আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাতাপিতার প্রতি কর্তব্য

হিমালয় থেকে সুন্দরবন হঠাৎ বাংলাদেশ ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসলে ছোট বোন বলল তাকে “মাতাপিতার প্রতি কর্তব্য” রচনাটা লিখে দিতে হবে । রচনাটা নাকি খুব গুরুত্বপূর্ণ । পরীক্ষায় আসার সম্ভাবনা প্রায় একশ ভাগ । কিন্তু অনেক বই ঘেঁটেও সে নাকি ভালো কোনো রচনা পাচ্ছে না । তাই আমাকে লিখে দিতে হবে ।

আমি অলস মানুষ । বললাম- রচনার বই যে কয়টা জোগাড় করেছিস সব নিয়ে আয় । আমার অলস মনের গোপন ইচ্ছা এই বই থেকে এই পয়েন্ট ঐ বই থেকে ঐ পয়েন্ট দেখিয়ে দিয়ে আমার দায় সারবো । সংগ্রহ করা পাঁচ-ছয়টা বই আনা হল । আমি বই খুলে দেখলাম, ঘটনা সত্য ।

রচনাগুলো হয় খুবই ছোট, নয়তো মানহীন । বাধ্য হয়ে আমাকে লিখে দিতে হল । নেট থেকে কিছু কোটেশন সংগ্রহ করে লিখতে শুরু করে দিলাম । আমার বোন ক্লাস ফোরে পড়ে । লেখার সময় তাই লক্ষ্য রেখেছি রচনাটা যেন ক্লাস ফোর এবং ফাইভের উপযোগী হয় ।

ফাইভে উঠে তাহলে আর নতুন করে শেখা লাগবে না । সহজ শব্দে ছোট ছোট বাক্যে লেখার চেষ্টা করেছি । রচনাটা মুখস্ত করতে গিয়ে তাকে এটা অনেক বার পড়তে হবে । তাই মা-বাবার প্রতি কি রকম আচরণ করা উচিত এই পরামর্শটাও সূক্ষ্মভাবে দেবার চেষ্টা করেছি । এমনিতে তো এ ধরনের পরামর্শ ছোটদেরকে দেয়া খুব কঠিন কাজ ।

দিলেও হয়তো তেমন কাজ হয় না । কিন্তু রচনাটা বার বার পড়তে গিয়ে মা-বাবার প্রতি তার দায়িত্ব ও কর্তব্য মাথায় গেঁথে যাবে । সেক্ষেত্রে ভালো ফলাফল আশা করা যায় । এত কষ্ট করে লেখা রচনাটা একজনের কাজে লাগার চেয়ে বেশী মানুষের কাজে লাগলে আমার কষ্টটার সঠিক মূল্যায়ন হবে এই ভেবে ব্লগে শেয়ার করলাম । কারও কাজে এলে আসলেই ভালো লাগবে ।

এই রচনাটাকে বেস ধরে আরেকটু লিখে এটাকে ক্লাস সিক্স-সেভেনেও চালিয়ে দেয়া যাবে । ক্লাস ফোর-ফাইভের যাদের হাতের লেখা স্লো তারা রচনার শেষের দিকের এক-দুইটা পয়েন্ট পরীক্ষার জন্য বাদ দিতে পারে । কিন্তু শেখানো উচিত পুরোটাই । এই শিক্ষাটা তাদের সারা জীবনের জন্য । ধন্যবাদ ।

মাতাপিতার প্রতি কর্তব্য ভূমিকাঃ একটি শিশুর যখন জন্ম হয় তখন সে থাকে অনেক ছোট, আর অনেক বেশি অসহায় । সে হাঁটতে পারে না, কথা বলতে পারে না, নিজে নিজে খেতে পারে না । সে আসলে কিছুই পারে না । বাবা-মা এই ছোট্ট, অসহায় শিশুটিকে অনেক আদর-যত্ন করে বড় করে তোলেন । তাই মা-বাবাই আমাদের সবচেয়ে বড় আপনজন, সবচেয়ে প্রিয় মানুষ ।

