যা চাই তাই-ই পাই,তাই পাই যাহা না পাই,যা না পাই তাই-ই চাই...
অটবির কাস্টমার কেয়ার বিভাগে প্রায় প্রতিদিনই ছাড়ের নামে প্রতারণার অভিযোগ যাচ্ছে কিন্তু কোনো অভিযোগই পাত্তা দিচ্ছে না অটবি ফার্নিচার। খোদ এ প্রতিষ্ঠানের অনেক কর্মকর্তাও সাপ্তাহিক বোর্ড মিটিংয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনিমেষ কুণ্ডুকে জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ভূয়া ডিসকাউন্টের বিষয় জেনে গিয়ে অভিযোগ করছে। কিন্তু অনিমেষের একক স্বেচ্ছাচারিতায় চলছে ডিসকাউন্টের নামে প্রতারণা।
অটবি সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন জেলায় অটবির একাধিক ডিলার লিখিতভাবে অটবি কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছেন, প্রতিমাসে অটবির ‘বিশেষ ছাড়’ ক্রেতারা বিশ্বাস করছেন না। এতে প্রতিষ্ঠানের সুনামও ক্ষুন্ন হচ্ছে।
চট্টগ্রাম থেকে অটবির একজন ডিলার অভিযোগ করে কর্তৃপক্ষ বরাবর যা লিখেছেন তার একাংশ এখানে তুলে ধরা হলো, ‘...দীর্ঘদিন ধরে প্রতিমাসে ছাড়ের নামে যে বিশেষ অফার দেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে ক্রেতাদের মাঝে অটবি সম্পর্কে বিরুপ ধারণার জন্ম নিচ্ছে। কারণ ক্রেতারা এখন সচেতন। প্রতিমাসে প্রতিদিন একটি কোম্পানির ছাড় দেওয়া থাকলে ক্রেতাদের কাছে দামের মূল্য নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয় এতে অটবি ফার্নিচার সম্পর্কেও নেতিবাচক ধারণা করছেন ক্রেতারা। ’
এদিকে অটবি পত্রিকায় যে ডিসকাউন্ট দিয়ে থাকে তার সঙ্গে ঢাকার বাইরে জেলাগুলোতে যেসব ডিলার রয়েছে তার সঙ্গে বিজ্ঞাপনের মূল্য তালিকার সঙ্গে কোনো মিল দেখছেন না। ক্রেতারা ডিলারদের কাছে যে বিজ্ঞাপনে ফার্নিচারের দাম জেনে যখন কিনতে যান তখন দেখা গেছে বিজ্ঞাপনে যে ডিসকাউন্ট দেখা গেছে তার সঙ্গে কোনো মিল নেই।
এছাড়া দাম বাড়িয়ে ডিসকাউন্ট দেখিয়ে অনেক উদাহরণই সৃষ্টি করেছে অটবি। মতিঝিল কর্মরত বেসরকারি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ‘সেপ্টেম্বরে আমি অটবির শো রুমে গিয়ে একটি খাট দেখতে যাই, ভেবেছি পরের মাসে কিনবো। দামও লিখে নিয়ে এসেছি। অক্টোবরে গিয়ে দেখি ওই মডেলের খাটটিতে স্পেশাল ডিসকাউন্ট দিয়ে ২ হাজার টাকা দাম বাড়ানো হয়েছে!’
ছাড়ের নামে এ প্রতারণা দেখে হতভম্ব হয়ে গেছেন এ ব্যাংক কর্মকর্তা।
প্রয়াত ভাস্কর্যশিল্পী নিতুন কুণ্ডুর মেধা-শ্রমে-ঘামে প্রতিষ্ঠিত অটবি ফার্নিচার এখন প্রতারণার অপর নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রথিতযশা শিল্পী নিতুন কুণ্ডু যে অঙ্গীকার নিয়ে শিল্প ও ব্যবসার অনন্য সমন্বয় ঘটিয়েছিলেন, অটবি নামের প্রতিষ্ঠানটিতে এখন তা অনেকাংশেই অনুপস্থিত।
কঠোর পরিশ্রম, সততা ও শিল্পের সমন্বয়ে ব্যবসা করার কারণে অটবি ফার্নিচারকে তিনি দেশের বৃহৎ একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে দাঁড় করাতে পেরেছিলেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর থেকেই তার গড়া প্রতিষ্ঠানে সততার অভাব দেখা দিতে শুরু করে।
সূত্র জানায়, ২০০৬ সালে নিতুন কুণ্ডুর মৃত্যুর পরই অটবি ফার্নিচারে শুরু হয় তার সন্তান বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অনিমেষ কুণ্ডুর স্বেচ্ছাচারিতা।
বাবার তৈরি করে যাওয়া বিশাল সুনামকেই বড় পুঁজি করে অতিরিক্ত দাম ও তার ওপর ভুয়া ডিসকাউন্ট এবং নিম্নমানের উপাদান ব্যবহার চলতে থাকে।
ফলে দিনে দিনে বাড়তে থাকে ক্রেতাদের ক্ষোভ। অটবির শো-রুমগুলোতে প্রতিদিনই জমা হচ্ছে ক্রেতাদের অভিযোগের পাহাড়।
রেকর্ড করছে অটবি!
