আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মনমাতানো কালো সোনা

আমরা কালো সোনা ফলাই। ’ এই গর্ব লাতিন আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী কৃষকদের। তাঁদের উত্পাদিত এই কালো সোনা বিশ্বের সব দেশে, সব মানুষেরই খুব প্রিয়। তবে এই সোনা অলংকার হিসেবে ব্যবহূত হয় না। রংবেরঙের সুস্বাদু চকলেটের কাঁচামাল হিসেবে যায়।


এই ‘কালো সোনা’ হচ্ছে কোকোবীজ। এই বীজ থেকে তিতকুটে কালো নরম লেই বের হয়। বিভিন্ন উপকরণযোগে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তা হয় সুস্বাদু চকলেট। এখন বিশ্বে চকলেটের সবচেয়ে বড় কাঁচামাল সরবরাহকারী দেশ ইকুয়েডর। তবে ইকুয়েডরে কোকোবীজ উত্পাদনের ২৫০ বছর পরও সে দেশের মানুষ জানত না যে এটা চকলেটের মূল উপাদান।


এ ব্যাপারে উত্তরাঞ্চলীয় এসমেরালদাস প্রদেশের ৬৬ বছর বয়সী কৃষক ইগনাসিও এসতুপিনান বলেন, ‘কৃষকেরা আগে কোকো চাষের দিকে বেশি মনোযোগ দেননি। এখন সবাই বোঝেন এর মূল্য কত। আমাদের জন্য এটা সবচেয়ে ভালো ব্যবসা। ’
গত এক দশকে কোকোবীজ রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে নিয়েছে ইকুয়েডর। ইকুয়েডরের কৃষকদের আয়ের অন্যতম উেস পরিণত হয়েছে কোকো।

কোকো থেকে তৈরি চকলেট বিশ্ববাজারে স্থান করে নিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আমাজন অঞ্চলে প্রথম কোকোর চাষ হয়। ভেনেজুয়েলায়ও প্রচুর কোকোর চাষ হতো। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় দেখা গেছে, ইকুয়েডরই কোকোর আসল জন্মস্থান। প্রত্নতত্ত্ববিদ ফ্রন্সিসকো ভালদেজ ইকুয়েডরে কিছু চীনামাটির পাত্র পেয়েছেন, যেখানে কোকোর উপস্থিতি শনাক্ত করা গেছে।

ওই পাত্রগুলোতে খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩০০ সালের।
ইকুয়েডরে কোকো পরিচিত ‘ন্যাশিওনাল’ বা ‘আরিবা’ নামে। আরিবা মানে হলো নদীর উজান। ইকুয়েডরের গুয়াসাস নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি কোকোর চাষ হয়েছে।
ইকুয়েডরের দক্ষিণাঞ্চলের আমাজন অঞ্চলের জামোরা সিনচিপ প্রদেশে গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, পাঁচ হাজার বছর আগে সেখানে কোকোর চাষ হতো।


তবে ষোড়শ শতাব্দীতে এসে কোকো থেকে তৈরি চকলেটের সঙ্গে সখ্য হয় পশ্চিমা বিশ্বের। ওই সময় অ্যাজটেক সম্রাট মন্তেজুমা স্প্যানিশযোদ্ধা হারনান করতেসকে মসলাযুক্ত চকলেটের শরবত পান করতে দেন। করতেস সেই পানীয়ের প্রেমে পড়েন। আরও স্বাদ বাড়াতে পরে শরবতে চিনি মেশানো হয়। ধীরে ধীরে ইউরোপে এই পানীয় হয়ে ওঠে জনপ্রিয়।


যুক্তরাজ্যের খাদ্যবিষয়ক লেখক ও একাডেমি অব চকলেটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সারাহ জানে ইভানস তাঁর লেখা বই ‘চকলেট আনর্যাপে’ বলেন, ইকুয়েডরের কোকোবীজগুলো দেখতে কিছুটা ফুলের মতো। কিশমিশের রঙের। এগুলোর স্বাদ মসলাদার।
তবে ইকুয়েডরের অন্যতম চকলেট কোম্পানি ‘পাকারি’র প্রতিষ্ঠাতা সান্টিয়াগো পেরালতা বলেন, ইকুয়েডরে উত্পাদিত প্রতিটি কোকোবীজের বিশেষত্ব আছে। প্রতিটিরই আলাদা গন্ধ রয়েছে।

ইকুয়েডরের মাটির বৈচিত্র্যের কারণেই কোকোবীজগুলোর এই বৈচিত্র্য। কোকোবীজের ধরন অনুযায়ী পাকারি কোম্পানি চকলেট তৈরি করে বলে জানান সান্টিয়াগো পেরালতা। কোম্পানিতে আসা কোকোবীজগুলোর স্বাদ নিয়ে সেগুলোর ধরন পরীক্ষা করা হয়। তারপর চকলেট তৈরি হয়। এসব কারণেই পাকারির তৈরি চকলেট এত বিখ্যাত ও জনপ্রিয়।

কারণ মানের সঙ্গে আপস করে না তারা।
ইকুয়েডরের সবচেয়ে দরিদ্র অঞ্চল এসমেরালদাস থেকে শুরু হয়ে এভাবেই আজ সারা বিশ্বে ফুলেফেঁপে উঠেছে চকলেটের ব্যবসা। একসময় যে এসমেরালদাস ছিল সবচেয়ে দরিদ্র, সেই এসমেরালদাসই এখন হয়ে উঠেছে চকলেটের স্বর্গরাজ্য। কোকো চাষ করে সচ্ছল হয়েছেন কৃষকেরা। ফলিয়ে যাচ্ছেন তাঁদের গর্বের কালো সোনা।

বিবিসি অবলম্বনে। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।