আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বকসিস

ভালো থাকতে চাই..। যা কিছু ভালো সেদিকে সবাইকে আহবান.। দুইটা পরোটা আর ডাল-ভাজি। এটা আমার প্রিয় নাস্তা। অবশ্য নাস্তাটা যখন হোটেলে করা লাগে তখন।

অফিসের গলির মুখের হোটেলটায়ই বেশি নাস্তা করা হয় । সকাল বেলায় হোটেলটায় বেশ ভিড়। মামাদের ছুটোছুটি , পানি দেবার বালকদের বিস্তর দৌড়াদৌড়ি। ডেকেই পাওয়া যায় না। একটা পরোটা প্লেটে দিয়ে গেল তো আরেকটা তখনও উনুনে তপ্ত কড়ুইয়ের উপর খুন্তির উপর্যপুরি আঘাতে লাফাচ্ছে।

আবার কখনও ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া মেন্তা মারা পরোটাই থাকে ভাগ্যে। পরোটা যেমনি হোক ন না কেন দুই পরোটা আর ডাল-ভাজি, এই নাস্তার বিল ৩০ টাকা। হোটেলের জন্য আমি সস্তা কাস্তমার। তাই নাস্তা খাবার সময় মামাদের কোনও খোঁজ থাকে না কিন্তু বিল দেবার জন্য যখন কাউন্টারে যাওয়া হবে তখন কোত্থেকে ওয়েটার মামা হাজির। ১০০ টাকার নোট হাত থেকে একরকম কেড়ে নিয়ে ক্যাশ অফিসারকে দিয়ে বলবে , ত্রিশ টাকা রাখেন।

তার এই ঊড়ন্ত আগমনের হেতু পরিষ্কার। ৩০ টাকার বিলে কয় টাকা বকসিস দেয়া যায় সেটা আমার মাথায় খেলে না। তাই তাকে মাঝে মাঝে খুশি খুশি মুখ আবার কখনও দুখি দুখি মুখ দেখেও না দেখার ভান করে বেরিয়ে আসি। নাপিতের দোকানে চুল কাটানো আরও মজাদার। চুল অর্ধেক কাটা হওয়া থেকে শুরু হয় কানের কাছে আস্তে আস্তে ঘ্যানর ঘ্যানর।

স্যার, চুল তো পাইকা একদম সাদা হইয়ে গেছে। ভাল দামী কলপ আছে করে দেই। কেশ কালা মেন্দিও আছে , স্যার লাগায় দেই। আমি তখন নিসচুপ , একেবারে বধির যেন। (অবশ্য তাদের মিষ্টি কথায় ভুলিয়া পকেট ফাঁকা করার ঘটনা যে একাবারে নাই তা নয়...) ঘ্যানর ঘ্যানর করতে করতে চুল কাটা শেষ হয় একসময়।

যখন নরসুন্দর সাহেব দেখেন, ব্যবসা একেবারে মাঠে মারা তখন শেষ চেষ্টা করে, স্যার মাথাডা বানায় দেই, আরাম পাইবেন। আমি শুনিয়া ও না শোনার ভান কইরা উহাকে মাথাডা বানানোর হাত হইতে বঞ্চিত করিয়া , আড়মোড়া ভাঙিয়া চেয়ার হইতে দণ্ডায়মান হই। বাসার পাশের সেলুনে শুধু চুল কাটা বিল ৬০ , ক্যাশ অফিসারকে টাকা দিচ্ছি কিন্তু কেউ আরেকজন পিছন থেকে আমার হাতের দিকে মানে ক্যাশ লেনদেনের দিকে তাকিয়ে আছে। অথচ পরের কাস্টমার তার চেয়ারে বসে। যাই হোক ৬০ টাকার বিলে কয় টাকা বকসিস দেয়া যায় সেটা আমার মাথায় খেলে না।

এখানেও কোনোদিন সে খুশি আবার কোনোদিন সে ব্যাজার। সেটা অবশ্যই নির্ভর করবে আমার মেজাজ মর্জির উপর। পেপারের হকারটা নিয়মিতই পেপার দিয়ে যায় নিচে দারোয়ানের কাছে কিন্তু আমার বাসায় পেপার কখনো পৌছায় , কখনও পৌছায় না আবার কখনও বা পৌছায় আংশিক। আংশিক মানে পেপার দরজার নিচ দিয়ে এসেছে কিন্তু সাথে ‘রস-আলো’ বা ‘আনন্দ’ মিসিং। এই না পাওয়ার রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে দেখলাম ।

এটা আমাদের দুষ্টু দারোয়ান আর তার পরিবারের কৃত্তি। অবশেষে হকার ছেলেটাকে বললাম , দেখ বাপু, আমি তো পেপার ঠিকমত পাচ্ছি না। তুমি যদি উপরে এসে নিজে পেপার দিয়ে যেতে পার তাইলে দিবা নাইলে আগামী মাস থেকে খোদা হা-ফেজ। তারপর থেকে সে উপরে এসেই পেপার দিয়ে যায়। আমার পেপার মিসিং ঘটনার ইতি হয়।

মাঝখান থেকে দারোয়ান সাহেবের পরিবার আগে রস-আলো পড়ে বিনে পয়সায় একটু হাসা-হাসি করত সেটা মাঠে মারা যায়। হকার ছেলেটা যখন বিল নিতে আসে , তখন তার এই সিঁড়ি বেয়ে এক্সট্রা কষ্টের জন্য আমার একটু এক্সট্রা খাতির করতে হয় এই যা...। কিন্তু আজকে দেখি সে পেপার বিলের সাথে একদম সার্ভিস চার্জ বাবদ ২০ টাকা ধার্য করে বিল বানিয়ে নিয়ে এসেছে। কি দারুণ বুদ্ধি। বকসিসটা একটু হালাল করে নেয়া।

বুদ্ধিটা আমার পছন্দ হইছে। এসব ছোটোখাটো বকসিস আমরা খুশি হয়েই দেই। অনেক ক্ষেত্রেই দেই। সবাই জানে আর তাতে দেশের কোনও যায় আসে না। কিন্তু বড় বড় বকসিস কিছু আমরা জানি কিছু জানতে পারি না।

দেনে-ওলার স্বার্থ উদ্ধার আর পানেওলার দিল খুশ হচ্ছে কিন্তু তলে তলে দেশ জাতির বারোটা হয়ত ঠিকই বেজে যাচ্ছে ... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.