আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংগ্রাম আর ঐতিহ্যের ৩৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আজ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল

আরিফুজ্জামান মামুন গনতন্ত্রকামী বাংলাদেশের মানুষের কাছে প্রাণ প্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপির আজ ৩৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। ১৯৭৮ সালের এই দিনে মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান উন্নয়ন ও সমন্বয়ের রাজনীতির মাইলফলক হিসেবে, স্বাধীনতা-পরবর্তী একদলীয় শাসন ব্যব¯’ার পরিবর্তে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যব¯’া প্রবর্তন, নৈরাজ্যকর অব¯’া থেকে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরি¯ি’তিকে শৃঙ্খলার মধ্যে ফিরিয়ে আনা, দেশের র“গ্ন অর্থনীতিতে প্রাণসঞ্চার, জাতি হিসেবে আমাদের আত্ম পরিচয়ের সঙ্কট মোচন, একটি স্বাধীন সার্বভৌম গর্বিত জাতি এবং আধুনিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ভিত্তি রচনা ও দেশ ও জাতির ঐতিহাসিক প্রয়োজনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। জন্মের মধ্যে দিয়ে এদেশের মানুষকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েই শুধু নয় স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে সুদীর্ঘ ৯ বছর ও অবৈধ মঈন-ফখরুদ্দীনের বিরুদ্ধে ২বছর গনতন্ত্রের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস বিএনপির। বিএনপি ও তার নেতা-কর্মী-সমর্থকরা বহু ত্যাগ ও রক্ত বিসর্জন দিয়েছে গনতন্ত্র স্বাধীনতা আর স্বাবভৌমত্ব রক্ষায়। নেতা কর্মীরা তাই বিশ্বাস করে চোখের জল আর রক্ত কখনোই বৃথা হবার নয়।

তাই দেশের স্বাধীনতা সার্বভোমত্ব উন্নয়ন অগ্রগতি আর গণতন্ত্রের জন্য বিএনপি অবদান ঐতিহাসিক। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাংলাদেশে ৪ দফায় সরকারী দল, ২ দফায় প্রধান বিরোধী দল এবং স্বৈরাচার বিরোধী ও গনতন্ত্রকামীদল বিএনপি। ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর থেকে সুদীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষের জাতীয় ঐক্য, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পারস্পরিক সহযোগীতায় বিএনপি কাজ করে দেশের মানুষের মাঝে বিশ্বস্ততা ও নির্ভরশীলতা তৈরী করেছে। জাতীয় ঐক্য রক্ষায় বাঙ্গালী-পাহাড়ী-সকল ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীকে ভেদাভেদ ভেঙ্গে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে এক করার পাশাপাশি আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্রে বিশ্বময় পরিচয়ের কারিগরও বিএনপি।

বিএনপি গঠনের ইতিহাস: ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকসেনারা যখন পূর্ব পাকি¯’ানের নিরিহ সাধারন মানুষের ওপর পশুর মতো ঝাপিয়ে পড়ে এবং হত্যাযজ্ঞে লিপ্ত হয়, ঠিক তখন চট্টগ্রামে সময়ের সাহসী সন্তান মেজর জিয়াউর রহমান দেশের মানুষের জন্য ঘোষনা করেন তৎকালীন ৭ কোটি মানুষের কাঙ্খিত স্বাধীনতার ঘোষনা। এরপর সেই জিয়াউর রহমান ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেন সেক্টর কমান্ডার হয়ে, জেড ফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে। যুদ্ধে বীরত্ব, সাহসীকতা ও নেতৃত্বের জন্য জিয়াউর রহমানকে বীর উত্তম পদকে ভূষিত করে স্বাধীন বাংলাদেশের শেখ মুজিব সরকার। এরপর দেশে দূর্ভিক্ষ দেখা দেয় ও হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। শেখ মুজিবের রক্ষীবাহিনী এদেশের নিরিহ ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের হত্যা করতে থাকে।

