ফেসবুকে কিছুদিন আগে আমার কোন এক বন্ধু একটা পোস্ট শেয়ার করে, পোস্ট টা ছিল এমন যে আল্লাহ তাআলা কে বিশ্বাস করলে লাইক করুন। পোস্ট টা দেখে একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিলাম, যদি লাইক না করি তাহলে কি আমি আল্লাহ কে বিশ্বাস করি না?
এমন আরো অনেক পোস্ট এখন হরহামেশাই চোখে পরে। ব্যাপারটা কি ইসলাম প্রচার না অন্য কিছু সেটা নিয়ে একটু ভাবা যেতে পারে। এছাড়া ব্লগ এ অনেকে নামে বে নামে ইসলাম সপর্কিত যে সব পোস্ট করে তার বেশির ভাগই এখন মনে হয় কোন না কোন গোষ্ঠির আশির্বাদ তুষ্ট যারা ইসলাম এর নাম করে নিজেদের প্রকাশে ব্যাস্ত হয়ে থাকে। তাদের ভাবটা এমন যেন তাদের মতাদর্শি না হলে সে কাফের মুর্তাদ।
যেনে বা না যেনে যারা এসব করছে তারা কি কখন ভেবে দেখে তাদের ক্ষুদ্র স্বার্থে এক মহান জীবন ব্যাবস্থার কত ক্ষতি তারা করছে? আমার এ লেখা পড়ে আমিও যে তাদের কাছে কাফের বা মুর্তাদ হয়ে যাব সেটা বলাই বাহুল্য। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানের বিচারে এ ঘটনা গুলো নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক।
আমি পেশায় এক জন নাবিক। পেশাগত কারনে আমি এমন একটা পরিবেশে থাকি যেখানে নাস্তিক, খ্রিস্টিয়ান, বৌদ্ধ্য, মুসলমান সব ধরনের মানুষ এর সাথে মিশতে হয় থাকতে হয় বছর এর পর বছর। তাদের কে কাছথেকে দেখা বা তাদের ধ্যান ধারনা খুব কাছ থেকে বোঝার সুযোগ হয়েছে।
প্রথমেই বলি আমার বর্তমান যে চিফ ইঞ্জিনিয়ার সে চাইনিজ। বয়স ৪০ এর কোঠায়। প্রথমে আমার একটা ধারনা ছিল যে হয়ত কোন ধর্মের অনুসারী। কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝতে পারি সে আসলে কোন ধর্মই বিশ্বাস করে না। তার কাছে টাকা হল সব।
বিজ্ঞান এর উপর আর কিছু সে বিশ্বাস করে না। টেকনিক্যাল বিষয়ে অসম্ভব তার মেধা। ডিপার্টমেন্ট এর প্রধান হিসেবে সে যানে যে সে যাই হোক অন্যের ধর্মিয় বা জাতিগত বিষয়ে কথা বলা তার জন্য সমীচীন নয়, তার পরও কিছু কথা হয়। আমরা যারা মুসলমান তারা যে সমস্ত উৎসব বা ধর্মিয় আচার আচরন পালন করে থাকি সে সেসব বিষয়ে অনেক সময়ই জানতে চায়। আমরাও তাকে বলি বুঝানোর চেষ্টা করি।
কিন্তু এটা বোঝা যায় যে আমাদের ইবাদত বা ধর্মিয় আচার প্রথা গুলো তার কাছে অর্থহীন মনে হয়। সেটা কি আসলেই তার দোষ? সে ছোট বেলা থেকে যে বিশ্বাস নিয়ে বড় হয়েছে যে পরিবেশে সে বড় হয়েছে সেখানে সে অদৃশ্য কোন কিছুতে বিশ্বাস করে না। আর ধর্মের মূল কথাই ত হল গায়েবে বিশ্বাস। তার বিশ্বাস আনতে অনেক যুক্তিই আছে কিন্তু তার দৃষ্টিকোন থেকে সেসবের কোন মূল্য নেই। চীনের বর্তমান সামাজিক অবস্থার দিকে তাকালে দেখা যায় অনেকেই ধর্মীয় বোধ কে বাচিয়ে রাখতে দেশ ছেড়ে অন্য কোন দেশে স্থায়ী হচ্ছে।
সে থেকে বোঝা যায় যে প্রচণ্ড যান্ত্রিকতায় অনেকেই আর সাম্লে উঠতে পারছে না। চীনা সরকারের যে কোন মূল্যে উন্নয়ন এর নীতি তে তারা কয়েক দশকে যে পর্যায়ে গেছে তাদের জীবন যাত্রার মান যেখানে পৌঁছেছে সেখান থেকে কিছু মানুষ হাপিয়ে উঠলেও বেশিরভাগ মানুষই প্রচণ্ড বস্তু বাদি। অদেখা কোন জিনিস কে তারা কি করে বিশ্বাস করবে?
