আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দার্জিলিং ভ্রমণ/ পর্ব-০৪ ( শেষ পর্ব)

মিরিখ থেকে আমরা যাত্রা শুরু করলাম শিলিগুড়ির দিকে। একটু মন খারাপ লাগছে, কারণ শিলিগুড়িতে আর তো কিছু দেখার নাই। এবারে যাত্রাপথে পাহাড়ী নদীর আঁকাবাঁকা চলা দেখলাম, বেশ সুন্দর। পাহাড়ে হলুদ চাষ হয়, আদা চাষ হয়, সেগুলোও দেখলাম। ড্রাইভার বার বার হিন্দীতে আপন মনে বলছে, “ ফেরার পথে রাত হয়ে যাবে, কাউকে পেলে বিনা পয়সায় দার্জিলিং এ নিয়ে যাব” ।

এই একটা ব্যাপার, আগেরদিন এর ড্রাইভার ও একটা বৌদ্ধ মন্দির ( পরিত্যক্ত সম্ভবত) দেখিয়ে বলেছিল, ওটা Haunted. তবে দার্জিলিং এ যাওয়ার পথ আর দার্জিলিং থেকে মিরিখ হয়ে ফেরার পথ যেটাই হোক, যেরকম ঘন জংগল আর পাহাড়, তাতে আমি বিশ্বাস করি অবশ্যই এইসব জায়গাতে ভয়ের ( ভৌতিক) অনেক কিছুই আছে। ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম, “ এরকম কিছু আছে নাকি?” সে কৌশলে এড়িয়ে গেল,তবে কিছুক্ষণ পরে আবারও বলতে থাকল, “ফেরার পথে কাউকে পাওয়া যাবে নিশ্চয়ই, গল্প করতে করতে যাওয়া যাবে। “ আমরা নেমে এলাম ভূমিতে। এখানে একটা ক্যান্টন মেন্ট আছে, বেশ বড় আর সুন্দর। ক্যান্টন মেন্ট এর ভিতর দিয়েই রাস্তা , আবার মাঝে মাঝে সমতল চা বাগান ( সম্ভবত, ঠিক মনে নাই)।

পিছন ফিরে বার বার দেখছিলাম পাহাড়কে, খারাপ লাগছিল। কে বলবে, ঐ পাহাড়ে এত কিছু আছে, আছে ৫ তারকা হোটেল, দারুণ দারুণ সব স্কুল, গাড়ির শো-রুম ইত্যাদি। পাহাড়টা আসলে কত উঁচু তাই তো বোঝা যায়না। মেঘ এসে ঢেকে দেয়। গাড়ি এসে দাঁড়াল হোটেল সেন্ট্রাল প্লাজাতে।

আসলে এটাই হচ্ছে দার্জিলিং এ যাত্রা করার জন্য বা ভূটাণ এবং সিকিম যাওয়ার জন্য Key Point. দার্জিলিং সোজা চলে যেতে হয়, আর ভূটাণ এবং সিকিম যেতে হয় ডান এ। অদ্ভুত এক অনুভূতি হয় এই সাইন গুলো দেখলে। মনে হয়, আরে ডানে গেলেই আরেকটা দেশ!! তবে রাস্তা নাকি বেশ খারাপ শুনলাম মানুষ জনের কাছ থেকে। ড্রাইভারকে ভাড়া মিটিয়ে দিলাম। সে আমাদের মালপত্র সব নামাল নিজেই জিপের ছাদ এর থেকে যেগুলো বাঁধা ছিল।

এসময় আবার বৃষ্টি নামল। ড্রাইভারকে টিপস্‌ দিতে চাইলাম, একটু দেরি হচ্ছিল কারণ ভাংতি ছিল না, ড্রাইভার এর তাড়া হল সে ফিরবে দিনের আলো থাকতে থাকতেই। সে বলল, টিপস্‌ লাগবে না, আমি যাই......ঃ) এবারে আমরা আবারও সেন্ট্রাল প্লাজাতে খেয়ে নিলাম। খাবার দারুণ লাগল এবারও। আপনারা যারা যাবেন, তারা অবশ্যই এখানকার খাবার খাবেন, ভাল লাগবে আশা করি।

একটু expensive, তাও। ওদের কোন রুম খালি নাই, থাকলেও নিতাম না, কারণ একরাত থাকব মাত্র। তবে মজার কথা হল। বেশির ভাগ রুমই নাকি বাংলাদেশিদের বুক করা। হোটেল ঠিক করতে বেশ একটু বেগ পাওয়া লাগলো।