আমরা আমাদের মা-বাবার কাছে চিরঋণী । এই ঋণ কখনোই শোধ করা যাবে না । তাই আমাদের উচিৎ মা-বাবার প্রতি আমাদের কর্তব্যগুলো সঠিক ভাবে পালন করা । মাতা-পিতার অবদানঃ একটি শিশু যখন মায়ের পেটে থাকে তখন মায়ের অনেক কষ্ট হয় । নয় মাস মায়ের পেটে থাকার পর শিশুটির যখন জন্ম হয় তখন মায়ের আরও বেশি কষ্ট হয় ।

মা-বাবা এই ছোট্ট অসহায় শিশুটিকে আদর-যত্ন করে বড় করে তোলেন । মা-বাবা কষ্ট করে টাকা উপার্জন করেন । আমাদের জন্য খাবার, কাপড়, বই-খাতা, ঔষধ, খেলনা কিনে দেন । মা আমাদের খাবার খাইয়ে দেন, গোসল করিয়ে দেন, কাপড় কেঁচে দেন, অসুখ হলে সারা রাত জেগে সেবা করেন । মা-বাবা আমাদের স্কুলে নিয়ে যান, লেখাপড়া শেখান, ভয় পেলে সান্ত্বনা দেন, আর অনেক অনেক আদর করেন ।

মাতা-পিতার প্রতি কর্তব্যঃ মা-বাবা আমাদের অনেক আদর করেন, যত্ন নেন । সে জন্য সন্তানদেরও উচিৎ মা-বাবার কথা শোনা, তাদের যত্ন নেয়া । লেখাপড়া করলে তারা খুব খুশি হন । তাই আমাদের উচিৎ ভালো ভাবে লেখা পড়া করা, বিভিন্ন কাজে যতটুকু পারি তাদেরকে সহযোগিতা করা । মা-বাবা যা করতে বলেন তা ভালো ভাবে করা উচিৎ ।

যা করতে নিষেধ করেন সেটা কখনোই করা উচিৎ না । এ সম্পর্কে মহানবী (স) বলেন – “মা-বাবার সন্তুষ্টির উপর আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি নির্ভর করে । আর আল্লাহ্‌র অসন্তুষ্টিও মা-বাবার অসন্তুষ্টির উপর নির্ভর করে ” অর্থাৎ, মা-বাবা খুশি হলে আল্লাহও খুশি হন । আর মা-বাবা সন্তানের উপর মন খারাপ করলে আল্লাহ্‌ও ঐ সন্তানের উপর মন খারাপ করেন । বিখ্যাত হিন্দু পণ্ডিত স্বামী বিবেকান্দ বলেন – “মনে রাখবে, মা-বাবা হচ্ছেন স্রষ্টার প্রতিরূপ ।

তাই যে কোন উপায়ে মা-বাবাকে খুশি রাখবে । মা-বাবা খুশি হলে স্রষ্টাও তোমার উপর খুশি হবেন । ” খ্রিস্টান ধর্মে বলা হয়েছে – “বাচ্চারা মা-বাবার কথা শোনো । তাদেরকে সম্মান করো । তাহলেই তোমাদের ভালো হবে ।

আর অনেক দিন বাঁচবে । ” মহানবী (স) বলেছেন – “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত । ” অর্থাৎ, যারা মায়ের সেবা করবে তারা বেহেস্তে যাবে । হিন্দু ধর্ম গ্রন্থে বলা হয়েছে – “পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম” অর্থাৎ, বাবার সেবা করলে অনেক পূর্ণ হবে, আর স্বর্গে যাওয়া যাবে । মা-বাবার সাথে সন্তানের আচরণঃ মা-বাবার সাথে কখনোই খারাপ আচরণ করা উচিত না ।

আমরা কখনোই মা-বাবার সাথে বেয়াদবি করব না, তাদেরকে ধমক দিব না, তাদের সাথে রাগ করব না, উঁচু গলায় কথা বলব না । আমরা এমন কিছু করব না যাতে তাদের মন খারাপ হয় । পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহ্‌ আদেশ দিয়েছেন – “মা-বাবার সাথে ভালো ব্যাবহার করো । তাদেরকে ধমক দিবে না। তাদের সাথে ভদ্রভাবে কথা বলো ।

