আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি অতিভৌতিক রহস্য উপন্যাসঃ ফুলে ফুলে খোঁজে ফেরে (প্রথম পর্ব)

ফুলে ফুলে খোঁজে ফেরে মূল লেখকঃ কৃষণ চন্দর অনুবাদঃ আখতার -উন- নবী প্রথম পর্ব পূর্বকথাঃ 'ফুলে ফুলে খোঁজে ফেরে' কৃষণ চন্দর এর বিখ্যাত উপন্যাস 'গঙ্গা বহে না রাত' এর বাংলা অনুবাদ । - - - - - আমার নাম মোতীলাল নাগর । আমার বাবা রায়বাহাদুর প্যারেলাল নাগর ব্রিটিশ আমলে ডেপুটি কালেক্টর ছিলেন । এবং তাঁর সজাগ দৃষ্টি ছিল তাঁর একমাত্র ছেলের দিকে যাকে তিনি নিজের চেয়েও বড় জজ বানাতেচেয়েছিলেন । কিন্তু আমি লেখাপড়ায় ছিলাম একেবারে গোল্লায় ।

খোঁড়াতে খোঁড়াতে কোন রকমে এন্ট্রান্স পাশ করলাম । কলেজেও এলাম । কিন্তু দুর্ভাগ্য যে ,পর পর দুবার এফ .এ ফেল করলাম । এবং ঘরে উঠে গেলাম । যে রকম বিধবারা শ্বশুর বাড়ীতে উঠে যায় ।

কিন্তু আমার বাবা হার মানতে রাজী নন । কখনো বা তিনি আমাকে তহশীলদার হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন । কথনো বা নায়েক তহশীলদার । কখনো পুলিশ ,কেননা অনেক দিন থেকে শিকারের প্রতি শখ ছিলো আমার বেজায় । দেখতে শুনতেও ছিলাম ফিটাফাট ,উচ্চতায় বেশ লম্বা চওড়া ,নিরোগ শরীর,উজ্জল গায়ের রঙ এবং একজোড়া ডাগর ডাগর চোখ ।

কিন্তু মগজে ছিলো আমার একরাশ কিলবিল করা পোকা । আইনের মারপ্যাঁচ আর পুলিশওয়ালাদের ছলচাতুরী বুঝার মতো মাথার মগজ আমারছিলো না । এবং প্রতিটি পরীক্ষাতেই বড় কৃতিত্বেরসাথে ফেল মারতে শুরু করলাম । আসলে জজ ব্যারিষ্টারী এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ কাজ কারবারের মধ্যে আকর্ষণ বোধ করতাম না আমি । রঙ্গ আমি পছন্দ করি ।

আর পছন্দ করি রাতের নিঃশব্দ ভেদ করে চলা কোন বেগবতী ঝর্ণার অস্ফুট সঙ্গীত,আকাশের গোলাপী বিছানার রঙ পরিবর্তন । মনে হয় যেনবিভিন্ন রঙ ধীরে ধীরে বিভিন্ন ওড়না পরে কোথাও কোন এক মন্দিরের দিকে চলেযাচ্ছে । এবং যখন সবাই গভীর রাতে ঘুমের মাঝে ডুবে যায় - তখন রাত যেন আমার শিয়রে দাঁড়িয়ে ঠান্ডা নিঃশ্বাস নিতে থাকে । তখন আমি প্রায়শঃ ব্যাকুল হয়ে আমাদের ছোট শহরের অনেক পুরনো খানদানী ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গভীর বনের দিকে চলে যাই । একটি উচু টিলার উপর বসে সে এক অদ্ভুত শব্দ শুনি ।

এমন সব শব্দ যা আমার হৃদয়কে আঙ্গুলের স্পর্শের মতো হাতিয়ে ফেলে । আর আমার হৃদয় আশ্চর্য এক অর্গানের মতো বেজে উঠে । ময়ূর পাখা খুলে নাচে । আর আমি ময়ূরের সাথে নাচি । চাঁদনীর সমতল ছাদে আমি কারো গোলাপী পদ্মচরন দেখতে পাই ।

এক জোড়া কোমলপাতলা পা গজলের দুটি পংক্তির মতো সামনে পেছনে চলতে চলতে কারো সাদা শাড়ীর কালো আচল চোখে পড়ে । আমি জঙ্গলের এই চাঁদনী রাতে সেই একজোড়া গোলাপী চরণকে দেখতে দেখতে হতভম্ব হয়ে যাই । রাত একটা লম্বা চাদরের মতো চাঁদনীর বিছানায় নিজের কালো পোষাক উড়িয়ে বসে থাকে । আমার প্রতিক্ষায় থাকে সে । তখন এই বিশ্বচরাচরে শুধুমাত্র তিনটি দৃশ্যই বিরাজ করে ।

