অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা আদিম সমাজে বলিপ্রথা ছিলো, আয়োজন করে গোত্রের সকলে মিলে পশুবলি উৎসব করতো, কখনও দেবতার নামে পশু উৎসর্গ করা হতো কখনও কোনো মনোস্কামনা পূরণে পশু বলি দেওয়া হতো। কৃষিভিত্তিক সভ্যতায় দেবতাকে তুষ্ট করতে পশু বলি দেওয়ার প্রথা আপত্তিকর কিছু ছিলো না।
সেমিটিক ধর্মের বর্ণনা দেখে মনে হয় এই ধর্মে পিতার নিষ্ঠুরতা এক ধরণের সমীহউদ্রেককারী অনুশাসন। সেমিটিক ধর্মানুসারে ইব্রাহিম বৃদ্ধ বয়েস পর্যন্ত অপূত্রক ছিলেন, অধিকারভুক্ত দাসীর গর্ভে তার প্রথম সন্তান জন্মায়, এবং সে সন্তান জন্মের পর তার স্ত্রীও একটি পূত্র সন্তানের জন্ম দেন। হাজেরা এবং ইসমাইলকে মরুভুমিতে পরিত্যাগের অপরাধ ভুলে যেতে না যেতেই কুরআনের ৩৭নং সুরার ১০২তম আয়াতে এসে দেখা যায় তিনি তার পূত্রকে বলছেন তোমাকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কতল করা হবে।
শিশুর ইশ্বরভক্তির নিদর্শন হিসেবে দেখানো হয় শিশু নি:শঙ্ক চিত্তে বলছে আপনি আমাকে নিশ্চিন্তে জবেহ করতে পারেন, আমি সুবোধ বালকের মতো নিজেকে সমর্পন করলাম।
তবে পরম করুণাময় একেবারে শেষ মুহূর্তে ইব্রাহিমকে নিবৃত করেন, তার বদলে একটি ভেড়া কতল করা হয়। মোটামুটি কোরআনের ভাষ্যে এটাই কোরবানীর উৎপত্তি।
তবে ইব্রাহিমের দুই শিশুপূত্রের ভেতরে কাকে আসলে কোরবানীর জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিলো ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকে এটা নিয়ে একটা বিতর্ক চলে আসছে। একদলের বিশ্বাস এটা ইসমাইল, অন্য একদলের ধারণা এটা ইসহাক এবং উভয় পক্ষই মুহাম্মদের জবানীতে বিষয়টিকে নিশ্চিত করেছেন।
[ ইসলামের ইতিহাস তাবেরী- Volume 2 Prophets and Patriarchs, পৃষ্ঠা ৮২- ৯৭]
তবে বিশ্বাসীদের অভিমত এটা ইব্রাহিমের ঈশ্বরানুগত্যের পরীক্ষা ছিলো এবং তিনি নিজের আনুগত্যের প্রমাণ দিয়েছেন নিজের সন্তানকে হত্যা করতে চেয়ে।
সন্তানকে হত্যা করার বিধি ইব্রাহিমের সময়েই শেষ হয়ে গিয়েছিলো এমন না। তাবেরীর ইসলামের ইতিহাস বইয়ের ষষ্ঠ খন্ডে এসে আমরা জানতে পারি মুহাম্মদের মৃত্যুর পরেও মদীনার এক নারী মনস্কামনা পুরণের পর তার সন্তানকে বলি দেওয়ার মানত করেছিলো এবং পরবর্তীতে মদীনার শাসক মারওয়ান বিষয়টি সমাধান করেন। তবে একই সাথে আমরা জানতে পারি যদি নাতার অপরাপর পুত্র এবং কোরাইশ গোত্রের অন্যেরা তাকে বাধা না দিতো মুহাম্মদের পিতা আবদুল্লাহকেও তার পিতা আবদুল মুত্তালিব কা'বা প্রাঙ্গনে জবেহ করে ফেলতেন । [ তাবেরী ইসলামের ইতিহাস- volume 6- muhammad in mecca- পৃষ্টা ১- ৯]
অবশ্য এ দুটো ঘটনার সাথে উপমহাদেশের মুসলমানদের কোরবানীর উন্মাদনার কোনো যোগসূত্র নেই।
বিকশিত হিন্দু মধ্যবিত্তের সাথে অর্থনৈতিক সংঘাতে সম্রাজ্যচ্যুত মুসলমানগণ আরও বেশী আন্তরিক মুসলমান হয়ে উঠেছিলো উপমহাদেশে। কোম্পানীর লোভনীয় চাকুরির কোটা এবং আত্মাভিমানি শিক্ষিত হিন্দুদের সমানাধিকারের দাবীর বিপরীতে এই উঠতি করুণাপ্রত্যাশী মুসলমান মানসকে শুশ্রুষা এবং প্রশ্রয় দিয়ে লালন করেছে ইংরেজ বণিকেরা।
