আমি জানিনা যে আমি জানিনা, আর আমি যে জানিনা আমি জানিনা সেটাও আমি জানিনা। অর্থাৎ আমি জানি যে আমি জানি, কিন্তু আসলে আমি জানিনা
মখদুম আহমেদ (দি বাটপার) এর অনুবাদ করা ক্লাইভ কাসলারের "মে ডে" বইটা আমি কিনি ২০০৯ একুশে বইমেলায়। এই পোস্টটা দেওয়ার কথা তখন থেকে আমার মাথায় ঘুরছে। আজকে ভারমুক্ত হব।
একেবারে পিচ্চিকাল থেকে গল্পের বই পড়া শুরু করলেও আমি মাসুদ রানা ধরি বেশ পড়ে, কলেজে উঠে।
মাসুদ রানার "বড়দের বই" ইমেজের কারণে এর আগে বুকশেলফে রাখার সাহস পেতাম না। তো আর সবার মত আমিও মাসুদ রানার প্রেমে গেলাম। প্রচুর বই কিনলাম। বেশ কিছু বই পড়ার পরে বুঝলাম মাসুদ রানার সব বই পড়তে মজা না। এখন কোন বইটা পড়তে মজা হবে আর কোন বইটা না সেটা পিছনে লেখা সারাংশটা পড়ে বোঝা যায় না।
একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম, যেই বইগুলো ৩ খন্ডে সমাপ্ত, সেইগুলো প্রত্যেক টাই জোস। তো প্রথমে সেইগুলো শেষ করলাম। এর পরে আবারও সেই আগের সমস্যা।
এই সময় আমিএকটা লিস্ট হাতে পাই। মাসুদ রানার কোন বই কোন লেখকের বই অবলম্বনে তার লিস্ট।
প্রথম যখন আমি এই জিনিসটা খুঁজে পাই তখন প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলাম(ফেসবুকের একটা গ্রুপে পেয়েছিলাম)। অনেক দিন পরে বুঝতে পারি এটা উইকিপিডিয়া তেই আছে ।
তো জিনিসটা হাতে পাওয়ার প্রথমেই লিস্ট টা প্রিন্ট আউট করে ফেললাম। তখন আমার পড়া মাসুদ রানাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভাল লেগেছিল "আই লাভ ইউ ম্যান"। দেখলাম আসল বইটা লিখেছেন উইলবার স্মিথ।
ব্যাস, লিস্ট এ উলবার স্মিথ এর আর যে কয়টা বই আছে সব কিনে ফেললাম । এভাবে খোঁজ পেলাম ফ্রেডরিক ফরসাইথ, ক্লাইভ কাসলার সহ আরও অনেক লেখকের। মাসুদ রানার প্রথম দিকের বইগুলো আমার ভাল লাগত না। চেক করে দেখলাম এগুলো বেশিরভাগ জেমস হ্যাডলি চেজ আর আ্যলিস্টেয়ার ম্যাকলিন এর লেখা। এদের বই পড়ব না সিদ্ধান্ত নিলাম।
এক সময় উইলবার স্মিথ এর মাসুদ রানাগুলো পড়া শেষ হয়ে গেল। বুঝলাম এখন উইলবার স্মিথ পড়তে হলে ইংলিশ ছাড়া উপায় নাই। ততদিনে ঢাকা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে গেছি। ঢুঁ দিলাম নিলক্ষেতএর পুরনা বইয়ের গলিতে। উইলবার স্মিথ নামটা উচ্চারণ করা মাত্র টপাটপ বই আসা শুরু করল।
বুঝলাম আমার আগে অনেক সেয়ানা লোকজন এই দিকে এসেছেন । তখন থেকে ইংলিশ থ্রিলার পড়া শুরু। এর পর মাসুদ রানা টাইপের বাদেও অনেক লেখক যেমন জন গ্রিশাম (লিগ্যাল থ্রিলার লেখেন, সেইরকম জিনিস), জেফরি আর্চার (থ্রিলার লেখেন, কিন্তু গল্পের স্টাইলের কারণে মাসুদ রানায় এডপ্ট করা যায় না) সহ আরও অনেক লেখকের বই গোগ্রাসেপড়েছি। আর যতই পড়েছি কাজীদার উপর শ্রদ্ধা ততই বেড়েছে। উনি যখন এগুলো এডাপ্ট করা শুরু করেন তখন মনে হয় বাংলাদেশে মেইন বইগুলো পাওয়াই কষ্টকর ছইল।
