আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিভিন্ন ধরণের উৎসব

চূপ , প্রকৃতি বিরক্ত হচ্ছে। বিভিন্ন প্রকার উৎসব জানার পূর্বে জানি উৎসব কি ? উৎসব (ইংরেজীতে Festivals) হচ্ছে আনন্দ প্রকাশ ও লাভের মাধ্যম, এক কথায় যাকে বলা যায় আনন্দানুষ্ঠান; ইংরেজিতে একে " এ জয়ফুল অব অনারিফিক সেলিব্রেশন" বলে সংজ্ঞায়িত করা যায় । উৎসব পারিবারিককেন্দ্রিক ও সমাজকেন্দ্রিক হতে পারে। ১. অন্নপ্রাশন (Annaprashana) : অন্নপ্রাশস অন্নপ্রাশান হিন্দুধর্মীয় সংস্কার বিশেষ । "অন্ন" শব্দের অর্থ যে-কোনখাবার, বিশেষ অর্থ ভাত; আর “প্রাশন” শব্দের অর্থ খাওয়া।

তাই শিশুর প্রথম ভাত খাওয়া অনুষ্ঠানকেই বলা হয় অন্নপ্রাশন। এদিন সাধারণত শিশুর মামা তাকে প্রথম খাইয়ে দেন। অন্নপ্রাশন এর জন্য ছেলেশিশুর ৬ মাস এবং মেয়ে শিশুর ৭ বা ৯ মাস বয়সকে প্রশস্ত মনে করা হয়। এ সময় শিশুর নামকরণও করা হয় ২. আকিকা (Aqiqah) : একটি ইসলামি অনুষ্ঠান। শিশুর জন্মের পর সপ্তম দিবসে আল্লাহর উদ্দোশ্য নবজাতকের মঙ্গলকামনায় এ অনুষ্ঠান পালিত হয়।

ইসলামি বিধান অনুযায়ী এইদিন নবজাতকের নাম রাখা , তার প্রথম চুলকাটা ও কোরবানি দেওয়া সুন্নত। কোন কারণে সপ্তম দিবসে এ অনুষ্ঠান পালন করা সম্ভব না হলেও শিশু বড় হয়ে নিজেও তা করতে পারে। আকিকা উপলক্ষে কো- রবানীকৃত পশুর মাংশের তিন ভাগের এক ভাগ দরিদ্র ও দুঃস্থদের মধ্যে এবং এক ভাগ আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। বাকি এক ভাগ পিতা-মাতা ও নিকট আত্মীয়রা গ্রহণ করে। ৩. আশুরা (Ashura) : আশুরা আরবি শব্দ , অর্থ মহরম মাসের দশ তারিখ ।

করাবালার মর্মান্তিক ঘটনার আগে এ দিনটি আনন্দোৎসবের মধ্য দিয়ে পালিত হতো। এর কারণ হিসেবে কথিত হয় যে , হযরত নুহ্-র (আঃ) যুগে এক ভয়ঙ্কর প্লাবনে সবকিছু ডুবে গেলে তিনি মোমিনদের নিয়ে নৌকায় ওঠেন এবং প্লাবনশেষে এই আগুরার দিনেই স্থলভাগে অবতরণ করেণ। বর্তমান আশুরার গুরুত্ব কারবালায় ইমাম হোসেনের শহাদত বরণের কারণে। ৪. ঈদুল আযহা (Eid-ul Azha) : মুসলমানদের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসবের অন্যতম । এটি ঈদ আল-কুরবান বা ঈদ আল-নাহর নামেও অভিহিত হয় ।

বাংলাদেশের এটি কুরবানীর ঈদ , বাকরা ঈদ নামে পরিচিত। ঈদ ও আযহা দুটিই আরবী শব্দ (ঈদ এর অর্থ উৎসব বা আনন্দ)। আযহার অর্থ কুরবানী বা উৎসর্গ করা। ৫. ঈদুল ফিতর (Eid-ul Fitr ) : ঈদুল ফিতর মুসলমানদের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসবের অন্যতম। ঈদও ফিতর দুটিই আরবী শব্দ।