এবার বাংলাদেশের তৎকালিন নেতা শেখ মুজিবর রহমান ১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগসহ সকল রাজনৈতিকদল নিষিদ্ধ করে বাকশাল কায়েম করে। দেশে গনতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা রোধ করে, রাষ্ট্রীয় ব্যব¯’ায় মাত্র ৪টি পত্রিকা রেখে সকল পত্রিকা বন্ধ করে, একদলীয় শাসন ব্যব¯’া চালু করা করা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট তৎকালিন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব নির্মমভাবে সেনাসদস্যদের হাতে নিহত হবার পরে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে আওয়ামী লীগের নেতা খোন্দকার মুস্তাক আহমেদ। যখন আধিপত্যবাদী শক্তি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব খর্ব করতে তৎপর, যখন দেশের তৎকালীন ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী স্বাধীনতা-উত্তর তাদের ক্ষমতাকে চির¯’ায়ী করার জন্য গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় কর্তৃত্বমূলক শাসন জারি করে মানুষের বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়, যখন হত্যা ও খুন রাজনীতির জাতীয় জীবনের অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়, মানুষের জীবন ও নিরাপত্তা যখন চরমভাবে বিপন্ন ঠিক সেই অরাজককালে সিপাহী-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের ফলশ্রুতিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে আবির্ভূত হন অবিসংবাদিত জাতীয়তাবাদী নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। অর্জিত স্বাধীনতাকে আর কেউ যাতে বিপন্ন করতে না পারে, গণতান্ত্রিক ব্যব¯’াকে কোনো অপশক্তি ধ্বংস করতে না পারে সেই দৃঢ় প্রত্যয় নিয়েই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সৃষ্টি করেছিলেন।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপির আবির্ভাব গণতন্ত্রের জন্য একটি শুভ ঘটনা। রাজনৈতিক নেতাদের নেতৃত্বদানের অযোগ্যতায় ও নানা পট-পরিবর্তনে সিপাহী-জনতার একতায় সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের উপর দেশ শাসনের দায়িত্বভার অর্পিত হয়। ১৯৭৮ সালের জুনে প্রত্যক্ষ নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন শহীদ জিয়াউর রহমান। এবং আবারো শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ফিরিয়ে দেন গনতন্ত্র, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক মুক্তি, জাতীয় ঐক্য। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে জিয়াউর রহমানের অনুপ্রেরণায় গঠিত হয় জাতীয়তাবাদী গনতান্ত্রিক দল (জাগদল)।

পরে আরো কয়েকটি দলের সম্বন্বয়ে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে বিভিন্ন দলের মোর্চা ও ফ্রন্ট এক করে একক রাজনৈতিক দল হিসেবে ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর জিয়াউর রহমান গড়ে তোলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় প্রাচীন দলের পর বিএনপির মতো আরেকটি বড় দল রাজনীতিতে আসায় দেশে গণতান্ত্রিক ধারা বিকশিত হয়েছে। বিএনপি প্রতিষ্ঠিত না হলে গণতান্ত্রিক রাজনীতি বাধাগ্রস্ত হতো। দেশ একদলীয় শাসন কিংবা স্বৈরাচারী শাসন থেকে বেরিয়ে আসতে পারত না।