অধিকৃত ভূখন্ডে শুক্রবারের জুম্মা নিষিদ্ধ সুতরাং জুম্মার নামাজ আদায় করা যাবে না দারুল হারবে এই প্রচারণার সাথে পালটা লড়াই হয়েছে জুম্মাবাদী মোল্লাদের, ফলে শুক্রবারের জুম্মা আমাদের মুসলমানিত্বের অবশ্যচর্চিত রীতিতে পরিণত হয়েছে, কিন্তু এই জুম্মা আসলে আমাদের ততটা গরিমা দিতে পারে নি পরাজিতের আক্রোশের শিকার হয় নিরীহ মানুষেরা, যেহেতু উলঙ্গ হয়ে নিজের মুসলমানিত্বের চিহ্ন প্রদর্শণ করতে পারে না তারা সুতরাং হিন্দুদের পবিত্র গরু কোরবানীর মাধ্যমে উপমহাদেশের মুসলমান নিজেদের মুসলমানিত্ব প্রকাশের উপলক্ষ্য পেয়েছে।
মসজিদের সামনে বাজনা আর গরু কোরবানী নিয়ে প্রতিবছরের দাঙ্গা সংঘাত আরও বেশী কোরবানীমনস্ক করেছে উপমহাদেশের অদ্ভুত মুসলমানদের। সুতরাং হজ্জ হোক কিংবা না হোক প্রকাশ্যে কোরবানি দিতে হবে।
প্রকাশ্যে বড় ছুড়ি শাণাতে শাণাতে একটার পর একটা গরু জবেহ করে আমরা মুসলমান প্রমাণের এই উদ্যোগটা কতটা প্রবল ছিলো সেটার প্রমাণ পাওয়া যায় পুরোনো পত্রিকায়,প্রায় প্রতি বছরই কোরবানীর দিনে সতর্ক পুলিশ প্রহরার ব্যবস্থা করতে হয়েছে, কোরবানীর জন্য আলাদা স্থান মনোনীত করা হয়েছে, ধর্ম পালনের স্বাধীনতা দিতে গিয়ে ধর্মীয় সংঘাত নিয়ে ব্যাতিব্যস্ত সময় কাটাতে হয়েছে তাদের।
কিছু কিছু মুসলিম ব্যক্তি কোরবানী না দেওয়ার অনুরোধ করে কাফির উপাধি পেয়ছেন, মুরতাদ ঘোষিত হয়েছেন, তাদেরই একজন মীর মোশাররফ হোসেন, তাকে নিয়ে সে সময়ে মুসলমান সমাজে যে বিক্ষোভ হয়েছিলো, তিনি পরবর্তীতে ক্ষমা প্রার্থনা করে নিজের মুসলমানিত্ব টিকিয়ে রাখেন।
কোরবানি, বলি প্রথা, মনোবাসনা পুরণের জন্য প্রিয়তম প্রাণী কিংবা সন্তান উৎসর্গের অঙ্গীকার ইসলাম পূর্ব যুগে যতটা প্রকট ছিলো ততটা বর্তমানে নেই।
হাদিস গ্রন্থগুলোর ভেতরে প্রামান্য বিবেচনা করা হয় যে কয়টি গ্রন্থকে তার ভেতরে বিশুদ্ধতার তালিকায় প্রথমে আসে বুখারী সংকলিত হাসিদের কথা, এরপর সাহীহ মসলিম, তারপর সুনান আবু দাউদ,
Click This Link target='_blank' >সুনান আবু দাউদ এর একটি হাদিসে আছে A man called the Apostle of Allah (peace_be_upon_him): We used to sacrifice Atirah in pre-Islamic days during Rajab; so what do you command us? He said: Sacrifice for the sake of Allah in any month whatever; obey Allah, Most High, and feed(the people). He said: We used to sacrifice a Fara' in pre-Islamic days, so what do you command us? He said: On every pasturing animal there is a Fara' which is fed by your cattle till it becomes strong and capable of carrying load. The narrator Nasr said (in his version): When it becomes capable of carrying load of the pilgrims, you may slaughter it and give its meat as charity (sadaqah). The narrator Khalid's version says: You (may give it) to the travellers, for it is better. Khalid said: I asked AbuQilabah: How many pasturing animals? He replied: One hundred.
