হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোনজন, কান্ডারি বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা'র জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল ছাত্র ইউনিয়নের জামাত শিবির বিরোধী মিছিলের প্রস্তুতিকালে ছাত্রলীগএর হামলায় একসাথে অনেককিছু মনে পরে গেলো। খানিকটা স্মৃতিকাতর হলাম, সেই সাথে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিষয়ক রাজনীতির ইতিহাস থেকে পাওয়া শিক্ষাটা যে এখনো আমরা কাজে লাগাতে পারলাম না সেইটা ভেবে দুঃখিত হলাম। কি কি মনে পরে গেলো সেই আলাপ করার আগে জবিতে আসলে কি হয়েছে সেইটা যারা জানেন না তাদের জানানো দরকার মনে করছি। জামাত-শিবির বিরোধী মিছিলএর প্রস্তুতিকালে ছাত্র ইউনিয়নএর উপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ, বেশ কয়েকজন নেতা কর্মীকে বেধরক পিটিয়েছে। যেই ছেলেটা স্লোগান লিখছিলো ‘সাম্প্রদায়িক রাজনীতি আইন করে নিষিদ্ধ করো’ তাকে শিবির ট্যাগ দিয়ে পিটিয়েছে।
অবশ্য এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ছাত্রলীগএর সভাপতি বলেছেন, ছাত্র ইউনিয়নএর ছেলেরা ক্যাম্পাসে ধুমপান করায় তাদের কিঞ্চিত শাসানো হয়েছে। আসল কারন, জবি ক্যাম্পাসে বিগত দুই বছরে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলার উত্থান। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে এরা এমনিতেই জণপ্রিয়। এখন জামাত-শিবির বিরোধী আন্দোলনেও যদি এরাই নেতৃত্ব দেয় তাইলে ছাত্রলীগএর তো ইজ্জত থাকেনা। তাই সন্ত্রাস করে ইজ্জত ফিরিয়ে আনার চেষ্টা মাত্র।
যাই হউক, স্মৃতিকাতর কেনো হলাম সেটাই আগে আলাপ করি, এর সাথে যুদ্ধাপরাধ বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাসএর সম্পর্ক আছে। ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সময়টা ছিলো বাংলাদেশে নতুন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবির প্রশ্নটাকে সামনে নিয়ে আসার প্রবল সংগ্রামের সময়। নতুন প্রজন্ম এতে নেতৃত্ব দিয়েছে, কেউ ব্লগে কেউ রাজপথে। আমি সেসময়টায় শনির আখড়া এলাকায় ইন্টারনেটের দুস্প্রাপ্যতার কারনে অনলাইনে খুব একটা একটিভ না, কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবীতে রাজপথে সোচ্চার ছিলাম। আমার মূল প্লাটফর্ম ছিলো আরজ আলী মাতুব্বর পাঠাগার।
আমাদের পাঠাগার যেহেতু দিনশেষে একটা স্থানীয় পাঠাগার (দনিয়া, শনীরআখড়া, যাত্রাবাড়ী এলাকার), তাই আমাদের আন্দোলনটা ছিলো স্থানীয়। ২০০৬ সাল থেকেই আমরা শুরু করছিলাম ১৪ ডিসেম্বর আর ২৫ মার্চ রাতে মোমবাতি হাতে মিছিল করে স্থানীয় বর্ণমালা স্কুলের শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্জলনের মাধ্যমে শহীদদের স্মরণ করে তাদের চেতনাকে নিজেদের মাঝে আত্মস্থ করে স্লোগানে, বক্তৃতায় এলাকা কাপিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করা। বিগত ৫ বছরে এটা এখন অত্র অঞ্চলের সচেতন তরুন, প্রগতিশীল জনতার একটা ট্রাডিশনে পরিণত হয়েছে। প্রথম দুই বছর একা একা করার পর আমাদের সাথে যুক্ত হয় এলাকার অন্যান্য প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন। প্রতি বছরই মিছিল শেষে আমরা পরের বছর যুদ্ধাপরাধীদের ফাসিতে উল্লাস করার স্বপ্ন দেখেছি।
সেই স্বপ্ন এখনো পুরণ হয়নাই, তাতে জং ধরেছে।
