আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কঙ্গোর ধর্ষণের শিকার নারীরা স্বাভাবিক জীবন কাটাতে চান—চান নিরাপদ জীবন। কিন্তু সেই জীবনের নিশ্চয়তা কে দেবে?

পৃথিবীর কাছে তুমি হয়তো কিছুই নও, কিন্তু কারও কাছে তুমিই তার পৃথিবী" Video Link কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে বিদেশি কোনো নারী পা রাখলেই অদ্ভুত এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন। তিনি দেখবেন নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁকে ঘিরে রেখেছেন, অস্ত্র হাতে পাহারা দিচ্ছেন। আর দেশটির সাধারণ নারীরা কেমন আছেন, তা জানাতে একটি পরিসংখ্যানই যথেষ্ট। সেখানে প্রতি ঘণ্টায় ৪৮ জন নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। এ কারণে এরই মধ্যে কঙ্গো ‘ধর্ষণের রাজধানী’ হিসেবে কুখ্যাতি পেয়েছে।

কঙ্গোতে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করেছেন পুরস্কারজয়ী চলচ্চিত্র-নির্মাতা ফিয়োনা লয়েদ ডেভিস। সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিতই তিনি সিএনএনে লিখছেন। সে লেখাতেই উঠে এসেছে কঙ্গোর নারীদের ভয়ংকর অবস্থার কথা। তিনি বলেন, সেখানকার নারীরা এমনই দুরবস্থার মধ্যে আছেন যে বাড়িতে থাকলে তাঁদের না খেয়ে থাকতে হয়। কিন্তু খাবার বা কাজের সন্ধানে বাইরে বের হলে তাঁরা ধর্ষণের শিকার হন।

ফিয়োনা লয়েদ ডেভিস বলেন, এক সপ্তাহ ধরে কঙ্গোয় একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্নভাবে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন নারীরা। সেসব ঘটনায় বেড়েছে বর্বরতা আর নিষ্ঠুরতা। রাইফেলের বেয়নেট, বন্দুক ও লাঠি দিয়ে মেরে, ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে নারীদের—প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত। ২০০৩ সালে কঙ্গোয় সংঘাত বন্ধে একটি শান্তিচুক্তি সই হয়।

এর ফলে সেখানে সংঘর্ষ থেমেছে কিন্তু থামেনি ধর্ষণ। থামেনি নারীদের বেঁচে থাকার লড়াই। ফিয়োনা লয়েদ ডেভিস বলেন, তিনি দীর্ঘদিন সেখানে কাজ করছেন। আর এ সময় অনেক নারীই নিখোঁজ হয়েছেন। বনে কাজ বা খাবারের সন্ধানে বের হয়ে তাঁরা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

এখন বর্বরতা আরও বেড়েছে। ধর্ষকেরা এখন নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। কঙ্গোর বহু নারীই কীভাবে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, সে ব্যাপারে মুখ খুলছেন। তাঁদের কেউ কেউ বলেন, একবার নয় বহুবার, বারবার তাঁরা এই বর্বরতার শিকার হন। অনেকে তিনবার-চারবারও গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

কখনো কখনো দুজন সৈন্য দ্বারা, কখনো আবার ১০-২০ জন তাঁদের ওপর নির্যাতন করেছে। কিশোরী, এমনকি শিশুরাও বাদ পড়ছে না এ বর্বরতা থেকে। চিকিত্সক মাকওয়েজ বুকাভুর পাঞ্জি হাসপাতালে ধর্ষণের শিকার নারীদের চিকিত্সা করছেন। এদের মধ্যে একজনের বয়স তিন বছর। ওই ঘটনার পর থেকে শিশুটি যেন বোবা হয়ে গেছে।

নার্সরা জানান, দুর্বৃত্তরা তাকে ও তার মাকে ধর্ষণ করে। সে সময় দুই বোনকে মেরেও ফেলা হয়। তবে ধর্ষণের শিকার হয়েও যাঁরা টিকে থাকার জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন, তাঁদের একজন মাসিকা কাতসুভা। তাঁর কর্মকাণ্ড হয়তো অন্যকে উত্সাহিত করতে পারে। তাঁকে ও তাঁর দুই কিশোরী মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়।

স্বামীকে তাঁর সামনেই মেরে ফেলা হয়। ধর্ষণের শিকার দুই মেয়ে রাচেল ও ইয়েভেতকে ছেড়ে গেছে তাঁদের স্বামীরা। এরপর তিনি তাঁর মেয়েদের পুনর্বাসনের জন্য লড়াই শুরু করেন। লেক কিভু এলাকার ওই পুনর্বাসন কেন্দ্রে এখন ১৭০ জন নারী আছেন। তাঁরা তাঁকে মামা মাসিকা বলে ডাকেন।

গত ১০ বছরে মামা মাসিকা ছয় হাজার নারীকে পুনর্বাসিত করেছেন। এসব নারী পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন। মাসিকা তাঁদের কাছে মায়ের মতো। মাসিকা তাঁদের একটি সুন্দর ভবিষ্যত্ উপহার দিতে চান। কিন্তু তিনি জানেন, বাস্তবতা অনেক কঠিন।

মাসিকা এসব নারীর মাঠে গিয়ে শারীরিক পরিশ্রম করানোর বদলে অন্যভাবে শিক্ষিত করে তুলতে চান। তবে মাসিকা জানেন না, কবে এই ধর্ষণ বন্ধ হবে। তাঁর মতো জানেন না অন্যরাও। প্রতিদিনের বর্বরতা, নিষ্ঠুরতা থেকে কবে রক্ষা পাবেন কঙ্গোর নারীরা। কবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চোখ পড়বে দিনের পর দিন ঘটে চলা এই জঘন্য কর্মকাণ্ডের দিকে।

কঙ্গোর ধর্ষণের শিকার নারীরা স্বাভাবিক জীবন কাটাতে চান—চান নিরাপদ জীবন। কিন্তু সেই জীবনের নিশ্চয়তা কে দেবে? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।