আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যে জীবন দোয়েলের, ফঙিং-এর মানুষের সাথে তার হয়নাকো দেখা। আমার মাদকাসক্ত জীবন-(শেষ পর্ব)

নিজেকে জানো

যে জীবন দোয়েলের, ফঙিং-এর মানুষের সাথে তার হয়নাকো দেখা। আমার মাদকাসক্ত জীবন-(শেষ পর্ব) বিবিধ জ্ঞানার্জনও আমাকে নেশাখোর হওয়া থেকে বাঁচিয়েছে। হেন বিষয় ছিল না বা আছে যার প্রতি আমার আগ্রহ নেই। ধর্মতত্ত্ব থেকে শুরু করে বৈরাগ্য। বছর দুয়েক বাউল নিয়ে বেশ মেতেছিলাম।

তাদের সাধন-ভজন, দিনের পর দিন তাদের সাথে থেকেছি, গল্প করেছি, বুঝতে চেয়েছি। শেকড়টাকে জানতে চেয়েছি। তারপর জানা হয়ে গেলে ফিরে এসেছি। একসময় নিয়মিত নামাজ পড়তাম, সন্ধ্যা হলেই জিকিরে বসতাম, সবসময় দমে দমে আল্লাহকে স্মরণ করতাম, আরো সব নানাবিধ ব্যাপার ছিল। তো সেই করতে করতে যখন জেনে গেলাম বিষয়টা কি, তখন লোকে বলে, আমারে নাকি শয়তান ধরেছিল।

যাই হোক, মাসুদ রানা পড়তাম একসময় প্রচুর। সেখান থেকে যে শিক্ষাটা পেয়েছিলাম তা হলো, অনুসন্ধিৎচ্ছা। কোনো ক্লু ধরে ভেতরে ঢোকা। এটা জীবনে এত প্রয়োজনীয় কল্পনা করতে পারবেন না। একনিষ্ঠতা কিভাবে আপনার চারপাশকে মুহূর্তেই মূর্ত করে তুলবে, ভাবতেই পারবেন না।

যাই হোক, রবীন্দ্রনাথ, টলস্টয়, গোর্কি, চেখভ, পুশকিন, দয়স্তভস্কি, শরৎ, আশুতোষ, নিমাই, সঞ্জীব, জীবন বাবু...(কত নাম) এরা আমার মাঝে যে প্রতিক্রিয়া সংঘটিত করেছিল, তা হলো মনুষ্য চরিত্রের নানান দিক, ভাবনা, জীবন জিজ্ঞাসা এসব। ফলে আমার অপরিচিত জীবনও পরিচিত ছিল, পরিণয়টা আমি ভাবতে পারতাম। আমাকে ভীতু ভাবতে পারেন। কেননা সবসময় একটা ভয় আমার মধ্যে ক্রিয়াশীল ছিল। আমার হারিয়ে যাওয়া চলবে না।

মায়ের কাছে ফিরতে হবে। দু ভাইয়ের মৃত্যুর পর এটা কেমন করে যেন অবচেতনে ঢুকে গিয়েছিল। একসময় হিপনোসিজম চর্চা করতাম, বিদ্যুৎ মিত্র(কাজী ভাই) পড়ে। মনের উপর নিয়ন্ত্রণটা সেই থেকে একটু বোধকরি তৈরি হয়েছিল। এটা একরকম লড়াই বলতে পারেন।

একবার বর্ষার সময় বন্ধুরা বলল, আজ মজা লুটতে হবে। মজাটা কিছুই নই, নেশা আর নারী সম্ভোগ। নৌকায় এক পতিতাকে ওঠানো হলো। আমি বললাম, যাবো না। তারা তো রেগে অস্থির, যাবি না কেন? আমি বললাম, যাবো না, আমার ওসব ভালো লাগে না।

কত খোটা তখন। নপুংষক। আমি চুপচাপ। আমি ভাবতাম, শুধু টাকার জন্য একজন নারী তাকে উপভোগ করতে দিচ্ছে এতে মজা কোথায়? আর শরৎ বাবু পতিতাদের প্রতি আমার একধরনের সমবেদনা তৈরি করেছিল। আবার মনের আরেকদিক চাইছিল, যা যা, মজা লুট।

তো দাঁড়িয়ে গেলাম। এভাবে কোনো এক পক্ষের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জিতে যাওয়ার মধ্যে যে মজাটা আছে, তা বড় মধুর। জীবনের স্বাদ, গন্ধ, স্পর্শ... এসবকে উপভোগ করতে চাইলে সুস্থভাবে উপভোগের বিকল্প নাই। কেননা নেশা হয়ত আপনার একটা ইন্দ্রিয়কে চরমে নিয়ে যেতে সক্ষম কিন্তু অন্যগুলোকে অকেজো করে দিয়ে; জীবনের সব রঙ, রূপকে উপভোগ করতে চাইলে আপনার সব ইন্দ্রিয়কেই খোলা রাখতে হবে। যে জীবন দোয়েলের, ফঙিং-এর মানুষের সাথে তার হয়নাকো দেখা।

এটাই সত্য। আর লিখতে ইচ্ছে করছে না। কামনা করি, সকল ব্লগার বন্ধুদের সুস্থ জীবন। এতদিন ধরে যারা কষ্ট করে পোস্টগুলো পড়েছেন তাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। তবে পোস্টটি সার্থক হবে তখনই যদি তা আপনাদের মনের ভেতরে নেশা নিয়ে কোনো কৌতুহল মেটায়।

আপনারা যদি সম্মতি দেন তাহলে লিখতে চাই সব নেশা নিয়ে আরেকটি ধারাবাহিক। যেখানে নেশাকারীকে সহজে সনাক্ত করার উপায় থাকবে। তাদের উপসর্গ গুলো থাকবে। কেননা তাতে করে হয়ত আমরা সচেতন হবো, চারপাশটাকে আরো ভালো করে দেখতে পারব। আর আমাদের স্বজনের মধ্যে অগোচরে কেউ নেশাসক্ত হলে তাকে চিহ্নিত করতে পারব, সুস্থ করতে পারব।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.