[ প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুর
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল খাতেমুন্নবীয়্যিন শফিউল মুজনেবিন হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (দ.) এর ওফাতের পর খোলাফায়ে রাশেদীনগণ যেভাবে ইসলামের দাওয়াত তথা এশায়াতের কাজ করেছেন তা অভূতপূর্ব। ইসলামের সে সোনালী দিনের কথা কল্পনা করতেই চিন্তাশীল মানুষ মাত্রই উদ্বেলিত না হয়ে পারে না। পরবর্তীতে তাবেয়ীন ও তবে-তাবেয়ীনগণের মধ্যে তরিক্বত পর্যায়ে যে ধরনের খুলুসিয়ত বা আন্তরিকতা দেখা যায় তা আজ অত্যন্ত বিরল। তবে আজকের দিনে এ ধরনের খুলুসিয়ত বা আন্তরিকতা একেবারে অনুপস্থিত একথা বলা যাবে না। এ ধরনের খুলুসিয়ত সমৃদ্ধ তাওয়াজ্জুহ্ বিশিষ্ট তরিক্বতের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা মহান মোর্শেদ যুগশ্রেষ্ঠ অলী হযরত শায়খ ছৈয়্যদ গাউছুল আজম মাদ্দাজিল্লুহুল আলী ছাহেবের তরিক্বত।
তিনি মুনিরীয়া তরিক্বতের মাধ্যমে যেভাবে এশায়াতের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তা ইসলামের সেই স্বর্ণালী দিনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। গাউছে পাক হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রা.) যে সময়কার গাউছুল আজম ছিলেন তখনকার সাথে আজকের যুগের অনেক রকমের পার্থক্য বিরাজমান। আজকে প্রতিটি ঘরে ঘরে টেলিভিশন ও ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। এখন ইন্টারনেট ব্রাউজ করার জন্য ডেস্কটপ কিংবা ল্যাপটপ লাগে না; মোবাইল ফোনে দিব্যি এ কাজটি সম্পন্ন করা যায়। এগুলোর বদৌলতে সারা পৃথিবী আজ একটি গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে।
সমাজের সর্বস্তরের মানুষ আজ ফেইসবুক, টুইটার ইত্যাদির মত যোগাযোগ মাধ্যমে এমনভাবে আক্রান্ত যে ভাল-খারাপের পার্থক্য নির্ণয় করতে অনেকটাই ব্যর্থ। ফলে মানুষ এখন ভীষণ ভোগবাদী ও বস্তুবাদী হয়ে গেছে। এরকম একটি সময়ে মানুষকে তরিক্বতের মাধ্যমে ইসলামের দাওয়াত দেয়া কতটা দুরূহ ব্যাপার সেটা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মাত্রই অনুমান করতে পারবেন। এটি এমন একটি সময় যখন পিতা-মাতা সন্তানের কার্যকলাপে অতিষ্ঠ হয়ে নিজের সন্তানকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হবার পরও বিভিন্ন ধরনের অবক্ষয় আজকে যুব সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিরাজমান।
অবক্ষয়ের ক্ষত নিয়ে সমাজ যখন ধুঁকে ধুঁকে কোন রকমে সামনে চলার চেষ্টা করছে, যখন সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের প্রচেষ্টা কিংবা দেশি-বিদেশি এনজিও সংস্থাগুলো ছাত্র-যুব সমাজের অবক্ষয় রোধকল্পে চেষ্টা করেও ব্যর্থ, তখন কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা যুগশ্রেষ্ঠ অলী হযরত শায়খ ছৈয়্যদ গাউছুল আজম মাদ্দাজিল্লুহুল আলী ছাহেব ডাক দিলেন, “হে যুবক! নামাজ পড়, রোজা রাখ, নবী (দঃ)-এর উপর দরুদ পড়, মাতৃভূমি শান্ত কর। ” এরকম অজস্র মূল্যবান বাণী তিনি উচ্চারণ করেছেন যা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে কিছুটা অনুমান করা যায় তিনি কত বড় দার্শনিক, সমাজবিজ্ঞানী। তিনি শুধু এ বাণী উচ্চারণ করে ক্ষান্ত হননি, বরং নিরলসভাবে সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি রূহানী ক্ষমতাবলে আজ হাজার হাজার বিপথগামী ছাত্র-যুবককে শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে নয়, রাত জেগে তাহাজ্জুদ আদায়ের পথে নিয়ে এসেছেন। রাউজান রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, ফটিকছড়িসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের অনাচে কানাচে আজ অন্যরকম আবহ বিরাজ করছে।
