আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রইলে জেগে বোবা বুকের বিকল হাহাকারে

অযুত জোনাকের আলোয় হাতড়ে খুঁজি বেঁচে থাকার সুখ ০১ :"হরিতকীর ফুল কি রং এর হয় বলতো"? বরাবরের মত আমি চুপ। 'হরিতকী' নামে যে কোন ফুল হয় সেটাই আমি জানতাম না। তুমি অবশ্য উত্তরের অপেক্ষায় থাক নি। আমার ভূবন জোড়া মূর্খতায় ততদিনে তুমি অভ্যস্ত। বুঝে গিয়েছিলে, যা কিছু "না জানা সম্ভব" আমি তার চেয়েও "বেশী কিছু" জানি না।

সেবার নাকি সারা বসন্ত জুড়ে তুমি কোকিলের ডাক শোন নি। আফসোস করে বলেছিলে একদিন। আমি কোকিলের বাসা খুঁজতে লেগে গেলাম। তারপর যেদিন এসে তোমায় বললামঃ 'একটা কোকিলের বাসা খুঁজে পেয়েছি। কখন ডাকে খেয়াল রাখতে হবে।

' জলতরঙ্গের মত কাঁচভাঙ্গা হাসিতে ভেঙ্গে পড়তে পড়তে কোনরকমে বললেঃ 'তুমি এত বোকা কেন? কোকিল কি কখনো বাসা বাঁধে?' তাইতো! আমার তখন কেবল মনে পড়ল, এমন কি যেন একটা সুদূর শৈশবে দেখে এসেছিলাম পাঠ্য বইয়ের পাতায়। আমার বিরল নির্বুদ্ধিতায় তোমার প্রানখোলা খুশীতে আমিও খুশী হয়ে যেতাম। আমার আরো নির্বোধ হতে ইচ্ছে করতো। ০২ তোমার খুব স্বর্গে যাওয়ার লোভ ছিল। আমার ছিল শুধু তোমার সাথে থাকার লোভ।

সেজন্যই হয়তো আনমনে তুমি যখন স্বর্গপূরীর গল্প বলতে, আমিও মনযোগ দিয়ে ভাবতে বসতাম। তুমি 'মন্দারের' জলে পা ভিজিয়ে বসে থাকার কথা ভেবে শিহরিত হতে। "মন্দার" স্বর্গের একটি নদী। আমি জানতামনা। তোমার কাছ থেকে শিখেছি।

আমি তোমার কাছ থেকেই শিখি। : 'আমি তোমাকে অমিত্রাক্ষর ছন্দ শেখাব'। এক গোছা অলক কানের উপর দিয়ে পেছনে ঠেলে দিতে দিতে একদিন বললে। : আচ্ছা কবে শেখাবে? : আগে আমি শিখে নেই, তার পর। জীবনের নাগরদোলা আমাকে আর সব ছন্দ খুব ভালোই শিখিয়ে ছেড়েছে।

পারেনি শুধু 'অমিত্রাক্ষার' শেখাতে। পারবেও না। তোমার কাছ থেকে শেখার পণ করে আমি আজো অচল আর অটল। ০৩ :"তুমিতো জোসনায় খুব ঘুরে বেড়াও। জোসনার ছায়া দেখেছো কখনো?" তোমার এমন এক একটা প্রশ্ন শুনে আমার আক্কেল গুড়ুম হয়ে যেত।

জোসনায় আমি হেঁটে বেড়াই ঠিকই। কিন্তু জোসনার ছায়া-র কথা কখনো তো মাথায় আসে নি। আসার সুযোগ কই? আমার মাথা জুড়ে থাকে তোমার ভাবনা। অথচ তোমার প্রশ্নের জবাবে সে কথা আমি তোমায় বলতে পারি নি। বললে কি তুমি হেসে ফেলতে? হয়তো হাসতে।

হয়তো হাসতে না। আমি তোমাকে বুঝতে পারি না। তোমার কাছে আমি যেমন "সহজপাঠ্য", আমার কাছে তুমি তেমনই "দূর্বোধ্য"। উপপাদ্যের মত। ৯/১০ ক্লাসের যে উপপাদ্যগুলো আমি কখনোই বুঝে উঠতে পারি নি।

উপপাদ্যজনিত আমার এ জটিলতার কথা শুনে তুমি খুব হেসেছিলে সেদিন। তোমার সেই অপার্থিব হাসি দেখতে দেখতে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি "আমাকে যদি আরো ক'টা জনম দেয়া হয়, সেই সব জনমে ও আমি উপপাদ্য বুঝব না। বোঝার কোন চেষ্টাও করব না। " তারপর তোমাকে আবার বলবো আমার অজ্ঞতার কথা। তুমি আবার হাসবে।

আমি দেখবো। ০৪ আকাশ জোড়া নাম না-জানা কত নক্ষত্র। তুমি নিজ থেকেই কতগুলোর নাম দিয়েছিলে। এমনভাবে সেগুলোর কথা বলতে, যেন কত দিনের পরিচয়। প্রথম যেদিন বলেছিলেঃ "কাল এত মেঘ ছিল আকাশে, আমি নূপুর-কে দেখতে পাইনি।

" আমি বরাবরের মত চুপ থেকে ভেবে নিয়েছিলাম "হয়তো কোন বান্ধবী"। : জিজ্ঞেস করলে না, নূপুর কে? : নূপুর কে? : আজ সন্ধ্যার পর এসো, নূপুরকে দেখাব। তুমি নূপুর চিনবে। সন্ধ্যার পর আমি গিয়েছি। নূপুরকে দেখতে? তুমি কি তাই ভেবেছিলে? মোটেও না।

আমি শুধু তোমাকে দেখতেই তোমার কাছে ছুটে যেতাম। আমি শুধু তোমাকেই দেখতে চাই। সেদিনও ছিল আকাশ-ভরা মেঘ। তুমি পার নি নূপুরকে দেখাতে। তারপর পার হয়ে গেছে কত কত রাত।

আমার নূপুর চেনা হয় নি। নূপুর নিশ্চয়ই আজো আকাশে আছে‍! তুমি কি এখনো নূপুর দেখো? আমার নূপুর দেখা হল না। আমার কিছুই হয় না। আমি তোমাকেও আর দেখি না। নূপুর দেখার পিপাসা আমার নেই।

কিন্তু তোমায় দেখার তৃষ্ণা আমার কোনদিন মিটবে না। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।