ঈদ এর অর্থ উৎসব বা আনন্দ। ফিতর এর অর্থ বিদীর্ণ করা, উপবাস ভঙ্গকরণ , স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়া। ৬. উপজাতীয় নৃত্য (Tribal Dance ) : গারো নৃত্য উপজাতীয় নৃত্য শিল্পমাত্রই জীবনাশ্রয়ী। তাই যে কোন শিল্পকলায় সংশ্লিষ্ট মাসবগোষ্ঠীর জীবনাচরণ কমবেশি প্রতিফলিত হয়। উপজাতীয়দের গোষ্ঠীবদ্ধ কর্মকাণ্ডও তাদের শিল্পকলায় প্রতিফলিত হতে দেখা যায় ।

৭. কালীপূজা (Kali Puja) : কালুমূর্তি হিন্দু বিশেষত শাক্ত সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উসব। কালী হচ্ছেন দশমহাবিদ্যার প্রথম মহাবিদ্যা। তাঁর সম্বন্ধে নান পুরাণ ও বহু তথ্য আছে বঙ্গীয় তন্ত্রসার, শ্যামারহস্য প্রভৃতি তন্ত্রে কালীর বিভিন্ন রুপের কথা বলা হয়েছে , যথা : দক্ষিণ, সিদ্ধ, গুহ্য, ভদ্র, শ্মশান, রক্ষা ও মহাকালী। এদের মধ্যে দক্ষিণকালিকা সর্বাধিক জনপ্রিয় ও ব্যবপভাবে পূজিত। গৃহে ও মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত কালীর পূজা হয় নিত্য, এছাড়া দীপান্বিতা (কার্তিকী অমাবস্যা) , চতুর্দশী, জ্যৈষ্ঠের কৃষনা ইত্যাদি।

৮. কুমারী পূজা (Kumari Puja) : ঢাকায় কুমারী পূজা কুমারী তন্ত্রশান্ত্রমতে অনধিক ষোলা বছরের অরজঃস্বলা কুমরী মেয়ের পূজা। বিশেষত দুর্গাপূজার অঙ্গরুপে এ পুজা অনুষ্ঠিত হয়। তবে কালীপুজা জগন্ধাত্রীপুজা ও অন্নপুর্নাপুজা উপলক্ষে এবং কামাখ্যাদি শক্তিক্ষেত্রেও কুমারী পজার প্রচলন আছে। শান্ত্রমতে কুমারী পুজার উদ্ভব হয় কোলাসুরকে বধ করার পর থেকে। কোলাসুর এক সময় স্বর্গ-মর্ত্য অধিকার করলে বিপন্ন দেবগণ মহাকালীর শরণাপন্ন হয়।

তাঁদের আবেদনে সাড়া দিয়ে দেবী পুনর্জন্মে কুমারীরুপে কোলাসুরকে বধ করেন। তারপর থেকেই মর্ত্যে কুমারী পূজার প্রচলন হয়। ৯. কুলখানি (Qulkhwani) : কুলখানি ইসলামী অনুষ্ঠানবিশেষ। তবে এটি বিধিবন্ধ দ্বীনী অনুষ্ঠান নয়। সাধারণত মৃতব্যাক্তির দাফনের চতুর্থ দিনে কুলখানি অনুষ্ঠিত হয়।

উপমহাদেশে এর চর্চা বহু কাল থেকেই হয়ে আসছে। মৃত্যুর পর সাধারণত মৃতব্যক্তির গৃহে চল্লিশ দিন যাবৎ কুরআন তেলওয়াত করার রীতি রয়েছে। ১০. ক্রিস্টমাস (Christmas) : ক্রিস্টমাস বৃক্ষ ক্রিস্টমাস খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। প্রতিবছর ২৫ ডিসেম্বর রোমান ক্যাথলিক ও প্রটেস্টান্ট চার্চের অনুসারীরা যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন উপলক্ষে েএ উৎসব পালন করে। খ্রিষ্টীয় ২০০ সাল থেকে এ উৎসব পালন শুরু হয় ।

৩৫৪ সালে দিনটিকে যিশুর জন্মদিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং এ ঘোষণা ৪৪০ সালে পোপ স্বীকার করেন। মূলত পৌত্তলিক রোমানদের উৎসব-এর বিপরীতে ক্রিষ্টমাস পালন শুরু হয়। ক্রিষ্টমাস যদিও ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে উদ্ভুত, কিন্তু বর্তমানে এটি একটি ধর্মনিরেপেক্ষ উৎসবে পরিণত হয়েছে। এ উপলক্ষে লোকেরা আনন্দ-ফুর্তি করে এবং একে অপরকে শুভেচ্ছা কার্ড ও উপহার পাঠায়। এসব উপহার যিনি বহন করে নিয়ে আসেন তাঁকে নানা নামে ডাকা হয়, যেমন Father Christmas , Santa Claus, Saint Nicholas ইত্যাদি।

