আমি একজন ভাল ছেলে । যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই ভোজ্যতেল সয়াবিনের দাম বাড়ছে। সরকারের বাজার তদারকি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা- কোনো কিছুই দামের ঊর্ধ্বগতির রাশ টেনে ধরতে পারছে না। লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধির মাশুল গুনতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। সরকারি সংস্থা টিসিবি (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ)-এর হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি লিটার সয়াবিনের দাম বেড়েছে ১৩ টাকা।
তবে বাস্তবে দাম বেড়েছে আরো বেশি। খুচরা বাজারে প্রতি লিটার সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়। মাত্র এক সপ্তাহ আগেও লিটার প্রতি দাম ছিল ১১০ থেকে ১১২ টাকা। লাগামছাড়া বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগও নেই। এর সুযোগ নিচ্ছে পাড়া-মহল্লার দোকানিরা।
ক্রেতাদের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো দাম আদায় করছে তারা।
পাইকারি বাজারেও প্রতিমণ সয়াবিনের দাম ৬০০ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে মৌলভীবাজারে প্রতিমণ সয়াবিন ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ৪ হাজার ৪০০ টাকায়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে বাজার পরিস্থিতি অস্থিতিশীল।
তন্মধ্যে ভোজ্যতেল নিয়ে সবচেয়ে বেশি তুঘলকি কা- ঘটেছে। সরকারের তরফে দফায় দফায় বৈঠক করে এর সমাধান সূত্র বের করার চেষ্টা হয়েছে বটে; কিন্তু প্রায় সব উদ্যোগই হোঁচট খেয়েছে। শেষ পর্যন্ত দেখা গেছে, বাজার নিয়ন্ত্রণহীনই থেকে গেছে। সয়াবিন যেহেতু আমদানি করা একটি পণ্য, সেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারে এর মূল্য উঠা-নামার সঙ্গে স্থানীয় বাজারের অবশ্যই মিল থাকা বাঞ্ছনীয়। ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান কমার বিষয়টির সুরাহা এককভাবে মিল মালিকরা সম্পন্ন করে নিজেদের ইচ্ছামাফিক মূল্য নির্ধারণ করে নিতে পারে না।
বাজার ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি এবং এ সংক্রান্ত নানা ধরনের প্রশ্ন দীর্ঘদিন ধরে অনিষ্পন্ন অবস্থায় ঘুরপাক খাচ্ছে এবং ভোক্তারা এর খেসারত দিয়ে চলেছে। বাজারে সম্প্রতি সয়াবিনের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির অভিযোগও এসেছে। অতীতেও এমন অপচেষ্টা হয়েছে এবং মহলবিশেষ এ থেকে ফায়দা লুটে নিয়েছে। মূল্য বৃদ্ধি করতে হলে কতকগুলো নিয়ম ও আইনের মধ্য দিয়েই তা করতে হবে। ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশক নিয়োগ আদেশ ২০১১’ অনুযায়ী কোনো কোম্পানি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি কিংবা হ্রাস করতে চাইলে সমিতির মাধ্যমে তা করতে পারবে।
আর নতুন মূল্য কার্যকর হওয়ার ১৫ দিন আগে তা মনিটর সেল, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানাতে হবে। কিন্তু এসব নিয়ম বরাবরই থাকছে উপেক্ষিত।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের দাম কমতির দিকে। ট্যারিফ কমিশন বলেছে, গত নভেম্বরে যে পরিমাণ সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে তাতে সরবরাহের সঙ্কট হওয়ার কথা নয়। মূল্যবৃদ্ধির পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে পরিবেশক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছে, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় এবং মিলগেটে দাম বেশি হওয়ায় সয়াবিন তেলের এই মূল্যবৃদ্ধি।
কিন্তু বস্তুতঃ চাহিদা-সরবরাহের সামঞ্জস্যহীনতার যুক্তিও ধোপে টিকছে না। হিসাব করে দেখা গেছে, মিলগুলো অক্টোবর মাসে প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন ভোজ্যতেল পরিশোধন করেছে। অর্থাৎ এক লাখ ৪৮ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু সরবরাহ করেছে মাত্র এর এক-তৃতীয়াংশ, ৫১ হাজার ৩৬০ মেট্রিক টন। বাকি তেল কোথায় তার হিসাব নেই।
