আজ ঈদের দিন!! দেশের বাহিরে ২০১১ তে একবার ঈদুল আযহা করলাম এবার ২০১২ তে করছি ২ মাস আগে ইদুল ফিতর করে এসেছি, আর ডিসেম্বর এর শেষে হয়ত আবার যাব তাই আর দেশে যাওয়া হল না এই ঈদে। কি ঈদ করছি ঠিক বুঝতে পারছি না। সকালে উঠে নামাজের টাইম টা জেনে নিলাম ৮.৩০ এ নামাজ। যাই যাই করে গেলাম একটু দেরিতে নামাজ ততক্ষণে শেষ কি আর করা নিজেই ২ রাকাত নামাজ শেষ করলাম খুতবা শুনে বাসায় ফিরা। এখন কি করি বুঝতে পারছি না দেশে থাকলে তো অনেক কিছু করার থাকে এই সময় টা তে।
মনকে হালকা করার অব্যর্থ প্রচেষ্টা আর কি। যাই হোক ঘরে ফিরে Sera Cahoone এর কান্ট্রি মিউজিক শুনে সময় কাটাচ্ছি আর চিন্তা করলাম একটা ভ্রমণ অবিজ্ঞতা ড্রাফট করে রেখেছিলাম পোস্ট করব করব করে আর করা হয় না। কেমন লিখেছি জানি না যদি ভাল লাগে আওয়াজ দিয়েন চালিয়ে যাব।
সবাই কে ঈদের শুভেচ্ছা। ভাল থাকবেন আর বানান কিংবা ভাষার কোন ভুল ভ্রান্তি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি তে দেখার অনুরোধ করছি।
পিরহান্তিয়ান আইল্যান্ড(কোঁটা বারু)
৪ দিন ছুটি কি করা যায় চিন্তা করতে করতে ছুটির সপ্তাহ টা চলে আসল। যাই হোক শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হল আমরা সাবা আইল্যান্ড দেখতে যাব। আমি আর আমার সঙ্গে ৬ জন চাইনিজ কলিগ আমরা একসঙ্গে কাজ করি। একজন চাইনিজ নিল প্লেনের টিকিট কাঁটার দায়িত্ব সে ৭ টা টিকিট তার কার্ড দিয়ে বুক দিয়ে দিল। সবার মন বেজায় খুশি বিশেষ করে একজন চাইনিজ এর, কারন আমরা প্লান করেছি লাংকাভি যাব।
ওর ইচ্ছের কারনে আমাদের প্লান পরিবর্তন করতে হয়েছে।
প্রথমে কিছু ক্যাচাল দিয়ে শুরু করছি !!
যাই হোক আমার পিভি (প্রফেশনাল ভিসা)আমাদের সঙ্গে একজন ইঞ্জিনিয়ার কাজ করতো ও ইন্দোনেশিয়ান যাওয়ার টিক আগের দিন ফেবুয়ারি ২ তারিখ এ সে বলল তোমার পাসপোর্ট চেক করে দেখ তো সাবা পারমিট আছে কিনা। লে হালুয়া টিকিট বুক হয়ে গেছে এখন আবার এই কাহিনী কেন তো চেক করে দেখলাম শুধু ওয়েস্ট মালায়শিয়া লেখা। এইতো দেখি আর এক কাহিনী একজন ইন্ডিয়ান রে জিজ্ঞাস করলাম ও নাকি কিছু দিন আগে ওখানে গিয়েছিল ও বলল তুমি যেতে পারবা না। এই কথা বলে দিল মনটা খারাপ করে।
শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলাম রিস্ক নিয়ে যাব না ভিসায় যেহেতু পারমিট নাই যাওয়া টাও ঠিক হবে না। সবাই কে আমার ডিসিশন জানিয়ে দিলাম যে আমি যাব না এটা শূনে এক চাইনিজ এর মন অনেক খারাপ হয়ে গেল কারন ওর সঙ্গে আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধুত্ত। এই কথা শুনার পর ও সবার সঙ্গে কথা বলে বিষয় টা কনফার্ম করার চেষ্টা করতে লাগলো এবং শেষ পর্যন্ত জানতে পারলাম আমার পাসপোর্ট এ যদি এন্ট্রি এক্সিট স্ট্যাম্প এ সাবা লেখা থাকে তাহলেও হবে। পাসপোর্ট চেক করে দেখলাম লেখা আছে যাক শেষ পর্যন্ত হাঁফ ছেঁড়ে বাঁচলাম।
যেখানে রাত হয় সেইখানে বাঘের ভঁয় !!!