ক্রিষ্টমাস কার্ডের প্রচলন শুরু হয় উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে। ক্রিষ্টমাস বৃক্ষ-সাধারণত মোচাকৃতির পাইন বাফার বৃক্ষ - ছোট ছোট বৈদ্যুতিক বাল্ব এবং উপহার সমাগ্রী দিয়ে সাজানো হয়। কখনও কখনও গাছের ওপরে দেওয়া হয় একজন দেবদূত ও একটি তারার প্রতিকৃতি। ক্যাথলিকদের ক্রিষ্ঠমাস পালনের অংশ হিসেবে তারা যিশুর শিশুকালের দৃশ্য দেখায়, যেমন: গোয়ালঘরে পশুকে খড় খাওয়ানোর গামলায় শিশু যিশু এবং পাশে তাঁর মা মেরী ও যোশেফ দণ্ডায়মান। ১১. গায়ে হলুদ (Gaye Halud) : গায়ে হলুদ গায়ে হলুদ বিবাহ অনুষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্ব।

বিবাহের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে আনুষাঙ্গিক নানা ধরণের আচার-অনু- ষ্ঠান সম্পাদিত হয়, যাকে ফোকলোরের ভাষায় বলে : Many rites within one ritual । বরকনের দাম্পত্য জীবনকে যে কোনও ধরনের অকল্যাণ বা অপশক্তির অনিষ্ট থেকে মুক্ত রাখার কামনা থেকেই এ সব লোকাচার পালন করা হয়। গায়ে হলুদ এ সবেরই একটি এবং এটি মূলত একটি মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান, যা প্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত। ১২. ছায়ানট (Chhayanat) : রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান ছায়ানট ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন। সংস্কৃতি চর্চায় দেশীয় ঐতিহ্য ও প্রকৃতিমুখী হওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৬১ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

ঐ বছর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে রবীন্দ্র-জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের পর মোখলেসুর রহমান (সিধু ভাই), সুফিয়া কামাল, সাইদুল হাসান, ফরিদা হাসান প্রমুখ সংস্কৃতিকর্মী একটি নতুন প্রগতিশীল সংগঠন গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন; ছায়ানট তাঁদেরই উদ্যোগের ফল। ১৩. পহেলা বৈশাখ (Pahela Baishakh) : বৈশাখী মেলা পহেলা বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম দিন। এ দিনটি বাংলাদেশের ও পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে পালিত হয় । এটি বাঙালির একটি সর্বজনীন লোকউৎসব। এদিন আনন্দঘন পরিবেশে বরণ করে নেয়া হয় নতুন বছর কে।

কল্যাণ ও নতুন জীবনের প্রতীক হলো নববর্ষ। অতীতের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় উদযাপিত হয় নববর্ষ। এদিন সরকারি বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। এক সময় নব- বর্ষ পালিত হতো আর্তব উৎসব বা ঋতুধর্মী উৎসব হিবেবে। ১৫. বুদ্ধ পূর্ণিমা (Buddha Purnima ) : বুদ্ধ পূর্ণিমা’র শোভাযাত্রা বুদ্ধ পূর্ণিমা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব।

বৈশাখ মাসের এই পূর্ণিমা দিবসে মহামানব বুদ্ধের জীবনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল বলে দিনটি “বুদ্ধ পূর্ণিমা” নামে খ্যাত। খ্রিষ্টপূর্ব ৬২৩ অব্দের এ দিনে গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহন করেন, ৫৮৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের এ দিনে তিনি সাধনায় সিদ্ধি লাভ করে জগতে বুদ্ধ নামে খ্যাত হন এবং ৫৪৩ খ্রিষ্টপূর্বাদ্বের এ দিনে তিনি মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন । সিদ্ধার্থের বুদ্ধত্বলাভের মধ্য দিয়েই জগতে বৌদ্ধধর্ম প্রবর্তিত হয়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.