ভূয়া ছাড়ের নামে রীতিমতো রেকর্ড করেছে অটবি ফার্নিচার! বাংলানিউজের অনুসন্ধানে দেখা গেছে দেশের আর কোনো প্রতিষ্ঠান অটবির মতো প্রতিমাসে ডিসকাউন্টের নামে প্রতারণা করে না।
অটবিতে সারা বছরই ভুয়া ছাড় থাকে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, বছর জুড়েই প্রতিমাসে অটবি বিভিন্ন নামে ডিসকাউন্ট দেয়।
বৈশাখী ডিসকাউন্ট, আনন্দ অফার, স্বাধীনতা অফার, বিজয় অফার, ক্লিয়ারেন্স সেল নামসহ বিভিন্ন নামে থাকে অটবি ডিসকাউন্ট। বর্তমানে চলছে এ প্রতিষ্ঠানটির তথাকথিত ‘বিগ অফার’ এর নামে ভুয়া অফার।
জানা গেছে, পণ্যের উপর শুধু স্টিকার লাগিয়ে ডিসকাউন্ট লাগানো হয়। মূলত ডিসকাউন্ট দেওয়া হয় না। দাম আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
শুধু স্টিকারে দেখানো হয় ছাড় দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে অটবির ডিজিএম (কমিউনিকেশন ডিপার্টমেন্ট) আতিকুর রহমান বলেন, ‘ডিসকাউন্ট কি দিবো না দিবো সেটা আমাদের ব্যাপার। আমাদের কর্তৃপক্ষ যা ভালো মনে করছে তা দিচ্ছে। ’ তিনি এ বিষয়ে আর কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
অটবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনিমেষ কুণ্ডুর সঙ্গের কয়েকবার কথা বলতে চেষ্টা করা হলে প্রতিষ্ঠান থেকে জানানো হয়, এসব বিষয়ে তিনি মন্তব্য করবেন না।
অটবির মার্কেটিং বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রতি মাসেই অটবি কৌশলে ভুয়া ছাড় দেয়। প্রতিমাসেই যদি কোনো প্রতিষ্ঠান এভাবে পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে ছাড় দেয় তাহলে ব্যবসার লাভতো দূরে থাক, মূলধনও থাকবে না। ’
তিনি জানান, অটবি ছাড়ের নামে মাসজুড়েই ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে।
দেশের আরেকটি খ্যাতনামা ফার্নিচার কোম্পানির একজন পরিচালক বলেন, ‘‘একই উপাদান আমাদের ও অটবির। অথচ অটবিতে আমাদের দামের চাইতে তাদের ফার্নিচারের দ্বিগুণ দাম রাখছে।
’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘একই উপাদানে তৈরি খাটের জন্য আমাদের বিক্রয় মূল্য ২৪ হাজার অথচ অটবিতে তা ৪০ হাজারের বেশি। ’’
দাম বেশির এ যুক্তি অবশ্য অটবি দিচ্ছে তাদের প্রতিষ্ঠানে কর্মী বেশী। অটবিতে কর্মরত শত শত কর্মীর বেতন, অফিস ভাড়া, পত্রিকা ও টেলিভিশনে বিজ্ঞাপনের খরচসহ আনুসাঙ্গিক ব্যয় ফার্নিচারের দাম বাড়িয়েই তুলতে হয়।
বাংলা নিউজ২৪ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।