ঝর্ণার পাশে বাড়ি/ জলের তেষ্টায় মরি/ জীবনের খেলাঘর/ বেঁধে যাই নিরন্তর। ◙
এ্যাই! মাত্র এগারটা বাজে, এখনই হাই তুলছিস ক্যা? ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’-এর অধ্যায় পাঁচের সবগুলো প্রশ্ন শিখে ঘুমাতে যাবি। এর আগে নো ঘুম। আমিও সজাগ থাকবো।
- মা আজ আর ভাল লাগছে না।
কাল তো বিজ্ঞান এক্সাম। বিজ্ঞান পুরোটাই রিভিশন শেষ। এখন একটু ঘুমোতে যাই?
- দখিন! তুই কিন্তু মায়ের সাথে মুখে মুখে তর্ক করছিস। সমাজ পরীক্ষার আগে তো গ্যাপ নাই এখন সময় আছে সেটা পুষিয়ে নে। কোথায় সময়টা কাজে লাগাবে না শুধু ফাঁকিবাজি।
কোন কথা নেই রাত দুইটার আগে টেবিল ছাড়তে পারবিনা। দুইটায় স্কুল; সো সকালে ঘুমানোর অনেক সময় আছে।
- আচ্ছা! মা আমার ভুল হয়ে গেছে। আর কখনই তোমার কথার সাথে যুক্তি দেবনা। কিন্তু আমি যদি বারটার আগে তোমাকে সব পড়া কমপ্লিট করে দিতে পারি তাহলে ঘুমাতে দেবে তো? মা কালও তো ঘুমাতে পারিনি।
মাত্র তিন ঘন্টা ঘুম হয়েছে। এর পর তো আব্বু খেলা দেখা শুরু করছে। আমি ঘুমাবো কেমনে?
- তোর বাবাকে নিয়ে হলো আরেক ঝামেলা। সময়-টময় নাই খালি খেলা আর খেলা। দখিন দেখ তুই স্কুলের ফার্স্ট বয়।
একটু ঢিলামি মানে প্লেস হাত ছাড়া হয়ে যাওয়া। ঈশান, মিরাজ আর সালিম তোর ঘাড়ে নিশ্বাস ফালতাছে। আমি যদি একটু চান্স তোকে দেই তাইলে আমার ইজ্জত সম্মান সব মাটি হবে। বুঝলি? যা এখন পড়তে বস।
- জায়দা! একি বলছো? এখন বাজে রাত সাড়ে এগারটা।
এই বাচ্চা ছেলেটাকে এখনো ঘুমোতে দাওনি? তুমি কেমন মা! হেহ! ও তো যন্ত্র না একটা মানুষ। এর আবেগ আছে, অবসাদ আছে। আছে ইচ্ছা অনিচ্ছা। একটু মগজটাকে বিশ্রাম দিতে হয়। এমন রোবটিক বানালে তো ও একসময় আনসোস্যাল হয়ে যাবে।
- থাক থাক আর লেকচার দিতে হবেনা। এবার খেতে আসুন। যা বোঝেন না তা নিয়ে কথা বলেন কেন? পোলাপান মানুষ কীভাবে করতে হয় তা আমি জানি। বাবারা এসবে নাক না গলালেও চলবে।
- দেখ! তুমি হয়তো ওকে সময় বেশি দাও বাট এর ভাল মন্দ বুঝার অধিকার আমরও আছে।
ও আমারও সন্তান। আমি ওকে মানুষ হিসেবে দেখতে চাই। পাঠ্য বইয়ে ডুবে থাকা আত্মকেন্দ্রিক আর ঘরকুনে আতেল হিসেবে দেখতে চাইনা। আমি চাই সে খেলবে, হাসবে, নিজের মত করে সিদ্ধান্ত নেবে। জানার জন্য পড়বে।
পরীক্ষায় ফার্স্ট হওয়ার জন্য নয়। তবে চেষ্টা থাকবে প্রথম হওয়ার। তার মানে এই নয় যে তার জীবনের একমাত্র টার্গেট হবে ফার্স্ট হওয়া। সে যদি পারফেক্ট ওয়েতে যথাযথ ট্রাই করে তাতেই আমি খুশি। প্লীজ জায়দা ! তোমার অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণের হাতিয়ার বানিয়ে দখিনকে মনন-প্রতিবন্ধী বানিও না।
- তোমার বয়ান শেষ হইছে?
