আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের স্বাভাবিকভাবে মরতে দিন

রেকর্ড করা হয় রেকর্ড ভাঙার জন্য। আর একবার যেটা রেকর্ড হয় পরেরবার তার চেয়ে কম কিছু হয়ে যায় নিতান্ত সাধারণ। তাই দুই চার পাঁচ দশ এখন আমাদের গায়ে সয়ে গেছে। বিশ পঞ্চাশটা হলে আমরা একটু নড়ে চড়ে বসি। তবুও একশ’ দেড়শ’র কম কিছু হলে তা সেভাবে আকৃষ্ট করে না।

তাই তো প্রতিবারেই চেষ্টা থাকে আগেরটা ছাড়িয়ে যাবার। টিভিতে খবরে দেখলাম বিজিএমইএ সভাপতি সাহেব লিখিত বক্তব্য সুন্দর পাঠ করছেন। আমাদের মন্ত্রী-মিনিস্টারদের মতন করে ’জড়িত সবাইকে’ জাতীয় একটা বক্তৃতা দিলেন। এবং গার্মেন্টস ব্যবসায়ী জ্ঞাতী ভাইএর পক্ষ সমর্থন করে জানালেন তার কোন দোষ নাই। কারণ জনৈক ইঞ্জিনিয়ার নাকি ফাটল ধরা ভবনটিকে নিরাপদ ঘোষনা করে গেছেন।

সভাপতি সাহেব, আপনার সরলতায় আমি মুগ্ধ। একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী হিসেবে আপনি যথাযোগ্য সরলতার প্রমাণই রাখলেন। কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না, একটা শ্রেণীর এদেশে ইচ্ছে পূরণ অনেক সহজ। এদেশে কিছু টাকা খরচ করলেই আপনি পেতে পারেন আপনার ইচ্ছে মতো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারের সার্টিফিকেট, এমনকি মামলার ফলাফল। ইঞ্জিনিয়ার সাহেবকেও যে দোষ দেব, তাও পারছি না।

উনি হয়তো ইচ্ছে করে এমন একটা মত দেননি। উনি সরল মনেই যা বুঝেছেন, মতটা দিয়েছিলেন। সমস্যা বরং আরেকটু পেছনে। ইঞ্জিনিয়ার সাহেব সুচিন্তিত মত দেবেন কী করে? উনিতো এক নাইস সানি মর্নিং-এ ঘুম থেকে উঠে ইঞ্জিনিয়ার হয়ে গেছেন। ওইযে বাবার টাকা ছিল।

হয়তো এক জন্মদিনে বাবা ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ারিংএর এই সার্টিফিকেটটা গিফট করেছিলেন। ঘটনা যাই হোক, আমার মনে শুধু একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, কিছু টাকার বিনিময়ে একটা গণহত্যা করা হলো? কত টাকার চুক্তি ছিল? ইঞ্জিনিয়ার আদৌ এমন কোন মত দিয়েছেন কিনা কে জানে। কিন্তু আমি আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, আমাদের বিজিএমইএ টাইপ সংগঠন কখনও ভুল বলেনা, মিথ্যে বলেনা, মনগড়া কথা বলেনা। যদি কিছু বলেও ফেলে পরবর্তীতে তাও সত্যি হয়ে যায়। জনাব আতিকুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার ঘোষনা করল আর আপনারা মেনে নিলেন? কই ব্রাক ব্যাংক তো মানল না।

নাকি আপনারা ভাবলেন গার্মেন্ট কর্মীদের ইমিউন সিস্টেম ব্যাংকারদের চেয়ে অনেক ভালো? নাকি ভাবলেন, গার্মেন্টস কর্মীদের জীবনের দাম ওদের শ্রমের চেয়ে, ওদের ঘামের চেয়েও সস্তা? দু-চারজনে কিছু যায় আসে না? দু-চারশতেও না? বরং একই পরিবারের সবাই মারা গেলে আপনারা যে তড়িৎ অর্থ পুরস্কার ঘোষণা করেন তাও বরং বেচে যায়! টাকা নেবেটা কে? পাটের দিন আর সেভাবে নেই। এখন আপনারাই সোনা ফলানো সোনার ছেলে। স্পেকট্রাম, হলমার্ক, তাজরিন যাই হোক না কেন, সোনা সোনাই। সোনার ছেলেদের সম্পর্কে বক্রোক্তিতে রাষ্ট্র মান করতে পারে। আমরা এই যে না মরে বেচে আছি, বেঁচে থেকেতো রাষ্ট্রেরই সুফল ভোগ করছি, না কি? কিন্তু এই বাঁচাই কি সেই বাঁচা? হে রাষ্ট্র, আমাদের সুস্থভাবে বাঁচতে দিতে না পারুন অন্তত স্বাভাবিক ভাবে মরতে দিন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।