দেখা যত ছবি, শোনা যত শব্দ, হৃদয়ের সব উপলব্ধি, আর যত এলোমেলো ভাবনা নিমেষেই বদলে গেল মক্কার রাজপথের এক প্রবাসী বাংলাদেশী ঝাড়ুদারের জীবন। ঘটনাটি ঘটেছে এবারের হজ্জ্বের মৌসুমে। একসময় সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাওয়া ছোট ভাইকে তার প্রাপ্য বিষয় সম্পত্তির ভাগ ফিরিয়ে দিয়ে নিজের কৃত অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্ত করতে গিয়ে ঘটল এই ঘটনা।
প্রবাসী বাংলাদেশী ঐ ঝাড়ুদার তখন মক্কার তানীম সড়ক ঝাড়ু দিতে ব্যস্ত। এমন সময় হজ্জ্বের এহ্রাম পরিহিত এক বৃদ্ধ ব্যক্তি ব্যস্ত রাজপথ পার হয়ে এসে ঝাড়ুদারকে দু’হাত দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরেন।
এতে আশপাশের সব পথচারীরা অবাক হয়ে যান। তবে ঝাড়ুদারও যখন বৃদ্ধকে সাদরে বুকে জড়িয়ে নিলেন তখন বোঝা গেল বৃদ্ধও ঝাড়ুদারের পূর্ব পরিচিত!
পরস্পরকে আলিঙ্গনে জড়িয়ে থাকা এই ব্যক্তি দু’জন আসলে আপন দু’ভাই; উত্তারধিকার সূত্রে প্রাপ্ত পারিবারিক সম্পত্তি ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে বিবাদের জের ধরে একসময় দু’ভাইয়রে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। গত পাঁচ বছরেরও বেশী সময় ধরে এরা কেউ কাউকে দেখেনি। এক সৌদি নিউজ সাইটের সূত্র মতে, বাংলাদেশের সম্ভ্রান্ত এবং সম্পদশালী এক পরিবারের সন্তান এরা। কিন্তু, বর্তমানে বৃদ্ধ এই বড় ভাই একসময় তার এই ঝাড়ুদার ছোট ভাইকে ১৭ মিলিয়ন সৌদি রিয়াল (৩৭ কোটি টাকা) সমমূল্যের নগদ অর্থ সহ আরো অনেক বিষয় সম্পত্তি দিতে অস্বীকার করে তাকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্য সমুদয় বিষয় সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেছিল।
এমনকি যখনই ছোট ভাই তার সম্পত্তির ভাগ চাইতো তখনই বড় ভাই কোনো না কোনোভাবে তাকে জেল পাঠিয়ে জেল খাটাতো। দুঃখ আর মানসিক যন্ত্রণায় বিপর্যস্ত ছোট ভাইটি গত্যন্তর না দেখে বাংলাদেশ ছেড়ে সৌদি আরবে পাড়ি জমায় এবং মক্কার রাজপথে ঝাড়ুদারের চাকরি নেয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশে সে একজন কোটিপতি!
দু’ভাইয়ের মধ্যেকার আবেগঘন দৃশ্য দেখে আশপাশে অনেক লোকজন জড়ো হয়ে যায়। তাদেরকে উদ্দেশ্য করে ছোট ভাই বলেন, “আমার প্রতি খারাপ আচরণের জন্য আমার ভাই করজোড়ে মিনতি করে বারবার ক্ষমা চাচ্ছেন; আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আমি ভাইয়ের সাথে বাড়ি ফিরে যেতে প্রস্তুত।
”
বড় ভাই জানান, তার ক্যান্সার ধরা পড়েছে এবং তিনি যে কোনো সময় মারা যেতে পারেন। তিনি আরো বলেন, ভাইয়ের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য তিনি তাকে অনেক জায়গায় খুঁজেছেন। এতোগুলো বছর তিনি তাকে বঞ্চিত জীবন যাপনে বাধ্য করেছেন। ভাইয়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে তিনি তার প্রায়শ্চিত্ত করতে চেয়েছেন। এমনকি তার ভাইকে কেউ খুঁজে দিলে তার জন্য তিনি অর্থ পুরস্কারও ঘোষণা করেছিলেন।
ওয়েব সাইটটির সূত্র মতে, ছোট ভাইয়ের বক্তব্য হলো তিনি অতীতকে ভুলে গিয়ে তার নতুন জীবন নিয়ে আগামীর পথে এগিয়ে যেতে চান। তিনি বলেন, “দরিদ্র আর অভাবীদের প্রতি আমি সর্বদায় সদয় থাকবো। গত পাঁচ বছরে দারিদ্র আর বঞ্চনার জীবন আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। বছরের পর বছর অন্যায় আর অবিচারের মাঝে জীবন কাটিয়ে এখন আমি প্রতিটি মানুষের সাথে সদাচরণ করে চলবো। ”-মক্কার রাজপথ ঝাড়ু দিতে দিতে বিগত পাঁচ বছরে শিখে ফেলা আরবি ভাষায় কথাগুলো বলেন তিনি।
এই প্রসঙ্গে আল্লাহ'র রাসুল(সা) এর দুটি বাণীর কথা বলা যায়-
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করে দিবে, আল্লাহ তাআলা তার প্রয়োজন পূরণ করে দিবেন। ” (আল-বুখারী ৩/৯৮, মুসলিম ৪/১৯৯৬)
এবং তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“যে ব্যক্তি, এই পৃথিবীতে একজন বিশ্বাসীর দুশ্চিন্তা দূর করে দিবে, মহান আল্লাহ তাকে পুনরুত্থান দিবসের দূশ্চিন্তা থেকে নিরাপদে রাখবেন। যে ব্যক্তি, কারো কাজকে সহজ করে দিবে(যে কঠিন কাজে নিয়োজিত), মহান আল্লাহ তার দুনিয়া ও পরকালের কাজকে সহজ করে দিবেন। যে ব্যক্তি, একজন মুসলিমের দোষ গোপন রাখবে মহান আল্লাহ দুনিয়া ও পরকালে তার দোষ গোপন রাখবেন। মহান আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত একজনকে সাহায্য করতে থাকেন যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার ভাইকে সাহায্য করতে থাকে।
” (মুসলিম ৪/২০৭৪) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।