ইন্টারনেট এর যুগ ও ছিল না যে ডাউনলোড করে নেবেন। সেই বই জোগাড় করে পড়ে সেটা বাংলাদেশের পটভূমিতে বসানো চাট্টিখানি কথা না। আর ওনার অনেক অনুবাদকে আমি মৌলিক সাহিত্যের মর্যাদা দিতে চাই। উনি কিন্তু শুধু হিরোর নাম চেন্জ করে মাসুদ রানা করেন না, সব ক্যারেক্টারের নাম চেন্জ করেন। একেক বই একেক সময়ের পটভূমিতে লেখা, যেটা এই সময় বসে পড়লে অনেকের (বিশেষ করে মাসুদ রানার যে প্রধান পাঠক শ্রেণী) বুঝতে সমস্যা হবে, সেখানে উনি পটভূমি সম্পুর্ণ পরিবর্তন করে।
ফ্রেডরিক সরসাইথের বিখ্যাত বই "ডে অফ ড্যা জ্যাকেল" এর চাইতে আমি ওনার লেখা "সেই উ সেন" পড়ে বেশী মজা পেয়েছি।
লেখাটা বড় হয়ে যাচ্ছে, এবার উইলবার স্মিথ সম্পর্কে অল্প কিছু কথা লিখে আমি এই পোস্টের মূল নায়ক মি: বাটপারের প্রসঙ্গে চলে যাব।
উইলবার স্মিথ আমার সবচাইতে প্রিয় লেখকদের একজন। বাংলায় কোন লেখক সম্পর্কে একটা টার্ম আমরা প্রায়ই ব্যাবহার করি, শক্তিমান লেখক বলতে আসলে কি বোঝায় সেটা উইলবার স্মিথ এর লেখা না পড়লে বোঝা যাবে না।
উইলবার স্মিথ সম্পর্কে লিখতে হলে আসলে একটা আলাদা পোস্ট দরকার।
(শুরুতেই লিখেছি আমি ২০০৯ থেকে এই লেখাটা লিখব ভাবছি। তখন আমার প্ল্যান ছিল তিন পর্বের লেখার একটা পোস্ট দেব, প্রথমটা মাসুদ রানা আর কাজীদাকে নিয়ে, ২য়টা উলববার স্মিথ আর শেষ পর্বে মি: বাটপারকে ন্যাংটা করা হবে। কিন্ত আলসেমি করে আর ডাটা কালেক্ট করা হয় নাই )। এখন যেহেতু সেটা না, সেহেতু এক প্যারায় লেখি।
উইলবার স্মিথ এর সব বইকে চারটা ভাগে ফেলা যায়।
কোর্টনি সিরিজ, ব্যালান্টাইন সিরিজ, ইজিপ্শিয়ান সিরিজ আর ইনডিভিজুয়াল। প্রথমে কোর্টনী সিরিজ। এটা হচ্ছে কোর্টনী বংশের কতগুলো প্রজন্মকে নিয়ে লেখা। পটভুমি হচ্ছে ১৬৬০ থেকে ১৯৮৭ । আমার সবচেয়ে প্রিয় সিরিজ এটাই।
এইটা হচ্ছে কোর্টনিদের বংশলতিকা
Click This Link । উইলবার স্মিথ এতগুলো চরিত্র সৃষ্টি করেছেন এ পুরো বংশলতিকা বানিয়ে ফেলা যায়।
উইলবার স্মিথ এর http://en.wikipedia.org/wiki/Wilbur_Smith উইকি লিন্ক থেকে আপনি কোর্টনী সিরিজের সব বইয়ের নাম পেয়ে যাবেন। আর যদি বাংলায় যদি পড়তে চান তাহলে ঐ বই গুলো থেকে যেকোন একটার নাম কপি করুন http://en.wikipedia.org/wiki/Masud_Rana মাসুদ রানার উইকি পেজ এ চলে যান cntl + f দিয়ে নামটা এন্টার করলেই পেয়ে যাবেন মাসুদ রানার কোন বইটা আপনার দরকার। যেমন কোর্টনি সিরিজের ৪ নম্বর বই When the Lion Feeds পড়তে চাইলে আপনাকে কিনতে হবে মাসুদ রানা সিরিজের ১৯১ নম্বর বই, দংশন: Dongshon Part 1 (দংশন প্রথম খণ্ড) [Sting] (Based on When the Lion Feeds by Wilbur Smith.)।
আর যেগুলো মাসুদ রানা নেই সেগুলোর গল্পটা এমন যে সেটাকে মাসুদ রানা বানানো যায়নি। তাই বলে সেগুলোকে ফালতু ভাববেন না। কোর্টনি সিরিজের ১১ নাম্বার বই রেইজ আমার জীবনে শ্রেষ্ঠ বইগুলো একটা। কষ্ট করে নিলক্ষেত থেকে ইংরেজি বইটা কিনে যদি পড়েন, সারাজীবন মনে থাকবে। এর পরের যে বই গোল্ডেন ফক্স, সেটা রেইজ এরই কন্টিনিউয়েশন।
বইটা নায়িকা প্রধান, তাই মাসুদ রানা করা যায়নি ।
উইলবার স্মিথ এর বাকি সিরিজগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে উইকি লিনকটাতে ঢুঁ মারুন।