বিএনপির ঘোষনাপত্র: প্রায় ২৮টি বিষয়কে জাতীয় উন্নয়ন অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য নির্ধারণ করে বিএনপি তার ঘোষনাপত্র আজ থেকে ৩৪বছর আগে নির্ধারন করে যা আমাদের ধারাবাহিক উন্নয়নে ঐতিহাসিকভাবে গুরুবহ। ১. বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে অনুপ্রানিত ও সংহত ইস্পাত কাঠন ঐক্য ২. উৎপাদনের রাজনীতি ৩. জনগনের গনতন্ত্র ও রাজনীতি ৪. রাষ্ট্রের ¯ি’তিশীলতা ৫. সামাজিক অন্যায় ও বৈষম্যের দূরিকরন ৬. সার্বভোমত্ব, সামাজিক ন্যায় বিচার ও দ্রুত উন্নয়ন ৭. মৌলিক অধিকার, বিচার বিভাগ ও আইনের শাসন ৮. বিলুপ্ত মানবিক মূল্যবোধের পুনরুজ্জীবন ৯. ¯’ানীয় এলাকা সরকার ও বিকেন্দ্রীভূত রাজনৈতিক ক্ষমতা ১০. সামাজিক ন্যায় বিচারের অর্থনীতি ১১. জনসম্পদের সার্বিক উন্নয়ন ও সদ্বব্যবহার ১২. নারীর সার্বিক মুক্তি ও প্রগতি ১৩. জাতিগঠন সমাজসেবা ও যুবশক্তির ব্যবহার ১৪. পল্লী উন্নয়ন ১৫. গণমুখী কৃষিনীতি ১৬. সমবায় ভিত্তিতে জাতীয় উন্নয়ন ১৭. সৃজনশীল, উৎপাদনমুখী এবং গনতান্ত্রিক শ্রমনীতি ১৮. জীবনমান উন্নয়ন ভিত্তিক স্বা¯’্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম ১৯. গনমুখী ও জীবননির্ভর শিক্ষা কার্যক্রম ২০. উন্নত যোগাযোগ ব্যব¯’া ২১. প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্বব্যবহার ২২. অনুন্নত এলকা ও জনগোষ্ঠির উন্নয়ন ২৩. সার্বভৌমত্ব সুনিশ্চিত রক্ষাকবচ হবে সশস্ত্রবাহিনী ২৪. জাতীয় প্রগতি ও সমৃদ্ধি অর্জনে মুক্তিযোদ্ধা ২৫. বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সংরক্ষণ উন্নয়ন ও প্রসার ২৬. বাংলাদেশী সাহিত্য সংস্কৃতি ও ক্রীড়ার বিকাশ ২৭. ধর্মীয় শিক্ষা ২৮. জাতীয় পররাষ্ট্রনীতি হবে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সমৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক প্রীতি ও সখ্যতা। ১৯৭৯ ফেব্রুয়ারী সাধারন নির্বাচন: বিএনপি ৩০০ আসনের মধ্যে ২২০টি আসন লাভ করে। সাধারন নির্বাচনের পর দেশ থেকে সামরিক আইন ও জরুরী অব¯’া প্রত্যাহার করা হয়। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ১৯দফা কর্মসূচী ঘোষনা করে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের ডাক দেন।

১৯৮১ সালের ৩০মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সুবহা সাদিকের সময় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কুচক্রী সেনাসদস্য কতৃর্ক শহীদ হন। ১৯৮২, ৩ জানুয়ারী: ১৯৮২ সালে ৩ জানুয়ারী একজন সাধারন গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে আসেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৮২ সালের ৮ জানুয়ারী সংবাদপত্রে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি শোসনহীন, দুর্নীতিমুক্ত, আতœনির্ভশীল দেশ গঠনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠন করেছিলেন। বিগত কিছু কাল যাবৎ আমি বিএনপি কার্যক্রম গভীরভাবে লক্ষ্য করেছি। দলের ঐক্য ও সংহতি বিপন্ন হতে পারে, এমন মনে করে আমাকে দলের দায়িত্ব নেবার অনুরোধ করা হয়েছে।

তাই দলের বৃহত্তর স্বার্থে বিএনপিতে যোগ দিয়েছি ও দলের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হয়েছি। দেশ ও জাতির স্বার্থে এবং শহীদ জিয়ার গড়া দলে ঐক্য ও সংহতির স্বার্থে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাওয়া আমার লক্ষ্য। ’ ১৯৮৩, ১লা এপ্রিল: এই দিনে বিএনপির বর্ধিত সাধারন সভা থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে বিএনপির ভাইসচেয়ারম্যান পদে আসীন করা হয়। আগষ্ট ১৯৮৪: বেগম খালেদা জিয়া বিনা প্রতিদন্দ্বিতায় চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন এবং বিএনপিতে নতুন প্রাণের সৃষ্টি হয়। নেতা-কর্মীরা নতুন আশার আলোয় আবারো রাজপথে নেমে আসে।

