বহু গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুম না হলে বা অনিদ্রা হলে মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে। অন্য কথায় ঘুম আপনাকে যে কোনো প্রকার অসুস্থতা থেকে শতকরা ৫০ ভাগ সুস্থ করে তোলে।
রাতে ভালো ঘুম হওয়ার সাথে ভালো স্বাস্থ্যের একটা বিষয় জড়িত। যাদের ঘুম হয় না তারা কখনোই দাবি করতে পারেন না তারা সুস্থ আছেন। বহু গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুম না হলে বা অনিদ্রা হলে মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে।
অন্য কথায় ঘুম আপনাকে যে কোনো প্রকার অসুস্থতা থেকে শতকরা ৫০ ভাগ সুস্থ করে তোলে। আমরা এই প্রবন্ধে ঘুম নিয়ে নানান সমস্যা এবং এর পর্যায়, নানা প্রশ্নোত্তর এবং গুরুত্বপূর্ণ সমাধান নিয়ে আলোচনা করবো। আমার মনে হয় পাঠকদের যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে এই প্রবন্ধ আদোপান্ত পাঠের পর তারা কিছুটা হলেও আশ্বস্ত হবেন।
ঘুমহীন রাত কিংবা দিনের পর এই প্রবন্ধ পাঠে আশা করা যায় আপনাদের অনেকেই উপকৃত হবেন।
কেন ঘুমের প্রয়োজন হয়?
ঘুমের প্রয়োজনীয়তা প্রতি ২৪ ঘন্টায় অন্তত একবার উপলব্ধি করতে হয়।
এটি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এটি স্বাস্থ্য এবং আয়ু বাড়াতে সাহায্য করে। অনেক তত্ত্বই উপস্থাপিত হয় যে কেন ঘুম দরকার। তবে সঠিকভাবে বলতে গেলে ঘুম ছাড়া মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য টিকে থাকতে পারে না।
কতটুকু ঘুম প্রয়োজন?
একেকজনের শরীরের চাহিদার ওপর এটা নির্ভর করে।
কেউ কেউ আছেন যাদের দিনে রাতে পাঁচ ঘন্টা ঘুমই যথেষ্ঠ বলে মনে করেন। আবার কারো কারো ১৫/১৬ ঘন্টা না ঘুমালে শরীরে এবং মনে অসুস্থতার সৃষ্টি হয়। তবে ভালো নিশ্ছিদ্র ঘুম হলে আট ঘন্টাই যথেষ্ঠ এবং এতোটুকুই যে কারও শরীরের জন্য ভালো।
কি ধরনের ঘুম প্রয়োজন?
এটাও একেক জনের শারীরিক এবং মানসিক চাহিদার ওপর নির্ভর করে।
রাতের ভালো ঘুম
রাতের ঘুম নিশ্ছিদ্র হওয়া বাঞ্ছনীয়।
তা না হলে পরবর্তী দিনে আপনি শারীরিকভাবে নিজেকে অবসন্ন ভাবতে পারেন।
বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন রকমের ঘুমের অভ্যাস থাকে। অনেকেই এবং অধিকাংশই ৮ ঘন্টার দৈনন্দিন ঘুমকে উপযুক্ত এবং যথেষ্ঠ মনে করেন। কিন্তু্তু আপনার যতক্ষণ প্রয়োজন ততোক্ষণ ঘুমানোই কিন্তু্তু আদর্শ।
রাতের ভালো ঘুম মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।
তা না হলে দিনের বেলায় যে কোনো কাজ কর্মে আপনি মনোযোগী হতে ব্যর্থ হবেন। কেন না ঘুম না হলে মানসিক উদ্বিগ্নতা বেড়ে যায়। কাজেই রাতের ঘুমের প্রতি যত্নশীল এবং সতর্ক থাকা উচিত।
সাধারণ সমস্যা এবং ঘুমের অসুবিধা
অনেক কারণেই আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এই সমস্যাগুলোর যে কোনো ত্রুটিতে ভুগলেও আপনার ঘুমের অসুবিধা হতে পারে এবং তখনই আপনার উচিত হবে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া।
উদ্বিগ্নতা
এটিতে আপনার ঘুমের মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। অনেক রাত আপনার হয়তো নিদ্রাহীন গেছে এই উদ্বিগ্নতার জন্য।
মানসিকতা
এর ফলেও ঘুমের মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
ব্যথা
