ন্যাকামো ভীষণ অপছন্দ, যদিও বাধ্য হয়ে সহ্য করি! নাসা’র মার্কিন নভোচারী ডগলাস হুইলক এ মুহূর্তে অনবোর্ড আছেন মহাকাশ যান ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে (ISS )! এটি একটি বসবাসযোগ্য নিম্ন পার্থিব কক্ষপথের কৃত্রিম উপগ্রহ। সেখান থেকে পৃথিবীর বেশ কিছু দর্শনীয় ছবি তিনি পাঠিয়েছেন টুইটারের মাধ্যমে। তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টের নাম অ্যাস্ট্রোহুইল, যার ফলোয়ারের সংখ্যা প্রায় ৬৮,০০০। গত জুন থেকে প্রায় ৫ মাস স্পেসে থেকে এই প্রথম তিনি টুইট করেছেন। তাঁর পাঠানো অভাবনীয় সুন্দর ছবিগুলো সরাসরি টুইটার থেকে সম্পাদনা করে শেয়ার করছি:
ঘণ্টায় ২৮,১৬৩ কি.মি. (৮ কি.মি./সে.) গতিতে তাঁরা প্রতি ৯০ মিনিটে একবার করে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করছেন।
এসময় প্রতি ৪৫ মি. পর পর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে পান। ফলে পুরো ভ্রমণকালীন সময়ের অর্ধেকটা সময়ই তাদেরকে অন্ধকারে কাটাতে হয়। তাই কাজের জন্য ব্যবহার করতে হয় হেলমেট-লাইট।
‘যতবারই আমি জানালা দিয়ে তাকিয়েছি, আমি দেখেছি অপরূপা সুন্দর আমাদের গ্রহটিকে! আমার অন্তর তখন গেয়ে ওঠে: ‘আমি দেখি নীলাকাশ, ধুসর-ধবল মেঘ আর সুখের বারতা নিয়ে আসা প্রতিটি উজ্জ্বল দিন!’
এবার চলুন তাঁর পাঠানো আমাদের আবাসভূমির আরো কিছু ছবি উপভোগ করি:
পরিষ্কার এক রাতে যখন আমরা ইউরোপের ওপর দিয়ে উড়ছিলাম তখন তোলা গ্রীক আইল্যান্ডের ছবি। ভূমধ্য সাগরের তীর জুড়ে এথেন্সটা যেন জ্বলজ্বল করছে!
ভারত মহাসাগরে মাদাগাস্কারের কাছাকাছি ‘রহস্য দ্বীপ’ (Mystery Island)! এর আকর্ষণীয় ও বিশেষ রূপের কারণে সহজেই স্পেস থেকে এই সুন্দর জায়গাটিকে চিনতে পারা যায়!
ইউরোপের একটি সুন্দর নীরব রাতের ছবি।
স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে স্ট্রেইট অব ডোভার! প্যারিসটা ঝকমক করছে! ইংল্যান্ডের পশ্চিমাংশে কিছুটা কুয়াশা দেখা যাচ্ছে - বিশেষ করে লন্ডনের ওপরে!
বাহামা দ্বীপপুঞ্জের অপরূপ ছবি!
সূর্যাস্তের একটি দর্শনীয় ছবি! আমরা প্রতিদিন এখন এরকম ১৬টি সূর্যাস্ত দেখছি - যার প্রত্যেকটিই সত্যি অসাধারণ!
প্রশান্ত মহাসাগরে হনলুলু’র প্রায় ১৯৩০ কি.মি. দক্ষিণে এটি একটি চমৎকার উপহ্রদ (attol) যা পরিবেষ্টিত হয়ে আছে বলয়াকার প্রবাল-প্রাচীর দিয়ে। ৪০০মি.মি. লেন্স দিয়ে তুলেছি এই ছবিটি।
পূর্ব-ভূমধ্য সাগর জলে সূর্য কিরণ প্রতিফলনের একটি নিখুঁত ছবি!
আমরা যখন আটলান্টিকের ওপর একদম মাঝখানে - তখন তোলা সূর্যাস্তের একটি অবাক করা ছবি। তার ঠিক নিচেই মহাসাগরে দেখা যাচ্ছে সর্পিল চেহারার হ্যারিকেন আর্ল’কে!
হঠাৎ দেখতে পেলাম অস্ট্রেলিয়ার এক আকর্ষণ সেই প্রকাণ্ড একাকী-পাথর ‘উলুরু’কে - যার নতুন নাম ‘আয়ার্স রক’। আমার কোনোদিন অস্ট্রেলিয়া যাবার সুযোগ পাইনি, তবে আমার আশা - আমি প্রকৃতির ঐ বিস্ময়কর জিনিসটির পাশে গিয়ে একদিন দাঁড়াবো!
দক্ষিণ অ্যামেরিকার আণ্ডেস’এর ওপর এক চমৎকার সকালের ছবি।
আমি চূড়াটির আসল নাম জানিনা, তবে ওর জাদুকরী রূপ আমাকে মুগ্ধ করেছে!