এরপর বেগম খালেদা জিয়ার ওপর নানাবিধ হুমকি আসতে থাকে, চক্রান্ত চলতে থাকে তাকে ব্যর্থ করে দেবার। কিš‘ অকুতোভয়, সাহসী, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও গনতন্ত্রের পথে পথ চলতে আপোসহীন ভূমিকা নিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৮৬ সাধারন নির্বাচন: বিএনপি ১৯৮৬ সালের সাধারন নির্বাচন বয়কট করে। এ নির্বাচন আওয়ামী লীগেরও বয়কট করার কথা থাকলেও আওয়ামী লীগ এ প্রহসণের নির্বাচনে অংশ নেয় ও জাতীয় বেঈমান খেতাব প্রাপ্ত হয়। ১৯৯০ স্বৈরাচারের পতন: এরপর আরো ৫ বছর স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে একলা পথ চলেন বেগম খালেদা জিয়া।

এ সময়ে আন্দোলন করে অসহনীয় জুলুম নির্যাতন সহ্য করেন এবং ‘গণআন্দোলন’ সংগঠিত করেন। ১৯৯০ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের ডাকে দেশের মানুষ রাজপথে নেমে আসে। ফলে এরশাদ ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়। বেগম খালেদা জিয়ার গনআন্দোলন সফল হয়। ফিরে আসে গনতন্ত্র।

বেগম জিয়ার আপোসহীন নেতৃত্বের কারণে দেশবাসীর মাঝে ব্যাপক তার জনপ্রিয়তা তৈরী হয় এবং ‘দেশনেত্রী’ অ্যাখ্যায়িত হন। ১৯৯১ সাধারন নির্বাচন: বেগম খালেদা জিয়া আপোষহীন নেতৃত্বে গনতন্ত্রের বিজয়ে ফলে এ সাধারন নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে একক ভাবে সরকার গঠন করে ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। কিš‘ তৎকালিন বিরোধী দলের নেত্রী শেখ হাসিনা সরকারকে একদিনও শান্তিতে থাকতে দেবে না বলে সংসদে সরকারকে হুশিয়ারী দিয়ে সরকারের মেয়াদের ৫ বছরে শতাধিক হরতাল ও অসহযোগের মাধ্যমে নৈরাজ্য ও অ¯ি’তিশীলতার সৃষ্টি করে। ১৫ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৬ সাধারন নির্বাচন: সংবিধান রক্ষার জন্য ১৯৯৬ সালে বিএনপি নির্বাচন হয়। সংবিধানে সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সংবিধানে সংযুক্ত করতে এবং সাধারন নির্বাচন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করতেই ১৯৯৬ সালের নির্বাচন করা হয়।

এ নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ ছিল শুধু সংবিধান পরিবর্তন করে তত্ত্ববধায়ক সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করা। ১২জুন ১৯৯৬, সাধারন নির্বাচন: প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি দেশবাসীর সেবা করার সুযোগ পায়। বিরোধী দল হয়েও সরকারকে সর্বাতœক সহযোগিতা করে বিএনপি মানুষের কাছে আবারো নতুন পথের সন্ধান দেয়। ১লা অক্টোবর ২০০১, সাধারন নির্বাচন: নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিএনপি ৩য় বারের মতো বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে নির্বাচিত হয় এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ৩য় বারের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ১লা নভেম্বর ২০০৬: বিএনপি সরকার ২৮ অক্টোবর মেয়াদ শেষে ক্ষমতা ছেড়ে দিলে প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠার সন্ত্রাসের নৈরাজ্য ও মানুষ হত্যায় সামরিক বাহিনী সমর্থিত মঈন-ফখরুদ্দীনের অবৈধ সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে।

বিএনপিকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি ষড়যন্ত্র হয়েছিল এই অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদ্দেশ্য ছিল বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। এজন্য তারা দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে। আটক করে তার দুই ছেলেকে। গ্রেফতার থেকে বাদ যায়নি দলের সিনিয়র নেতারাও।

