আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহারাত্রির মহাকাব্য !!!

সৃস্টির সেরা মানুষ তার অতি ক্ষুদ্র জ্ঞানের সীমাবদ্ধতায় এ সুবিশাল মহাবিশ্বের অসীম অজানার কণাতম রহস্যও ভেদ করতে না পারার চরম ব্যর্থতায় স্রস্টাকেই অস্বীকার করার স্পর্ধা দেখায়!!! [লেখাটি চার বছর আগের.... লেখার পরপরই হারিয়ে ফেলেছিলাম... চার বছর পর খুঁজে পেয়ে আনন্দ হচ্ছে.... বিয়ের আগেই একবার এন্গেজমেন্ট রিংগ হারিয়ে ফেলে খুঁজে পাবার পর যেরকম আনন্দ হয়েছিল ঠিক সেই রকম আনন্দ ] ব্লগটি প্রিয় বন্ধু লস্করকে উৎসর্গীকৃত _____________________________________________________ ২০০৮ সন... সকালের সূর্যোদয় দেখে দিনের যে পূর্বাভাষ পাওয়া যায়, তা অনেক ক্ষেত্রেই সত্য হয়না। কিন্তু তাই বলে গত ২২শে আগস্টের সকালে হলে বসে অলস সময় কাটানোর বিরক্তিকর মূহুর্তে কল্পনাও করিনি সন্ধ্যায় আমাদের জন্য কিরকম উত্তেজনা অপেক্ষা করছে! পরদিন রিপোর্ট প্রেজেন্টেশান , তাই যারা হলে থেকে গিয়েছিল তাদের সবার মনেই ক্ষীণ আশা ছিল, ঢাবি পরিস্থিতির কারণে আমাদের জাবি'র (জাহাঙ্গীরনগর) ক্লাস বর্জন কর্মসূচীর হয়তোবা সেদিনই সমাপ্তি ঘটবে। বিকেল ৪-৫০ এ কারফিউ ও রাত আট'টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশের খবর ছড়িয়ে পড়লো। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে ছাত্ররা দলে দলে ব্যাগ গুছিয়ে হল থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো। ভার্সিটির ডেইরী গেট তখন আন্দোলনরত ছাত্রদের দখলে।

তাই দেরী না করে আমি প্রান্তিক গেটের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। ব্যাচের শাফিন, বুশরা, আইরিন, মৌসুমী, ইমতিয়াজ, লিসি তখন আমার অপেক্ষায় প্রান্তিক গেটে। কিন্তু আমি আসবার আগ মূহুর্তে অনেক প্রতীক্ষার পর একটি বাস পেলে সবাই সে বাসে উঠে যায় এবং সবার অনুরোধ উপেক্ষা করে লিসি আমার সাথে পরের বাসে যাবে বলে থেকে যায়। দুর্ভাগ্যক্রমে শাফিনদের সেই বাসই ছিল ঢাকা থেকে আসা সর্বশেষ বাস এবং ভাংচুরের কারণে গাবতলী থেকে সাভারের বাস চলাচল তখন সম্পূর্ণ বন্ধ! অবশেষে প্রায় দি্বগুণ ভাড়া দিয়ে রিকশায় স্মৃতি সৌধে এসে কোন বাস না পেয়ে দুজনে টু-স্ট্রোক ট্যাক্সীতে উঠে পড়লাম। তখনো মনে ক্ষীণ আশা ছিল আট'টার আগেই লিসি কে তার কোন না কোন আত্মীয়ের বাসায় পৌছে দিতে পারবো।

