প্রগতিশীলতা আর নগ্নতা এক নয় যৌনতা"। নাহ, পাঠককে আকৃষ্ট করার জন্য আমি এই শব্দ দিয়ে শুরু করিনি। বরং আজকের একটি চরম বাস্তবতা নিয়ে কথা বলাই আমার উদ্দেশ্য। যৌনতা মানুষের স্বাভাবিক সহজাত বৈশিষ্ট্য। সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত ও যুক্তিসঙ্গত।
এটি ছাড়া মানব সমাজের বংশবৃদ্ধির স্বাভাবিক ধারা ব্যাহত হয়। বিবাহ নামক এক সুন্দর প্রথার মাধ্যমে যৌনতার অবাধ বিস্তারে লাগাম পরানো হয়েছে। অর্থাৎ সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও নৈতিকতার দাবি হচ্ছে এর অবাধ বিস্তার ঠেকানো। আর আমি আমার সমাজের মূল্যবোধের কথা বলছি। কিন্তু পশ্চিমা বস্তুবাদি সমাজে এতি অবাধ বিস্তৃত; প্রকাশ্যে চর্চিত একটি মিথ্যা এবং নোংরা আচরন।
তবুও তাদের সমাজে অনেকদিন ধরে প্রথাটি চালু থাকায় কেমন যেন স্বাভাবিক মনে হয়। গোেয়বলসিয়ান থিউরি তাই বলে। হিটলারের কুখ্যাত মন্ত্রি গয়েবলস বলেছিলেন মিথ্যাকে একশবার বললে তা ধিরে ধিরে সত্যে পরিনত হয়। তাই পাশ্চাত্য সমাজে যৌনতার অবাধ বিস্তার এখন স্বাভাবিক ব্যাপার। সমস্যাটা হয়েছে আমাদের।
নানা কারনে (যার মধ্যে ধর্ম একটি) উপমহাদেশের সামাজিক প্রথা ও মূল্যবোধগুলো কিছুটা রক্ষণশীল। তাই সমাজে যখনি দুর্বৃত্তরা যৌনতার বিস্তার ঘটাতে যায় তখন মহা সমস্যা দেখা দেয়। যখন যৌন সুড়সুড়ি মূলক আচরন ও পণ্যগুলো আমাদের সমাজে আনা হয় তখন সামাজিক নিরুৎসাহ সত্ত্বেও স্বাভাবিক মানবিক কৌতূহলবশত প্রাণচঞ্চল যুবসমাজ সেগুলো গ্রহন করে। এবং এই সমাজে বিষয়গুলো খোলামেলা বিষয় না হওয়ায় ক্ষতির পরিমান আরও বেশি হয়।
এমনি একটা যৌন সুড়সুড়িমূলক পণ্য হচ্ছে পর্ণগ্রাফি।
ইদানিংকালে আমাদের সমাজে পর্ণগ্রাফির বিস্তার যে হারে বাড়ছে তা সম্পর্কে সচেতন মহল অবশ্যই অবগত থাকবেন।
আমি এখন HSC level এ পড়ি। সত্যি কথা বলতে কি পর্ণগ্রাফি সম্পর্কে আমি প্রথম জানতে পারি আমি যখন ক্লাস নাইন এ পড়ি। আমি ওসব নোংরা জিনিস দেখার offfer অনেক পেয়েছি। ছেলেপেলেরা ওটাকে বলত naked।
যেমন হটাত একদিন এক বন্ধু বলল, "এই আসিফ naked দেখবি?" এবং এই বিষয়ে আরও নানা উত্তেজক কথা বার্তা বলে আমাকে প্রলুব্ধ করতে লাগল। অহংকার নয় সত্যি করে বলছি আল্লাহর অশেষ কৃপায় আমি ওদের কথায় প্রলুব্ধ হইনি। আজ যদি আমার কোন friend এই লেখা পড়ে তবে সেই ভাল জানবে যে আমাকে porn offer করে সে কখনোও সফল হয়েছে কিনা। যাক ওসব কথা। সেই সময়ই বিষয়টা আমাকে খুব নাড়া দিত।