যে কোনো প্রকার ব্যথার চাপে আপনার ঘুম নাও হতে পারে। এটা শরীরের যে কোনো প্রকার অসুখজনিত কারণেও হতে পারে।
নাকডাকা
আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনী যদি নাক ডাকে এতে করেও আপনার ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
প্রোস্টেটের সমস্যা
প্রোস্টেটের সমস্যা হলে ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন হয় কেননা কিছু সময় পর পরই প্রস্রাবের বেগ হতে পারে। এতে করেও ঘুমের সমস্যা হয়।
দাঁতের সমস্যা
দাঁত ওঠাজনিত বা পড়ে যাওয়াজনিত কোনো সমস্যায় পড়লে ঘুমের ব্যাঘাত হওয়া স্বাভাবিক
দুঃস্বপ্ন
অনেক সময় ঘুমের ভেতর দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে গেলে পরবর্তীতে ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
মাংসপেশির সংকোচন
মাংসপেশিতে খিঁচুনি বা টান ধরলে অনেক সময় ঘুমের সমস্যা হয়।
পা নাচানো রোগ
এই রোগের রোগীরা ক্রমাগত পা নাচিয়ে অভ্যস্ত। তারা বিছানায় শুয়েও এই কাজটি করতে থাকেন যার ফলে ঘুমের নিদারুণ অসুবিধা ঘটে।
বিছানায় প্রস্রাব করা
অনেকে বিছানায় প্রস্রাব করার ভয়ে আতঙ্কিত থেকে ভালো করে ঘুমাতে পারে না। ফলে ঘুমজনিত সমস্যায় সে আক্রান্ত হতে পারে।
অনিদ্রা কি?
কোনো কোনো সময় সবারই ঘুমের একটা সমস্যা চলে।
প্রায়শই এটা সাধারণ এবং ছোট ঘটনা বলে এটি তেমন গুরুত্ব পায় না। কিন্তু্তু ক্রমাগত এই সমস্যা চলতে থাকলে এটি ক্রনিক হয়ে দাঁড়ায় এবং তখন এটি অসুখে পরিণত হয়। ক্রমাগত ঘুম না হওয়ার এই অসুখের নাম ইনসমনিয়া বা অনিদ্রা।
মূলত তিন ধরনের অনিদ্রা রয়েছে- স্বল্পকালীন, ক্ষণস্থায়ী এবং ক্রনিক।
স্বল্পকালীন অনিদ্রার নানা কারণ দায়ী।
যেমন- ডিভোর্স, চাকরিতে সমস্যা, গুরুত্বপূর্ণ অসুস্থতা, টাকার সমস্যা বা কোনো আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবের মৃত্যুজনিত কোনো শোকের জন্য ঘুম না হওয়া।
আবার ক্ষণক্ষায়ী অনিদ্রার জন্য ঘুমের সময় বা স্থানের কিছু পরিবর্তন, অধিক চিত্তচাঞ্চল্য বা অসুস্থতা দায়ী। আর ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি অনিদ্রার জন্য নানান ডাক্তারি কারণ জড়িত থাকে।
জীবনযাত্রার বিষয়ে
অনেকে প্রচুর পরিমাণে মদ্যপানে অভ্যস্ত থাকে যার ফলে অনিদ্রার সৃষ্টি হয়। অনেক সময় ক্যাফেইন গ্রহণ করলেও রাতে ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারে।
পরিবেশগত বিষয়ে
কোলাহল এবং প্রতিবেশীর টেলিভিশন বা গানের আওয়াজ, উচ্চশব্দে গাড়ি চলাচল ইত্যাদি কারণে ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
শারীরিক বিষয়ে
আর্থ্রাইটিস, বুকজ্বালা, নারীদের ঋতুকাল, মাথাব্যথা ইত্যাদি শারীরিক সমস্যাতেও ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে।
মনোদৈহিক বিষয়ে
মানসিক অবসাদ ঘুম না হবার প্রধান কারণ। এটি একটি মনোদৈহিক সমস্যা। মানসিক অবসাদ ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
অনিদ্রার চিকিৎসা কেন করা উচিত?
ক্রমাগত ঘুম না হতে থাকলে মানসিক এবং শারীরিকভাবে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন। মাঝে মধ্যে এই অবস্থা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। কাজেই অনিদ্রার চিকিৎসা অতি সত্বর করানো উচিত।
কখন আপনার ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত?
