লোকে বলে স্বপ্ন জোছনা বিহার, জোছনা কনা রাত্রি উজাড় ! আমি বলি এ বেলা চৈত্র বিহার, স্বপ্নে ছুরি চোখে আঁধার ! আমার মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে, যদি সেদিন ধানমণ্ডি না যেতাম তাহলে কি এসব ঘটতো?
আমার বাসা মিরপুরে। মাঝে মাঝেই ধানমণ্ডি যেতাম বন্ধুদের সাথে লেকের পাড়ে বসে আড্ডা দিতে।
সেইদিন, ঠিক ১ বছর আগের সেইদিন কিছু ভাল লাগছিলনা বলেই একাই গেছিলাম ধানমণ্ডি । রবীন্দ্র সরোবরের কাছে যে চায়ের দোকান গুলো আছে, সেখানে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম। চা শেষ করে ভাবলাম হাঁটতে হাঁটতে ঝিগাতলার দিকে যাই! ঠিক তখনি একটা চিৎকার শুনলাম, "ছিনতাই, ছিনতাই আমার ব্যাগ নিয়ে গেলো"!
দেখতে পেলাম একটি ছেলে হোন্ডায় করে ব্যাগ নিয়ে পালাচ্ছে।
আমি কোন কিছু না বুঝেই ঐ হোন্ডার পিছনে দৌড় দিলাম। কিন্তু তাতে কোন লাভ হলনা। ছিনতাইকারী পালিয়ে গেলো। লাভের মধ্যে এটুকু হল যে, দৌড়াতে গিয়ে রিকশার সাথে বেধে আমার শার্টটা একটু ছিড়ে গেলো এবং হাতেও ব্যাথা পেলাম।
নিজের উপর রাগ লাগছিলো এভাবে অকারনেই ছুটলাম বলে।
ঠিক তখনি পিছন থেকে কে যেন বলল, "আপনি কি বেশি ব্যাথা পেয়েছেন"। ঘুরে পিছনে তাকাতেই দেখি সেই মেয়েটি, যার ব্যাগ ছিনতাইকারী নিয়ে পালিয়েছে। চিৎকার শুনেই দৌড় দিয়েছিলাম বলে মেয়েটিকে তখন লক্ষ্যই করিনি। ভালভাবে তাকাতেই দেখলাম বেশ সুন্দর একটা মেয়ে অপরাধীর মতো চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। যেন আমি হাতে ব্যাথা পেয়েছি তার দোষে! কেন জানি ওকে দেখে আমার খুব ভালো লাগলো।
কি বলতে হবে ঠিক বুঝতে পারছিলামনা। আমাকে কিছু বলতেও হলনা। সেই বলল যে তার বাসা মিরপুরে এবং সে ধানমণ্ডি ১৫ নং এর দিকে যাচ্ছিল এক বান্ধবীর বাসায়। আর তাতেই ঘটলো এই দুর্ঘটনা। ঐ ব্যাগেই তার মোবাইল ফোন এবং সব টাকা ছিল।
এখন আর কিছুই নাই। সে আরও বলল বান্ধবীর বাসায় গিয়ে কিছু টাকা ধার নিয়ে বাসায় ফিরবে। সে আমাকে বারবার বলছিল, "ভাইয়া আমার অনেক খারাপ লাগছে, আমার জন্যে আপনার কষ্ট হল, হাতে ব্যাথা পেলেন, আপনার শার্ট ছিড়ে গেলো"। আমি যেন কোন কথাই বলতে পারছিলামনা! সে যখন চলে যাচ্ছিল তখন কি মনে করে বলে ফেললাম "আজ বান্ধবীর সাথে দেখা করতে না গেলে হয়না ? আর আমার বাসাও তো মিরপুরে, কিছুক্ষণ এখানে বসে থেকে একসাথেই মিরপুরে যাই"! সে আমার কথায় প্রথমে কিছুটা আশ্চর্য হল এবং তারপর আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল ঠিক আছে, আজ আপনার সাথেই বাসায় ফিরবো!