যখন দেখতাম ক্লাসের ছেলেপেলেরা ( সবাই নয়) সারাক্ষন এই নোংরা জিনিস নিয়ে আলোচনা করছে। তখন সবাই এখনের চেয়ে বয়সে ছোট ছিল। সবার হাতে হাতে মোবাইল নামক যন্ত্রটা ছিলনা। তাই বিস্তার ছিল কম আর পরিসর ছিল ছোট। কিন্তু intermediate level এ এসে যা দেখলাম তা সত্যিই ভয়াবহ।
একেকজনের মোবাইল যেন পর্ণের কারখানা। আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের একজন তো পর্ণের বিস্তারে এমন ভুমিকা রেখেছিল যার ফলে college এর পর্ণ লোভী সমাজ তাকে তাঁর বিশেষ অবদানের জন্যে "ন্যাকো বাবা(naked baba) " নাম দিয়েছিল। কলেজ এ ক্লাস শেষ তাই কথাগুলো অতিতকালেই বলছি। যাই হোক যখনি এ সমস্ত আলোচনার আসর বসত তখন হয়তো আমি চুপ থাকতাম, নয়তো সরে পরতাম নয়তবা নতুন প্রসঙ্গ আনার চেষ্টা করতাম। প্রথম প্রথম অবশ্য সাংকেতিক ভাষা গুলা বুঝতে সমস্যা হত।
যেমন ওদের আলোচনা গুলো এই টাইপ এর হোতো।
-- কীরে ন্যাকো ? আছে নাকি নতুন কিছু?
-- হ, ব্যাটা, ব্লু টুথ অন কর, আছে একটা ৩৬ MB 'র।
-- বাপরে কই পাইলি? দারুন জিনিষ।
এই অবস্থায় হয়তোবা অনেকেই ব্লু তুথ দিয়ে যৌন লালসা চরিতার্থের মোক্ষম অস্ত্র লুফে নিত। এভাবে কলেজ লাইফ এ আমি পর্ণের লাভহীন ব্যাবসার চরম প্রসার দেখেছি।
পর্ণের বিস্তার যে কত ভয়াবহ তা আরেকটা ঘটনায় বোঝা যায়। আমি প্রায়শই বন্ধুবান্ধবের মুখে একটা নাম শুনতাম-"সানি লিওন"। অনেকদিন শুনেছি। পাত্তা দেইনি। আরও শুনলাম জিসম- ২ নামক একটা মুভিতে সে নাকি অভিনয় করেছে।
এমন সময় হটাত একদিন পাড়ার মাঠে খেলার সময় ক্লাস সিক্সে পড়ে এমন দুইজন ছোটভাই এর মুখে সানি লিওন এর নাম শুনলাম এবং দেখলাম বড়দের সামনেই এরা এর সম্মন্ধে অস্লিল কথা বার্তা বলছে। আমি বরদের সামনে খুবই বিব্রত বোধ করছিলাম। তখন আমি বুঝতে পারলাম "ডাল মে কুচ কালা হেয়"।
এটা বেশিদিন আগের কথা নয়, তখন বন্ধুসমাজে সানি লিওন কে নিয়ে দারুন চর্চা হয়। তাঁর সেক্স এর রমরমা যৌন সুড়সুড়িমূলক গল্প অনিচ্ছায়ও কানে ঢুঁকে যায়।
কিছুদিনের মধ্যেই জানতে পারলাম সে নাকি হাল আমলের সেরা পর্ণস্টার। বন্ধুসমাজে এসব নিয়ে চর্চা যে কতটা ভয়াবহ ছিল তা বলে বোঝানো যাবে না। বিজ্ঞ পাঠক এটা অবশ্যই বুঝতে পারবেন যে ক্লাস সিক্সের একটি ছেলে যে হয়তোবা বীজগণিতের একটা সাধারন সমাধান করতে পারবেনা তার মুখে সানি লিওনের দেহচর্চার যদি খই ফোটে তবে পর্যায়ক্রমিক উচ্চতর ক্লাসসগুলতে কেমন অবস্থা তা সহজেই অনুমেয়। সানি লিওন আজকের সমাজে চর্চিত এমন একটি যৌনপ্রিয় নাম যা আমাদের মত পর্ণ বিরোধীদেরও অনিচ্ছায় মুখস্থ হয়ে গিয়েছে।
অবস্থা খুব জটিল।