- হ্যাঁ আমার কথা শেষ। এই কথাগুলো বলার জন্য বেশ কিছু দিন ধরেই সুযোগ খুঁজছিলাম। কিন্তু তোমার মুড ভাল পাচ্ছিলাম না।
◙
মা, বাবা আর দখিন খাবারে টেবিলে। খেতে খেতে জায়েদার চোখ দুটি টলমল করছে।
নানা রঙের স্বপ্ন ছিল তার একদিন। স্কুলে সেরা ছাত্রীও ছিলেন। কলেজেও ছিলেন সবার সেরা। দুটো পাবলিক পরীক্ষায়ই মেধা তালিকায় ছিলেন। কিন্তু তার কপালে আর ডাক্তার হওয়া হয়নি।
মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা নামক এক বাধা তিনি পার হতে পারেন নি। সেই জেদ থেকে আর পড়াশোনাই করা হয়নি। স্বামী ইখতিয়ারের সেই টিপ্পনিটা তার মনোজগতে একটা তীব্র হাহাকার তৈরি করছে। মনে মনে ভাবছেন হায় সেই সময় যদি প্রাইভেট মেডিকেলে পড়ার মত অর্থ বাবার থাকতো!
খেতে খেতে দখিন বলে মা তুমি কাঁদছো মনে হয়। মা তুমি নিশ্চিত থাকো আমি ডাক্তা হয়েই ছাড়বো।
যে দিন আমি দেশের সেরা রেজাল্ট করে ডাক্তার হবো সেদিন আমার সাক্ষাৎকার নিতে সাংবাদিকরা আসলে আমি তোমার কথাই বলবো।
- কী দখিন বাবার কথা বলা হবেনা মনে হয়। বললেন ইখতিয়ার সাহেব।
- কেন বাবার কথা বলবেনা। আমার দখিন তোমার কথাও বলবে।
বলবে, ‘‘বাবার খেলা দেখার কারনে ঘুম হতোনা তাই রাত জেগে বেশি বেশি পড়তে পারতাম। সে জন্যই আমি আজ ডাক্তার হয়েছি। ’’
- কিন্তু জায়দা! দখিন যদি ডাক্তার না হয়ে অন্য কিছু হয়। তখন তুমি কী করবে! আমার মনে হয় তোমার সেই প্রিপারেশনটাও নিয়ে রাখা ভাল। জানো তো,
“মানুষের মন
আকাশের রঙ
কখনও সুনীল
কখনও বা সঙ।
’’
দখিনের যখন পার্সোনালিটি বিল্ডআপ হবে তখন হয়তো সে তার স্বপ্ন বদলাতেও পারে।
- দেখো, আমি অন্য কিছু আর ভাবতে পারছিনা। ওকে ডাক্তার হতেই হবে। প্রয়োজনে আমি আরেকটা বেবি নেব। সেটাকে তুমি তোমার স্বপ্নানুযায়ী বড় করো! তবুও দখিনকে নিয়ে তুমি অন্য ভাবনা করো না।
- প্রতিটা মানুষকে তার প্রতিভানুযায়ী বেড়ে ওঠতে দেয়া উচিত। তুমি যদি একজন শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বড় হতে। তাহলে আমার বিশ্বাস আজ তুমি ওয়ার্ল্ড ফেমাস একজন শিক্ষক ও গবেষক থাকতে। কিন্তু তোমার ধ্যান-জ্ঞান সব তুমি ডাক্তার হওয়ার পেছনে দিয়ে বাকী সব ভাবনায় শূন্য হয়ে গিয়েছিলে। ফলে তুমি নিজেকেই বঞ্চিত করেছো।
আর সারা জীবনের একটা অধম্য স্বপ্নকে নিজের ভেতর জায়গা দিয়েছো যা তোমাকে ডিফরেন্ট কিছু ভাবতে দেয় না। তুমি তোমার সমগ্র মনোযোগ ছেলে আর তার পেছনে দিয়ে বাকী সব পেছনে ঠেলে দিয়েছো। বঞ্চিত করেছো নিজেকে এবং তোমার চারপাশের আপনজনকে।
- ও এই কথা! তা তোমাকে কীভাবে বঞ্চিত করছি একটু ব্যাখ্যা দিবে?