সেন্ট্রাল প্লাজা থেকে সামান্য দূরে একটা হোটেল পেলাম ( আসলে বোর্ডিং টাইপের, কিন্তু বেশ পরিচ্ছন্ন) আমাদের বাজেটের মধ্যেই। এখানে এরকম প্রচুর হোটেল পাবেন মানসম্মত। কাল দুপুর দুই টায় শ্যামলী থেকে আমাদের বাস ছাড়ার কথা । আমাদের সৌভাগ্য আমরা টিকেট পেয়ে গিয়েছি। so আমাদের হাতে সময় আছে আজকের পুরো সন্ধ্যা আর কালকের দুপুর ১ টা পর্যন্ত।

শিলিগুড়িতে কিছু ভালো shopping mall আছে। আমরা ওগুলো তে যাওয়ার প্ল্যান করলাম। আরেকটা মার্কেট আছে নাম- বিধান মার্কেট ওটা হল মেয়েদের সালয়ার কামিজ এর ডিপো। এ অবস্থায় আমরা আমদের গ্রুপ থেকে কিছুটা আলাদা আছি কারন ওদের কোন return টিকেট ওরা manage করতে পারে নাই। তাই ওদের যাওয়ার টাইম কিছুটা uncertain. এছাড়া ওরা ওদের মতো shopping করবে আর আমরা আমাদের মতো।

তাই আমরা হোটেল এ ঢুকে কিছুটা fresh হয়ে রাত করে বের হলাম টুকটাক কেনাকাটা করতে। বিধান মার্কেট এ ঢুকে আমার বউ বেশ লম্বা সময় পার করে দিলো ( এটা তো হবেই...। ) হোটেল এ যখন ফিরলাম তখন প্রায় রাত ১১ টার মতো বাজে। Central Plaza এর পাশেই আমাদের হোটেল টা ছিলও বলে চট করে রাতের খাওয়াটা সেরে নিলাম সেই সেন্ট্রাল প্লাজাতে গিয়ে। ঐ রেস্টুরেন্ট এর ম্যানেজার ছেলেটা ( নাম হল Satyam Pai- নিজেই কার্ড দিল) আবার ভূটানি, আমি আবার বেশ খাতির করে ফেললাম তার সাথে।

সে দেখলাম বাংলাদেশ এর ব্যাপারে ব্যাপক আগ্রহী। ঢাকার কথা অনেক শুনেছে সে। বেড়াতে আসতে চায়, বাংলাতেই বলল-ঢাকাতেও নাকি অনেক পাহাড় আছে? আমি হেসে বললাম, না আমরা সমতলের মানুষ। মনে মনে বললাম, পাহাড় না থাকলেও রাস্তাঘাট যেভাবে কাটা আর অসমান, তাতে মনেই হতে পারে পাহাড় কেটে আমরা ঢাকাকে সমান করছি ঃ)। শিলিগুড়ির রাস্তাতে রিকসা থেকে তোলা ছবি, ঐ দূরে পাহাড় দেখা যাচ্ছে, ওখানেই দার্জিলিং পরদিন দুপুর পর্যন্ত হাতে সময় আছে বলেই সকালে উঠে আগে ব্যাগ-পত্র সব গুছিয়ে রাখলাম।

নাস্তা করে ১০ টার দিকে বের হলাম আবার shopping এ। টুক টাক ভালই কেনাকাটা করে ( ভারতীয় কিছু কসমেটিকস, পান মসলা, চকলেট, চিপস্‌ ইত্যাদি-এগুলো সব বিধান মার্কেট এ পাবেন) দুপুরের lunch ( সেন্ট্রাল প্লাজা) সেরে উঠে পড়লাম বাস এ। সন্ধ্যার মধ্যে customs এর processing শেষ করে আমরা border cross করে চলে আসলাম নিজের দেশে। বুড়িমারী সীমন্তে এবার ঘণ্টা দুয়েকের অপেক্ষার পালা। নামল বৃষ্টি।

সে যে কি বৃষ্টি। বাস ছাড়তে ছাড়তে রাত ১০ টা। শ্যামলীর বাস ছাড়ল। আমরা উঠে পড়লাম আমাদের চিরচেনা শহর ঢাকার উদ্দেশ্যে। এবারে আমি খরচ এর একটা ধারণা দিচ্ছি আপনাদের।