ইসলামপূর্ব যুগের বিভিন্ন প্রথাগুলো অনুসরণে বাধা নেই তবে পশুগুলোকে আল্লাহর নামে উৎসর্গ করার বিধান রয়েছে।
আমরা যে সময়ের রীতি নিয়ে আলোচনা করছি সে সময়ের প্রায় সকল মুসলমানই মূলতঃ মদীনাবাসীই ছিলো, মক্কা বিজয়ের পরে হয়তো ইসলামী খিলাফতের চৌহদ্দি বেড়েছে কিন্তু সাহীহ বুখারীর ৫২৪৬ হাদিসে বলা হচ্ছে
It is related from ash-Sha'bi that Masruq went to 'A'isha and said to her, "Umm al-Mu'minin, there is a man who sends the sacrificial camels to the Ka'ba while he remains in his city and gives instructions that his camels be garlanded and then he remains in ihram from that day people come out of ihram." He said, "I could hear her clap from behind the screen. Then she said, 'I used to plait the garlands of the sacrificial camels of the Messenger of Allah, may Allah bless him and grant him peace. He would send his camels to the Ka'ba, but nothing was unlawful to him which is lawful for a man to do with his wife until the people returned
সাহীহ বুখারীর প্রামাণ্যতা নিয়ে সংশয় নেই, সুতরাং বলা যায় সে সময়ে মুসলমানরা কা'বায় হজ্জ্ব শেষ করে কুরবানী করতো কিংবা নিজেরা যেতে ব্যর্থ হলে কোরবানীর জন্য কাফেলার সাথে পশু পাঠিয়ে দিতো মক্কায়।
ধর্মমতে হজ্জ্বের সমাপ্তিতে কোরবানী দেওয়ার প্রথাটুকু অন্য কোনো স্থানের জন্যে প্রযোজ্য কি না সেটা নিয়ে হয়তো পরবর্তী আলেমগণ আলোচনা করেছেন, কেন না বুখারী, মুসলিম আবু দাউদের সূত্রানুসারে ঘরে খাওয়ার জন্যে পশু জবেহ দেওয়ার তেমন বাধ্যবাধকতা নেই। তবে কেউ যদি অংশগ্রহন করতে চান আন্তরিক ভাবে তাহলে তিনি মক্কায় গরু কিনে পাঠাতে পারেন। আমি অবশ্য নিশ্চিত না উপমহাদেশে যতটা ঘটা করে হাটে কোরবানীর পশু বিক্রী এবং পশু হত্যার মহোৎসব হয় বিশ্বের অপরাপর প্রান্তে এতটা উৎসবের সাথে হত্যাউদযাপন হয় কি না?
কাছাকাছি মালোয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্কের মানুষজন বলতে পারবেন সেখানে তারা এমন পশুর হাট এবং কোরবানীর উৎসব দেখেছেন কি না। মধ্যপ্রাচ্যে কিংবা মিশরে বসবাসরত মানুষেরাও জানাতে পারেন সেসব দেশে এমন সাড়ম্বরে কোরবানী উদযাপিত হয় কি না? সেখানে এমন অসভ্য বর্বরতার প্রতিযোগিতা হয় কি না?
সব ধর্মের দরিদ্রের জন্য ন্যুনতম একটা বিধিবন্দোবস্ত থাকে, ইসলামের মতো মহান ধর্মেও সেটা আছে। সুনান আবু দাউদে বলা আছে
Narrated Abdullah ibn Amr ibn al-'As: The Prophet (peace_be_upon_him) said: I have been commanded to celebrate festival ('Id) on the day of sacrifice, which Allah, Most High, has appointed for this community. A man said: If I do not find except a she-goat or a she-camel borrowed for milk or other benefits, should I sacrifice it? He said: No, but you should clip your hair , and nails, trim your moustaches, and shave your pubes. This is all your sacrifice in the eyes of Allah, Most High.
অর্থ্যাৎ তোমরা যারা কুরবানী দিতে পারবে না তার চুল দাড়ি ছেঁটে বাল ফেলবা, তোমাদের বাল ফেলানোটাই আল্লাহ কাছে কোরবানীর সমতূল্য হবে।
সুতরাং দরিদ্র ভাইয়েরা যারা মক্কা মদীনার গরুছাগল পাঠানোর সামর্থ্য রাখেন না তারা ঘরে বসে বাল ফেলালেও কোরোবানির সওয়াব পাবেন। গরু, উট সাতজনের নামে জবেহ দেওয়া যায় এ বিধান স্পষ্ট উল্লেখ থাকলেও নিজের বাল নিজে ফেললে সেটা কয়জনের নামে উৎসর্গ করা যাবে এ বিষয়ে তেমন কোনো বিধান নেই।
কিন্তু নির্দেশনা হচ্ছে কোরবানীর পশুর মাংশ কোরবানীর ৩ দিনের ভেতরেই শেষ করে ফেলতে হবে। সাহীহ মুসলিম অনুসারে ইসলামের প্রাথমিক যুগে এমন বিধান থাকলেও পরবর্তীতে বলা হয়েছে মানুষ চাইলে কোরবানীর মাংস জমিয়ে রাখতে পারে ভবিষ্যতের জন্য।
একই বিধান অবশ্য সুনান আবু দা্উদেও আছে
The Prophet (peace_be_upon_him) said: We forbade you to eat their meat for more than three days in order that you might have abundance; now Allah has produced abundance, so you may eat, store up and seek reward. Beware, these days are days of eating, drinking and remembrance of Allah, Most High.
সামর্থ্যে থাকলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে আয়োজন করে কোরবানীর মাংস খান, সাধ্যে না কুলালে বাজর থেকে ভালো মানের রেজার কিনে বাল ফেলান, উভয়টাতেই একই রকম নেকী অর্জিত হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।