যদি ঠাঁই দিলে তবে কেন আজ হৃদয়ে দিলে না প্রেমের নৈবদ্য টিকফা চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য সরকারকে চাপ দিতে ২৫ জুন আসছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন কেরি! এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশের যে কয়টি সেক্টর ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে তার একটি হচ্ছে ফার্মা সেক্টর। তাই এই চুক্তি স্বাক্ষরের বিরুদ্ধে ফার্মা পরিবারের পেশাগত একটা দায় আছে, জনস্বার্থ ছাড়াও নিছক পেশাগত স্বার্থেও ফার্মাসিস্টদের উচিত এই চুক্তি স্বাক্ষর না করার জন্য পেশাগত আন্দোলন করা। ফার্মাসিস্টদের নানান সংগঠন বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল সোসাইটি, ফার্মেসি গ্র্যাজুয়েটস এসোসিয়েশন এ ব্যাপারে সভা সেমিনার মানববন্ধন করে এই চুক্তির ভয়াবহ দিক তুলে ধরে জনমত তৈরি করতে পারে এবং সিভিল সোসাইটিকে সাথে নিয়ে দেশের জনসাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ এ চুক্তি স্বাক্ষর থেকে বিরত থাকার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানাতে পারে।
ফার্মাসিস্টদের সংগঠন ফার্মেসি গ্র্যাজুয়েটস এসোসিয়েশন অনেক দিন ধরেই TRIPS এর বিরুদ্ধে নানান সভা সেমিনার করেছে তা আমরা দেখেছি। কিন্তু টিকফা চুক্তির একটা বড় প্রস্তাবনা হচ্ছে মেধাসত্ত্ব আইনের (TRIPS ) কঠোর বাস্তবায়ন।
তাই এই চুক্তির বিরুদ্ধেও প্রতিবাদী ভূমিকায় অবতীর্ণ না হলে ফার্মা সেক্টরকে প্রস্তুতি নিতে হবে ভয়াবহ বিপর্যয়ের জন্য!
দোহা ঘোষণা ২০০০ অনুযায়ী বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার আওতায় বাণিজ্যবিষয়ক মেধাসম্পদস্বত্ব চুক্তি অনুসারে স্বল্পোন্নত সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ ২০১৬ পর্যন্ত ওষুধের ক্ষেত্রে মেধাসত্ত্ববিষয়ক বিধিনিষেধ থেকে ছাড় পেয়েছে এবং এই সুবিধা গ্রহণ করে বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো বিভিন্ন পেটেন্ট করা ওষুধ উৎপাদন এবং রপ্তানি করতে পারছে। এমনকি প্রয়োজন হলে এ সময়সীমা আরও বাড়ানো হতে পারে। কিন্তু টিকফায় সে ধরনের কোন সুযোগ রাখা হয়নি। টিকফা চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই মেধাসত্ত্ব আইন মানতে বাধ্য করছে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ফলে টিকফা চুক্তি স্বাক্ষর করলে বাংলাদেশকে ২০১৬ সালের আগেই মেধাসত্ত্ব আইন মেনে চলতে হবে, কেননা চুক্তির ১৫ নম্বর প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে বাণিজ্য সম্পর্কিত মেধাসত্ত্ব অধিকার এবং অন্যান্য প্রচলিত মেধাসত্ত্ব আইনের যথাযথ এবং কার্যকরী রক্ষণাবেক্ষণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
The Government of the United States of America and the Government of The People’s Republic of Bangladesh (individually a “Party” and collectively the “Parties”)
15. Recognizing the importance of providing adequate and effective protection and enforcement of intellectual property rights [obligations contained in the Agreement on Trade-Related Aspects of Intellectual Property Rights (TRIPS) and other intellectual Property rights conventions.] adherence [ http://www.bilaterals.org/spip.php?article1361 ]
টিকফা চুক্তির ফলে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প ও পাবলিক হেলথ এর উপর বিরূপ প্রভাবসমূহ সংক্ষেপে ঃ
১।
মেধাসত্ত্ব আইন কার্যকর হলে বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো অনেক ওষুধ তৈরি করতে পারবে নাঃ
পেটেন্ট আইনের ফলে পেটেন্টেড ওষুধ বানাতে পারবে না বাংলাদেশ, ফলে বাংলাদেশের অনেক ওষুধ কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে, ওষুধ শিল্প হুমকির মুখে পড়তে পারে। বাংলাদেশ ওষুধ শিল্পে রপ্তানি সম্ভাবনা হারাবে। আমাদের কয়েকগুণ বেশি দামে বিদেশি কোম্পানির পেটেন্ট করা ওষুধ খেতে হবে। তাছাড়া ওষুধের পেটেন্ট আগে দেয়া হতো সাত বছরের জন্য, এখন বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার ট্রিপস আইনে তা আরও বাড়িয়ে ২০ বছর করা হয়েছে। অর্থাৎ আবিষ্কারক কোম্পানি সুদীর্ঘ ২০ বছর ধরে নিজের ইচ্ছামতো দামে ওষুধটির একচেটিয়া ব্যবসা করে অবাধে মুনাফা লুট করবে।
২। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প জায়ান্ট ফার্মা কোম্পানিগুলোর পেটেন্ট, কপিরাইট, ট্রেডমার্ক ইত্যাদির লাইসেন্স খরচ বহন করতে গিয়ে অভূতপূর্ব লোকসানের কবলে পড়বেঃ
পেটেন্ট অধিকারী জায়ান্ট ফার্মা কোম্পানিকে পেটেন্ট/ কপিরাইট/ ট্রেডমার্ক লাইসেন্স দিয়ে ওষুধ উৎপাদনের অনুমতি নিতে হবে বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলোকে , ফলে উৎপাদন খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে কেননা দেশীয় ওষুধ কোম্পানিগুলো নিজ দেশেই তাদের ওষুধ বিক্রি করতে গিয়ে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে। ফলে অনেক মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে।
৩।
হুমকির মুখে পড়বে জনস্বাস্থ্যঃ
ট্রিপস চুক্তির ফলে ওষুধের দাম জামিতিকহারে বাড়বে এটা নিশ্চিত, ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের মানুষ কেননা দরিদ্ররা ওষুধ কিনতে গিয়ে হিমশিম খাবে। অনেক জীবন রক্ষাকারী ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত চড়া দামের কারনে ওষুধের অভাবে মরবিডিটি এবং মর্টালিটি বেড়ে যাবে ফলে আমাদের জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।
দেশের সকল ফার্মাসিস্টদের গুরু দায়িত্ব হচ্ছে টিকফা চুক্তির করাল গ্রাস থেকে ওষুধ শিল্পের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতিসহ মালিক শ্রেণীর উচিত এই চুক্তি স্বাক্ষর না করার জন্য প্রেস কনফারেন্স, সভা সেমিনার করে সরকারকে তাদের অবস্থান জানিয়ে দেয়া।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।