যে যে খাতে খরচ হয়- তা হল ভিসা ফি বাস টিকেট ( রিটার্ন সহ) জনপ্রতি ৩০০০ টাকা সর্বোচ্চ ( এটা সিজন ভেদে উঠানামা করে) দার্জিলিং এ হোটেল ভাড়া মোটামুটি মানের ৮০০-১২০০ রুপি ( প্রতি রাত-ব্রেকফাস্ট ছাড়া) প্রতিবেলার নাস্তা ১০০-১২০ রুপি ( দুইজন) প্রতিবেলার খাবার ২৫০-৪০০ রুপি ( খুব ভাল খেলে) দুইজন রাতের খাবার একই সাইট ঘোরা , গাড়ি ভাড়া দৈনিক ৮০০-১০০০ রুপি ( গাড়ি ভেদে) শিলিগুড়িতে থাকলে হোটেল ভাড়া ৫০০-৬০০ রুপি নন্‌ এসি ( মোটামুটি মানের )-শিলিগুড়িতে কিন্তু বেশ গরম নাস্তা ও খাবার একই তবে নাস্তা ও খাবার এর থেকে কমেও পেতে পারেন, এটা তো যারা যার ইচ্ছার ব্যাপার মোটামুটি ৩০,০০০ টাকাতে দুইজনের ভাল ভাবে হয়ে যাওয়ার কথা ( শপিং consider করি নাই), আরেকটু বেশি নিতে পারেন। এর সাথে যোগ করতে পারেন শপিং যা যা শপিং করবেন- মেয়েদের সালয়ার-কামিজ ( বিধান মার্কেট), ছেলেদের শার্ট-প্যান্ট এর পিস্‌ বা রেডিমেড শার্ট ( বাংলাদেশের তুলনায় দাম বেশ কম, এটাও বিধান মার্কেট এ পাবেন) , ভারতীয় কসমেটিকস ( একই দাম বাংলাদেশেও), লেইস চিপস্‌ ও চকলেট ( পানির দাম ওখানে) মুসলিম হোটেল এ খেতে চাইলে জামে মসজিদ এলাকায় যেতে পারেন, সেখানে মাংস খেতে পারবেন। আর যদি আমাদের মতো সবজি আর মাছ খেতে পারেন, তাহলে সেন্ট্রাল প্লাজা বা অন্য কোন হোটেল। ওখানকার বাটার জুতার ডিজাইন গুলো আমাদের দেশে পাওয়া যায় না, পছন্দ হলে কিনতে পারেন। আর দার্জিলিং থেকে কিনতে পারেন শাল এবং সোয়েটার।

সবাই তার শালকে কাশ্মিরী বলবে। অবশ্যই দামাদামী করবেন। দার্জিলিং এ একটা বিশাল বিগ্‌ বাজারও আছে , সেই সাথে আছে সিনেমা হল। সিনেমাও দেখতে পারেন আর করতে পারেন কেনাকাটা। চকলেট এ অনেক অফার থাকে ওদের।

আরও কয়েকটি গুরত্বপূর্ণ টিপস্‌- ১। ভিসা অবশ্যই এক মাসের জন্য করবেন। আমি ৭ দিন থাকব বলায় আমাকে ৭ দিনের ভিসা দিয়েছিল!!!!!! ২। প্রয়োজনীয় শীতের কাপড় নিবেন, কারণ দার্জিলিং এ গেলে বুঝবেন কেমন শীত ৩। ছাতা , রেইন কোট , টর্চ , ঔষধ নিবেন ৪।

ভারতীয় একটা সিমকার্ড কিনে নিবেন গিয়েই ৫। একটু ক্যাজুয়াল পোষাক নেয়া ভাল ৬। দার্জিলিং কে গোর্খারা গোর্খা ল্যান্ড বলে। কোন ভাবে ওদের অপমান করে কোন কথা বলবেন না। স্থানীয়দের শ্রদ্ধা করে চলবেন।

এমনিতে ওরা খুবই ভদ্র। ৭। গাড়ি ঠিক করার আগে বুঝে নেবেন ড্রাইভার ভাল রাস্তা চেনে কিনা। ড্রাইভারকে বেশি বিরক্ত করবেন না, ভাল আচরণ করবেন। ৮।

ভারতের যেকোন হোটেল পাসপোর্ট এর জেরক্স কপি ( ফটোকপি) দিতে হয়, তাই আগে থেকেই ফটোকপি করে নিয়ে যেতে পারেন ৯। বর্ডার এ অনেক দালাল আছে, সাবধান। শুধু শ্যামলীর মনোনিত লোকের সাথে কথা বলবেন, ওরাই সাহায্য করবে যাওয়ার উপায় অনেকে জানতে চেয়েছেন। যদিও লেখাটা তে বলা আছে,তাই আমি সংক্ষেপে আবারও বলছি। প্রথমে তো ভিসা করলেন, শ্যামলীর টিকেট কিনলেন ( অবশ্যই রিটার্ণ টাও কেটে নিবেন অথবা শিলিগুড়ি নেমেই কিনে নেবেন) ।

শ্যামলী আপনাকে নিয়ে যাবে বুড়িমারীতে। তারপর ভারতেও ওদের বাস থাকবে। সেখান থেকে যাবেন শিলিগুড়ি হোটেল সেন্ট্রাল প্লাজা। তারপর আপনার নিজ ব্যবস্থায় দার্জিলিং। ফেরাটা আমি লেখায় বলেছি।

আশা করি এই লেখাটা যা কয়েক পর্বে দিলাম, আপনাদের উপকারে আসবে। সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৭৬ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।