আমি , ময়ূর ও রাত । জানিনা আমার মগজে এমন আবর্জনা কে ভরে দিয়েছে । যেন সাদা সাদা একরাশ অস্পষ্টতায় ভরা আমার মগজ । এই পৃথিবীর কোন বাস্তবতাই আমার কাছে ধরা দেয়না । সব সময় হৃদয় কেমন দুঃখ ভরাক্রান্তই থেকে ।

জানি না কেন । আমার হাতজোড়া কারো চেহারা হাতড়াবার জন্যে খোঁজে ফেরে । আর এই পৃথিবীযতটা না স্পষ্ট হয়ে আসে তার চাইতেও বেশী রহস্যময় হয়ে দেখা দেয় । অথবা মনে হয় যেন এই পৃথিবির পরও আরেকটি পৃথিবী আছে ,অথবা এই পৃথিবীর ভেতরেই আরেকটি পৃথিবী আছে । আমি ভাবি সুবিস্তৃত দিগন্ত থেকে সূর্য উঠার সময় ঝকঝকে দিনের আলোর কারো পাতলা গোলাপী পদ্মচরণটাকে দেখতে পাব ।

প্রতিদিনই ব্যার্থ হলাম । মন চায় দিগন্তটাকে নখ দিয়ে ছিঁড়ে ফেলি । তারপর দুচোখ ভরে সেই পদ্মচরন দুটোকে দেখি । যে শুধু রাতে আঁধারে আমাকে ছায়া হয়ে দেখা দেয় । মনে হয যেন আমি উন্মাদ ।

অথবা অন্য কোন পৃথিবী থেকে এসেছি । যেন আগন্তকের মত কোথাও থেকে আমি এসেছি ,একঅজানা প্রতিশোধের জন্য এই টিলার উপর বসেছি । হয়তোবা কিছুক্ষন পর উড়ে কোথাও চলে যাব । ... উত্তরাধিকার সূত্রে আমারবাবা অনেক ধনসম্পত্তির মালিক ছিলেন । নিজে রোজগারও করতেন অনেক ।

সংসারের সব দিক দিয়েই ছিল আমার আরাম আয়ে । আমার বাবা বিষয় সম্পত্তি দেখা শুনার ভারটা আমার কাঁধে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলেন । আমার মন বসলো না ওসবে । আমি সঙ্গীত সাধনা করার চেষ্টা করলাম । কিন্তু ওটাতেও কুলিয়ে উঠতে পারলাম না ।

এরপর আমি মেয়েদের সাথে প্রেম করতে চাইলাম । দুর্ভাগ্য যে ,প্রতিটি মেয়ের চেহারা আমার কাছে কেমন পুরনো মনে হলো । এরপর আমি চাইলাম বই পুস্তকে মন নিবেশ করতে । অতএব বাবার বিরাট গ্রন্থাগারের অনেক অনেক বই পড়ে শেষ করে ফেললাম । প্রতিটি বইকে এক একটি বিশস্ত মানুষের মতো স্বয়ংসম্পূর্ন এবং অহঙ্কারী বলে মনে হত লাগলো ।

প্রতিটি বই কোন না কোন শহুরে সুন্দরীর মতো গাঢ় মেক আপে ঢাকা মূল্যবান পোষাকে ঝলমল করা হাজার হাজার অপ্সরীর মত মনে হলো । প্রতিটি বই আমার আমার জড়িয়ে যাওয়া মগজ পরিষ্কার করতে অপারগ মনে হলে আমি বই ফেলে ছুটেপালিয়ে যাই এবং আগের চেয়েও বেশী করে নিজের রাজ্যে স্বপ্নের আশ্রয় খোঁজতে থাকি । অবশেষে রঙ আমি পেয়ে যাই । একের পর এক কাগজ ইজেলে রুপ নেয় । সারা ইজেল জুড়েইছড়িয়ে দেই রঙ ।

এই রঙের মাঝে যত নামতে থাকি ততই আমার কাছে গভীর মনে হতে থাকে । আমি রঙের ভেতর ডুবে গেলাম । দ্বিতীয় পর্বঃ http://blog.alor-nishan.com/?q=node/62 তৃতীয় পর্বঃ http://blog.alor-nishan.com/?q=node/64 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.