আরজ আলী মাতুব্বর পাঠাগার ছাড়াও আরেকটি সংগঠনকে জামাত-শিবির বিরোধী আন্দোলনে সবসময় সাথে পেয়েছি। এই সংগঠনটি হলো বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। ছাত্র ইউনিয়নএর সাথে আমার সুসম্পর্কের কারন সম্পর্কে প্রশ্ন শুনেছি অনেকের কাছে। অনেকে এমনো ভাবে যে আমি হয়তো ছাত্র ইউনিয়ন করেছি কোন এক কালে।
কেউ আবার আমাকে আন্ডারগ্রাউন্ড সিপিবি ট্যাগও দিয়েছে। আসলে এই সুসম্পর্কের কারন নেহায়েতই রাজনৈতিক এলায়েন্স। ছাত্র ইউনিয়নএর বর্তমান সভাপতি এস এম শুভ আমার ছোট বেলার বন্ধু, আরজ আলী মাতুব্বর পাঠাগারএর অন্যতম উদ্যোক্তা। আমরা যখন পাঠাগার তৈরি করি তখন শুভ তখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নএর কর্মী। সেই সুবাদে তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নএর অনেক নেতা কর্মীর সাথে পরিচয় ঘটে।
২০০৬ সালে আমাদের তৎকালিন এমপি দৌড় সালাউদ্দিন বিরোধী বিখ্যাত শনিরআখড়া আন্দোলনের সময়ে এরা সবাই আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। তৎকালিন সভাপতি সজ্জনদা, পরবর্তি সময়ের সভাপতি মানবদা এদের সবার সাথেই পরিচয় ঘটে সেই সময়।
আরজ আলী মাতুব্বর পাঠাগারকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবির অন্যতম সংগঠন হিসাবে গড়ে তোলার কিছু সমস্যাও ছিলো। স্থানীয় শিবির কর্মীদের সাথে আমাদের দ্বন্দ তৈরি হয়। পাঠাগারএর অধিকাংশ সদস্যের বয়স কম ছিলো, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাও ছিলনা, এদের নিরাপত্ত্বার বিষয়টাও দেখতে হতো।
পাঠাগারকে এই আন্দোলনে কতোটা র্যা ডিকেল ভাবে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে তা নিয়া আমার নিজের মনেই বিভিন্ন প্রশ্ন ছিলো। তার উপরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবির আন্দোলনটা কোন স্থানীয় আন্দোলন না, পাঠাগারএর পক্ষে স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা তৈরি করা হয়তো সম্ভব, কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে আমাদের আওয়াজ পৌছানোর মতো গলার জোর ছিলনা। পাঠাগার নিজের জায়গা থেকে সফল হলেও, আমার রাজনৈতিক আকাঙ্খা মেটানোর জন্যে যথেষ্ট ছিলনা। আর এখানেই বন্ধু সংগঠন হিসাবে পাই ছাত্র ইউনিয়নকে। সেসময়ই বুঝতে পেরেছিলাম যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবির আন্দোলনকে এই সংগঠনটা প্রবলভাবেই নিজেদের আন্দোলন মনে করে, জামাত-শিবির বিরোধী চেতনায় তাদের আর আমার মাঝে বিশেষ কোন মৌলিক পার্থক্য ছিলনা।
একটা উদাহরণ দিলে আরো পরিস্কার হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেয়ার নামে ডেকে নিয়ে অপমান করেছিলো জামাত-শিবির। জামাত শিবির কেনো বেনামে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দিচ্ছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় উপস্থিত এক মুক্তিযোদ্ধাকে লাথি দিয়েছিলো এক শিবির কর্মী। খবরটা দেখে মাথায় আগুন ধরে গিয়েছিলো, হাত নিশিপিশ করছিলো একটা কিছু করার জন্যে। প্রতিবাদে মিছিল বের করা ঠিক হবে কিনা তা নিয়া পাঠাগারএর ভেতরে খানিকটা তর্ক বিতর্ক হলো।
কারন সেটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়, মিছিল মিটিং করতে চাইলেই করা যাবে এমন না। ১৪ ডিসেম্বর বা ২৫ মার্চ বিশেষ দিবসে মোমবাতি হাতে মিছিলে হয়তো কোন সমস্যা নাই, কিন্তু এর বাইরে মিছিল করতে গেলে পাঠাগারএর কর্মিদের সরাসরি প্রশাসনের মুখোমুখি হতে হবে এই ঝুকি ছিলো। কিন্তু আমার তখন মাথা গরম, আমি ঘোষনা দিলাম কেউ না থাকলে আমি একাই মিছিল করুম শনিরআখড়ার মেইন রোডে।
