আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জীবন মরণের সীমানা ছাড়ায়ে...........

ঝরা বকুলের কান্না....... ***************** নিপা ছিল অপুর ফার্স্ট লাভ। কিন্তু নিপাকে বিয়ে করা ছিল অসম্ভব। কারন, একেতো নিপার বাবা অপুর সাথে কোনভাবেই বিয়ে দিবে না নিজের মেয়ের, এটা ভাল করেই জানে অপু, আর দ্বিতীয়তো নিপার ফার্স্ট লাভ ছিল সাম্য। সাম্য নিপার ফার্স্ট লাভ, কিন্তু অপু নিপার খুব ভালো বন্ধু। ব্যপারটা মেনেই নিয়েছিল অপু।

নিপাকে কথা দিয়েছিল, নিপার ডিভোর্স না হওয়া পর্যন্ত ও বিয়ে করবে না! নিপার যদি কখনও ডিভোর্স হয় কেবলমাত্র তখনই সে নিপাকে বিয়ে করব আর তা না হলে(এরকম কিছু না হোক সেটাই অপু চায়), সে বিয়ে করবে না কখনও। ব্যপারটাকে অনেকটা হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিল নিপা। দেওয়ারই কথা। একেতো সবছেলেরাই একবার না একবার বিয়ে না করার কথা ভাবে; আর দ্বিতীয়ত নিপার ডিভোর্স হবে, তারপর একটা ডিভোর্সী মেয়েকে বিয়ে করবে অপু...এর চেয়ে অদ্ভুত কথা আর কী হতে পারে?? যদিও ও বুঝতেই পারেনি, কতটা সিরিয়াসলি অপু এই সিদ্ধান্তটা নিয়েছিল। **************** নিপার বিয়ে।

খুব লাকি বলতে হবে নিপাকে, কারন বিয়েটা হচ্ছে সাম্যর সাথেই। কয়টা মেয়ে নিজের ফার্স্ট লাভকে পায় সারা জীবনের জন্য? এদিকে, অপুকে বারবার বলার পরও বিয়েতে আসেনি। এমনকি নাম্বার পর্যন্ত চেঞ্জ করেছে। যোগাযোগও করতে পারেনি কোনভাবে। যাইহোক, বিয়ের পরের দিনগুলো বেশ ভালই কাটছিল নিপা আর সাম্যর।

কিন্তু, বিয়ের এক বছরের মাথায় হঠাত একদিন পেপারে একটা নিউজ দেখে চমকে উঠল নিপা। ডাচ বাংলা ব্যাংকের কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, যারা একসাথে সাথে যাচ্ছিল পিকনিকে, মাইক্রবাস এক্সিডেন্ট করে মারা গেছেন তাদেরই কয়েকজন; আর মৃতদের একজনের নাম অপু!!! কিন্তু কোনভাবেই নিশ্চিত হতে পারল না, এটা সেই অপুই কিনা। বেশি কিছু জানতেও পারল না, কারন বিয়ের পর বেশ কয়েকবার ওর সাথে ওর হাজবেন্ড সাম্যর ঝগড়া হয়েছে এই অপুকে নিয়েই। তাই মনে মনে পজিটিভ কিছুর প্রত্যাশা করে অপুর জন্যে প্রার্থনা করল শুধু। এছাড়া আর কী বা করার ছিল ওর? ******************* অপুর কোন খবর এখনও পায়নি।

বিয়ের পরে যেন কিছুটা অসহায় হয়ে পড়েছে নিপা, যদিও এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। এরই মাঝে কেটে গেছ আরো তিন বছর। অথচ কী অদ্ভুত ব্যপার, নিপাকে সারাজীবনের জন্য পেয়ে যেন নিপার প্রতি আগ্রহো হারিয়েই ফেলেছ সাম্য! কথা নেই বার্তা নেই হুট করে একদিন জানালো সে আমেরিকা যাচ্ছে। সেখানে খুব ভালো একটা চাকরি পেয়েছে। আগে নিজে যাবে, তারপর নিপাকে নিয়ে যাবে! কিছুই যেন বলার নেই নিপার।

সে তো অসহায়। সে যে ভালবাসে সাম্যকে, তাই কিছুই বলতে পারেনা তপুর মতের বিরুদ্ধে। ******************* আমেরিকা যাওয়ার একবছরের মাথায় সাম্য জানিয়ে দিল নিপাকে, সে বিয়ে করেছে আমেরিকায়, সুতরাং সে ডিভোর্স চায়!!! নিপা যতটা ভালবাসত সাম্যকে, তাতে মুহুর্তেই দুনিয়া অন্ধকার হয়ে আসার কথা ওর। সুইসাইড করতেও ইচ্ছে হওয়ার কথা। কিন্তু প্রচন্ড কষ্টের মাঝেও যেন একটু আসার আলো দেখতে পাচ্ছিল নিপা।

কিন্তু কে সেই আসার আলো? অপু?? সত্যিই তাই। নিপার এই প্রচন্ড কষ্টের দিনে অপু এল নিপার কাছে। জানালো বিয়ে করতে চায় সে নিপাকে, যে কথা সে দিয়েছিল সে, সে কথা রাখতে চায় সে। রাজি হয়ে গেল নিপা। নিজেকে কিছুটা স্বার্থপর মনে হল অবশ্য, কিন্তু অপুর মুখের দিকে তাকিয়ে ভুলে গেল সব।

