কয়েকদিন আগে ফেসবুকের 'সিনেমা পিপল' গ্রুপে লাইটিং নিয়ে একজনের প্রশ্ন উত্তর দিতে গিয়ে বেশ গলা বাজি করে বলেছিলাম যে ন্যাচারাল লাইটিংএর কোন নিয়ম নেই। কথাটা এই জন্যে বলেছিলাম যে ইনডোর লাইটিংএর যে বেসিক নিয়মগুলো আছে সেগুলোর বাইরে হাতি ঘোড়া কোন নিয়ম ন্যাচারাল লাইটিংএ নেই। বরং ন্যাচারাল লাইটিংএ লাইটের ভোল্ট, এ্যম্পিয়ার এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই বলে তা সহজতর। ইনডোরে টু পয়েন্ট বা থ্রি পয়েন্ট লাইটিং করবার জন্যে প্রধানতঃ যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হয় তা হলঃ
১. বিষেশ প্রয়োজন (হরর ফ্লিম বা স্পেশাল এ্যফেক্ট) ছাড়া লাইট ক্যারেক্টারের আই লেভেলে বা নাক বরাবর বসাবেন না। লাইট বসবে ক্যারেক্টারের মাথার কিছুটা উপরে থেকে।
ক্যারেক্টারের গায়ে আলো উপর দিক থেকে কোনাকোনি ভাবে পড়বে। কতটা উপর থেকে তার অনেক হিসাব নিকাশ থাকতেই পারে তবে আমাদের টিভি আর সিনেমার লাইনম্যানরা তো ভার্সিটি পাশ করা নয়, তারা মোটামোটি ক্যারেক্টারের মাথার এক থেকে দেড় হাত উপরে লাইট বসায় এবং তাতেই কাজ হয়ে যায়। লাইট বসানোর সময় লাইটকে ডানে বাঁয়ে উপরে নিচে সরিয়ে সরিয়ে এডজাস্ট করে নিতে হয়। এমন কি হলিউডী ভার্সিটি পাশ লাইটম্যানরাও লাইট বসানোর সময় অনেক্ষণ ধরে গুতোগুতি করে। সুতরাং বই পড়ে লাইট বসানোর কৌনিক ফরমূলা মুখস্ত করা যেতেই পারে তবে তাতে খাটনি খুব একটা কমবে না।
যেভাবে বসালে আমার সিনেমার চাহিদা মিটবে সেভাবেই সঠিক নিয়ম।
২. লাইট যদি সোজা সামনা থেকে মারেন তবে ক্যারেক্টারকে বয়স্ক দেখাবে বা বিষয়টাতে থ্রি ডি বা ডেপ্থ থাকবে না। তাই লাইট কিছুটা ডান বা বাম দিকে সরিয়ে বসাতে হয়। কতটা ডানে বা বামে বসাবেন? এর অনেক হিসাব নিকাশ থাকতেই পারে তবে আমাদের টিভি.............. যেভাবে বসালে আমার সিনেমার চাহিদা মিটবে সেভাবেই সঠিক নিয়ম।
৩. এই দুই নিয়মের বাইরে যদি আপনার নায়কের জুতা দেখাতে হয় তবে জুতায় আলো মারবেন।
নায়িকার পেট দেখাতে হয় তো নায়িকার পেটে আলো মারবেন। কিভাবে মারবেন? লাইটটা হাতে নেন নিয়ে ডানে বায়ে উপরে নিচে সরাতে থাকেন যখন দেখবেন যে নায়কের জুতা বা নায়িকার পেট চক চক করতেছে তখন বুঝবেন যে আপনি লাইট বসানোর সঠিক জায়গাটা পেয়ে গেছেন।
৪. এবার যেটা বলব সেটা খুব জরুরী। আপনার সামনের মানুষটির দিকে তাকিয়ে দেখেন বা যে চেয়ার টেবিল যাই আপনার সামনে থাক না কেন খুব ভাল মত খেয়াল করেন। মানুষটির বা বস্তুটির দুই পাশে বা চার দিকে সমান আলো নেই।
সামন্য কিছু হলেও কম বেশী আছে। এটা প্রকৃতিগত। এটা যদি আপনি আপনার লাইটিংএ আনতে পারেন তবে কেল্লা ফতে। অর্থাৎ চেহারার এক পাশে অন্য পাশের চেয়ে আলো একটু বেশী দিবেন। কতটা কম বেশী সেটা নির্ভর করছে আপনার সিনেমার মুডের উপর।
বেশী আলো টাকে বলে কি লাইট আর কম আলোটাকে বলে ফিলার (কেউ কেউ এটাকে কিকারও বলে)। সেই সাথে ক্যারেক্টারের পিছনে সামান্য আলোর ব্যবস্থা করতে পারলে ক্যারেকটারটা তার পিছনের দেয়াল বা অন্য মানুষ থেকে যে সামান্য দূরে আছে তা স্পষ্ট করা যায়। তবে এই ব্যাক লাইট অবশ্যই অনেক কম হবে। এবং এই লাইটের পজিশনও অণ্য লাইটগুলো মত মাথার উপরেই হবে।
আর যা যা নিয়ম আছে তা হল বিশেষায়িত নিয়ম।
এখন আউটডোর লাইটিংএর কথায় আসি। ১নং অনুযায়ী আপনি রিফ্লেক্ট মাথার উপরে ধরবেন। ২ নং অনুযায়ী রিফ্লেক্টর ক্যারেক্টারের ডানে বা বামে ধরবেন। ৩ নং নিয়ম অনুযায়ী নায়কের জুতা বা নায়িকার পেট আলোকিত করার জন্যে যেখানে প্রয়োজন সেখানেই ধরবেন। শুধু ক্যামেরা ফ্রেমে যেন আপনার রিফ্লেক্টরের কোনা না ঢুকে যায়।
এবং ৪নং নিয়ম অনুযায়ী সূর্য মামাকে মনে করবেন কি লাইট আপনার রিফ্লেক্টরকে মনে করবেন ফিলার লাইট। আপনার কাজের প্রয়োজনে যতগুলো রিফ্লেক্টর লাগে ব্যবহার করবেন কোন মানা নাই। বাকিটা আল্লাহ ভরশা।
ওহ!.. আরেকটা গুরুত্ব পূর্ণ কথা রিফ্লেক্টরের নিজেস্ব কোন আলো নাই (চাঁদের মত)। তাই সূর্যের বিপরীতেই রিফ্লেক্টর ধরতে হবে।
অর্থৎ সূর্য এবং রিফ্লেক্টরের মাঝে হবে নায়ক নায়িকার অবস্থান।
যারা ভুল ধরবেন ধরেন। গালি খাওয়ার জন্যে প্রস্তুত.... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।