এ তরিক্বতের এশায়াত মাহফিল, এশায়াত সেমিনার, গাউছুল আজম কনফারেন্স, এশায়াত সম্মেলন বলতে সবাই ব্যস্ত হয়ে উঠে। সমসাময়িককালে অনুরূপ দ্বিতীয় কোন তরিক্বত কিংবা দরবারের হদিস মেলে না। কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা হযরত শায়খ ছৈয়্যদ গাউছুল আজম ছাহেবের তরিক্বতের অনেকগুলো অনন্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি হলো- তাওয়াজ্জুহ্ বিল গায়েব। মহিলা তরিক্বতপন্থিদেরকে এ প্রক্রিয়ায় তাওয়াজ্জুহ্ প্রদান করা হয়। যেহেতু শরিয়তের বিধান অনুযায়ী স্বীয় পীর ছাহেবের সাথে সরাসরি দেখা করা মহিলাদের জন্য বর্জনীয়, তাই তাদের জন্য রয়েছে তাওয়াজ্জুহ্ বিল গায়েব।
এতে মহিলা তরিক্বতপন্থিরা নিজ নিজ গৃহে অবস্থান করে সবক কিংবা ফয়েজ গ্রহণের সুযোগ পান। তাই দেখা যায় মহিলা এবং প্রবাসী তরিক্বতপন্থিরা বিভিন্ন দেশে অবস্থান করলেও তরিক্বতের অমিয় ধারা থেকে বঞ্চিত হন না।
আজ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে যেমন- আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, বাহরাইন, কুয়েত, কাতার ইত্যাদি দেশে দিন দিন ক্রমশ বাড়ছে মুনিরীয়া তরিক্বতের অনুসারী। মুনিরীয়া তবলীগ ও যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশ নামক একটি অরাজনৈতিক, তরিক্বতভিত্তিক আধ্যাত্মিক সংগঠনের মাধ্যমে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ তরিক্বতের দাওয়াতের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
গাউছুল আজম কি? কাকে গাউছুল আজম বলা যাবে? এ দরবারের প্রতিষ্ঠাতাকে কেন গাউছুল আজম বলা হয়? মুনিরীয়া তরিক্বত তথা এ দরবারের ওলামা পরিষদ একাধিক প্রকাশনার মাধ্যমে এ জাতীয় প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।
প্রকাশনাগুলো পর্যালোচনা করলে বুঝতে বাকি থাকেনা শরিয়তের কত গভীরতর ও জটিল বিষয় নিয়ে এ তরিক্বতের ওলামা পরিষদ গবেষণায় নিমগ্ন। এ লেখনিগুলোতে পবিত্র কোরআন, হাদীস ও ইজমা-কিয়াসের মাধ্যমে গাউছুল আজম কি পরিষ্কারভাবে বিবৃত হয়েছে। আগামীকাল ৮ অক্টোবর’১২ইং সোমবার চট্টগ্রাম লালদীঘি ময়দানে অনুষ্ঠেয় কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের গাউছুল আজম কনফারেন্সে মূলতঃ এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে, ইনশাআল্লাহ।
সর্বোপরি কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা হযরত শায়খ ছৈয়্যদ গাউছুল আজম মাদ্দাজিল্লুহুল আলী এবং তাঁর একমাত্র খলিফা এশিয়ার অন্যতম দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাগতিয়া এশাতুল উলুম কামিল এম.এ. মাদ্রাসার স্বনামধন্য অধ্যক্ষ, মুনিরীয়া তবলীগ ও যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় সভাপতি হযরতুলহাজ্ব আল্লামা ছৈয়্যদ মুহাম্মদ মুনির উল্লাহ্ আহমদী ছাহেব হুজুর ক্বেবলার নিকট অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। কারণ তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতা ও রূহানী নজর না থাকলে এরকম একটি বিষয়ে বিভ্রান্ত মুসলিম সমাজকে সঠিক ধারণা প্রদান করা সম্ভব হতো না।
মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে তাঁদের সুস্বাস্থ্য ও হায়াতে খিজরীয়া কামনা করি।
লেখক : প্রফেসর ও সাবেক চেয়ারম্যান, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।