যাই হউক, সেটা অবশ্য করতে হয়নাই। সেসময় পাঠাগারের সহ সভাপতি ছিলেন গোলাম রাব্বী খান।
তিনি বয়সে আমাদের চেয়ে অনেক বড় ছিলেন, এককালে ছাত্র ইউনিয়নএর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি ছিলেন। এস এম শুভ বাদে একমাত্র তিনিই ছিলেন তখনকার সময়ে পাঠাগারএর কর্মী যিনি ছাত্র ইউনিয়ন করেছেন। আমি তাকে ফোন করে জরুরি ভিত্তীতে পাঠাগারে আনাই। খবরটা দেখিয়ে বলি, একটা কিছু করতে হবে। রাব্বী ভাই প্রচন্ড রকম জামাত শিবির বিরোধী ছিলেন, বলা যায় এদের বিরুদ্ধে একধরণের সাম্প্রদায়িক ঘৃনা পোষন করতেন।
তিনি বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থেকে ফোন করলেন তখনকার ছাত্র ইউনিয়নএর নেতা কর্মীদের, জোড় দিয়ে বললেন অবশ্যই একটা কিছু করতে হবে। ততদিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আর্মি বিরোধী মুভমেন্টের সুবাদে প্রায় মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছিলো, সারা বাংলাদেশে না হলেও তখন ঢাবির ক্যাম্পাসে ঠিকই জঙ্গী মিছিল করা যেতো।
সেদিন বিকালে ছাত্র ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্চিত করার প্রতিবাদে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে মিছিল বের করলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। সেই মিছিলে যোগ দিয়ে শহীদের রক্তের মূল্য শোধের শপথ নিলাম, স্লোগানে স্লোগানে দাবি করলাম গোলাম আজম, নিজামী, মুজাহিদের ফাসি। ছাত্র ইউনিয়নএর মিছিলএর পর প্রগতিশীল ছাত্রজোটের মিছিল হয়েছিলো, মিছিল শেষে পোড়ানো হয়েছিলো রাজাকারের কুশপুত্তলিকা।
কোথায় ছিলো সেইদিন ছাত্রলীগ?
ঐদিনএর পরে অবশ্য আমরা স্থানীয় ভাবেও আর বসে থাকিনি। সামরিক শাসনএর ভয় তোয়াক্কা করে এলাকায় মিছিল নামিয়েছি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করে। প্রথম দিনেই পুলিশএর সাথে হিচিং হয়েছিলো। সেই থেকে আমাদের সাহস বেরে গিয়েছিলো। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করে পোস্টারিং, মিছিল, পত্রিকা প্রকাশ, পাঠচক্র আয়োজন ইত্যাদি নানান কর্মসূচী পালন করে গিয়েছি একের পর এক।
স্থানীয় সাংস্কৃতিক জোটএর সংগে মিলে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটএর কর্মসূচী সফল করতে খাটাখাটনি করেছি সেই সময়। সেক্টরস কমান্ডারস ফোরামএর আয়োজিত কর্মসূচীগুলোতেও পাঠাগার ঐক্য প্রকাশ করে উপস্থিত থেকেছে। সেইদিন কোথায় ছিলো আওয়ামীলীগ? আমার মনে আছে স্থানীয় অনেক আওয়ামীলীগের নেতা সেই সময় আমাদের পিঠ চাপড়ে দিয়ে গেছে। ধনিয়ার বড় মসজিদে আরজ আলী মাতুব্বর পাঠাগারকে নাস্তিক সংগঠন বলে ফতোয়া দেয়া হয়, কিন্তু আমাদের কিছুই করতে পারেনাই এলাকার কোন সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠি, পাঠাগারএর জণপ্রিয়তার কারনেই। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর ঐসব পিঠ চাপড়ানো আওয়ামী লিডাররাই আমাদের ডেকে নিয়ে আমাদের নানান কর্মসূচীতে তাদের এমপি থেকে শুরু করে নানান পাতি নেতাদের দাওয়াত দেয়ার দাবি জানালেন, আর তা না মানায় পাঠাগারএর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় শত্রু হিসাবে আবির্ভুত হলেন এরাই।