প্রত্যেকেই অন্তত রাতে আত্মতৃপ্তি নিয়ে ঘুমাতে চায়। ঘুম না হলে পরবর্তী দিনে যে কোনো প্রকার কাজে কর্মে মন বসানো সম্ভব নয়।
ওষুধের দ্বারাও অনেক সময় অনিদ্রা দূর করা যায়।
ডাক্তারের শরণাপন্ন হবার আগে আপনি আপনার দৈনন্দিন জীবনে ঘুমের সমস্যাজনিত পরিবর্তনগুলোর একটা তালিকা তৈরি করুন। পরবর্তীতে ডাক্তারের কাছে এই রিপোর্টটি দেখাবেন। এতে করে ডাক্তারের পক্ষে সুবিধা হবে আপনার অনিদ্রার কারণটি দ্রুত চিহ্নিত করা এবং এতে করে ডাক্তার অতি দ্রুত আপনার এই সমস্যাকে কাটিয়ে দিতে যথাসম্ভব চেষ্টা করতে পারবেন।
কিছু সাধারণ কর্মকান্ড যা আপনার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়
ব্যায়াম
ব্যায়াম শরীরের জন্য অবশ্যই ভালো।
কিন্তু্তু অনেকেই ঘুমের আগে ব্যায়ামে অভ্যস্ত থাকেন। যা আপনার ঘুমকে বিপর্যস্ত করতে পারে।
ক্যাফেইন পান
ক্যাফেইনে যে উত্তেজক পদার্থ রয়েছে তা ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।
এ্যালকোহল
এই অভ্যাসে আপনি অভ্যস্ত থাকলে আপনার ঘুমে সমস্যা হতে পারে।
বিষাদ
দিনের যে কোনো সময় যদি রাতে ঘুমাবার আগে আপনি বিষাদে আক্রান্ত হন তাহলে নিশ্চিত আপনার ঘুমের বারোটা বেজে যাবে।
ধুমপান
এর ফলেও ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
ওষুধ সেবন
হাঁপানি বা এ জাতীয় কিছু অসুখ আছে যার জন্য প্রায় সারা বছর ওষুধ খেতে হয় এবং এ জন্য ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
ভ্রমণ
ক্রমাগত একস্থান থেকে অন্যস্থানে ভ্রমণের ফলে আপনার ঘুমের সমস্যা চাঙ্গা হতে পারে।
কাজের শিফট
যদি আপনার কাজের ধরন এমন হয় যে, এটি দিনে রাতে ঘুরে ঘুরে পরিবর্তিত হতে পারে। তবে আপনার ঘুমের স্থায়ী সমস্যা হবে।
অনিয়মিত ঘুমের ধরন
একটি নির্দিষ্ট ঘুমের ধরন থাকা উচিত। নতুবা ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারে।
অধিকক্ষণ বিছানায় কাটানো
ঘুম ছাড়াও অধিকক্ষণ বিছানায় শুয়ে থাকার দরুন ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
বারে বারে ঘড়ি দেখা
অনেকের অভ্যাস থাকে বিছানায় শুয়ে বারে বারে ঘড়ি দেখার। এই অভ্যাসের ফলে ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারে।
আপনার ঘুমানোর স্থান
আপনার ঘুমানোর স্থানের পরিবেশ হওয়া উচিত সুন্দর এবং স্বাভাবিক। অতিরিক্ত কোলাহল পূর্ণস্থানে ঘুমের সমস্যা হতে পারে। কেননা ঘুমের জন্য নিস্তব্ধতা দরকার। আবার ঘুমানোর স্থানে আলোর আধিক্যও ঘুমের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। অতিরিক্ত আলো চোখে লাগলে ঘুমে ব্যাঘাত হয়।
