আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আড়াই লাখের বেশি সরকারি পদ খালি দলীয়করণ আর নিয়োগ বাণিজ্যের কারণে শূন্য পদ পূরণ সম্ভব হচ্ছে না আমলাতন্ত্র হচ্ছে মেধাহীন দুর্নীতি, দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতিগ্রস্ত জনগণের সচেতনতা চাই

আমি একজন ভাল ছেলে । বর্তমানে সরকারি চাকরিতে মোট পদের সংখ্যা ১৩ লাখ ৭০ হাজার ১২৭টি। এর মধ্যে ২ লাখ ৫৪ হাজার ২০৫টি পদ খালি রয়েছে। গত সোমবার সংসদের বৈঠকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের পক্ষে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এসব তথ্য জানায়। বলাবাহুল্য দলীয়করণ আর নিয়োগ বাণিজ্যের কারণে প্রায় তিন লাখ সরকারি শূন্য পদ পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

অপরদিকে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কথায় শিক্ষিত বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। তারা নিশ্চিত করে বলছে যে, সরকার দলীয়রাই কেবল নিয়োগ পাবে। প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যে দলীয়করণ আরো পরিষ্কার করে দিয়েছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা গোপালগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে বলেছে, ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিকে ১৩ হাজার ৩৫০ জন দলীয় লোক নিয়োগ দেয়া হবে। তিনি স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলে, আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কাউকে চাকরি দিলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অপরদিকে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার বক্তব্যকে সমর্থন দিয়েছেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী। গত ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ব হার্ট দিবস উপলক্ষে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানে বলে, ‘নিয়োগ নিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ঠিকই বলেছে। অপরদিকে প্রায় ১০ হাজার ডিপ্লোমাধারী নার্স বেকার। তারা চাকরি পাওয়ার আশায় রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। অনেকের চাকরির বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে।

নার্সরা বার বার পোস্টিং পাওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে আসছে। সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্তও করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো কিছুই হচ্ছে না। নার্সরা বলেছে, আমরা কোনো দলের নই, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের চাকরি পাওয়া সাংবিধানিক অধিকার। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল ঘরে ঘরে চাকরি দেয়া।

পর্যবেক্ষক মহল মনে করে- যুব সমাজের ভোট আদায় করার জন্যই এই অঙ্গীকার করা হয়েছিল। এখন চাকরি দেয়া হচ্ছে না। কিছু সংখ্যক দলীয় লোককে বাছাই করে ‘ন্যাশনাল সার্ভিস' নামের কর্মসূচির আওতায় লালন-পালন করা হচ্ছে। এটা কোনো চাকরি নয়। আওয়ামী লীগের টিকেটেই এই কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন জেলায় কিছু সংখ্যক যুবক ও যুব মহিলাকে আনা হচ্ছে।

অপরদিকে প্রায় তিন লাখ সরকারি পদ শূন্য আছে। দলীয়করণের জন্য এসব শূন্য পদ পূরণ করা যাচ্ছে না। তিন লাখ শূন্য পদ পূরণের উদ্যোগ নেয়া হলে নিয়োগ বাণিজ্য সেখানে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বর্তমান সরকার ইতোপূর্বে কয়েক দফা নিয়োগ প্রক্রিয়াও শুরু করেছিল। কিন্তু নিয়োগ বাণিজ্য আর দলীয়করণে তা এগুচ্ছে না।

গত আগস্ট পর্যন্ত ৯ হাজার পদে নিয়োগ স্থগিত করা হয়েছে। সরকারের প্রভাবশালীদের সরাসরি হস্তক্ষেপের কারণেই তা হয়েছে বা হচ্ছে। এসব পদে লাখ লাখ আবেদনকারী দিনের পর দিন অপেক্ষা করে এখন হতাশ। অনেকের চাকরির বয়স চলে যাচ্ছে। অপরদিকে সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে অনগ্রসর ৫৬ শতাংশ কোটা (মুক্তিযোদ্ধা, নারী, জেলা, উপজাতি ও প্রতিবন্ধী) মেধাকে শেষ করে দিচ্ছে।

দুর্নীতি, দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতি, প্রশ্ন ফাঁস ও পরীক্ষা পদ্ধতির অবস্থাপনাও মেধা ধ্বংসে কম দায়ী নয়। এতে সরকারের আমলাতন্ত্র এবং এমনকি নামিদামি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও ক্রমেই মেধাহীন হয়ে পড়ছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় বিশেষ সুবিধা দেয়ার পরও যোগ্যপ্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে বলে পূরণ হয় না প্রাধিকার কোটা। ফলে কোটায় নিয়োগ আরও উদারীকরণ করে এখন বিশেষ নিয়োগ দিচ্ছে বর্তমান সরকার। বিসিএস ও প্রথম শ্রেণীর চাকরির নিয়োগে ৫০ শতাংশ কিংবা তার কম নম্বর পেয়েও অনায়াসেই কোটায় চাকরি মিলছে।

অথচ ৬০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েও মেধাবীরা চাকরি পাচ্ছে না। এতে এখন চরম হতাশার মধ্যে মেধাবীরা। রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রশাসনে মেধাবী ও যোগ্য আমলা নিয়োগের হর্তাকর্তা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। এই প্রতিষ্ঠান থেকে সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) স্থান পাচ্ছেন না মেধাবী ও যোগ্যরা। ৫৬ শতাংশ কোটার ভারে, দলীয় ও আত্মীয়করণ, দুর্নীতি, ২০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা, প্রশ্নপত্র ফাঁস, পরীক্ষা পদ্ধতির অবস্থাপনার কারণে এই প্রতিষ্ঠান থেকে সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) স্থান পাচ্ছেন না মেধাবীরা।

সরকারের খড়গ নেমে এসেছে প্রতিষ্ঠানটিতে। দলীয় ও মেধাহীনদের নিয়োগে নানা কৌশল গ্রহণ করেছে সরকার। এ জন্য পুরো পিএসসি দলীয় ও আত্মীয়করণ করা হয়েছে। একই অবস্থা পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, অডিট, খাদ্য, কর, রাজস্ব, রেল, বিআইডব্লিউটিএ, শিক্ষা সেক্টরেও। ১৬ কোটি বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশে লাখ লাখ শিক্ষিত তরুণ-তরুণীর জন্য বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মোট শূন্য পদের শতকরা হিসাবে মেধাভিত্তিক মাত্র ৪৪ভাগ।

বাকি ৫৬ ভাগই প্রাধিকার (মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, উপজাতি ৫ শতাংশ)। সরকারি চাকরিতে নিয়োগে এই কোটা পদ্ধতি যথাযথ অনুসরণে বিধি ও বাধ্যবাধকতার কথা বলা হলেও বাস্তবতায় ভিন্ন চিত্র পাওয়া যাচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বেশিসংখ্যক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে কোটায় নিয়োগে যোগ্যপ্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। আবার অনেকেই কোটার ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহার করে কোটায় নিয়োগ পাচ্ছে। সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে ঘরে ঘরে চাকরি দেবার প্রতিশ্রুতির সরকার চাকরী নিয়ে মূলত: জনগণের সাথে চরম প্রতারণা করছে।

এ প্রতারণার শেষ তখনই হবে যখন জনগণের মধ্যে জনসচেতনতা তৈরি হবে। জনগণ নিজেদের হক্ব সম্পর্কে সচেতন হবে। উল্লেখ্য, ইসলামের দৃষ্টিতে নিজের হক্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়া ফরয। দেশের ৯৭ ভাগ মুসলমানকে সেই ফরয আদায় করতে হবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.