পাঠাগারএর প্রথম দপ্তরটা আমাদের হাড়াতে হয় এদের কারনেই। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা আর কোচিং ব্যাবসায়ীরা সেইসময় প্রবল চেষ্টা করেছিলেন পাঠাগারকে শেষ করে দেয়ার জন্যে, সফল হন নাই। যেই নেতা এইসব কাজে মূল ভুমিকা পালন করেছিলেন, তিনি পরবর্তিতে যারে বলে ‘আল্লার মাইর’এর শিকার হয়েছিলেন, আমাদের কিছু করতে হয়নাই। আমরা টিকে আছি এখনো, প্রবল ভাবেই।
তখনি বুঝেছি, বাংলাদেশে প্রগতিশীল আন্দোলনের সবচেয়ে বড় শত্রু জামাত-শিবির হলেও এই আন্দলনের সবচেয়ে বড় বেইমান আর মুনাফিক হলো আওয়ামীলীগ।
কিন্তু এইটাতো কোন নতুন শিক্ষা না। জামাত-শিবির বিরোধী আন্দোলনে বেইমানী করার নজির আওয়ামীলীগ আগেও দেখিয়েছে। ৯০ দশকএর শুরুতে আম্মাজান জাহানারা ইমামএর নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবীর আন্দোলনের সাথে বেইমানী করে এই আন্দলনের ১২টা বাজিয়েছিলো আওয়ামীলীগ, এমনকি সেই আন্দোলনের মরা লাশের উপর দাঁড়িয়ে জামাতএর সাথে রাজনৈতিক ঐক্য গড়েছে ৯৬এর নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার জন্যে।
সেই বেইমান, মুনাফিক আওয়ামীলীগই যখন তরুন প্রজন্মের দাবির মুখে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার ম্যান্ডেট নিয়া ক্ষমতায় আসলো তখন অনেকেই আশাবাদী হলেও আমি হইনাই। আমি প্রথম থেকেই বলেছি, ব্লগে ফেসবুকেও লিখেছি বহুবার, আওয়ামীলীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবেনা, বরং এটাকে নিজেদের নির্বাচনী রাজনীতির অস্ত্র হিসাবে ব্যাবহার করবে।
এটা আমি এখনো বিশ্বাস করি। এই মেয়াদে যদি সরকার দুই একজন যুদ্ধাপরাধীকে ফাসির আদেশ দিয়েও দেয় তাও পুরা বিচার প্রক্রিয়া ঝুলিয়ে রাখবে আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার উসিলা হিসাবে। কিহবে তখন? আওয়ামীলীগ হারবে। বিএনপি-জামাত জোট আবার ক্ষমতায় আসবে। যুদ্ধাপরাধীদের গলায় ফাসির দড়ির বদলে তাদের গাড়িতে আবারো পতপত করে উড়বে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা আর তার ভেতর থেকে গণতন্ত্র ভেংচি কাটবে আমাদের দিকে তাকিয়ে।
জামাত-শিবির, এদের ব্লগিয় ভার্সন ছাগু, আর কিছু ছাগ বান্ধব তথাকথিত জাতীয়তাবাদী ছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়না এমন কোন মানুষ নাই। কিন্তু আওয়ামীলীগই একমাত্র সংগঠন যারা জামাত-শিবির বিরোধীতাকে পুরোপুরি নিজেদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হেনস্তা করতে, ভিন্নমতাবল্বীদের সায়েস্তা করতে ব্যাবহার করে। এক্ষেত্রে অনলাইন, অফলাইন ফারাক নাই। অনলাইন আওয়ামী গুন্ডাদের প্রধান অস্ত্র ‘ছাগু’ ট্যাগিং। জীবনে কোনদিন রাস্তায় নামেনাই, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করে পুলিশের বারি খায়নাই, জীবনে কোনদিন শিবির পেটানো দূরে থাক, শিবিরএর সাথে কোন সংঘর্ষেও জড়ায় নাই, এমন কিছু দুধের শিশু মনিটরএর পেছনে বসে বসে ফারুক ওয়াসিফ, মানস চৌধুরী, বাকী বিল্লাহদের মতো লোকজনরে ছাগু ট্যাগ দেয়, যাদের কিনা সূদীর্ঘকালের জামাত শিবির বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস আছে।
ট্যাগএর কারন নেহায়েতই ভিন্ন মতাদর্শ, অন্য কিছুনা। যাকে তাকে ছাগু ট্যাগ দিয়ে অনলাইনে জামাত শিবির বিরোধী চেতনার ১২টা বাজিয়েছে অনলাইন আওয়ামীলীগ, অন্য কেউ না। আর সারাদেশে নিজেদের সকল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, আর সরকার বিরোধী সকল আন্দোলনের পিছনে জামাত-শিবিরএর ভুত দেখে জাতীয় পর্যায়ে এই আন্দোলনের ১৪টা বাজিয়েছে আওয়ামীলীগ।
