আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আবিদা পারভিন - সূফী চ্যান্ট্স - কাউল, গজল অ্যান্ড কাফি

মরণ আমার ভালো লাগে সঙ্গীতজ্ঞ ও প্রোমোটার, পিটার গ্যাব্রিয়েল-এর ভাষ্য : কানায় কানায় পূর্ণ লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়াম যেন বিদ্যুতাবিষ্ট, দর্শক শ্রোতাদের উত্তেজনা, উম্মাদনা যে কোনও হেভি মেটাল কনসার্টকেও হার মানায় - কিন্তু, সেন্টার স্টেজে মাত্র কয়েক জোড়া তবলা বা পারকাসন, একটি হারমোনিয়াম এবং একজন আবিদা পারভিন। সূফীয়ানা কালাম তথা সূফী সঙ্গীতের সম্রাজ্ঞী, আবিদা পারভিন (১৯৫৪ - ) -এর জন্ম পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের লারকানায়। তাঁর পিতা উস্তাদ গুলাম হায়দার ছিলেন একজন সুবিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ। (মেয়েদের গান গাওয়ার বিষয়ে) সামাজিক বিধিনিষেধ অবজ্ঞা করেই তিনি ৩ বছরের শিশু আবিদাকে তালিম দিতে শুরু করেন, এরপর আবিদা দীক্ষা নেন উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতজ্ঞ, শ্যাম চৌরাসিয়া ঘরানার উস্তাদ সালামত আলী খাঁ সাহিবের কাছে। আবিদার শিল্পী জীবন শুরু হয় গজল, গীত, ঠুমরী, রাগপ্রধান ও উর্দু লঘু সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে।

কিন্তু আবিদার মূল প্রোথিত ছিল, সিন্ধু প্রদেশের লোকাচার ও সূফী প্রভাবিত সমাজ, সামাজিকতায়। মাজার, দরগাকেন্দ্রিক সম্মিলিত সঙ্গীতময় এমন একটি পরিবেশে তিনি বেড়ে উঠেছিলেন, যেখানে, নবীজির পরেই সবচেয়ে সম্মানিত ও প্রশংসিত হলেন, খাজা মাইনুদ্দিন চিশতী, নিজামুদ্দিন আউলিয়া ; এবং জীবনের পাথেয় হল, বাবা বুল্লেহ শাহ, গুলাম ফরিদ, শাহ হুসেন, শাহ আব্দুল লতিফ, জেলালুদ্দিন রুমি ও আমীর খুসরোর কাব্য ও গীত (কালাম)। ফলত তিনি সুফিয়ানা কালাম, গজল এবং সূফী সঙ্গীতের 'কাফি' ও 'কাউল' গীত দিয়েই নিজের সঙ্গীত জীবন গড়ে তোলেন। ক্রমে ক্রমে একেকটি সঙ্গীতানুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে তাঁর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত আশ্রয়ী এক ব্যতিক্রমী উপস্থাপনা ও পরিবেশনার গুনে, কাওয়ালী না গেয়েও, তিনি অতি সল্পকালেই সূফী সঙ্গীতের ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পীতে পরিনত হন।

সূফীধারায় দলবদ্ধ ও গনজমায়েতে সঙ্গীত পরিবেশন অনেকেই করে থাকেন। কিন্তু আবিদার মত শ্রোতাদের মোহাবিষ্ট করে উম্মাদনার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা অত্যন্ত দুর্লভ। আবিদার ভাষ্যমতে, তিনি সূফী সঙ্গীতের মাধ্যমে আত্মার শুদ্ধতা অর্জনের প্রয়াসী এবং সঙ্গীত পরিবেশনের সময় শ্রোতারাও যে তাঁর সাথে একাত্ম হতে পারেন, এখানেই তাঁর সার্থকতা, সূফী পীরদের আশীর্বাদ ও আল্লাহর রহমত। কার্যত দেখা যায়, তিনি উর্দু, পারসিক বা আঞ্চলিক সিন্ধী, পাঞ্জাবি, সারাইকি বা যে ভাষায়ই সঙ্গীত পরিবেশন করেন না কেন, পৃথিবীর যেখানেই তিনি যান না কেন, তাঁর দর্শকপ্রিয়তা, মোহাবিষ্টতা একই থাকে এবং আবারও প্রমান হয়, শুদ্ধ সঙ্গীতের ক্ষেত্রে ভাষা কোনও বাধাই নয়। সূফী সঙ্গীতের প্রায় একচ্ছত্র অধিপতি উস্তাদ নুসরাত ফতেহ আলী খান ছিলেন আবিদা পারভিনের ধর্মভাই তথা আত্নিক ভাই।