এমনটি সুস্থ সমাজের কখনো কাম্য নয়। সচেতন সমাজ একটু চিন্তা করলেই এর আশু পরিনতি কি তা বুঝতে পারবেন।
একটি দেশের কখন উন্নতি হয়? যখন, দেশের তরুন সমাজ (যাকে পর্ণ প্রেমীরা আদর করে ডাকেন ১৮+ সমাজ) দেশকে নিয়ে চিন্তা করে এবং দেশের জন্য কোন জিনিসটা ভাল আর কোনটা মন্দ তা বিচার করতে শেখে। কিন্তু আজকের এই খণ্ডচিত্রটি আমি যে সমাজের আলোকে নিরুপন করেছি তার অবস্থা ঠিক এর বিপরীত। পর্ণগ্রাফি, যৌনতাভিত্তিক চটিগল্প, বন্ধুসমাজে নিত্য নারির কমনীয় দেহ নিয়ে আলচনা--এগুল আজকের ১৮+ সমাজের যেন নেশা আর পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চটিগল্পের বিষয়টা আরেকদিনের জন্যে রেখে দিলাম। ক্লাসরুম এ বসে ছেলেপেলেদের (মেয়েদের ব্যাপারতা আমি জানিনা) অবাধে পর্ণগ্রাফিতে মেতে ওঠা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এ নেশা কিন্তু প্রচলিত narcotic এর চেয়েও কম নয়। এভাবে আমাদের ১৮+ সমাজ যদি উক্ত কাজগুলোতে লিপ্ত থাকে তাহলে উচ্চতর চিন্তাভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গির সুযোগ তা কোথায়। হয়তোবা এরা পুঁথিগত বিদ্যা অর্জন করে দেশের বড় পদে অধিস্তিত হয়ে যাবে কিন্তু তা তো আরও বড় সমস্যা।
এরা তো জাতিকে যৌনতার অবাধ বিস্তার ছাড়া কিছুই দিতে পারবেনা। আশংকা সত্য না হোক এ আশাবাদ ব্যাক্ত করে বলছি , বিশ ত্রিশ বছর পর বাবা যে তার জোয়ান ছেলেকে পর্ণ দেখতে patronise করবে না তা কি নিশ্চিতভাবে বলা যায়?
আমি ছোটখাটো একজন মানুষ। আমার মুখে এসব বড় কথা বেমানান লাগলেও বলতে হচ্ছে। হুমায়ুন আহমেদ এর মত বলি ,~ স্পেড কে স্পেড বলাই বাঞ্চনিয়। হয়তবা এ অশ্লীলতার বিস্তার রোধ কিভাবে করা যায় তা বলতে পারবনা।
এ নিয়ে বিস্তারিত গবেষণালব্ধ জ্ঞানের প্রয়োজন আছে। এ দায়িত্বভার দেশের সুশীল ও প্রগতিশীল সমাজের কাছেই ন্যাস্ত করা ভাল। আশা করি তাঁরা এ মহৎ কাজটি সম্পাদনে অগ্রসর হবেন।
পরিশেষে আমার সাথে ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত যারা হয়তো এমন খারাপ নেশায় আসক্ত তাদের উদ্দেশে বলব আমার সাথে কাও কোন প্রকার শত্রুতা বা বিদ্বেষ নেই। সত্য আমার বলতেই হবে তা নিন্দুক এবং সমাজের blacksheep দের কাছে যতই তিক্ত হোক না কেন।
বিখ্যাত ইংরেজ সাহিত্যিক রুদিয়ারদ কিপ্লিং বলেছিলেন, ~ সত্য সর্বদা জনপ্রিয় হয় না এবং জনপ্রিয়ও সর্বদা সত্য নয়। " তবে তাঁর কথাটি যুগপৎ সত্য ও জনপ্রিয়। সবশেষে আমরা সমস্বরে বলি সত্য মুক্তি পাক, অশ্লীলতা নিপাত যাক। " ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।