কিন্তু রাস্তায় প্রচন্দ জ্যামে মূহুর্তেই সে আশা দুরাশায় পরিণত হলো। সোয়া ছয়টায় ফ্যান্টাসী কিংডম এসে আমাদের ট্যাক্সী নস্ট হলো। ক্লাসমেট ও বন্ধু লস্করের বাসা উত্তরায় জানলেও ঠিকানা জানতামনা, মোবাইলেও তাকে পাওয়া সম্ভব হচ্ছিলনা। তাই ঠিক করলাম, সোয়া সাতটার মধ্যে উত্তরায় আম্মুর কাজিন লাকি খালার বাসায় পৌছাতে পারলে তাদের গাড়িতে করে গুলশান-২ এ লিসির মামার বাসায় তাকে পৌছে দেব নতুবা দুজনই লাকি খালার বাসাতেই থেকে যাব। আসলে ঢাকার অবস্থা সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকাতেই এ কঠিন পরিস্থিতিতেও লিসিকে আশার বাণী শোনাতে পারছিলাম, তাছাড়া তখনও জানতামনা , মোবাইলে খালার ঠিকানা সেক্টর ১ রোড ৩ এর বদলে সেক্টর ৩ রোড ১ শুনেছি।

কোন ট্যাক্সী ক্যাবকে রাজী করাতে না পেরে আবদুল্লাহপুরের লোকাল বাসে কিছুদূর যাবার পর প্রায় সোয়া এক ঘন্টা জ্যামে আটকা পড়লাম। মোবাইল নেটওর্য়াক তখন সম্পূর্ণরুপে বন্ধ। নিরুপায় হয়ে জাবির ছাত্র-ছাত্রীদের বিশাল এক দলকে হেঁটে যেতে দেখে আমরা দুজনও বাস থেকে নেমে পড়লাম। মনে হচ্ছিল দেশে কোন যুদ্ধ শুরু হয়েছে এবং আমরা সবাই শরণার্থীর মতো নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে রাতের অন্ধকারে ছুটে পালাচ্ছি। আল্লাহ্'র অশেষ রহমতে কিছুদুর হেঁটে যাবার পরই লস্করের কাজিন ইংরেজী'র ছাত্র আরিফ ভাইয়ের সাথে দেখা, যার সাথে দেখা না হলে হয়তোবা এক চরম অনিশ্চয়তার মাঝে রাত কাটাতে হতো, কেননা কারফিউর মাঝে রাতের বেলা ভুল ঠিকানায় গিয়ে খালার বাসা বের করতে যথেস্ট বেগ পেতে হতো।

আরিফ ভাইসহ ৪০ মিনিট হাঁটার পর আমরা প্রায় ২০ জন ছাত্র-ছাত্রী একটি পিকআপে লিফট নেই একজন আরেকজনের কাঁধে হাত রেখে ভারসাম্য রক্ষা করি। আকাশে অদ্ভূত সুন্দর চাঁদ আর দুপাশে আশুলিয়ার নদীর অসাধারণ দৃশ্যের মাঝে দুরন্ত গতিতে ছুটে চলার সময় এক অদ্ভূত অনুভূতি হ্চ্ছিল, এরকম সুন্দর অভিজ্ঞতা হয়তোবা জীবনে আর পাবোনা। রাত সাড়ে আট'টায় লস্করের বাসায় পৌছে দেখি শাফিনরা সবাই বহু আগেই এসে উপস্থত। অতঃপর কান্নারত মা-বাবাদের টিএনটিতে শান্ত করবার পর লস্করদের বাসার ছাদে সারারাত হৈহুল্লোর, খাওয়া দাওয়া আর গান বাজনার মাঝে কখন যে ভোরের সূর্য উঁকি দিতে শুরু করেছে টের পাইনি। আর যারা ক্যাম্পাসে গ্রামের বিভিন্ন বাসায় আশ্রয় নিয়েছিল তারা দলবেঁধে খিঁচুরী রেঁধে সারারাত আড্ডা আর গিটারে সুর তুলে কাঁটিয়ে দিয়েছিল।

লস্করদের বাসার ছাঁদের সেই রাতের মজার অভিজ্ঞতা আর ক্যাম্পাসে থেকে যাওয়া বন্ধুদের কথা নাহয় ব্লগার বন্ধুদের কাছে নাহয় আরেকদিন শেয়ার করার প্রতিশ্রুতি রইলো। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.