ঠিক যে দিন যাব তার আগের রাত্তি ফেব্রুয়ারি ৩ তারিখ রাতে আমি আর এক চাইনিজ ডিনার এ বসেছি ও আমাকে ওর আই ফোন এ ম্যাপ দেখাচ্ছিল আমরা কোন এয়ারপোর্ট এ নামবো।
ওর দেখানো ম্যাপ দেখে তো আমার চোখ খানা ছানাবড়া। এই হালায় কি দেখায় এইটা তো দেখি অন্য যায়গার ম্যাপ। ওরে কইলাম আগে ডিনার শেষ কর তারপর রুমে গিয়া ল্যাপটপ এ ভালো করে চেক করে দ্যাখব নে। যে চাইনিজ টিকিট বুক দিছে ওরে ও ফোন দিলাম ও আবার একটু দেরিতে আসবে কারন ওর কাজ শেষ হতে সময় লাগবে। ডিনার শেষ করে রাত ১০ টার সময় সবাই মিট করলাম।
বলে নেই আমি আফিস থেকে আসার পথে আমার জন্য কিছু জিনিস কিনলাম যেমন সাতার কাঁটার জন্য কিছু কিট, হাফ প্যান্ট আর কিছু দরকারি জিনিস যেগুলো ছুটি কাটাতে লাগে আর কি। সবাই যখন একসঙ্গে ল্যাপটপ নিয়ে বসলাম দেখি সত্যি আমরা ভুল করে ফেলেছি যেখানে যাওয়ার প্লান করেছি সেই আইল্যান্ড (কোটা কিনাবালু)এর এয়ারপোর্ট এর টিকিট না বুক করে অন্য একটা যায়গার টিকিট বুক দিয়েছি (কোঁটা বারু)। শিট ম্যান!! ওই হালার চাইনিজ “বিপ” দিয়ে শেষ করে দিলাম সবাই। শেষ পর্যন্ত হাসাহাসির আর সীমা থাকল না। ফাইনালি এয়ার এশিয়ার ওয়েব এ গিয়ে টিকিট ক্যানসেল করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম।
এখানেও ক্যাচাল টিকিট এর অপশন এ লেখা ৪৮ ঘণ্টার আগে টিকিট পরিবর্তন করতে হবে । ততক্ষণে আছে আমাদের হাতে ১০ ঘণ্টা। round trip টিকিট প্রায় 10k বিডি টাকার মত তার পর ও আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম যাব না টাকা লস হলে হোক গা। কিন্তু ওরা যাবেই যেহেতু ভ্যাকেসনে কিছু করার নাই। ওরা একে ওকে ফোন করতে লাগলো যে ওই যায়গায় দেখার মতো কি আছে।
আর এ দিকে আমি অনলাইনে কিছু যায়গা বের করার দিকে মন দিলাম। শেষ পর্যন্ত যেখানে আমরা যাব সেখান কার একটা আইল্যান্ড এর নাম পাওয়া গেল সেই সঙ্গে হোটেলের ফোন নাম্বারও। ওদের ইংলিশ স্পিকিং এ একটু অসুবিধা তাই আমাকে ফোন দিয়ে কথা বলতে বলল যে ঐ আইল্যান্ড ওপেন আছে নাকি। শেষ পর্যন্ত জানতে পারলাম আইল্যান্ড ওপেন আছে। কারন মালায়শিয়ায় কিছু আইল্যান্ড কিছু টাইমে “tourist not allowed” থাকে।
যেহেতু সবার কাঙ্গিত যায়গায় যাচিছ না সো হোটেল বুক দেয়ার প্রয়োজন মনে করল না কেউ। শেষ পর্যন্ত হাসা হাসি করে যাওয়ার প্লান ঠিক রেখে সবাই যার যার রুমে শোয়ার জন্য চলে গেলাম।
ডমেস্টিক এয়ারপোর্ট কেএলসিসিটি যাওয়ার জন্য ভোর ৭ টায় সবাই রেডি হয়ে আছি রেন্ট এ কার আসলো এরকম একটা ভুল ভ্রমন এবং ভুল টিকিট বুক এর জন্য হাসা হাসি করতে করতে গাড়িতে উঠে পড়লাম।
ঘণ্টা খানিকের মধ্যে আমরা এয়ারপোর্ট এ পৌঁছায় গেলাম। ক্যাচাল এর তো আর শেষ নাই নতুন ক্যাচাল।
হল একজন চাইনিজ বলল কি দরকার ১০ রিঙ্গিত করে বোর্ডিং পাস এর জন্য দেয়ার চল অনলাইনেই বোর্ডিং টা চালায় দেই কোন চার্জ লাগবে না। কাহিনী হল কেমনে? প্রিন্টার তো নাই ল্যাপটপ থেকে বের করে ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে দেখানো হবে সবার বোর্ডিং পাস। এই নিয়ে প্রায় ৩০ মিনিটের মত ব্যায় করতে হল। শেষ পর্যন্ত কোন লাভ হল না কারন অনলাইন বোর্ডিং মিনিমাম ১ ঘণ্টা আগে রিপোর্ট করতে হয় তাও প্রিন্ট করে আনতে হয়। সো যা লাউ তাহাই কদু হিসেবে আমাদের ৭০ রিঙ্গিত দিয়ে বোর্ডিং কাহিনী শেষ করতে হল।
লুল কারে কয় !!
আমরা সবাই মোটামুটি ইয়াং ছিলাম, যখন প্লেনে এ উঠার সময় শেষ বারের মত চেকিং হচ্ছে জটিল এক এয়ার হোস্টেজ সেই কম্ম টি করতেছিল তাকে হেল্প করছে একজন সিকুউরিটি সেও মেয়ে কিন্তু সেই জটিল এয়ার হোস্টেজ এর মত না। এক লুল চাইনিজ সে ঐ লাইন ছাড়া অন্য দিকে যাবে না এই নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ধরে চোখ টিপা টিপি আর চাঁপা হাসাহাসি চলল।
চলবে!!!
পরের অংশে আশা করছি শেষ করে দিত পারব সেই সঙ্গে কিছু টিপস দিব যারা এখানে আসতে চান তাদের জন্য।
পর্ব-২ এখানে ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।