবার ঠিকই মিলবে।

নীতু শফিক সাহেবের বড় মেয়ে। তার বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নীতুর শরীরে ভয়ংকর একটা অসুখ বাসা বেঁধেছে। ডাক্তাররা অনেক চেষ্টা করেও অসুখটা ধরতে পারছে না। তবে শফিক সাহেবের ধারনা অসুখটার নাম নীতু ঠিকই জানে।

তার কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছে। খোকাও জানার কথা। কিন্তু কোন এক অদ্ভূত কারণে খোকা তার বাবার সাথে কথা বলে না। তের বছর আগে এই দিন থেকে আজ পর্যন্ত খোকা একটিবারের জন্যও শফিক সাহেবের সাথে কথা বলেন নি। কারণটা যে কি শফিক সাহেব একটু হলেও আঁচ করতে পেরেছেন।

[[খোকা কে তা জানতে হলে আগের দুইটা পোস্ট দেখতে হবে]] শফিক সাহেব খবরের কাগজে চোখ বুলাচ্ছেন। কিন্তু এত মনোযোগ দিয়ে দেখার মত কি আছে কে জানে? আজকে কি প্রাইজবন্ডের রেজাল্ট আসছে? নীতু চা নিয়ে এলো। -অত মনোযোগ দিয়ে কি পড় বাবা? -নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। -ও আচ্ছা। শফিক সাহেব চায়ে চুমুক দিয়ে মুখ বিকৃত করে রাখলেন।

যেন এমন জঘন্য চা কখনো খান নি। নীতুর অবশ্য তাতে কোন ভাবান্তর হল না। কারণ এইটা শফিক সাহেবের ডেইলি রুটিনের একটা অংশ। প্রতিদিনই এমন দেখে নীতু একদিন ইচ্ছা করেই খুব বাজে চা বানিয়ে নিয়ে এসেছিল। চিনির বদলে চায়ে ছিল হালকা লবণ।

আশ্চর্যের ব্যাপার ঐদিনই শফিক সাহেব খুব তৃপ্তি করে চা খেলেন। এরপর থেকে এই নিয়মে চা বানানোর নির্দেশও জারি করা হয়েছিল। কোন এক অজ্ঞাত কারনে ঐ নির্দেশ আর বাস্তবায়িত হয় নি। সব বাবারাই মেয়ের বানানো চা খুব তৃপ্তি করে খায়। শফিক সাহেবই বোধহয় পৃথিবীর একমাত্র বাবা যার কাছে মেয়ের হাতের চা খুব জঘন্য মনে হয়।

-বাবা বাসায় বাজার নাই। তোমাকে একটু কষ্ট করতে হবে। চা শেষ করে বাজারের দিকে রওয়ানা দিলেন শফিক সাহেব। মুখ থেকে বিকৃতভাবটা তখনো যায় নি। পথে দেখা হল এলাকার চেয়ারম্যানের সাথে।

এই টাইপ লোকেদের মধ্যে কোন ভ্যারিয়েশন থাকে না। সবগুলো একই রকমের খারাপ হয়। কেউ বেশী খারাপ আবার কেউ তার চেয়ে আরেকটু বেশী খারাপ। পার্থক্য এতটুকুই। কিছুদিন আগে এই চেয়ারম্যান নীতুর জন্য একটা বিয়েয় সম্বন্ধ নিয়ে আসে।

বর চেয়ারম্যানের ভাগিনা। নীতু অসুস্থ জেনেও তারা নীতুকে ঘরের বউ করে নিতে চায়। তাদের চাহিদা সামান্য। চার লাখ টাকা আর একটা মোটর সাইকেল। এরপর থেকে চেয়ারম্যানকে এড়িয়ে যাওয়ারই চেষ্টা করে একরকম।

কিন্তু আজকে একেবারে সামনে পড়ে গেল। চোখাচোখি হল কিন্তু কোন এক কারণে কেমন আছেন, ভাল আছি ছাড়া আর কোন কথা হলো না। বাজার থেকে ফেরার পরই নীতুকে ভালোমতন রান্নাবান্না করতে বলা হলো। শফিক সাহেবের ধারণা, আজ মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী হিসাবে খোকার একবার আসা উচিত। (আপাতত pause) খোকা কি আসবে? তার কি আসা উচিত? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।