আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘুরে এলাম শ্রীমঙ্গল ( ভ্রমন কাহীনি ) ২

রেল গাড়িতে এই প্রথম লং জার্নি, মনের আর দেহের ভিতর ছিলো উত্তেজনা, গাড়ির ভিতর ঢোকার পর থেকেই আস্তে আস্তে তা কমতে থাকলো, হতাশও হচ্ছিলাম। পাশের সিটে বসলো এক পুলিশ কর্মকর্তা স্ব পরিবারে সিলেট যাচ্ছে, আমার কাছে মনে হয় সব পুলিশের লোক পরিচিত হতে গেলে প্রথম জিজ্ঞেস করে বাড়ি কই, যথারীতি তিনিও তাই করলেন। আমাকে আসামী করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলেন, কোথায় থাকি কোথায় যাচ্ছি, কি করি কতো কি। এবার আমার পালা আমি পেশাগতভাবে সাংবাদিক, শুরু করলাম প্রশ্নের পর প্রশ্ন, দেখমাত্রই জিজ্ঞাসাবাদে ছিলাম বিরক্ত তাই আমিও তাকে বিরক্ত করতে চেয়েছি, শেষ পর্যন্ত দেখলাম একটু কাজে ব্যস্ততার ভান করছে, আমিও খুশি মনে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম, সারা পথে আমাকে আর একবারও জিজ্ঞাসা করেনি এই পুলিশ অফিসার। যা হোক একটু শান্ত হওয়ার পর আশে পাশে তাকানোর সুযোগ পেলাম, গাড়ি চলছে, শহরের নিয়ন আলো ছেড়ে অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে ট্রেন, বন্ধুরা আমার থেকে অনেক দুরের সিটে বসে আছে।

ওরা দজুন এক সাথে আমি একা। তাই একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম সারা রাত তাহলে কি করবো গল্প করারতো কেউ নেই। কেমন জানি অস্বস্তি লাগছিলো, গাড়ি চলছে কিন্তু কি যেনো আমার মাঝে সমস্যা মনে হচ্ছে বিষয়টা খুজে পাচ্ছিলাম না, কিন্তু বেশ বিরক্তকর লাগছে, অনেকক্ষন ভেবে পেলাম শব্দ, মনে পড়তেই কানের ধারে বাজ পড়ার ক্রমাগত শব্দ বাজতে লাগলো, ট্রেনের এতো শব্দ, তা আবার বিচিত্ররকমের, রাস্তার দুপাশে গাছ থাকলে একরকম, খোলা মাঠ থাকলে আরেক রকম, শহরের ও গ্রামের আলাদা শব্দ, হঠাৎ করেই রাস্তার ব্রিজ, কার্লবার্টের উপর দিয়ে গেলে আরেক ধরনের শব্দ, আর কেহ যদি শুধু এই শব্দের চিন্তা করে তাহলে তার ভ্রমন শেষ, যা হলো আমার, চারিদিকে এতো শব্দ কানে বাজতে লাগলো বিরক্ত হওয়া শুরু করলাম, তার উপর বসেছি জানালার কাছে। আশে পাশে দেখি দিব্বি কেউ কেউ ঘুমের আয়োজন করছে। অবশেষে বাচলাম বন্ধু নিশান ওদের কাছে ডাকতেছে, গিয়ে দেখি নাস্তার আয়োজন, দারুনতো ট্রেনে চিকেন ফ্রাই, তিন বন্ধু এক সাথে কিছুক্ষন খেলাম, সিটের হাতলের উপর বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম, একটু ভালো লাগতে শুরু করলো।

আশে পাশে খুজে দেখলাম কোন সুন্দরী নারী নেই .......মনে মনে একটু হতাশই হলাম হা হা হা হা ......................... নিশান বললো চল ট্রেন এ একটা চক্কর মেরে আসি, আমিও রাজি। আমার আর যাওয়া হলো না আমাকে ব্যাগ পাহাড়া দিয়ে ওরা দুজন বেড়িয়ে পড়লো। যা হোক আমি জানালা দিয়ে গ্রাম দেখি, দুরে শহরের বাতি দেখি। দিনের বেলা কেমন লাগে সেটা যদি দেখা যেতো তাহলে বুঝতে পারতাম রাতের ট্রেন জার্নি থেকে দিনের টা কেমন লাগে। সব শেষে মনে ট্রেন দুর থেকে দেখতেই ভালো লাগে, ট্রেনের ঝিক ঝিক শব্দ এর লম্বা বগি, সমান্তরাল রাস্তা সবই তখন আলাদা আকর্ষন তৈরী করে।

ভিতর থেকে এই সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় না। শিমুল সিটে আসলে আমি ট্রেন দেখতে বেড়িয়ে পড়ি, এক বগি থেকে আরেক বগি, ক্যান্টিন, হকার, দুই বগির ফাকা জায়গায় শুয়ে থাকা মানুষ দেখি। এর মাঝে প্রসাবের বেগ আসলে টয়লেট গিয়ে মাহ ফাপরে, হায় হায় একি ভয়ঙ্কর অবস্থা, হাত দিয়ে ধরার কিছু নেই দাড়িয়ে না হয় ছোট টার কাজ সারা যাবে বড়টার কি হবে। তার উপর ট্রেনের ঝাকিতো আছে, ভাবলাম অন্য বগির কি অবস্থা, অন্য বগির টয়লেট দেখার জন্য ছুটলাম, কয়েকটার দেখি টয়লেটের নিচের স্টিলের পাতটাও নেই চলন্ত গাড়ির নিচের দিকে তাকালেই কেমন শিড়দাড়া শীতল হয়ে আসে। কয়েকটার দেখি পানির ব্যবস্থা বিকল, বদনা কিছুই নাই।

মনে মনে ভাবলাম আমি না হয় শোভণ চেয়ারের যাত্রী তাহলে প্রথম শ্রেনীর কি অবস্থা দেখে আসি, সেখানেও এসে হতাশ তেমন কোন পার্থক্য নেই এক কেবিন ছাড়া। জিনজার, বিস্কুট কিনে সিটে ফিরে আসলাম, কিছুক্ষন মাসুদ রানা পড়ার চেষ্টা, এরই মধ্যে কোন এক যাত্রী লাইট বন্ধ করে দিলো। এবার আমি অন্ধকারের যাত্রী। কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকি জানালার বাইরে আলো আধারের দিকে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.