এখন আমরা মুসলমান ধর্মালম্বীরা যদি ভাবি যে তারা জাহান্নামী তারা কাফের তাহলে কি তাদের কিছু যায় আসে? তাদের দিক থেকে কিছু যায় আসে না কিন্তু আমাদের দিক থেকে অনেক কিছুই আসে। শেষ বিচার এর দিন যদি তারা বলে আল্লাহ র কাছে যে তাদের কাছে কোন মুসলমান মহান ধর্মের মর্ম কথা নিয়ে আসেনি তাহলে আমরা পার পাব না। কিন্তু এখানে আমাদের দায়ীত্ব তাদের দাওয়াত দেয়া তাদের জোর করে মানানো নয়।
দাওয়াত বলতে কি শুধু তাদের কাছে গিয়ে বলা এ টুকুই? আমার মনে হয় না।
মহানবী (সা) আরবের অন্ধকার যুগে ইসলামের আলো দিয়ে যুগের অন্ধকার দূর করেছিলেন। সেখানে তিনি দেখিয়েছিলেন এক উন্নত জীবন ব্যাবস্থা, শোষন হীন সমাজ, গরীবের প্রতি ধনীর কর্তব্য তিনি মানুষ হিসেবে মানুষ এর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আরো যা করেছিলেন তার সব টুকু লেখা সম্ভব না অল্প কথায়। সে সব দেখে মানুষ শান্তির শীতল স্পর্শ পেয়েছিল।
খোলাফায়ে রাশেদিন রা শাষন ব্যাবস্থায় মানুষ এর অধিকার কে এমন যায়গায় পৌছে দিয়েছিলেন যে পৃথিবীর অর্ধেক টা চলে এসেছিল সেই উন্নত জীবন ব্যাবস্থার নিচে।
আর বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করলে কি দাঁড়ায়? আমরা ফেসবুকে মাংসে আল্লাহ লেখা ছবি শেয়ার করছি, কে দেখেছে আদৌ কেউ যানে না। আর সেটা শেয়ার করা ইমানী দায়িত্ব ভেবে আমরা আমাদের পেজ গুলো ভরিয়ে ফেলছি। কিন্তু যারা অবিশ্বাসী তারা কি ভাবছে? ফটোশপ এর দৌলতে এসব করা কোন ব্যাপার না। সেটা তারা ভেবে আমাদের কে ভাবছে ভন্ড।
প্রকৃতির অনেক রহস্যই আ মানুষ এর অজানা নয়। যুগের সাথে মানুষ এর অজানা কে জানার আগ্রহ থেকে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি এমন এক যায়গায় দাঁড়িয়ে যেখানে অলৌকিক কিছু কল্পনা করা বোকামী। কোন কিছু না বুঝেই বিজ্ঞানের অনেক ব্যাখ্যা কে আমরা বলছি কুরআনে অনেক আগেই এর পরিচয় দেয়া হয়েছে। হ্যা দেয়া হয়েছে কিন্তু সেগুলোকে আমরা কত জন মুসলমান বের করে মানুষ এর কল্যানে লাগিয়েছি? জ্ঞান বিজ্ঞানে মুসল্মান্দের অবদান কম নয় কিন্তু সেগুলো কে আমরা চর্চা না করে ধর্মীয় গোঁড়ামি আকড়ে ধরে মানুষ কে করে দিয়েছি বিভ্রান্ত। আল্লাহ বলেছেন নামাজ শেষ করে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পর, রিজিক তালাশ কর।
হারাম আর হালাল এর ব্যাবধান করে দিয়ে তিনি মানুষ এর অনন্ত লোভ কে সামলে দিয়েছেন। আমরা কি তা করছি?