মিলগেট বলছে, পরিশোধিত তেল সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী সেই তেল বাজারে আসছে না। যে পরিমাণ পরিশোধন করা হয়, বাজারে সরবরাহ হয় তার অর্ধেক বা তার চেয়েও কম।
স্পষ্টতই বোঝা যায়, বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে একদিকে এর দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়, অন্যদিকে পরিশোধিত তেলের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সীমান্তের বাইরে পাচার করে দেয়া হয়। মূলত, সেটি ভারত ও মায়ানমারে পাচার হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের নীরব সম্মতি তথা সংশ্লিষ্ট মহলের সম্পৃক্ততার কারণেই এটি হচ্ছে।
যা কোনোমতেই বরদাশতযোগ্য নয়।
উল্লেখ্য, ভোজ্যতেলের বিপণনে অরাজকতার কথা আমরা সবসময়েই বলে আসছি। এখানে চাহিদা-সরবরাহের স্বাভাবিক নিয়ম চলছে না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মূল্যবৃদ্ধির কারণ খুঁজে বের করতে হাইকোর্ট পর্যন্ত কিছুদিন পূর্বে নির্দেশ দিয়েছিলো।
যে বিষয়টি প্রণিধানযোগ্য, ভোজ্যতেলের আমদানি এখনো মুষ্টিমেয় কয়েকটি বিজনেস হাউজের নিয়ন্ত্রণে।
তাই সরকার বিভিন্ন সময় নানা পদক্ষেপ নিলেও মূল সিন্ডিকেট ভাঙা যায়নি। দু’দিন পরই ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর প্রবণতা এবং প্রক্রিয়া অব্যাহতই থাকছে। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে চিনি ও ভোজ্যতেলের পরিবেশক আইন চালু করা হয়; কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগী এ সিন্ডিকেট চক্রটির প্রাধান্য কিন্তু ভেঙে দেয়া সম্ভব হয়নি। যে কারণে পরিবেশক প্রথার শুরু থেকেই বিশৃঙ্খলা চলে আসছে। প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে, মৌলভীবাজার ও খাতুনগঞ্জভিত্তিক এ মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেটটির সঙ্গে মিল মালিক ব্যবসায়ীও জড়িত রয়েছে।
ভোজ্যতেল মজুদ করে তারা বাজারে অস্থিরতা ছড়াচ্ছে।
যদিও আইন হওয়ার পর চিনি ও ভোজ্যতেল সরবরাহের একমাত্র পদ্ধতি হচ্ছে পরিবেশক প্রথা। এর বাইরে অন্য কোনোভাবে ভোজ্যতেল সরবরাহের কোনো বিধান নেই। কেউ যদি করে থাকে তবে সেটি আইনের লঙ্ঘন এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু এখন পর্যন্ত এক্ষেত্রে কোনো অপরাধীর সাজা হয়নি।
ট্যারিফ কমিশনও শুধু খাতা-কলমে ভোজ্যতেলের চাহিদা-সরবরাহের হিসাব-নিকাশ রাখছে। বাজারকে মোটেই শক্ত মনিটরিং ব্যবস্থার আওতায় আনা যাচ্ছে না বা আনা হচ্ছে না। মূল্যবৃদ্ধির খবরা-খবর বের হলেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটু নড়েচড়ে বসে শুধু। মনিটরিংয়ের কথা তখন আবার উচ্চারিত হয়।
মূলত, ভোজ্যতেল এখনো সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণাধীন।
অভ্যন্তরীণ বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি এখান থেকেই হয়ে আসছে। এই সিন্ডিকেটটির কারণেই অনুযায়ী চাহিদার মাত্র ৩০ শতাংশ আসছে বাজারে। ব্যবসায়ীরা টাকা নিয়ে বসে আছে। ব্যাংকগুলোও ঋণপত্র খুলতে চাইছে না। মোটকথা, একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট এখানে তৎপর।
কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র এ সিন্ডিকেট ভাঙতে করুণভাবে ব্যর্থ।
উল্লেখ্য, ভোজ্যতেল নিয়ে ভোজবাজি শুধু অনেকদিন ধরেই হচ্ছে না; বরং অনেকভাবেই হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও জনগণের সরকারের যেন কোনো মাথা ব্যথা নেই। কিন্তু না দেখে থাকার ভান করে থাকা কি সরকারের জন্য উচিত? সরকার কি তাহলে জনগণের সরকার দাবি করতে পারে? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।