বোরহান উদ্দিন আহমেদ (মাসুম)
আইফোন অনেকের কাছে স্বর্গ মনে হলেও যেসব শ্রমিক কষ্ট করে এটি তৈরি করছেন তাদের কাছে আইফোন নরকের মতো হয়ে গেছে। কারণ তাদের প্রতিদিন কমপক্ষে এক হাজার আইফোন ৫ তৈরি করতে হবে, নইলে চাকরি যাবে। এমনই কঠিন শর্তে আইফোন ৫ তৈরির কারখানায় কাজ করছেন চীনা শ্রমিকরা।
যুক্তরাজ্যের সানডে মিরর এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আইফোন ৫ তৈরির জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ফক্সকনের তাইয়ুন কারখানায় ১৪ ঘণ্টা করে টানা কাজ করতে হচ্ছে শ্রমিকদের।
তবে এত কষ্ট করেও যথাযথ পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না এই প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা।
এমন নৈরাজ্যকর অবস্থার কারণে চলতি মাসেই চীনের ফক্সকনের এ কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। দাঙ্গায় আহত হয়েছিলেন ৪০ জন শ্রমিক। দাঙ্গার কারণে এক দিনের জন্য এ কারখানাটিও বন্ধ রাখতে হয়েছিল। এ ছাড়া ২০১০ সালে আইপ্যাড তৈরির সময় ১৩ জন শ্রমিক ছাদ থেকে পড়ে আত্মহত্যা করেছিলেন।
পরে জানা যায়, কাজের চাপ ছিল এ ঘটনার কারণ।
অমানুষিক পরিশ্রমের ফলে নারকীয় জীবন এখানকার শ্রমিকদের পিছু ছাড়ছে না। তাইয়ুনের কারখানার শ্রমিকদের ওপর এত বেশি কাজের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে যে কর্মীরা কেউ কারও সঙ্গে কথা বলারই সুযোগ পান না। এমনকি তিনবারের বেশি টয়লেটে গেলে নাকি জরিমানা করা হয় আর ২০ মিনিটের বেশি দেরি হলে কর্মীর পারিশ্রমিক কেটে রাখা হয়।
মিররের প্রতিবেদনটিতে আরও জানানো হয়েছে, মেটাল ডিটেক্টর যন্ত্রের ভেতর দিয়ে ঢোকানো হয় শ্রমিকদের। প্রত্যেক শ্রমিককেই কারখানায় ঢোকার ও বের হওয়ার সময় নানাভাবে দেহ তল্লাশি করা হয়।
সানডে মিররের ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়, আইফোন ৫ কর্মীদের প্রতি ৩০ সেকেন্ডে একটি করে আইফোন জোড়া লাগানোর কাজ করতে হচ্ছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, স্বল্প বেতনের কর্মীদের শর্ত বেঁধে দেয়া হয়েছে যে, প্রতিদিন এক হাজারের কম আইফোন জোড়া লাগালে তাদের চাকরি থাকবে না।
প্রসঙ্গত, টানা ১৪ ঘণ্টা কাজ করলেও সপ্তাহান্তে শ্রমিকরা বেতন পাচ্ছেন ৬০ পাউন্ডের কম। কম বেতন পেলেও তাদের আর কিছু করার নেই। কারণ প্রতিবাদ করলে তাদের চাকরি যাবে আর সেখানে যুক্ত হবে নতুন শ্রমিক।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এখানে নীরব ভূমিকা পালন করছে। আর তাই শেষমেশ এসব শ্রমিকের কঠিন পরিশ্রম করেই যেতে হচ্ছে। আর এর সুফল ভোগ করছে কেবল মালিক-কর্তৃপক্ষ।
আইফোন ব্যবহারকারীরা জানেনও না তাদের শখের আইফোন তৈরিতে কতটা ঘাম ঝরেছে শ্রমিকের!
সুত্রঃ উন্মোচন ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।