॥ সামিউল হক সুমন ॥ বর্তমানে আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় যে ডিজিটাল বিপ্লব ঘটছে তাতে ক্লাশরুমে বসে শিক্ষার্থীরা কতটুকু উপকৃত হচ্ছে সে প্রশ্ন এখন সময়ের দাবী। কাগজ কলমের পরিবর্তে শিক্ষার্থীরা এখন ক্লাশে নিয়ে যাচ্ছে পেনড্রাইভ আর ক্লাশ শেষে পকেটে পুরিয়ে নিচ্ছে সকল জ্ঞান ভান্ডার। এতে করে একজন শিক্ষার্থীর কতটুকু ক্ষতি বা লাভবান সেই হিসেব করাটা একটু কঠিন হলেও নিশ্চিতভাবে শ্রেনীশিক্ষকের লাভের হিসাবটা সহজেই অনুমান করা যায়।
হয়তো ঐ শিক্ষককে আর কখনোই নতুন করে ক্লাশলেকচার নিয়ে আর মাথা ঘামাতে হবে না। একটা ফাইল দিয়েই চালিয়ে যেতে পারবেন বছরের পর বছর।
হয়তো এই ক্লাশলেকচারটা ও সে নিজে তৈরি করেননি, ডাউনলোড করে নিয়েছেন নেট থেকে অথবা কপি করেছেন কোন বন্ধ্বুর কাছ থেকে। ফলে শিক্ষকদের গবেষনার পরিধি যেমন ছোট হচ্ছে তেমনি ভার্চুয়াল প্রতারণার শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরাও।
শিক্ষা মন্ত্রনালয় আয়োজিত বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের অনাগ্রহের বিষয়ে এক আলোচনা সভায় এক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর বক্তব্য এই রকম “একজন শিক্ষক যখন ক্লাসে পড়ান তখন তাঁর প্রয়োজন ব্ল্যাকবোর্ড ও চক এবং পৃথিবীর এই আদি ও অকৃত্রিম পদ্ধতির কোনো বিকল্প নেই। আমি যখন পড়াই তখন ছাত্রছাত্রীদের মুখের দিকে তাকিয়ে অনুমান করার চেষ্টা করি তারা আমার কথা বুঝেছে কি না। যদি মনে হয় বোঝেনি, তখন বোর্ডে আমি আরও কিছু লিখি, আরও ব্যাখ্যা করি, আরও ছবি আঁকি।
দরকার হলে পুরোটা মুছে ফেলে আবার অন্যভাবে শুরু করি। মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরে এগুলো কিছু করা যায় না। ঘরে বসে চকচকে ফন্ট ব্যবহার করে যে কথাগুলো লেখা হয়, ছাত্রদের দর্শক হয়ে সেগুলো দেখতে হয়। তাদেরও আর কিছু করার নেই। কিন্তু বোর্ডে আমি যখন লিখি, ছাত্রছাত্রীরাও সেটা তাদের খাতায় লেখে।
মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরে যেটা দেখানো হয়, সেটা কেউ কখনো লিখতে পারে না। তার কারণ, সেটা তাদের দেখার কথা, লেখার কথা নয়। শুধু তা-ই নয়, সেমিনার দেওয়ার জন্য আমি যে কয়েকবার মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ব্যবহার করেছি, ততবারই লক্ষ করেছি, আমার কথা শোনার জন্য কেউ ভুলেও আমার মুখের দিকে তাকাচ্ছে না, সবাই তাকিয়ে আছে স্ক্রিনের দিকে। পৃথিবীর যেকোনো শিক্ষক জানেন, ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময় না করে কোনো দিন ক্লাসে পড়ানো যায় না। ”
এ বিষয়ে প্রফেসর মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, এটি চমৎকার একটি যন্ত্র কিন্তু এটা কিন্তু মোটেও শিক্ষার বিকল্প নয়।
কাজেই কম্পিউটার আমাদের বুঝতে হবে বাংলাদেশের প্রতিটা স্কুলের একজন শিক্ষককে ল্যাপটপ আর মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর দিয়ে দিলেই লেখাপড়ার উন্নতি হতে শুরু করবে না। ”
আর একজন শিক্ষকের সাথে কথা বললে সে শিক্ষক জানান, “আমার কাছে সব ছাত্র দলবেঁধে এসে অনুরোধ করেছে আমি যেন শিক্ষকদের মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ব্যবহার করে ক্লাস নেওয়া বন্ধ করে দিই। ”
খোদ ছাত্র ছাত্রীরাই যখন এই ভার্চুয়াল সমস্যা চিহ্নিত করতে পেরেছে সেক্ষেত্রে শিক্ষকদেরও উচিত প্রযুক্তি নির্ভর পাঠদানের ব্যাপারে আরো সতর্ক হওয়া। তাই আমাদের মনে রাখতে হবে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর আসলেই একটি চমকপ্রদ যন্ত্র, কিন্তু এটি কনভাবেই ক্লাসে ছাত্রছাত্রী পড়ানোর একমাত্র ব্যবস্থা নয়। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।