” [সূরা বনি ইসরাইলঃ ২৩-২৪] স্বামী বিবেকান্দ বলেন – “সে ছোট শিশুটি অনেক ভালো শিশু যে কখনই মা-বাবার সাথে কর্কশভাবে কথা বলে না । ” সন্তানের আচরনে মা-বাবা কষ্ট পেলে আল্লাহ্‌ প্রচন্ড রাগ করেন । এ সম্পর্কে মহানবী (স) বলেছেন – “মা-বাবকে কষ্ট দিলে সন্তানের গুনাহ আল্লাহ্‌ মাফ করেন না । তাকে তিনি পৃথিবীতেই নানা বিপদ দিয়ে শাস্তি দেন । ” মা-বাবা ভুল করলে তাদের প্রতি কর্তব্যঃ মা-বাবাও মানুষ ।

তারাও মাঝে মাঝে ভুল বা অন্যায় কাজ করতে পারেন । কিন্তু মা-বাবা সন্তানের জন্য এত কষ্ট করেন আর এত আদর করেন যে মা-বাবা কোন ভুল বা অন্যায় কাজ করলেও তাদের সাথে কখন কোন খারাপ আচরণ করা যাবে না । তখন তাদের ভদ্র ভাবে বুঝাতে হবে । অনেক সময় লজ্জা পেয়ে তারা সন্তানের কথা শুনতে চাইবেন না । তখন তারা যাদের কথা শোনেন (যেমনঃ শিক্ষক, দাদা-দাদি, নানা-নানি বা অন্য বড় কেউ) তাদেরকে দিয়ে বোঝাতে হবে ।

মা-বাবা কখনও কোন ভুল বা অন্যায় কাজ করতে বললে সেটা করা যাবে না । কিন্তু সে সময়ও তাদের সাথে খারাপ আচরণ করা যাবে না । তখনও তাদেরকে ভদ্র ভাবে বুঝাতে হবে । মা-বাবা সন্তানকে কখনও কষ্ট দিলেও মা-বাবাকে কষ্ট দেয়া যাবে না । মহানবী (স) বলেন – “মা-বাবা সন্তানদের সাথে খারাপ ব্যবহার করলেও মা-বাবার সাথে খারাপ ব্যবহার করা যাবে না ।

বরং তাদেরকে সেবা করতে হবে । ” বৃদ্ধ হলে মা-বাবার প্রতি কর্তব্যঃ মা-বাবা বৃদ্ধ হলে তাদের যত্ন নেয়া উচিৎ । কখনোই বিরক্ত হওয়া উচিৎ না । আল্লাহ্‌ পবিত্র কোরআনের সূরা বনি ইসরাইলে বলেন যে– মা-বাবার সেবা করতে গিয়ে কখনও বিরক্ত হয়ে উহ্ শব্দটিও করা যাবে না । মা-বাবা মারা গেলে কর্তব্যঃ মা-বাবা মারা গেলে সন্তানদের কর্তব্য তাদের জন্য দোয়া করা ।

সব সময় তাদে জন্য আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করতে হবে – “হে আল্লাহ্‌, তাদের প্রতি দয়া করুন, যেমন ভাবে আমার ছোট বেলায় তারা আমাকে দয়া করেছেন । ” [সূরা বনি ইসরাইলঃ ২৪] উপসংহারঃ মা-বাবার সাথে ভালো ব্যবহার করলে আর তাদের কথা মত চললে আমরা জীবনে অনেক বড় হতে পারবো । তখন সবাই আমাদেরকে খুব ভালো বলবে । তাই আমাদের উচিৎ মাতা-পিতার প্রতি কর্তব্যগুলো সঠিকভাবে পালন করা । তাহলে আমরাও একদিন বড় হব, জীবনে অনেক সুখ আর শান্তি পাব ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।