আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প যখন জীবনের প্রশ্নে

আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনই,তুমি কি অপরুপ রুপে বাহির হলে জননী আজগর আলী আমাকে দেখামাত্রই উল্টোদিকে দৌড় দিয়েছিল। ঠিক "দেখামাত্রই দৌড়" না,আসলে আগে উল্টোদিকে ফিরে হাঁটা শুরু করেছিল;যেই আমি নাম ধরে ডাক দিয়েছি ওমনি আর দেরি নাই-ভোঁ দৌড়। পাওনাদারকে দেখলেও মানুষ এভাবে দৌড়ায় না মনে হয়। আচ্ছা যমদূতকে দেখলে?কি জানি ভাই,আমার তেমন অভিজ্ঞতা নেই। পুলিশকে কি যমদূতের সাথে তুলনা করা যায় ?হ্যাঁ পুলিশের দাবড়ানি খাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে কিছুটা।

কিছুটা বলছি এই কারণে যে,আমাকে না আবার আইনলংঘনকারী ,দুষ্কৃতিকারী,চোর,ডাকাত,সন্ত্রাসী ইত্যাদি ভেবে বসেন। আসলে হয়েছে কি একবার এক মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে ছিলাম;দেশের প্রতি একটা আত্মিক বন্ধন আছে তার টানেই টিপাইমুখের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই পুলিশ এসে একধার থেকে লাঠিপেটা শুরু করলো। পদযুগলের উপর ভরসা থাকলে কে আর ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে বলুন ? তাই ঝেড়ে দৌড় দিয়েছিলাম। আমার সেই সামান্য অতীত অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি,পুলিশ যদি আজরাঈল হয় তবে জান বাঁচানোর সেই দৌড়ের সাথে আজগর আলীর দৌড়ে কিছুটা মিল আছে।

এই যা,আমাকে নিয়ে আবার ঋণাত্মক চিন্তা ভাবনায় ডুব দিচ্ছেন। নারে ভাই,আজগর আলীর সাথে আমার কোন পূর্ব শত্রুতা নেই। পরিচয়ই হয়েছে দুই তিন সপ্তাহ হবে। আরে এইতো সেইদিন মন্ত্রী যখন ত্রাণ বিতরনে এলেন-আজগর আলীর সাথে আমার পরিচয় হল। তাছাড়া একটু বিবেক খাটিয়ে বলুন,আমার মত সামান্য কটা টাকা মাইনে পাওয়া টিভি রিপোর্টার কোন যুক্তিতে একটা লোকের সাথে দুশমনি করতে যাবে?আরে ভাই,গত সপ্তাহ পুরোটাই তো গেল ত্রাণ সংগ্রহ করতে করতে।

একদল লোক পাহাড় ধসে ঘরহারা,স্বজনহারা হয়ে আছে। সরকার ত্রাণ দিয়েই খালাস ,সামনে শীতে লোকগুলো কোথায় থাকবে না থাকবে,কি খাবে তা নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই কারো। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে নিঃস্ব মানুষগুলোর হাতে ত্রাণ তুলে দিলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়। তাই বন্ধু বান্ধব দের থেকে শুরু করে পরিচিত সবার কাছ থেকে সাহায্য তুলেছি গত সপ্তাহ জুড়ে। ইচ্ছা অন্তত একটা পরিবারের জন্য বস্তিতে ভাড়া ঘরের ব্যবস্থা করা এবং রিকশা কিনে দেওয়া।

পাহাড়তলীর ওয়ার্ড কমিশনার ভাড়া ঘরের ব্যাপারে এক প্রকার আশ্বস্ত করেছেন। আমি তাই আজগর আলীর সাথে দেখা করতে এলাম। আর এসেই বিচিত্র অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলাম। আগের ঠিকানায় গিয়ে দেখি উনি পরিবার নিয়ে হাওয়া। এর কাছে ওর কাছে খোঁজ নিয়ে নতুন ঠিকানায় আসলাম।

আর বেচারা কিনা আমাকে আর সাথের ক্যামেরাম্যানকে দেখার পরই এভাবে পালিয়ে গেল ? আরে বাবা,কি এমন দোষ করেছি ?স্বজনহারা,ঘরহারা মানুষ-নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও পাহাড়ের পাদদেশে ঘর বানায় প্রতি বছর। কেন এমন জেনে শুনেই মৃত্যুর সাথে বসবাস? প্রশ্ন করতেই আজগর আলী হলুদ দাঁত দেখিয়ে দেখিয়ে বলে ছিল তাদের অসহায়ত্বের কথা,সরকারের তরফ থেকে যে তাদের পূণর্বাসন করা হয় না সেই অভিযোগের কথা। আমি সাংবাদিক মানুষ সমগ্র জাতির কাছে এই কথা পৌঁছে দিয়েছি। ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা করার জন্য ফান্ড কালেকশন করেছি। আমি কি আর কখনো ভেবেছিলাম আমার করা রিপোর্টটার জন্য আজগর আলীর ত্রাণ বন্ধ হয়ে যাবে,মাথা গোঁজার ঠাইটাও চলে যাবে? টাইগারপাস থেকে কদমতলী পর্যন্ত দৌড়ে এসে হয়রান পেরেশান মনে একটাই প্রবাদ বাক্য স্মরণ হচ্ছে বারবার- “ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলেও ভয় পায়” ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.