এছাড়াও যদি আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনীর ঘুম না হয় তবে সেটার প্রভাব আপনার ওপর পড়তে পারে। কেননা আপনার পাশের নির্ঘুম ব্যক্তির ঘুমের অপ্রতুলতা আপনাকেও মানসিকভাবে কিছুটা হলেও বিপর্যস্ত করে তুলবে।
ভালো ঘুমের জন্য কিছু ব্যবস্থা করুন
সঠিক ঘুমের সময় মেনে চলুন
ঘুমের আগে ব্যায়াম করবেন না
ক্যাফেইন এবং নিকোটিন বর্জন করুন
আপনার ওষুধ সম্পর্কে সতর্ক হোন
জীবনকে বিষাদমুক্ত ভাবুন
রাতের শিফটের কাজ পারলে ত্যাগ করুন।
রাতের ভালো ঘুমের জন্য তৈরি হোন
কিছু রিলাক্সেশন কৌশল আছে এবং কিছু মেডিটেশন আছে যাতে করে রাতে আপনার উপযুক্ত ঘুম হতে পারে।
স্নান
রাতে বিছানায় শুতে যাবার আগে স্নানের অভ্যাস রপ্ত করতে পারলে এটি আপনার জন্য সুফল বয়ে আনবে।
রাতের খাবার
রাতে খুব ভারী কিছু খাবেন না। হাল্কা স্ন্যাকস জাতীয় খাদ্যাভ্যাস তৈরি করুন। এতে ভালো ঘুম হবে।
ক্যাফেইন কিংবা এ্যালকোহল
এই দুটোই পুরোপুরি বর্জন করার চেষ্টা করুন। ঘুমের ব্যাপারে তবে অহেতুক টেনশন করতে হবে না।
পরিবেশ সুস্থ রাখুন
আপনার ঘুমের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ দরকার। ঘুমানোর পরিবেশ অবশ্যই পরিচ্ছন্ন এবং একই সাথে কোলাহলমুক্ত হওয়া উচিত।
বিছানায় যান, বাতি নেভান
বিছানায় গিয়ে ঘুমের ব্যাপারে ভয় পাবেন না। রাতের খাবারের অন্তত ৩০ মিনিট পরে বিছানায় যাওয়া ভালো।
ঘড়ির দিকে তাকাবেন না এবং ঘড়ির কাঁটার যেন শব্দ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
একটি নির্দিষ্ট আসনে শুয়ে পড়ূন। যেদিকে শুলে আপনার জন্য স্বস্তিকর মনে হয় সেদিকে শোন। এতে আপনি বেশি স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করবেন।
ঘুম, এটা কোনো স্বপ্ন নয়
দীর্ঘদিনের অনিদ্রা অনেকের মনে ভয়াবহ রকমের দুশ্চিন্তার সৃষ্টি করে। তারা একটু নিশ্ছিদ্র ঘুমের জন্য উতলা হয়ে পড়ে।
মনে রাখবেন, অধিকাংশ ঘুমের সমস্যাই সাময়িক। আপনি নিজের প্রতি একটু যত্নবান হলেই এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারবেন। ডাক্তারের কাছে পরামর্শ গ্রহণ করলে আপনি এ ব্যাপারে আরো বেশি জানতে পারবেন এবং আপনার কাছে ঘুমকে স্বপ্নের মতো মনে হবে না।
ঘুমের ব্যাপারে প্রথম পদক্ষেপ
নির্ঘুম রাতের পরে এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয় পরবর্তী দিনে কাজকর্মে সঠিকভাবে মন লাগাবেন। ঘুমের ব্যাপারে দু-একদিন একটু অনিয়মিত সমস্যা শুরু হতে থাকলে দেরি না করে উচিত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া।