এইবার পোস্ট আর আসল অংশ, মি: বাটপার। শুরুতেই বলেছি ওনার নাম মখদুম আহমেদ। উনি পেশায় একজন ডাক্তার।
তো ২০০৯ এর ফেব্রুয়ারীর এক সন্ধ্যা। ১৫০ টাকা দিয়ে ক্লাইভ কাসলার এর মে ডে বইখানা খরিদ করেছি। আমার বইয়ের বাজেটের বড় অংশ বেরিয়ে গেছে। মনে বড় আশা, টাকা উসুল হবে। বইয়ের হিরো হচ্ছেন ডির্ক পিট (Drik Pit)।
যারা ক্লাইভ কাসলার পড়েন তারা তো পিটকে চেনেন। আর যাটা মাসুদ রানা পড়েন, তারাও চেনেন। নুমা নিয়ে যে কয়টা মাসুদ রানা আছে সেগুলোর হিরো হচ্ছেন এই ডির্ক পিট। তো বইটা পড়ছি। অনুবাদ বেশ ভালই, বেশিরভাগ অনুবাদ খুব বাজে হয়, মাথা গরম হয়ে যায়।
এটা বেশ সাবলীল। তো বইয়ের শেষের দিকে এসে একটা প্যরা পড়ে চমকে গেলাম। প্যারাটা এরকম:
"তুমি আমাকে এক বুড়োর কথা মনে করিয়া দিলে, বলল পিট। মেজর জেনারেল রাহাত খানের চেহারাটা ভেসে উঠল ওর চোখের সামনে। "আমাকে কোথাও পাঠালে দুশ্চিন্তায় কাহিল হয়ে পড়ে সে।
যদিও চেহারায় বা কথায় তার কোন প্রভাব থাকে না। "
ক্লাইভ কাসলারও রাহাত খানের কথা লিখেছেন !!
ঘটনা বুঝতে বেশি সময় লাগলো না। মখদুম ভাই উইলবার স্মিথ এর ও বেশ কিছু বই স্বহস্তে অনুবাদ করেছেন। চেক করে দেখলাম উনি শুধু সেই বইগুলোই অনুবাদ করে থাকেন যেগুলোর মাসুদ রানা এডাপ্টেশন রয়েছে। সোজা বাংলায় বললে উনি চোরের উপর বাটপারি করে থাকেন।
আগেই বলেছি কাজীদা সব গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলোর নাম চেন্জ করেন, মাসুদ রানাকে নিয়ে শুরুতে একটা চ্যাপ্টার যোগ করেন। মঝদুম ভাই বইটা নিয়ে এই অংশগুলো বাদ দেন, তারপর ক্যারেক্টারগুলোর আসল নাম বসিয়ে দিলেও কাজ শেষ একদিনে একটা বই নেমে গেল
আমি শুধু এইটা বইটা না, ওনার অনুবাদ করা উইলবার স্মিথের কয়েকটা বইও চেক করে দেখেছি। সবগুলোতেই একই অবস্থা।
আর এই বইগুলোর কোথাও তিনি কাজী আনোয়ার হোসেন/সেবা প্রকাশনীর কাছে কোন ধরনের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেননি।
মে ডে বইয়ের পিছনে মখদুম ভাইয়ের বায়ো:
লেখক, অনুবাদক (পড়ুন বাটপার) ডা: মখদুন আহমেদের জন্ম ঢাকা শহরে, এই নগরেই বেড়ে উঠেছেন তিনি।
পড়াশোনা করেছেন ঢাকা কলেজ এবং স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে। ২০০৬ সালে এমবিবিএস পাশের পর ২০০৭ সালে পেশাগত প্রশিক্ষণ শেষ করে চিকিৎসক হিসাবে রেজিস্ট্রেশন পান।
............................................................................................................................................................................................................
এ পর্যন্ত নট এ পেনি মোর নট এ পেনি লেস, রিভার গড, ক্রাই উলফ, ট্রেজার সহ আট টি বই অনুবাদ করেছেন (এর মধ্যে সম্ভবত শুধু প্রথমটা মৌলিক অনুবাদ, বাকিগুলো বাটপারি)
মখদুম ভাই এর মেইল এড্রেস:
মখদুম ভাই এর ফেসবুক: https://www.facebook.com/robinssmc
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।