- দেখো সব কিছুতে নেগেটিভ কিছু দেখবেনা। আমি বঞ্চিত তা বলছিনা।
বলছি আমি ছাড়াও তোমার মনযোগ চায় এমন আরো অনেকেই আছে। রাসূল (স.) বলেছেন “আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবেনা। ” আমি কী বুঝাতে চেয়েছি আশা করি এবার বুঝেছো।
- ঠিক আছে এটা দেখবো। তবে আমাকে দখিনের ব্যাপারে কনসিডার করতে বলোনা।
আমি ওকে ডাক্তার বানাবই।
◙
মা বাবার কথার মাঝেই দখিন তার রুমে শোতে যায়। মশারি টানিয়ে শুয়ে শুয়ে হারাতে থাকে ভাবনার অতলে। কখনও ভাবে আমি যদি ডাক্তার না হই! তাইলে মা'র কী হবে। কিন্তু বাবা ডাক্তার পছন্দ করেন না।
বাবা বলেন, “এটা এমন একটা পেশা যেখানে মানুষের অনেক উপকার করার সুযোগ থাকলেও; প্রতিনিয়ত মানুয়ের অভিশাপ পেতে হয়। কারণ রোগ- বালাই জীবন-মৃত্যু মানুষের হাতে নেই। কিন্তু একজন ডাক্তার দিন-রাত সেই জীবন-মৃত্যু নিয়েই থাকেন। আবার ডাক্তারদের মাঝে লোভীর সংখ্যাই বেশি। সুতরাং ডাক্তার আমার প্রিয় মানুষ হলেও আমি ডাক্তার হতে চাইনা।
”
আবার মা একবারেই বিপরীত। তার মতে, ডাক্তার মানেই স্বর্গের দুয়ারে পা। এমন বিপরীতমুখী দুটি মানুষকে কীভাবে খুশি করা যায়? আবার দুজনের ইচ্ছাই পূরণ করার পথ খোঁজার ভাবনায় তার প্রায় রাতই স্বপ্ন দেখতে দেখতে কেটে যায়। প্রায়ই সে স্বপ্নে দেখে একটা সাদা হাস তার হাতে ধরা কিন্তু সেটা বাঁধার জন্য কোন দড়ি কোথাও নাই। কিন্তু যখন সে দড়ি পায় কীভাবে যেন হাঁসটা তার হাতছাড়া হয়ে যায়।
এই স্বপ্ন কখনই দেখতে চায়না দখিন। কারণ তার ক্লাসমেট আফরারের বাবা একজন বড় আলেম। তার কাছে আফরারের মাধ্যমে এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা জেনেছে। তিনি বলেছেন, “ তোমার জীবনে তুমি সবসময় সাফল্য পাবে তাবে সেই সাফল্য সবসময় ধরে রাখতে পারবেনা। ” সেভেনে পড়া একজন ছাত্রের মনোজগতে এমন ঝড়ের শেষ খুঁজে পায়না দখিন।
তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পড়া-লেখার পাশাপাশি সামলে চলতে হচ্ছে বিপরীত চিন্তার দুই মা বাবাকে।
কখনও ভাবে বাবা ইজন্ট ম্যাটার। সবকিছুই মানতে পাড়ার ক্ষমতা আছে তার। বাবার সেই ক্ষমতার কারণেই মার মত এমন মান-অভিমান আর আবেগঠাসা একজন মানুষ সংসার করছে বাবার সাথে। আর সেই বাবার কারণেই আমি দখিন সবকিছুকেই নিজের মত ব্যাখ্যা করতে পারি।
নিজের বয়সের চেয়ে অনেক এগিয়ে ভাবতে পারি।
কিন্তু মাকে নিয়ে তার ভাবনা সবসময় হোচট খায়। কী ভাবে তাকে সামলাবে। যদিও বাবার কথা মত মার সাথে অভিনয় করছে। বলছে সে ডাক্তার হবেই।
বাট ইখতিয়ার সাহেবের মত একজন চরম বাস্তবাদী মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সে কোন ভাবেই ডাক্তার হতে চায়না।
নিজের সাথে নিজেই মনোলগ করে। কিরে দখিন তুই কী হতে চাস্?