ডাক্তারের সাথে আলাপ-আলোচনার সময় কোনো ফাঁক রাখার অবকাশ নেই। এতে আপনার সমস্যাই বরং বাড়বে। ডাক্তারকে সবকিছু খুলে বলুন। একটি তালিকা তৈরি করুন যাতে আপনার দৈনন্দিন জীবনযাপন প্রণালী ডাক্তার সহজে বুঝতে পারেন। এই তালিকাতে দেয়া তথ্যে ডাক্তার বুঝতে পারবেন আপনার সমস্যাটা কোথায়।
এতে করে তার পক্ষে আপনাকে পরবর্তী নির্দেশ দেয়া সহজতর হবে। কিছু কিছু কারণ রয়েছে যা ঘুমে খুব বেশি ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। যেমন-
ঘুমের অনিয়মিত অভ্যাস
নতুন চাকরি পাবার আনন্দ, কোনো শোকে কিংবা বিষাদ
হাঁপানি বা রক্তচাপের জন্য সারা বছর ওষুধ সেবন
ক্রনিক কোনো রোগের ব্যথা যা রাতে বেশি হয়।
জীবনযাত্রার পরিবর্তন
জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন বা বৈচিত্র্য ঘটিয়ে ঘুমের সাথে আপোস করা যেতে পারে।
ঘুমের আগে
মদ্যপান ত্যাগ করুন
ক্যাফেইন বর্জন করুন
বিকেলের দিকে বা সন্ধ্যায় চা এবং নিকোটিন গ্রহণ করবেন না।
বিছানায় যাবার প্রস্তুতি
কোলাহলমুক্ত, অন্ধকার ঠান্ডা ঘর বেছে নিন।
বেডরুমকে শুধুমাত্র ঘুমানো এবং যৌনমিলনের জন্য ব্যবহার করুন।
নিয়মিত বিছানায় যাবার একই সময় নির্ধারণ করুন।
হাল্কা গান শুনতে পারেন।
উষ্ণ স্নান গ্রহণ করতে পারেন
ঘুম না আসলে বিছানায় না শুয়ে থেকে বরং বই পড়ূন বা হাঁটাহাঁটি করুন।
যতক্ষণ পর্যন্ত না আবার ঘুম আসে ততক্ষণ বিছানায় যাবেন না।
ঘুমের ওষুধ
বিনা ব্যবস্থাপত্রে
অনেক সময় ডাক্তাররা ব্যবস্থাপত্রে রিলাক্সেশনের কথা উলেস্নখ করেন বা অন্যান্য মেডিটেশনের কথা বলেন। এগুলোর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই এবং এর ফলে ঘুমের সমস্যা দূর হলে তা খুবই স্বাস্থ্যপ্রদ এবং আনন্দজনক হয়।
ব্যবস্থাপত্র
রোগীর ইতিহাসের ওপর ডাক্তাররা ঘুমের ওষুধ এবং এর পরিমাণ নির্ধারণ করেন। অনেক সময় রোগী যদি অন্যান্য ওষুধে অভ্যস্ত থাকেন তবে ওষুধ দেবার ক্ষেত্রে ডাক্তারকে বিশেষ কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হয়।
যে প্রশ্নগুলো ডাক্তার আপনাকে জিজ্ঞাসা করবেন
কতদিন যাবৎ আপনার ঘুমের এই সমস্যা?
আপনার উপসর্গগুলো কি?
ইদানীং কি আপনার জীবনযাত্রায় কোনো পরিবর্তন এসেছে?
সাম্প্রতিক সময়ে আপনি কি কোনো অসুখে ভুগছেন?
আপনি কি কোনো অসুখে এখন চিকিৎসাধীন?
আপনি কি কোনো আত্মপ্রস্তুতি নিয়েছেন ঘুমের ব্যাপারে?
যে প্রশ্নগুলো আপনি ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করবেন
আমার সমস্যাটা কি বলে আপনি মনে করছেন?
আমার কি কিছু পরীক্ষা করতে হবে?
এই পরীক্ষাগুলো কে করবে?
আমার কি একজন ঘুম বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হতে পারে?
আপনার চিকিৎসার পরিকল্পনা জানতে পারি কি?
