আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুর্বল, সবল আর বোকা ছেলে

লিখে খাই, সবার ভাল চাই সহজ কথা কেন সহজে বলা যায় না? কেন মানুষ উচিত কথা বলা থেকে বিরত থাকে? কেনই বা নিজের অধিকার আদায়ে কুণ্ঠাবোধ করে? এসবের পেছনে কারণ কি? নিজেকে দুর্বল ভাবা? নাকি যেমন আছি তেমনই থাকি এমনটা চিন্তা করা? আবার উটকো ঝামেলা থেকে দূরে থাকাও কি এর কারণ? একেকজন হয়তো একেকভাবে এর ব্যাখ্যা দেবেন। কিন্তু সমাজে সবলরা যেভাবে ন্যায়কে অন্যায়, অন্যায়কে ন্যায় বলে চালিয়ে দিচ্ছে দিবালোকে, প্রকাশ্যে, সূর্যের আলোতে- তা কি করে সহ্য করে দুর্বলরা। রাতের আঁধারে হলে না হয় বলা যেতো সবাইকে ঘুমিয়ে রেখে সবলরা কাজ করে নিয়েছে। আসলে দুর্বল দুর্বলই। আর সবল সব সময়ই সবল।

তারা কাউকে তোয়াক্কা করে না। লাজলজ্জা তাদের ধাওয়া করে না। বিবেক তাদের দংশন করে না। তাই তারা সকল কুকর্ম এক লোকমায় সাবাড় করে ফেলে। হলমার্ক কেলেঙ্কারির কথাই ধরা যাক।

সরকার নিয়ন্ত্রিত একটি ব্যাংক থেকে ৩৫০০ কোটি টাকা দিনের আলোতে তারা সাবাড় করে দিয়েছে। অথচ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ কিছুই জানে না! তা কি করে হয়? এ পরিচালনা পর্ষদ আবার সংবাদ সম্মেলন করে ক’জনকে বহিষ্কারের কথা দেশবাসীকে জানায়। সবার আগে এ পরিচালনা পর্ষদকেই তো কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত। কিন্তু কে বলবে এ কথা? সহজ এ কথা যে সহজে বলা কঠিন। তারা যে সব কিছুর ঊর্ধ্বে।

তাদের কেন কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে? তারা তো হর্তাকর্তা। তারা তো বিচার করবেন। তারা কেন বিচারের মুখোমুখি হবেন? এ দেশের ৯০ ভাগ মানুষই তো দুর্বল। তারা সব সময় সবলদের চাপে পিষ্ট হন। ভয়ে কাতর থাকেন।

তারা কিভাবে উচিত কথা বলবেন। তাদের যে প্রাণের ভয় আছে। তাদের জীবনের মায়া আছে। উহ্ শব্দও করতে পারবেন না তারা। তাতেও সমস্যা।

কেন তুই উহ্ করলি? এ প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে আবার। পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, এ ৯০ ভাগ মানুষ থেকেই ৪০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিদ্যুতের ভেলকিবাজির মতো বিলেও ভেলকিবাজি দেখিয়েছেন তারা। স্লাব পরিবর্তনের মারপ্যাঁচে ফেলে মাত্র ৫ মাসে এ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা। এখানেও বলি হয়েছে দুর্বলরা।

তাদের ওপরই খড়গ সবসময়। তারপরও তারা উচিত কথা বলতে পারেন না। কোন কোন ক্ষেত্রে যে কথা বলা তার অধিকার সে কথাও বলতে চান না। বরং অন্যের ওপর ছেড়ে দেন, সেই বোকা ছেলের মতো। এক মা তারা বোকা ছেলেকে নিয়ে খুবই বেকায়দায় আছেন।

হাঁটতে গেলে, খেলতে গেলে এমনকি খেতে গেলেও তাকে নিয়ে মায়ের চিন্তা, কোন অঘটন ঘটিয়ে ফেলে কিনা! এ অবস্থায় চিন্তা করে ছেলেকে বিয়ে করিয়ে দিলে এ চিন্তার ভাগটা বউও নিতে পারবে। এ চিন্তা থেকেই ছেলের বিয়ে ঠিক করেন। দেখতে দেখতে আসে সেই বিয়ের দিন। বরযাত্রী প্রস্তুত। ছেলেকে বর সাজিয়ে মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।

লোকজন বলে, মাকে সালাম করে দোয়া নে। কথা অনুযায়ী বোকা ছেলে তার মাকে সালাম করে। এ সময় মা তার ছেলেকে বলেÑ বাবা রে তুই তো বোকা। বিয়ে বাড়িতে যাবি। অনেকে অনেক কথা বলবে।

তুই কিন্তু কিছু বলবি না। পীড়াপীড়ি করলেও বলবি না। অগত্যা না পারলে, বলবিÑ যা বলার তোর দুলাভাই বলবে। বোকা ছেলেও তার মার কথা মন দিয়ে শুনেছে। এরপর বরযাত্রী নিয়ে রওনা দেয় কনের বাড়ি।

সেখানে গিয়ে সবাই হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দ উৎসবে মত্ত। সবাই সিদ্ধান্ত নেয় খাওয়া পর্ব শেষে পড়ানো হবে বিয়ে। সে অনুযায়ী খাওয়া-দাওয়ায় ব্যস্ত সবাই। বরকেও খাওয়ানো হলো। এরপর এলেন কাজী আর মৌলভী।

বরের কাছে গিয়ে বললেন, বাবা এখন আমরা বিয়ে পড়াবো। নীরব গোটা এলাকা। মৌলভী বলতে লাগলেন, অমুকের মেয়ে অমুকের সঙ্গে এত লাখ টাকার দেনমোহরে আপনার সঙ্গে বিবাহ দিচ্ছি। আপনি বলুন কবুল। বর কোন কথা বলে না।

অনেকক্ষণ পর মৌলভী বলছেন, বাবা তাড়াতাড়ি বলুন। না! ছেলে কোন কথা বলছে না। এ অবস্থায় ছেলের স্বজনরা এগিয়ে আসে। তাড়াও পীড়াপীড়ি করছে। না, কোন অবস্থাতেই কাজ হচ্ছে না।

এবার মৌলভী ফের বলতে থাকেন- অমুকের মেয়ে অমুকের সঙ্গে এত লাখ টাকা দেনমোহরে আপনার সঙ্গে বিবাহ দিচ্ছি। আপনি বলুন কবুল। এবারও ছেলে চুপ। আসলে ছেলের মাথায় কাজ করছে, মাকে সালাম করার পর মা বলেছিল অনেকেই অনেক কথা বলবে। তুই কিন্তু কোন কথা বলবি না।

আর যদি বলতেই হয়, তাহলে বলবি তোর দুলাভাই বলবে। এ কথা মনে পড়তেই বর বলে ওঠে, না না- আমি নই যা বলার আমার দুলাভাই বলবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.