ভোজ্য তেল-চর্বি সম্পর্কে মানুষের যখন আজকের মত এত সচেতনতা ছিল না তখন সম্পৃক্ত-অসম্পৃক্ত তেল-চর্বি নিয়েও কারো কোন মাথাব্যথা ছিল না। মানুষ নির্বিবাদে প্রাণীজ চর্বি মাখন-ঘি, গোশতের সঙ্গে সংযুক্ত চর্বি ইত্যাদি খেয়েছে।
কিন্তু তেল-চর্বি সম্পর্কে জ্ঞানের ক্রমবিকাশের ফলে মানুষ জানতে পেরেছে সম্পৃক্ত চর্বি তথা প্রাণীজ চর্বি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে খাদ্যে এগুলোর অপরিমিত ব্যবহার হ্নদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তখন প্রাণীজ চর্বির বিকল্প হিসেবে উদ্ভিজ চর্বির ব্যবহার শুরু হল।
৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ উদ্ভিজ চর্বি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি-নিরাপদ চর্বি হিসেবে ব্যবহ্নত হচ্ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তেল-চর্বি নিয়ে আরও গবেষণায় জানা গেছে, এ উদ্ভিজ চর্বিতে ট্রান্সফ্যাট থাকার কারণে তা প্রাণীজ চর্বির চাইতেও ক্ষতিকারক। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় জানা গেছে, ট্রান্স-ফ্যাটের কারণে জন্ম-ত্রুটি, ক্যান্সার ইত্যাদি হতে পারে। এছাড়া বিজ্ঞানীরা হ্নদরোগের জন্য ট্রান্স-ফ্যাটকে ব্যাপকভাবে দায়ী করছেন।
বিভিন্ন সমীক্ষায় জানা গেছে, হ্নদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ট্রান্স-ফ্যাটের অবদান সম্পৃক্ত চর্বির চাইতেও বেশি।
ট্রান্স-ফ্যাট দেহে মোট কোলেস্টেরল ও ক্ষতিকারক এলডিএল কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে এবং উপকারি এইচডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে।
এসব কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপের দেশগুলোতে ট্রান্স-ফ্যাটের ব্যবহার সীমিত করার লক্ষ্যে খাদ্যপণ্যের লেবেলে ট্রান্স-ফ্যাটের পরিমাণ উল্লেখ করে দেয়ার নিয়ম করা হয়েছে যাতে ভোক্তারা জানতে পারে তারা কতটুকু ট্রান্স-ফ্যাট খাচ্ছে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে ট্রান্স-ফ্যাটের ব্যবহার একেবারে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যেমন- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির রেস্টুরেন্টগুলোতে ট্রান্স-ফ্যাটের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ট্রান্স-ফ্যাটের স্বাস্থ্যগত কোন উপকার নেই বরং ক্ষতিকারক দিক এত বেশি যে স্বল্পমাত্রায় ট্রান্স-ফ্যাটের ব্যবহারও বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে। আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশন, ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন এবং ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার মত প্রকাশ করেছে, সম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ মোট ক্যালরির ১০ ভাগের বেশি হওয়া উচিত নয় এবং ট্রান্স-ফ্যাটের পরিমাণ হওয়া উচিত শূন্য।
পাম তেলে সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত চর্বি প্রায় ৫০:৫০ অনুপাতে থাকায় এটি একটি সুষম ভোজ্য তেল। একক-অসম্পৃক্ত চর্বি হ্নদরোগের জন্য উপকারি। পাম তেলে একক-অসম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ ৩৯ ভাগ। পাম তেলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে একক-অসম্পৃক্ত চর্বি থাকায় তা নিয়মিত ব্যবহারে হ্নদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
উল্লেখ্য, বাদাম তেলে বিদ্যমান একক-অসম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণও ৩৯ ভাগ।
অন্যদিকে কর্ন ও সয়াবিন তেলে তা রয়েছে অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণে যথাক্রমে ৩০ ও ২৫ ভাগ। পাম তেলে ১১ ভাগ অত্যাবশ্যকীয় অসম্পৃক্ত চর্বি রয়েছে যা দেহের জন্য অত্যাবশ্যক কিন্তু দেহ তা তৈরি করতে পারে না।
এছাড়া পাম তেলে অধিক মাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ ও ভিটামিন ‘ই’ থাকায় এ তেল অত্যন্ত পুষ্টিকর। আবার বেকারি ও অন্যান্য খাদ্যপণ্য উৎপাদনে যেখানে সম্পৃক্ত চর্বির প্রয়োজন সেক্ষেত্রে পাম তেল উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। এ তেলে প্রায় ৫০ ভাগ সম্পৃক্ত চর্বি থাকায় এ তেল বেকারি ও অন্যান্য খাদ্যশিল্পে ব্যবহারের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, ‘স্বাস্থ্য’কে একটি মৌলিক অধিকার বলা হলেও জনস্বাস্থ্যের ব্যাপারে কোন সরকারের-ই কোন মাথা ব্যথা ছিল না এবং এখনও নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভোজ্য তেলের ভেজাল থেকেই এখন অল্প বয়সে চুল পাকা, ব্যাপক হৃদরোগ, কিডনীরোগসহ হাজারো রোগব্যাধি নীরব মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু এসব ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব যে সরকারের একান্ত জরুরী কাজ, সে বিষয়ে কোন সরকারের যেন কোনো অনুভূতিই নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।