-আমি বাবার ইচ্ছায় এই বাংলাদেশের একমাত্র মানুষ যে লেখক হবো এবং লেখালেখিকেই নিব পেশা হিসেবে।
-মাকে সামলাবি কীভাবে? তোর মা তো নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়া নির্বাক হয়ে যাবেন।
-আচ্ছা ডাক্তার এবং লেখক দুটোই একসাথে হলে! কেমন হয় ?
-হতে পারো।
তবে এই যে লেখক হওয়ার স্বপ্ন দেখা। লেখাই পেশা; সেটা থাকলো না আর কি!
আর ভাবতে পারেনা। এখন তার উপলব্ধি, সব ভাবনাই শুরু হয় চমৎকার সুন্দরভাবে জোড়ালো যুক্তির মাধ্যমে। আর শেষ হয় অসংখ্য আজগুবি প্রশ্নের শাখা প্রশাখা নিয়ে। সাথে বোনাস হিসেবে দিয়ে যায় দীর্ঘ হেসিটেশন!
◙
এ্যাঁ এ্যাঁ বায়ূমণ্ডলে এ এ এ অক্সিজেনের পরিমাণ প্রায় একুশ পার্সেন্ট এ্যাঁ এ্যাঁ এ্যাঁ কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ প্রায় শূন্য দশমিক শূন্য তিন ছয় পার্সেন্ট... এ্যাঁ এ্যাঁ এ্যাঁ...
- বাবা দুধটুকো খেয়ে নাও।
দখিনের মা জায়দা বেগমের মন ভাল থাকলে ছেলেকে তুমি করেই বলেন।
- মা আজ তোমার মন ভাল। কারণটা বলবে?
- কোমনে বুঝলে?
- মা, ছেলেদের এসব জানতে হয়। কখন মা খুশি কখন বাবা খুশি এসব না জানলে তো আমাদের চাওয়া পাওয়া আর ইচ্ছা খাওয়া সব মাটি।
- বাহ! বাবার আল্লাদ পেয়ে তো বেশ পাকনা হয়ে উঠছিস।
তো আজ মন ভাল তার কারণ আমি আজ রাতে একটা স্বপ্ন দেখেছি। সেই স্বপ্নটার ব্যাখ্যাও পেয়েছি। ব্যাখ্যা কে করেছেন জানিস?
- না বললে জানবো কেমনে?
- অনুমান করে বলতে চেষ্টা কর।
- যাও! তোমার এই সব হেয়ালি আমি পছন্দ করিনা। তোমার সব কিছুই জগত সেরা বাট এই হেয়ালি করাটা জঘন্য!
- থাক থাক হেয়ালিকে নির্বাসনে পাঠামু।
তো স্বপ্নের ব্যাখ্যা করেছেন আফরারের বাবা। তিনি বলেছেন আমি নাকি আমার দেখা সব স্বপ্নই বাস্তব দেখতে পারবো।
- ও তাই! তো তুমি আফরারের বাবাকে চিনো কেমনে?
- কেন তোমার কাসের সব আন্টিই তো জানেন। আমিও জানি তিনি আলেম। বড় আলেম।
আচ্ছা মা বলতে পারো? একজন মানুষে পাশে যখন বিপরীতমুখী দুটি জগতে থাকে; তখন সে নিজেকে কোনটার সাথে জড়াবে?