এসব জিনিস বাস্তবায়ন করার জন্য অনেকেই বলবেন শাষন ব্যাবস্থা জরুরি সে জন্য প্রয়োজন ক্ষমতায় যাওয়া। আসলেই কি তাই? ব্যাক্তি গত পর্যায়ে যদি আমরা মেনে চলতে পারি তাহলে কি গোটা ব্যাবস্থা কে পালটে দেয়ার জন্য মারামারি কাটা কাটির দরকার আছে? হ্যা এর জন্য প্রয়োজন উদাহরন সে উদাহরণও নিশ্চই আর কেউ করে দেবে না। সামর্থ বান ব্যাক্তি রা যাকাত সুষ্ঠু ভাবে আদায় করলে তার আশেপাশে অন্তত কয়েকটি পরিবার স্বচ্ছল হতে পারে আর তাহলে কি উদাহরন তৈরি করা খুব কঠিন?
খোলাফায়ে রাশেদিন এর সময় এক সময় এমন হল যে যাকাত দেয়ার মানুষ খুজে পাওয়া কষ্টকর হয়ে দারায়, যার বাড়িতে একদিনের খাবার অবশিষ্ট ছিল সে যাকাত নিতে লজ্জা বোধ করত। তার মানে কি দাড়াল তারা মানসিকতার দিক দিয়ে এমন এক উঁচু যায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল।
কিন্তু আমরা এ আধুনিক যুগে সে মানসিকতা তৈরি দূরে থাক সেখান থেকে সরে এসেছি অনেক অনেক দূরে।
এখন আসি চিফ ইঞ্জিনিয়ার এর কথায়। চীনে তার বাড়ি তার কথায় গ্রাম এর মত যায়গায় কিন্তু সে খানে সে যে নাগরিক সুজোগ সুবিধা পায় তার সাথে আমাদের ঢাকা শহর এর নাগরিক সুবাধার ও আকাশ পাতাল তফাৎ। ত এই মানুষ কে কি করে আমরা আত্মিক উন্নতির কথা বুঝিয়ে ইসলামের কথা বলতে পারি? মুসলমানদের নামে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় যে প্রচার হয় তাতে সে ব্যাপারে তার অসম্ভব বিতৃষ্ণা। বলা যেতে পারে সেসব প্রচার মুসলমান দের হেয় করার জন্য, কিন্তু কথা হল আমরা সে সব প্রচার এর যায়গা গুলোতে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত না করে ফতোয়া দিয়ে দিচ্ছি টিভি দেখা হারাম, ইন্টারনেট হারাম আরও সব আজগুবি জিনিস।
আর যে কয়টা প্রচার মাধ্যম আছে সেগুলো যত ভাবে বিভক্ত সেটা দেখতে গেলে কোন মুসলমানেরই বিভ্রান্তি আসা সাভাবিক। সেগুলোর জন্য কি আমাদের হীনি স্বার্থ গুলোই দায়ী নয়?
নিজের কিছু কথা শেয়ার করলাম। আরো কিছু ঘটনা আছে যে গুলো সময় স্বল্পতায় আজ লিখতে পারলাম না। সামনে চেষ্টা করব। নিজেকে শুদ্ধ মানুষ হিসেবে দাবি করার কোন ইচ্ছাই আমার নেই, কিন্তু ব্যাপার গুলো ধীরে ধীরে এমন এক অস্বস্তি কর পর্যায়ে যাচ্ছে যে সেটা মেনে নেয়া কষ্ট কর তাই কিছু লেখার চেষ্টা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।