আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে একদিন।

আমার আগের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর নতুন এমআরপির জন্য গতবছরের নভেম্বরে আবেদন করি। কিন্তু ১ বছর হয়ে যাওয়ার পরও আমার কাছে কোনো ম্যাসেজ আসে নাই। মাঝে মাঝে আমি ম্যাসেজ পাঠাই, কিন্তু আমাকে জানানো হয়, এখনো কাজ চলছে আমার পাসপোর্টের। মনে ক্ষীণ সন্দেহ ছিলো, পুলিশ ভেরিফিকেশন নিয়ে ঝামেলা হতে পারে, তাই আরো বেশি চুপ করে রইলাম। এই মূহুর্তে আমার পাসপোর্টের জরুরী কোনো দরকার নাই, তাই ঘুষছাড়া কাজটা হয় কিনা, সেজন্য অপেক্ষা করছিলাম।

শেষপর্যন্ত এই সপ্তাহে গেলাম পাসপোর্ট অফিসে খোজ নেওয়ার জন্য। শেষ পর্যন্ত জানা গেল, আমার নবায়ন ফি জমা দিতে হবে। আগের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে এমআরপির ৩০০০ টাকার সাথে ৬০০ টাকা নবায়ন ফি দিতে হবে। অথচ গতবছর যখন আমি কাগজপত্র জমা দিচ্ছিলাম, তারা সব চেক করে ভেরিফাইড করেছিলো, তখন কিছু জানায় নাই আমাকে। যাই হোক, সবই আমার নিয়তি মেনে নিয়ে পরদিন আবার গেলাম ব্যাংকে ৬০০ টাকা জমা দিতে।

দেশে মনে হয় পরোপকারী মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। গতকাল পাসপোর্ট অফিসে গেলাম, সোনালী ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার জন্য লম্বা লাইন। অবশ্য খুব বেশি লম্বাও না। ঢাকা শহরে যারা বসাবাস করেন, তাদের জন্য এই লাইনটা খুবই সামান্য। অনেক সময় বাসের জন্য অপেক্ষার লাইনটা আরো লম্বা হয়।

তারপরও বেশ কয়েকজন মানুষ একটু পর পর কানের কাছে এসে বলতে লাগলো, '' স্যার, আপনার কাজটা আমি করে দেই, টাকাটা ব্যাংকে গিয়ে জমা দিয়ে আসি? আপনাকে লাইনে দাড়াতে হবে না। '' আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আমার কাজ তুমি করলে তোমার কি লাভ? তারপর জবাব, '' ২০০ টাকা লাগবে। '' আমি বললাম, সেই ২০০ টাকা না হয় আমি নিজেই ইনকাম করি। এরপরে আরো ৫ জন আসলো একটু পর পর, সবারই একই অনুরোধ, ''এই টাকাটা আমি জমা দিয়ে আসি?'' একজন বললো, ১০০টাকায় কাজটা করে দিবে। সে ১০০ টাকা বলাতে অন্য ৩জন আবার তাকে চোখ রাঙ্গালো।

কয়েকজন মহিলাও আছে এই দালালদের দলে। পুরো একটা সিন্ডিকেট করে রেখেছে, তারাই লাইন কন্ট্রোল করছে, যাতে সিরিয়াল ভেঙ্গে কেউ আগে যেতে না পারে, আবার তারাই ১০০-২০০ টাকা নিয়ে গ্রাম থেকে আসা বোকাসোকা মানুষদের মাথায় ঘোল ভেঙ্গে খাওয়াচ্ছে। অথচ লাইনে দাড়িয়ে ব্যাংকে টাকা জমা দিতে আমার সময় লাগলো সাকুল্যে ৪৫ মিনিট। পাসপোর্ট অফিসে যারা পাসপোর্ট করাতে আসেন, তাদের একটা বড় অংশই গ্রাম থেকে আসা মানুষজন কিংবা অনগ্রসর এলাকা থেকে আসা। তারা ঠিকমতো ফরমের নিয়মকানুন বুঝতে পারে না।

নতুন পাসপোর্ট বানাতে গেলে এই নিয়ম ঐ নিয়ম নানা দোহাই দিয়ে সাধারণ মানুষদের ধাঁধায় ফেলছে দালালরা। ডিজিটাল পাসপোর্ট এর আগে দালালরা বলতো, ৭দিনে পাসপোর্ট বের করে দিবে, ৫০০০-১০,০০০ টাকা লাগবে। আর এখন বলে ঠিকমতো জমা করে দিবে, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স যদি ঠিক থাকে, তবে ৫০০০ টাকা দালালকে দিতে হবে। এই টাকাটা পুরোই জলে ঢালার মতো, কারণ ডিজিটাল পাসপোর্টে সবকাজ নিজেকেই করতে হয়, দালালের করার কিছু থাকে না। শুধু ফরম ফিলআপ আর সাপোর্টিং ডকুমেন্ট ঠিক আছে কিনা, সেটা দেখা ছাড়া দালাল আর কিছুই করতে পারে না।

যদিও পাসপোর্ট এর ফরম জমা দেওয়ার সময় পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারীরা সবকাগজ ভেরিফাই করে দেখে। বড় সমস্যা হচ্ছে, বড় সংখ্যক মানুষ ফরম ফিলআপ করতে পারে না। কি লিখবে বুঝতে পারে না। পাসপোর্ট করাতে গেলে কোন কাজের পর কোন কাজ করতে হয়, সেটাও অনেক বুঝতে পারে না। পাসপোর্ট অফিসে কিভাবে ফরম ফিলআপ করতে হয়, এর জন্য কোনো ব্রিফিং সেশন চালু করলে ভালো হতো।

প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে ২-৩টা সেশনে নিয়মাবলী বুঝিয়ে বলা যেতে পারে। তাহলে নতুন যারা পাসপোর্ট বানাতে যায়, তাদের কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়, দালালদের উৎপাতও কমে যাবে। ১০০ স্কয়ারফিট খালি জায়গা, ১-২জন মানুষ আর একটা মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর হলে এই কাজটা খুব সহজেই করা যেতে পারে। দালালরা পুরো পাসপোর্ট অফিস ভবনের চারপাশে গিজগিজ করছে। পাসপোর্ট অফিসের কলংক এই দালালরা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.