প্রাচীন ইতিহাসের লীলাভূমি সাহারা মরুভূমি! মিশরের মাঝ দিয়ে কায়রো’র গিজা পিরামিডের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে নীলনদ! আরেকটু দূরে লোহিত সাগর, সিনাই উপত্যকা, মৃত সাগর, জর্ডান নদ। ওদিকে ভূমধ্য সাগরে রয়েছে সাইপ্রাস দ্বীপ আর দিগন্তে মিশে আছে গ্রীস!
রাতের নীল নদের ছবি - মিশরের ওপর দিয়ে সাপের মতো এগিয়ে গিয়ে পড়েছে ভূমধ্য সাগরে। ব-দ্বীপটিতে দেখা যাচ্ছে কায়রো’কে। আর দূরে লক্ষ্য করলেই চোখে পড়ে ভূমধ্য সাগরটিকে!
‘প্রোগ্রেস ৩৯পি’ নামের আমাদের একটি মানববিহীন মহাকাশযান রিফুয়েলিং-এর জন্য আমাদের স্টেশনের (ISS) দিকে আসছে। আমাদের স্টেশনটি খাবার, জ্বালানী, খুচরা যন্ত্রাংশ এবং দরকারী সব জিনিস দিয়ে ভরা! মহাকাশে একটি টিউবের ভেতর থেকে ৩ মাসের পুরনো ‘টাটকা’ ফল ও শাক-সবজি খাওয়ার মজাই আলাদা!
আমাদের স্পেসশীপের ডোম থেকে তোলা এ ছবিটি আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
আমরা আজকের এই ইউক-এন্ডে আমাদের টিমের ৩ জন সদস্য - শাসা, মিশা ও ট্রেসি’কে পৃথিবীর উদ্দেশ্যে বিদায় দিচ্ছি। ছবিতে ট্রেসি বাসায় ফেরার স্বপ্ন দেখছে!
‘মডিউল ইউনিয়ন ২৩সি অলিম্পাস’ তখন আমাদের স্টেশনে ভেড়ানো। আমরা তখন অপরূপ তুষার-আচ্ছাদিত ককেশাসের চূড়াগুলোর ওপর দিয়ে উড়ছি! আর সূর্যোদয়ের চমৎকার সময়ে ক্যাপ্সিয়ান সাগরের জল থেকে প্রতিফলিত হচ্ছে তীক্ষ্ণ সূর্যরশ্নিগুলো!
অপরূপা ইতালি! গ্রীষ্মের এক পরিষ্কার রাত! ক্যাপ্রি, সিসিলি, মাল্টা, ন্যাপলস এবং মাউন্ট ভেসুভিয়াস আইল্যাণ্ডগুলো দেখা যাচ্ছে!
দক্ষিণ অ্যামেরিকার দক্ষিণ প্রান্তে রয়েছে প্যাটাগোনিয়া’র মুক্তো! অপূর্ব সৌন্দর্যের উঁচু উঁচু পাহাড়, বড় বড় হিমপ্রবাহ, গিরিখাদ আর সমুদ্রের মিলনস্থল!
‘নাদির’ স্টেশনের ডোমে বসে আছি আমি! রাশিয়ান ডকিং কম্পার্টমেন্টের জানালা দিয়ে আমার বন্ধু ফেডর এ ছবিটি তুলেছে। আমি তখন রাতে হ্যারিকেন আর্ল’এর ওপর দিয়ে আমাদের যাত্রার আগ-মুহূর্তে ক্যামেরা প্রিপেয়ার করছিলাম!
নির্মল এক শারদীয় সন্ধ্যা-রাতের ফ্লোরিডা এবং অ্যামেরিকার দক্ষিণ-পূর্বাংশ! সাগর জলে পড়েছে চাঁদের আলো আর আকাশ জুড়ে লক্ষ তারার লুকোচুরি!
সুন্দর তারকাময় রাত! পৃথিবীর হাজার বছরের ইতিহাসের সাক্ষী পূর্ব-ভূমধ্য-সাগরীয় এথেন্স থেকে কায়রো! ইতিহাসের বিখ্যাত ও মনোমুগ্ধকর দ্বীপগুলো - এথেন্স, ক্রেইট, রড্স, ইজমীর, আঙ্কারা, সাইপ্রাস, দামেস্ক, বৈরুত, হাইফা, আম্মান, তেলআবিব, জেরুজালেম ও কায়রো - এতোসব ঐতিহ্যবাহী দ্বীপগুলো শরতের এক শান্ত রাতে যেন একেকটি আলোকোজ্জ্বল বাতির রূপ নিয়েছে!
নভেম্বর মাসের দিকে সাধারণত মেরু অঞ্চলের মনোস্ফেরিক মেঘগুলো উপভোগ করা যায়! তবে এবার এখনই আমাদের উচ্চ-কৌণিক আলোক-প্রক্ষেপণের মাধ্যমে সূর্যাস্তের সময় রাতে দীপ্তিমান অপরূপা মেঘগুলোর একটি পাতলা স্তর ছবিতে ধারণ করতে পেরেছি!
নভোচারী ডগলাস হুইলক।
দুঃখ হলো ওর ছবিতে কোথাও এশিয়া খুঁজে পেলাম নাহ!
এতোক্ষণ আমার সাথে থাকার জন্য সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।