Bangladesh: Dream অক্সব্রিজের মধ্যে লুকিয়ে আছে বিখ্যাত দুটি বিশ্ববিদ্যালয়। ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের দুনিয়াজোড়া খ্যাতি আর ঐতিহাসিকতার দিক থেকে একত্রে বলা হয় অক্সব্রিজ। এদের প্রথমটির সঙ্গে মিলিয়েই এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হতো প্রাচ্যের অক্সফোর্ড। যদিও এ বছরের বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়ে অক্সফোর্ডের স্থান পঞ্চম, ক্যামব্রিজ দ্বিতীয় আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান ছয়শ' থেকে সাতশ'র মধ্যে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থ্থান সাতশ'র মধ্যে থাকলেও এর বাইরে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই।
র্যাংকিংয়ের কথা চিন্তা না করলেও ইংল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয় এবং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে যে একটা আকাশ-পাতাল ফারাক রয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এরপরও অক্সব্রিজের সঙ্গে কিংবা অক্সব্রিজের আয়নায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেখার ন্যায্যতা এখানেই যে অনেকে বলছে আমাদের উচ্চশিক্ষা আসলে ব্রিটিশদের প্রবর্তিত। অনেক ক্ষেত্রে এটা তো কমন গালি যে ব্রিটিশ প্রবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে আমাদের শিক্ষার নানা সমস্যা রয়ে গেছে ইত্যাদি। অথচ উচ্চশিক্ষার কথা চিন্তা করলে দেখা যাবে তাদের যে অর্জন তা আমাদের নেই। অক্সফোর্ডের প্রায় পঞ্চাশজন পেয়েছেন নোবেল পুরস্কার, এখানকার পঞ্চাশের অধিক গ্র্যাজুয়েট হয়েছেন বিশ্বনেতা।
আর ক্যামব্রিজের নোবেল পুরস্কারধারী রয়েছেন ৬৫ জন গ্র্যাজুয়েট। আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থাও একসময় বেশ ভালো ছিল। ভালো ছিল বলেই প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো; এমনকি ২০০৫ সালেও র্যাংকিংয়ে এর অবস্থান ছিল ৩৬৫, আর এখন পাঁচশ'র মধ্যেও নেই। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা তো বলাই বাহুল্য। অথচ অক্সব্রিজ শত শত বছর ধরে তাদের অবস্থান ধরে রেখেছে।
আসলে আমরা তো ব্রিটিশদেরও ঠিকভাবে অনুকরণ করতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের মাধ্যম হিসেবে ভর্তি প্রক্রিয়ার কথাই চিন্তা করা যাক। তারা কীভাবে শিক্ষার্থী বাছাই করে আর আমরা কীভাবে করছি।
আমাদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন ভর্তির মৌসুম। কোথাও পরীক্ষা শুরু হয়েছে, কোথাও হবে।
আর ১৫ অক্টোবর ছিল অক্সব্রিজে আবেদন করার শেষ সময়। অক্সফোর্ড এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় বলা চলে একই সঙ্গে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করে। ইংল্যান্ডের পত্রিকাগুলো সাধারণত ভর্তির বিষয়ে এদের একত্রেই সংবাদ করে থাকে। ১১ অক্টোবর গার্ডিয়ানের 'হাউ হার্ড ইজ ইট টু গেট ইনটু অক্সব্রিজ' কিংবা ১২ অক্টোবর দ্য টেলিগ্রাফের 'অক্সব্রিজ এডমিশনস : ইউনিভার্সিটিজ টু রেইজ বার অন এন্ট্রি' তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এ ছাড়া ইংল্যান্ডের স্থানীয়রাও এটা সব ক্ষেত্রেই ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেন।
যেমন ধরা যাক, বৌরনমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী বলছে_ আমার টার্গেট ছিল অক্সব্রিজে ইংরেজি সাহিত্য পড়ব, কিন্তু তা হয়নি। অক্সব্রিজে ভর্তির জন্য প্রার্থীকে একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। পাঁচটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। যেমনটা ৫ অক্টোবর টেলিগ্রাফকে অক্সব্রিজ অ্যাপিল্গকেশন্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ক্যারোলাইন লিন্ডার বলছেন, ফাইভ থিংস ইউ সুড নো এবাউট অক্সব্রিজ অ্যাপিল্গকেশনস। নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে আবেদন এবং নিজস্ব স্টেটমেন্ট জমা দেওয়া, আবেদনের ক্ষেত্রে কলেজ/বিষয় নির্ধারণ, এরপর ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, তারপর প্রার্থীকে একটা রচনা জমা দিতে হয় আর সবশেষে ইন্টারভিউর মাধ্যমে চূড়ান্ত প্রার্থী বাছাই করা হয়।
