মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে গত সপ্তাহে নতুন করে শুরু হওয়া জাতিগত সহিংসতায় অন্তত ৮৮ জন নিহত হয়েছে। গৃহহীন হয়েছে ২৮ হাজার। এদের বেশির ভাগই মুসলিম। জাতিসংঘ এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, এ সহিংসতা মিয়ানমার সরকারের সংস্কার কার্যক্রমকে ব্যাহত করতে পারে। খবর এএফপি, বিবিসি ও এপির।
এদিকে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি। দাঙ্গায় ধ্বংসযজ্ঞের স্যাটেলাইট চিত্র একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন প্রকাশের পর সহিংসতায় ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করেছে মিয়ানমার সরকার।
মিয়ানমারে জাতিসংঘ দপ্তরের প্রধান অশোক নিগাম গতকাল সোমবার বলেন, দাঙ্গায় এ পর্যন্ত ২৭ হাজার ৩০০ লোক গৃহহীন হয়েছে। এদের বেশির ভাগই মুসলিম। তারা রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিতিউইয়ের দিকে যাচ্ছে।
অশোক বলেন, ‘এটি আমাদের প্রাথমিক তথ্য। আমাদের আশঙ্কা, এ সংখ্যা বাড়তে পারে। কেননা, সহিংসপূর্ণ উপকূলীয় এলাকার অনেক লোক নৌকাযোগে পালিয়ে গেছে, যাদের হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি। ’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, নতুন করে সহিংসতায় কমপক্ষে ৮৮ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ৪৯ জন পুরুষ ও ৩৯ জন নারী।
এ নিয়ে গত জুন মাস থেকে শুরু হওয়া জাতিগত দাঙ্গায় প্রায় ১৮০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আশঙ্কা, এই সংখ্যা অনেক বেশি হবে।
নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ২৫ অক্টোবর দাঙ্গার একটি স্যাটেলাইট চিত্র প্রকাশ করে। এর পরপরই মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের মুখপাত্র জ হতেই সহিংসতায় ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করে বলেন, রাখাইন রাজ্যের সব গ্রাম ও শহরের কিছু অংশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার রাখাইন রাজ্যের নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার করছে।
সেসব এলাকায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনে আরও পুলিশ ও সেনাসদস্য পাঠানো হবে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রকাশ করা স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, রাখাইন রাজ্যের উপকূলবর্তী শহর কায়াউকপুতে প্রায় ৩৫ একর জায়গা আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গেছে। ধ্বংস হয়েছে ৮০০টিরও বেশি ঘরবাড়ি। ধ্বংস হয়ে যাওয়া এই ৩৫ একর জায়গার বাসিন্দাদের বেশির ভাগই মুসলিম রোহিঙ্গা বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
সিতিউইয়ের উপকণ্ঠে একটি আশ্রয়শিবিরে ওঠা রোহিঙ্গা নারী চো চো (২৮) বলেন, ‘তারা (রাখাইন) আমাদের ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে।
আমার স্বামী-সন্তানকে হত্যা করেছে। দয়া করে আমাদের সবাইকে মেরে ফেলুন। আমি তা-ই চাই। ’ ফের হামলার আশঙ্কা করে তিনি বলেন, ‘আমি রাখাইনে থাকতে চাই না। আমি এটাকে ঘৃণা করি।
’
গত সপ্তাহে রাখাইনের চারটি স্থানে রোহিঙ্গা ও রাখাইনদের মধ্যে এই সহিংসতা শুরু হয়। এর পরপরই হাজার হাজার মানুষ প্রাণ বাঁচাতে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়।
এর আগে গত মে মাসে একজন বৌদ্ধ নারীকে কয়েকজন মুসলমান ধর্ষণ করেছে বলে গুজব রটলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় এই জাতিগত সহিংসতায় নিহত হয়েছিল ৯০ জন। সহিংসতা থামাতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল রাখাইন রাজ্যে।
এর পরও নতুন করে দাঙ্গার প্রকৃত কারণ কী, তা জানা না গেলেও রোহিঙ্গা ও রাখাইন বৌদ্ধরা একে অপরকে দায়ী করছে।
( খবর : প্রথম আলো )
আর কতদিন চলবে রাখাইনের মুসলিম জনগোষ্ঠির উপর নির্যাতনের ষ্টীম রোলার!
আর কতদিন মজলুম মা-বোনের অসহায় আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হবে!
আর কতদিন শুনতে হবে নিষ্পাপ শিশুদের বুকফাটা কান্না ও চিৎকার!
এই আকাশ সাক্ষী থাকবে জুলুমের এই ভয়াবহ চিত্রের!
এই আকাশই একদিন প্রত্যক্ষ করবে অত্যাচারের পরিণাম কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে!
একদিন না একদিন শাস্তি পেতেই হবে নিষ্ঠুর জালিমদের! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।