আজকে যখন জামাত-শিবির সারা দেশে তান্ডব চালাচ্ছে, গর্ত ছেড়ে বেরিয়ে এসে রাজপথের দখল নিতে চাচ্ছে তখন অনেকেই অবাক হলেও আমি হইনাই। জামাত-শিবির বিরোধী চেতনার ১২টা এবং ১৪টা বাজিয়ে, আর সরকার বিরোধী তাবৎ আন্দলন সংগ্রামে এদের সম্পৃক্ততা দাবি করে মরণাপন্ন জামাত-শিবিরকে শক্তিশালী করেছে আওয়ামীলীগ নিজেই।
যুদ্ধাপরাধের বিচার কম সময়ে হওয়া ভালো, ইতিহাস থেকে উদাহরণ তুলে আমি আগেও দাবি করেছি যে এই বিচারে এতো সময় নেয়া অর্থহীণ ও অকার্যকর। তত্ত্বাবধায়ক সরকারএর সময় যারা যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবিতে রাজপথে এবং অনলাইন মাতিয়েছে তাদের অনেকেই এখন আর মাঠে নাই, কারন এই আন্দোলনের প্যাটেন্ট কিনে নিয়েছে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর। সরকারএর উপর ভরশা করে অনেকে চুপ হয়ে গেছেন, অনেকে চুপ হয়েছেন বিরক্ত হয়ে। কিন্তু তাই বলে জামাত-শিবির আবার তান্ডব শুরু করলে তারা চুপ করে ঘরে বসে থাকবেনা। পথে নামবেই।
সেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি গতো কয়েকদিন ধরেই। ব্লগে, ফেসবুকে জামাত-শিবির বিরোধী চেতনার পালে আবার হাওয়া লেগেছে। গত সপ্তাহে পাঠাগারে আমরা নিজেরা এবং স্থানীয় অন্যান্য প্রগতিশীল সংগঠনের সাথে একাধিক মিটিং করেছি স্থানীয় পর্যায়ে আন্দোলন আবারো জোড়দার করার লক্ষ্যে, ইতিমধ্যে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বেশকিছু কর্মসূচীর স্বিদ্ধান্তও হয়েছে।
কিন্তু এই যে আমরা আবার জেগে উঠছি, এবারো কি আবার আগের মতো হবে? এবারো কি আমরা শিক্ষা নেবোনা? আওয়ামীলীগএর বেইমানী, মুনাফেকি কি আমরা ভুলে যাবো? আওয়ামীলীগএর ভেতরে যেসব যুদ্ধাপরাধী আছে তাদের বিচার কে দাবি করবে? তাদের বিচার কে করবে?
আমি চাই শিবির নিষিদ্ধ হোক, কিন্তু ছাত্রলীগ কেনো নিষিদ্ধ হবেনা তাও আমি জানতে চাই। ‘সাম্প্রদায়িক রাজনীতি আইন করে নিষিদ্ধ করো’ এই স্লোগান লেখার সময় যারা শ্রেফ ভিন্ন মতাদর্শের কারনে প্রতিপক্ষকে আক্রমন করে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবির মিছিলের প্রাক্কালে শ্রেফ নিজেদের রাজনৈতিক আধিপত্ত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যে যারা হামলা চালিয়ে সেই মিছিল পন্ড করে দেয় সেই ছাত্রলীগকে আর যাই হোক মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক বা তাত্ত্বিক ও আত্মিকভাবে জামাত-শিবির বিরোধী গণ্য করার কোন কারন নাই।
এরা নেহায়েতই সন্ত্রাসী, শিবির এদের কাছে নেহায়েতই ট্যাগ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি এদের কাছে নেহায়েতই স্লোগানএর বিষয়, রাজনৈতিক শো-অফ।
বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে জামাত-শিবিরকে উৎখাতের পাশাপাশি আওয়ামীলীগকেও উৎখাত করতে হবে। কারন, ইতিহাস থেকে আসল শিক্ষা নিলে দেখা যায় যে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থেই আওয়ামীলীগ জামাত-শিবিরকে টিকিয়ে রাখে, তারপরে এদেরকে বড় হতে দেয় দুধে ভাতে, বেশি বড় হয়ে গেলে যখন পাছায় কামড় দিতে আসে আওয়ামীলীগ তখন জনগণের কাছে আবেদন করে এদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। এই সহজ শিক্ষাটা মাথায় রেখেই এবার আমাদের জামাত-শিবিরকে রূখতে হবে, নিশ্চিহ্ন করতে হবে।
Click This Link
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।