ইন্টারভিউকে অক্সব্রিজে ভর্তির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ধরা হয়। তবে প্রার্থীর এ-লেভেলের রেজাল্ট, আবেদনপত্রে নিজস্ব স্টেটমেন্ট, প্রাথমিক পরীক্ষা, রচনা দেখার মাধ্যমে একটা শর্টলিস্ট তৈরি করে কর্তৃপক্ষ এবং তারাই কেবল ইন্টারভিউর জন্য যোগ্য হয়। প্রার্থীকে দু'বার এমনকি তিন-চারবারও ইন্টারভিউ দিতে হতে পারে। এর আগে প্রাথমিক পরীক্ষায় গৎবাঁধা কোনো প্রশ্ন আসে না, একাডেমিক প্রশ্নের বাইরে প্রবলেম সলভিং, ক্রিটিক্যাল থিংকিং ইত্যাদির ওপর জোর দেওয়া হয় প্রশ্নে। প্রার্থীর আগেকার ফলাফল অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে এ-লেভেলের।
ইংল্যান্ডে ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড কলেজ অ্যাডমিশন সার্ভিস (ইউকাস) যাবতীয় ভতির বিষয়াবলি দেখাশোনা করে। গার্ডিয়ান দেখাচ্ছে, গত বছর ক্যামব্রিজে চান্স পাওয়া ৯৭.৬ ভাগই ইউকাস টেরিফ পয়েন্টে ৩৮০ ধারী। এই ভর্তি প্রক্রিয়ায় এক বছর লেগে যায়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এবারের ভর্তি কার্যক্রমে ১০টি স্টেপস দেখাচ্ছে, ১৫ অক্টোবরের মধ্যে যারা আবেদন করেছে তাদের সকল প্রক্রিয়া শেষ হতে পরবর্তী বছরের জানুয়ারি লেগে যায়। এরপর আগস্টে তারা চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করবে।
আর অক্টোবর ২০১৩ থেকে ক্লাস শুরু হবে।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি প্রক্রিয়ার কথা সবার জানা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এক-দেড় ঘণ্টার এমসিকিউ পরীক্ষা ছাড়া একে আর কীভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে। আরেকটু ব্যাখ্যা করলে হয়তো বলতে হবে এ ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার কোচিং সেন্টার। যেখানে শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষার সিলেবাস শর্টকাট করে গুলিয়ে খাওয়ার চেষ্টা হয়।
শিক্ষার্থীরা তিন-চার মাস সেগুলো খেয়ে না খেয়ে মুখস্থ করে আর পরীক্ষার হলে গিয়ে উগরিয়ে দেয়। যে ওই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেটা ভালোভাবে করতে পারল সেই সৌভাগ্যবান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ওই পরীক্ষা ছাড়া এর বাইরে আর অতিরিক্ত তেমন প্রক্রিয়া নেই। সবাই যে এ কোচিংয়ের মাধ্যমে আসে তা নয়; তবে এটাই কমন।
উচ্চশিক্ষায় ভর্তিতে অক্সব্রিজের নিয়মই যে অনুসরণ করতে হবে তা নয়।
নানা কারণে আমাদের সেটা সম্ভবও নয়। এছাড়া বর্তমান প্রক্রিয়ায় যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একেবারে কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার্থী পাচ্ছে না তাও নয়। কারণ দেখা যাচ্ছে, এসএসসি এবং এইচএসসি পর্যায়ে যারা ভালো করে তারাই সাধারণত ভালো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চান্স পায়। যদিও বছর বছর ভূরি ভূরি শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পাচ্ছে। এ বছর এইচএসসিতে এই সংখ্যা ৬১ হাজার।
অথচ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন সংখ্যা রয়েছে প্রায় ২৪ হাজারের মতো। তারপরও আমাদের ভর্তি পদ্ধতি যে বৈজ্ঞানিক নয় সেটা অনেকেই বলে আসছেন, তা সত্যও বটে। অনেকে অবশ্য ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তির কথা বলেছেন এবং এ বছর তো মেডিকেলে সেটা হওয়ারও ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। আসলে এত বেশি জিপিএ ৫ নিয়ে সেটাও সম্ভব নয়। তবে যাই হোক মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থী নির্বাচন করা উচিত।
প্রকৃতই যারা মেধাবী, যারা সত্যিকারার্থে দেশের জন্য কিছু করতে পারবে তাদেরই জনগণের টাকায় পরিচালিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ দেওয়া দরকার। তাদের খুঁজে বের করার জন্য একটা কার্যকর মাধ্যম অবশ্যই প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে বর্তমান পদ্ধতির বাইরে অক্সব্রিজ থেকে অনুসরণ করার মতো কিছু থাকলে সেটা বিবেচনা করা যেতে পারে।
প্রকাশিত ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।