কার্যত, তাঁরা দুজনে মিলেই সূফী সঙ্গীতের মাধ্যমে বিশ্বজয় করেছেন। তবে তাঁদের সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্যে মিল ও অমিল উভয়ই ছিল। নুসরাত ও আবিদা, উভয়েরই প্রোমোটার, মার্ক গিন্সবার্গ-এর বর্ণনায় : "নুসরাত যেন এক এক্সপ্রেস লোকোমোটিভ, প্রারম্ভিক ধীরতা থেকে গতি বাড়তেই থাকে, বাড়তেই থাকে, তাল লয় মেনে তাঁর সঙ্গীত জোরালো থকে জোরালোতর হয়ে যেন অসীমে ধাবিত হয়; অন্যদিকে, আবিদা অনেক বেশি সুরেলা, তাঁর সঙ্গীতে নারীকণ্ঠের সহজাত আবেদন রয়েছে, কিন্তু, এর পাশাপাশি, তাঁর কণ্ঠ কখনও মেয়েলী, কখনও পুরুষালী - এই উভয় কণ্ঠের যূথবদ্ধতায়, সূফী সঙ্গীতের সহজাত রহস্যময়তা যেন আরও রহস্যময় হয়ে ওঠে'। মার্ক গিন্সবার্গ-এর ভাষ্য : আমি সে যাত্রায় এক সপ্তাহ নুসরাতের সাথে ছিলাম, এর একদিন তাঁর মেয়ের জন্মদিন গেল। আবিদা অনুষ্ঠানে এসে চলেও গেলেন।

রাত ৩ টায় খেয়ালী নুসরাত বললেন, 'আবিদার গান শুনতে পারলে ভালো হত'। খবর পাঠানো হতেই, রাত ৪ টায় আবিদা আবার আসলেন। তখন প্রায় সবাই গভীর নিদ্রায়, কেউ অচেতন, কেউ অর্ধচেতন। আবিদা এসেই গান শুরু করলেন। মুহূর্তেই, সবাই জেগে উঠেই আবার মোহাবিষ্ট হয়ে পড়লেন।

দুঘণ্টা আগেই যেন প্রভাত হল, রাত ৪টা হয়ে উঠলো রৌদ্রকরজ্বল। আবিদা পারভিন - সূফী চ্যান্ট্স - কাউল, গজল অ্যান্ড কাফি ১। কাউল, তারানা (মান কুন্ত-ও-মাওলা) - আমীর খুসরো ২। কাফি (তেরে ইশক নাচায়া) - বুল্লেহ শাহ ৩। গজল (যব সে তুনে মুঝে দিওয়ানা) - হাকিম নাসের ৪।

কাফি (মেদা ইশক ভি তুঁ) - গুলাম ফরিদ ৫। গজল (গাঞ্জ-এ-শাকার কে লাল নিজামুদ্দিন) - বেদাম শাহ ওয়ার্সি ৬। কাফি (এক নুক্তে উইচ গাল মুকদি আয়ে) - বুল্লেহ শাহ ৭। গজল (ন্যায়না মিলাইকে) - আমীর খুসরো কোয়ালিটি - ১২৮ কেবিপিএস এমপি৩ ফাইল সাইজ - ৬৮ মেগাবাইটস ডাউনলোড - আবিদা পারভিন - সূফী চ্যান্ট্স - কাউল, গজল অ্যান্ড কাফি  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।