তারা বিএনপিকে দুইভাগে বিভক্ত করে সংস্কার ইস্যুকে কেন্দ্র করে। দল প্রায় দু ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। দীর্ঘ এক বছর কারাভোগের পর মুক্তি পেয়ে আবারও দলকে সুসংগঠিত করে তোলেন বেগম খালেদা জিয়া। দলের প্রতিটি নেতাকর্মীর প্রত্যয়দীপ্ত বলিষ্ঠ প্রতিরোধের মুখে ও গনতন্ত্রের আপোষহীন নেত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সুদৃঢ় নেতৃত্ব ও জাতীয়তাবাদী শক্তির কাছে নতজানু হয়ে তারা পরিশেষে সাধারন নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। ২৯ডিসেমবর ২০০৯, সাধারন নির্বাচন: দীর্ঘ ২ বছর সামরিক বাহিনীর সমর্থিত অবৈধ সরকারের অধীনে কারচুপির সাধারন নির্বাচনে গনতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে মেনে নিতে বিএনপি বিরোধী দলের আসনে বসে।

বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিরোধ, নিরাপত্তাসহ প্রায় ১৩টি জনদাবি আদায়, জাতীয় স্বার্থ বিরোধী চুক্তি ও সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির প্রতিবাদ, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমন নীতি, হত্যা, সন্ত্রাস, গুম, মামলা, হামলার প্রতিবাদে এবং সরকারের স্বৈরাচারী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সংসদ থেকে রাজপথে নেমেছে বিএনপি। এ বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এমন সময় এল যখন বাংলাদেশের দুর্দিন। একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে এর অস্তিত্ব নানামুখী ষড়যন্ত্র ও হুমকির সম্মুখীন। যখন পুরো দেশ ও জাতি এক চরম হতাশায় নিমজ্জিত, দিশেহারা, চরম সংকটে পতিত। একটি বিপজ্জনক আধিপত্যবাদী শক্তি যে দেশের প্রতিবেশী এবং একটি এককেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যব¯’ার কবলে যে দেশ নিপতিত, সেই দেশের সার্বভৌম অস্তিত্ব রক্ষা এবং জনগণের ন্যায্য গণতান্ত্রিক অধিকার সংরক্ষণ এক মরণপণ সংগ্রামের ব্যাপার।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সব নেতা ও কর্মীকে কঠিন এই ঐতিহাসিক দায়িত্বের গুর“ত্ব উপলব্ধি করতে হবে, যখন দল ও দেশের সম্ভাবনাময় নেতা জিয়া পরিবারের কনিষ্ঠ পুত্র তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কার্যত বন্দী করে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ছাড়া দেশে এমন আর কোনো রাজনৈতিক শক্তি নেই জাতির এই চরম দুর্দিনে জাতিকে পথ দেখাতে পারে। তারপরেও দেশের আপামর জনসাধারণ মনে করেন, ভারতীয় তাঁবেদার এই শাসকগোষ্ঠীর শৃংখল ভেঙ্গে তারেক রহমান আবার বীরের বেশে দেশে ফিরে এসে তার আপসহীন মায়ের সাথে মুক্তির আন্দোলনে শরিক হবেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নয়াপল্টন¯’ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ ভোর ৬ টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং একইভাবে দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়গুলোতেও জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। এছাড়া বিএনপি’র ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একইদিন সকাল ১০ টায় বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ দোয়া ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

দেশব্যাপী বিএনপি’র জেলা, মহানগর, উপজেলা ও বিভিন্ন ইউনিটগুলো স্ব স্ব উদ্যোগে বিএনপি’র ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী যথাযথভাবে পালন করবে। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপি এবং এর সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীকে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন এবং যথাসময়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে উপ¯ি’ত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এদিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি গতকাল ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বিএনপি চেয়ারপার্সনের বাণী দলের প্রতিষ্টাতা চেয়ারম্যান মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে ও তাঁর র“হের মাগফিরাত কামনা করে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া তাঁর বাণীতে বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্টা বার্ষিকীর এই দিনে আমি দেশে বিদেশে অব¯’ানরত সকল সদস্য, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশবাসী সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভে”ছা ও অভিনন্দন। তিনি বলেন, বিএনপি প্রতিষ্টার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে কিংবা প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের হাতে যে সকল নেতা-কর্মী শহীদ হয়েছেন এবং যারা স্বাভাবিক মৃত্যু বরন করেছেন তাদের র“হের মাগফিরাত কামনা করি।