পুষ্টিঃ ঘুমের ব্যাপারে সাহায্যকারী
খাদ্যাভ্যাস আপনার ঘুমের নানা সমস্যা কাটিয়ে দিতে পারে। আপনার ঘুমের সমস্যা থাকলে প্রথমে এও দেখতে হবে আপনি কতটুকু পুষ্টি প্রতিদিন গ্রহণ করছেন। মনে রাখবেন, সবসময়ই পুষ্টিকর খাদ্য খেতে হবে তা নয়, কিন্তু্তু আপনি যা খাচ্ছেন সেগুলো যেন আপনি হজম করতে পারেন সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
ম খাদ্য যদি ঠিকমতো হজম না হয় তবে পেটের নানান অসুখের সাথে সাথে ঘুমের বিপর্যস্ততা ডেকে আনতে পারে। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো রাতের খাবার অনেক দেরিতে খাবেন না।
এতে করেও ঘুমের ক্ষেত্রে নানা সমস্যার উদ্ভব হতে পারে।
ফিটনেসঃ ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয়
আপনার দৈনন্দিন জীনে ফিটনেসের প্রয়োজনীয়তা আছে ব্যাপক। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আপনি যে সকল কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকেন, তাতে শারীরিক ফিটনেস না থাকলে আপনি কিছুই করতে পারবেন না এবং এই ফিটনেস আপনার ঘুমের ব্যাপারেও সাহায্য করবে। প্রতিদিন অন্তত ঘুমের আগে মানসিক প্রশান্তি মনে নিয়ে আসুন। শারীরিকভাবে চাঙ্গা থাকার চেষ্টা করুন।
এতে করে ঘুমের ব্যাঘাত কিছুটা কমে আসতে পারে।
ঘুমের ব্যাপারে কিছু ভ্রান্ত ধারণা এবং সত্য কথা
ঘুমের ব্যাপারে কিছু ধারণা অনেকে পোষণ করেন। আসলে এই ধারণাগুলো মোটেই ঠিক নয়। এখানে ভ্রান্ত ধারণা এবং সত্য বিষয়ে আলোচনা করা হলো।
ভ্রান্ত ধারণা
বুড়োদের বেশি ঘুমের প্রয়োজন নেই
সত্য বিষয়
ঘুমের ব্যাপারে ছোট-বড় কিছু নেই।
যার যতটুকু ঘুমের দরকর তার ততটুকু ঘুম না হলে শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়তে পারে। বরং বৃদ্ধ বয়সে মানুষের শরীর বেশি দুর্বল হয়ে যায় বলে এই সময় অন্যান্য সময়ের চেয়ে বৃদ্ধরা একটু বেশি ঘুমায় বা ঘুমাতে চায়। এটা স্বাভাবিক এবং প্রয়োজনীয়ও বটে।
ভ্রান্ত ধারণা
বয়স বাড়ছে বলে ঘুম হচ্ছে না। বড়দের ব্যাপারে এই ধারণা অনেকে পোষণ করেন।
সত্য বিষয়
এটিও একটি ভ্রান্ত ধারণা। এটি সত্য যে বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঘুমের ধরন বদলাতে পারে কিন্তু্তু এর সাথে ঘুম না হবার কোনো কারণ নেই। বরং বৃদ্ধাবস্থায় পুরুষ কিংবা নারীর অধিক ঘুমের প্রয়োজন।
ভ্রান্ত ধারণা
ঘুমের অভাবে কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয় না।
সত্য বিষয়
ঘুমের অভাবে নানা শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা হতে পারে।
অনেক সময় ঘুমের স্বল্পতার জন্য শরীরের বর্তমান নানা অসুখের ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়।
ভ্রান্ত ধারণা
ডাক ডাকার মধ্যে ক্ষতিকর কিছু নেই।
সত্য বিষয়
এটি একটি শারীরিক সমস্যা। নাকের ভেতরকার টিস্যু কিছুটা ফুলে গেলে এটি হয়। এবং এই সমস্যা বৃদ্ধদের মধ্যে বেশি পরিলক্ষিত হয়।
ভ্রান্ত ধারণা
অনিদ্রার কোনো কার্যকর চিকিৎসা নেই।
সত্য বিষয়
সমস্যাটা ধরতে পারলে অনিদ্রা বা ঘুমজনিত সমস্যার নানা উপযুক্ত সমাধান রয়েছে। প্রথমত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত এবং তার কাছে পুরো শারীরিক অবস্থার বিবরণ দেয়া উচিত। এতে করে ডাক্তার রোগীর সমস্যা সম্বন্ধে নিশ্চিত হবেন এবং উপযুক্ত ঘুমের জন্য আদর্শ পরামর্শ দেবেন।
রাতে ভালো ঘুমের জন্য কিছু বিশেষ টিপস
যতটুকু ঘুমে আপনি সন্তুষ্ট ততটুকু ঘুমান
প্রতিদিন ঘুমের একটা নির্দিষ্ট সময় বের করুন
ঘুমানোর আগে অতিরিক্ত কাজ করবেন না।
অযাচিত কোলাহল এবং আলো অপছন্দ করুন।
ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যাবেন না।
সন্ধ্যার সময়ে ক্যাফেইন পরিত্যাগ করুন।
এ্যালকোহল পানে বিরত থাকুন।
সন্ধ্যার সময়ে ধমপান করবেন না।
কর্মমুখর জীবনযাপন করুন।
ঘুম নিয়ে সমস্যা হলেই ডাক্তারের পরামর্শ নিন
(সংগৃহীত) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।