তারপর অনেকটা সময় আমরা লেকের পাড়ে বসে কাটালাম। অনেক কথা বলছিলাম দুজনে।
আসলে সেই বলছিল সব আর আমি শুধু শুনছিলাম। ওর বাসা মিরপুর ১১ নং এ আর আমার বাসা ১২ তে। ফেরার সময় ওকে বাসায় পৌঁছে দিলাম। ও আমার মোবাইল নম্বর লিখে নিলো। তারপর আমিও ফিরে আসলাম আমার বাসায়।
পরদিন সন্ধায় একটা অপরিচিত নম্বর থেকে কল আসলো। কলটা রিসিভ করতেই বুঝলাম সে! ওর কাছ থেকেই শুনলাম আজ ও কাস্টমার কেয়ার থেকে হারানো সিমটা উঠিয়েছে এবং নতুন একটা ফোন কিনেছে। আর প্রথম কলটাই করেছে আমাকে। তারপরের দিনগুলো ঠিক যেন স্বপ্নের মতো! আমি মাঝে মাঝেই ভাবতাম ভাগ্যিস সেদিন অকারনেই ধানমণ্ডি গেছিলাম! আর ও সবসময় বলতো "মাত্র একটা ব্যাগ, ৪০০-৫০০ টাকা আর একটা মোবাইল এর বিনিময়ে আমি তোমাকে পেয়েছি"। আমরা দুজনেই ভাবতাম সেদিন যা হয়েছিলো খুব ভালো হয়েছিলো! তা'না হলে তো আমার দুজন দুজনকে খুজেই পেতাম না।
আসলেইতো সেদিন আমি যদি অকারনেই ধানমণ্ডি না যেতাম তাহলেতো এসবের কিছুই ঘটতো না।
দিনগুলো আমরা কাটাচ্ছিলাম ঠিক যেন স্বপ্নের মতো করে। সময় পেলেই চলে যেতাম লেকের পাড়ে প্রথম সেদিন যেখানে বসেছিলাম সেখানে। পাশাপাশি বসে, হাতে হাত রেখে সময় গুলো পেরিয়ে যেতো।
স্বপ্নের মতো ভালোলাগার, ভালোবাসার সেই সময়গুলো কেটে যেতো খুব তাড়াতাড়ি! ও মাঝে মাঝেই অদ্ভুত সব পাগলামো করতো।
আমারও খুব ভালো লাগতো সেই সব পাগলামো দেখতে।
প্রতিটা দিন কতো কতো কথা!
এভাবেই কখন যে পুরো একটা বছর পেরিয়ে গেল!
আজ আমাদের প্রথম দেখা হবার এক বছর পূর্ণ হবে। আর সেই কারনে আমরা ঠিক করেছিলাম প্রথম যেখানটায় আমাদের দেখা হয়েছিল, এবং তারপর লেকের পাড়ে যেখানে আমরা বসে ছিলাম আজ ঠিক সেখানেই বসবো। আমি বাসা থেকে বের হয়ে ওর জন্যে মিরপুর ১১ তে অপেক্ষা করব, এমনটাই বলেছিল সে।
আমি ঠিক সময়মতই এসে দাঁড়িয়েছি ১১ নং বাস স্ট্যান্ড এর কাছে।
কিছুক্ষন পরে দেখলাম ও চলে এসেছে। ঐ তো ওকে দেখা যাচ্ছে রাস্তার ওপারে। ও আমাকে দেখতে পাবার পর আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। ও রাস্তা পার হয়ে এপারে আসলেই আমরা একসাথে রবীন্দ্র সরোবরের দিকে এগুবো।
আমি এখন ভাবছি, না ঠিক ভাবছিনা আমার মাথার মধ্যে শুধু একটা কথাই ঘুরছে- "আমি কেন সেদিন ধানমণ্ডি গিয়েছিলাম"।
সেদিন আমি ওখানে না গেলেইতো আর এমনটা হতো না। আমি ওখানে না গেলে ওর সাথে আমার দেখাই হতোনা। আর তার এক বছর পর ওখানে যাবার জন্যে আমার কাছে আসতে গিয়ে ওকে বাসের নিচে চাপা পড়তে হতো না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।