নিপার সাথে অপুর বন্ধুদের কোন যোগাযোগ ছিল না। অপুরো নাকি নেই। তাই তেমন কেউ জানলও না ওদের কথা। অপু নিপাকে নিয়ে পাড়ি জমালো কানাডায়। ********************** সুন্দরভাবে দিন কাটাতে লাগল নিপা আর অপু।

কিন্তু কেন যেন অপুকে একটূ অন্যরকম লাগে নিপার। ভালবাসার কোন ঘাটতি নেই অপুর, কিন্তু তবুও কি যেন নেই অপুর মাঝে। বাচ্চা নিতে কিছুতেই রাজি হয়নি অপু। কেন কে জানে। শুধু জানতে চায় নিপা এখনো ভালবাসে কিনা তপুকে।

নিপা বলে,”তুমি যেমন নিজের ফার্স্ট লাভকে ভুলতে পারনা, আমিও পারব না”। “একটা সত্যি কথা বলবে? কেন তুমি আমার মত ডিভোর্সি মেয়েকে বিয়ে করলে?” নিপা জানতে চাইল । “ বিয়েটাই শেষ কথা না, জানি সেটা। শুধু মাত্র তোমার ভালোর জন্য, তোমাকে সুখে রাখার জন্য। তুমি ভাল নেই তাই।

জানি তুমি সাম্যকেই ভালবাস, এখনও বাস, ওর অভাব পূরন করতে পারব না আমি। তাই ও আসলেই আমি সরে যাব” অদ্ভুতভাবে কথাগুলো বলল অপু। এমন অদ্ভুত কথা শুনে বিশ্বাস করাটা কঠিন। সাম্যর সাথে বিয়ের আগেও অপু এরকম কথা বলত। কিন্তু, তখন ওর কথাগুলোকে কেমন যেন চাঁপাবাজি মনে হত।

কিন্তু আজ কেন যেন মনে হচ্ছে, ওর হয়ত অপুকেই ভালবাসা উচিত ছিল! নিজেকে খুব বেশি অপরাধী মনে হল নিপার। বলেই ফেলল অপুকে, “কী দিয়ে তৈরী তুমি? এত কিছু কীভাবে সহ্য কর তুমি?”। “আমি কি দিয়ে গড়া জানলে আমার সাথেতো আর থাকবে না, অন্তত তপু ফিরে না আসা পর্যন্ত আমাকে তোমার দরকার, এটুকু আমি বুঝি”। আরো অদ্ভুতভাবে বলল অপু। নিপাতো অবাক, “তুমি কি দিয়ে গড়া জানলে তোমার সাথে থাকবা না কেন? মানে কি?” নিপার প্রশ্ন।

“মানে কিছুনা” অপুর জবাব!! ********************** চোখের পলকে কেটে গেল দশটা বছর। দশ বছর পরের একদিন। সাম্য দেখা করতে এসেছে নিপার সাথে! অপু বাড়িতে নেই তখন। তপুর ডিভোর্স হয়েছে কিছুদিন আগে, জানালো নিপাকে। তাই আবার বিয়ে করতে চায় সে নিপাকে!! নির্লজ্জ, বেহায়য়া সাম্যকে প্রায় মারতেই যাচ্ছিল নিপা।

নিজেকে কন্ট্রোল করল কোনমতে। জানাল অপুর সাথে গত দশ বছর ধরে সংসার করছে সে। অপু??????? আকাশ থেকে পড়ল যেন সাম্য। আকাশ থেকেই পড়ার কথা। নিপাঃ হ্যা অপু।

কেন তোমার কোন সমস্যা? সাম্যঃ কি করে? তুমি কি পাগল হয়ে গেছ? নিপাঃ কেন? পাগল হয়ার কি আছে? সাম্যঃ আমাদের বিয়ের এক বছরের মাথায়, মানে আজ থেকে পনের প্রায় বছর আগে একটা পিকনিকে যাওয়ার সময় এক্সিডেন্টে মারা গেছে অপু, জাননা তুমি????? নিপাঃ মানে? পাগলতো তুমিই হয়েছ দেখছি!! না, পাগল হয়নি সাম্য। সাম্য যা বলেছিল তাই সত্যি! ঐদিন আর বাসায় ফেরেনি অপু। শুধু ঐদিন না, আর কোনদিনই ফেরেনি ও। সত্যিই প্রায় পনের বছর আগেই মারা গেছে অপু, খোজ খবর নিয়ে জানত পারল নিপা!!! বাসায় এসে দেখতে পেল টেবিলের উপরে একটা কাগজে অপুর লেখা। অনেক সকালে হয়ত কথাগুলো লিখেছে অপু।

কিন্তু ও খেয়াল করেনি। লেখাটা এমন “আজই সাম্য ফিরে আসবে তোমার কাছে। তোমার জীবন আবার আনন্দে ভরে উঠবে। আর তাই আমার কাজ আজই শেষ। আমি বিদায় নিচ্ছি।

” অপুর সাথে গত দশ বছরের স্মৃতিগুলো আরেকবার মেলালো নিপা। কি দিয়ে গড়া ও বলতে চায়নি, বাচ্চা নিতে চায়নি, পরিচিত মানুষের মাঝে থাকতে চায়নি, এসেছে কানাডায় যেখানে ওর কেউ নেই, সবকিছু নাকি করেছে শুধুমাত্র নিপার ভালোর জন্য! তাহলে কার সাথে দশ বছর সংসার করল নিপা ???????????????? ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.