- এমন জটিল প্রশ্ন কোত্থেকে তোর মাথায় আসে? বাদ দে এসব ক্রিটিক্যাল বিষয়। তুই না দিন দিন ফিলোসফার হয়ে যাচ্ছিস। তোর সব কথা আমি সবসময় বুজতে পারি না। বড় হয়ে যখন ডাক্তার হবি তখন মনে হয় আমি তোর স্বাভাবিক কথাও সহজে বুজবো না। এই বলে হাসতে থাকলেন জায়দা বেগম।
- মা আমার প্রশ্নে জবাব পাইনি।
- যদি একান্তই জানতে চাস! তাহলে আমি বলবো তুই যেটা চাস বা যেটাকে তোর যুক্তি-বিশ্বাস সায় দিবে সেটার সাথেই নিজেকে জড়াবে।
◙
দখিন এবার আবারও মনোলগে।
- আচ্ছা একটা মানুষ তাও আবার বাচ্ছা মানুষ সকাল সাতটায় বাসা ছাড়ে। বারটায় স্কুল ছুটি।
তিনটায় কোচিং ছুটি। মাঝখানে মায়ের বদন্যতায় পোশাক বদল। এরপর কোচিংযের কোন খালি রোমে দাঁড়িয়ে দুপুরের খাবার। এটা কোনো জীবন! এটা কোনো শিক্ষা ব্যবস্থা!
- গোলকায়নের সময়ে প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে এমনটাই দরকার!
-না! কেন দরকার? কই পৃথিবীর আর কোন দেশে কি আমাদের মত একাডেমিক কোচিং আছে? কিন্তু তারা কি আমাদের চেয়ে পিছিয়ে? তারাতো তিনটায় কেচিং শেষে ড্রইং, আবৃত্তির ক্লাস করে সন্ধ্যার শেষে বাসায় ফেরে না। তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কি আমাদের চেয়ে পিছিয়ে।
বাসায় সাবজেক্ট ভিত্তিক তিন চারজন টিচার কি উন্নত কোন দেশে এলাউ?
না তার এখন কান্না পাচ্ছে। নিজেকে সে আর মানুষ ভাবতে পারছেনা। কোনো রোবট প্রজন্ম মনে হচ্ছে নিজেকে। মনে হচ্ছে প্রাচীন দাস প্রথায়ও দাসদের প্রতি এতটা নিষ্ঠুর ছিলনা সমাজ। এ কেমন প্রতিযোগিতা যে আমার শৈশব- কৈশোর, খেলা-হুল্লোড় আর জীবনের সব কিছুকেই চক্রায়ন করে দিবে পাঠ্য বইয়ের নিরস কুঠুরীতে? জন্মদাতা-দাত্রীর পেস্ট্রিজ, ইগো আর স্বপ্নের কাছে জিম্মি হবো প্রতিনিয়ত।
আমার স্বপ্ন-ইচ্ছা বলে কি কিছু থাকতে নেই! “মায়ের পদতলে জান্নাত” এর অর্থ কি আমার বন্দিত্ব! আধুনিক পৃথিবীর স্বপ্নের দাসত্ব! কিন্তু এরা সন্তানকে ব্ল্যাকমেইলের জন্যই এই হাদীসকে কেন ব্যবহার করে! জীবনের আর কোথাও তো তাদের হাদীসের প্র্যাকটিস নেই! তীব্র কান্নার গমকে কেটে যায় কয়েকটি সময়ের একক।
এভাবেই একদিন দখিন পা বাড়ায় কলেজে। এক রাতে মা সময় বেঁধে ঘুমানোর নির্দেশ দেয়। তীব্র ক্ষোভে দখিন বলতে থাকে। মা আমি এখন সব বুঝি।
কোনটা ভাল কোনটা মন্দ। কতটুকো পড়তে হবে। কখন ঘুমাতে হবে। সব আমি বুঝতে শিখেছি। মধ্যযুগীয় দাসদের মত যেভাবে মাধ্যমিকে শ্রম দিয়েছি এখন সেটা আর নিতে এসো না।
এখন তুমি জাস্ট ফলাফল জানবে। আমার পার্সোনালিটিতে ইন্টারপ্রেয়ার করো না।
জায়দা বেগম তড়িতাহতের মত মূর্তিবত পাথর হয়ে ছেলের দিকে চেয়ে থাকেন। দেখেন ছেলের ঊর্ধ ঠোঁটে স্পর্ধার কালো রেখা ক্রমশ স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে...
ময়মনসিংহ
০৬/০৪/১৩
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।