বাণীতে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, দেশের এক ক্রান্তিকালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠা হয়। যখন আধিপত্যবাদী শক্তি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব খর্ব করতে তৎপর, যখন দেশের তৎকালীন ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী স্বাধীনতাত্তোর তাদের ক্ষমতাকে চির¯’ায়ী করার জন্য গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় কর্তৃত্বমূলক শাসন জারি করে মানুষের বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়, যখন হত্যা ও খুন রাজনীতির জাতীয় জীবনের অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়, মানুষের জীবন ও নিরাপত্তা যখন চরমভাবে বিপন্ন ঠিক সেই অরাজক কালে সিপাহী জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের ফলশ্র“তিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে আবির্ভূত হন অবিসংবাদিত জাতীয়তাবাদী নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। অর্জিত স্বাধীনতাকে আর কেউ যাতে বিপন্ন করতে না পারে, গণতান্ত্রিক ব্যব¯’াকে কোন অপশক্তি ধ্বংস করতে না পারে সেই দৃঢ়প্রত্যয় নিয়েই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর শাসনামলে সামাজিক সুবিচার ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কারনে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি আন্তর্জাতিক মর্যাদা লাভ করে। তিনি বিএনপিকে গণতন্ত্র, উন্নয়ন, উৎপাদন ও জাতীয় স্বার্থরক্ষার উপযুক্ত করে গড়ে তোলেন।

তিনি বলেন, আজ দেশে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে। দেশবিরোধী নানা চুক্তি ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বর্তমান সরকার জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে চলেছে। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরি¯ি’তি ভয়াবহ র“প ধারণ করেছে। বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানি নিয়ে হাহাকার। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ^াস উঠেছে।

দেশজুড়ে চলছে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, নিপীড়ন, নির্যাতনের মহোৎসব। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত করে নির্লজ্জ দলীয়করণের মাধ্যমে নিপীড়িত জনমানুষের আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথও র“দ্ধ। প্রশাসন হয়ে পড়েছে ¯’বির। এই শ্বাসর“দ্ধকর পরি¯ি’তিতে বিএনপি হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না। জনগণের অধিকার আদায়ে, তাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে এবং দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য বিএনপি আবারও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়বে বলে আমার বিশ্বাস।

দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী এবং দেশবাসীকে আন্দোলন সংগ্রামের জন্য প্র¯‘ত থাকতে হবে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার যে নীল নকশা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে তাকে প্রতিহত করতে সবাইকে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে। তিনি আজকের এই শুভ দিনে সেই দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহনের জন্য আমি সকলের প্রতি আহবান জানান বিএনপি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের বাণী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখর“ল ইসলাম তাঁর বাণীতে বলেন, আজ থেকে ৩৩ বছর আগে দেশের এক চরম ক্রান্তিকালে মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, বিশ্বনন্দিত নেতা, সার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এদেশের মানুষকে অপরাজনীতির করাল গ্রাস থেকে রক্ষার জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি দেশ, দেশের মানুষের উন্নয়ন, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে যা”েছ। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন, মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষায় বিএনপি’র ভূমিকা অনস্বীকার্য।

মির্জা ফখর“ল ইসলাম আলমগীর বিএনপি’র ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই মহান দিনে দলের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের প্রতি দলকে আরো গতিশীল করার ক্ষেত্রে নিরলস কাজ করার জন্য প্র¯‘ত থাকার আহবান জানান। তিনি দেশের যেকোন ক্রান্তিলগ্নে দলের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থেকে অন্যায় ও জুলুমের বির“দ্ধে র“খে দাঁড়ানোর প্রতি গুর“ত্বারোপ করেন। তিনি তাঁর বাণীতে দেশবাসীকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র প্রতি আ¯’াশীল থাকার জন্য উদ্ধাত্ত আহবান জানান। তিনি বিএনপি’র প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত যেসকল নেতা-কর্মী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন এবং যেসমস্ত নেতা-কর্মী স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের সকলের র“হের মাগফিরাত কামনা করেন। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.