আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোটবেলার তারাবী পড়ার স্মৃতি

ছোটবেলার তারাবী নামাজের কথা খুব মনে পড়ে । এখনকার মত এত ফুলবাবু সেঝে সামনের কাতারে গিয়ে নামাজতো আর পড়তামনা ! পিচ্চি পিচ্চি শয়তানের আবির্ভাব হোত যেন মসজিদে । তারাবী নামাজের জন্য ইফতারের পর থেকেই ব্যস্ত হয়ে যেতাম , এশার আজানের সাথে সাথেই কিছু বন্ধু এসে হাজির হত আমাদের বাসায় । তখন ক্লাস ৪-৫ এই পড়ি , তাই পড়া ফাঁকি দিয়ে তারাবী পড়তে যাওয়াটা এককথায় অসাধারন লাগতো ! সব বন্ধুর হাতে থাকতো একটা করে টর্চ লাইট , সেগুলোকে সারা রাস্তায় নাড়িয়ে চাড়িয়ে তবেই পৌছতাম মসজিদে । মাঝে মাঝে টর্চগুলোর আলো সামনে থেকে আসা মানুষের মুখের ওপর ফেলতাম , বকা আর দৌড়ানিও তাই কম খাইনি ! মসজিদে গিয়ে সব গুলো পিচ্চি ওযুখানায় না গিয়ে মসজিদের পুকুরে গিয়ে ওযু করতাম ( পানি ছিটানোর ইচ্ছায় ) ।

পুকুর থেকে ওযুর বদলে প্রায় গোসল করে মসজিদের গামছায় শরীর মুছে নিতাম । দোতলা মসজিদের নিচতলায় তখনো জায়গা থাকতো , কারণ আমরা খুব তাড়াতাড়ি মসজিদে যেতাম , তবুও আমরা আস্তে আস্তে বড়দের চোখ বাচিঁয়ে সিড়ি বেয়ে উপরতলায় উঠে যেতাম । সেখানে আমাদের দুষ্টমির সাক্ষী শুধু আমাদের মত শয়তান গুলোই ! উপরতলায় দেখতাম আরো কিছু বিচ্চু বাহিনী তাদের মাঝেই গল্প করছে । মসজিদের উপরতলায় ঈমামের মাথার উপরেই একটা ফুটো থাকতো , ঐটা দিয়ে আমরা খুব কাছ থেকে ঈমামকে দেখতাম কি করছে , মাঝে মাঝে ঈমাম উপরে তাকিয়ে দেখতেন এই বাঁদর গুলোর চেহারা । আর ওমনি ঐ জায়গা থেকে পড়ি মড়ি করে দৌড় দিতাম , আর লাইড স্পিকারে শুনতাম ঈমামের গলা ( উপরে বড় কেউ থাকলে বাচ্চা গুলোকে নিচে নামান ) ।

মাঝে মাঝে বড় কেউ আসত , কিন্তু কোন লাভ হতনা , আমরা ঘুরে ফিরে উপরেই উঠে যেতাম । একটু পর নামাজ শুরু হত , এশার ফরজ নামাজটা খুব শান্ত ভাবেই পড়তাম আমরা । সমস্যা শুরু হত তারাবী নামাজের সময় থেকে , এক একটা রাকাত মনে হত এক একটা বছর , তাই ঠেলা-ঠেলি শুরু হয়ে যেত , ২ রাকাতের নামাজে আমরা কেউ ১ম রাকাতে রুকুতে যাবার আগে নিয়ত বাঁধতে পারতামনা । কেউ যদি নিয়ত বাঁধতো আর মুড নিয়ে সামনে তাকিয়ে থাকতো তাহলে বাকি সবাই তার সামনে গিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকতো , এতে করে ঐ নিয়ত বাঁধা বেচারা হাসি দিয়ে নিয়ত ভেঙ্গে ফেলত । মাঝে মাঝে নিয়ত বাঁধা বন্ধুকে সবাই ধরা ধরি করে একেবারে বারান্দায় দিয়ে আসতাম , সে ঐখানে একা একা দাড়িয়ে নামাজ পড়ত ।

আর নামাজে বন্ধুরা একসাথে দাড়ালেই কেমন জানি শুধু হাসি পেত । রুকুতে গিয়ে একেক জনের জোরে জোরে ' সুবহানা রাব্বিয়াল আযিম ' পড়া শুনলেই হাসি পেত । একেকটা হাসতে হাসতে ঐখানেই পড়ে যেত , বাকি গুলো মুখ চোখ শক্ত করে সেজদায় যেত । সেজদায় গিয়ে একেক জনের কানটানা শুরু হয়ে যেত , সবাই ওয়েট করতো কে কার আগে সেজদায় যাবে আর তাকে নাস্তানাবুদ করবে । মাঝে মাঝে সেজদা দেয়া অবস্থায় কেউ কারো পা টেনে লম্বা করে দিতো , ফলে সে ঐ অবস্থাতেই একে বারে শুয়ে যেত , রাগ করে আর উঠতনা শুয়েই থাকতো ।

আর আমরা হাসি চেপে রাখতে পারতামনা । হাসি চাপতে চাপতে পেট ব্যাথা হত । একদোস্ত সব সময় একটা ট্রাউজার পড়ে আসতো , খুব ঢোলা সেই প্যান্ট , সবাই টেনে টেনে নামিয়ে দিত , আর সেই বেচারা নিয়ত বাদ দিয়ে প্যান্ট এর দড়ি ধরে দাড়িয়ে থাকত । লম্বা সাড়ির কেউ এক পাশ থেকে ধাক্কা দিলে বাকি সব অন্য পাশে পড়ে যেত , আর যারা পান্জাবী পড়ে আসত , তাদের পিছনে এক জনের সাথে আরেক জনের পান্জাবী গিট্টু দিয়ে দিত । ধাক্কা খেকে ঐ গিট্টুর টানেই পাশের জন পড়ে যেত ।

নামাযের শেষ বৈঠকে বসে ডান হাতের তর্জনী দিয়ে আমি ইশারা করতাম , আর তাই দেখে পাশের দোস্তরা হাতের ৫ আঙ্গুল এমন ভাবে নাঁচাতো যে না হেসে উপায় থাকতনা । সালাম ফিরানোর সময় হোত আরেক মজা , দান দিকে সালাম ফিরিয়ে এক দোস্ট ওয়েট করত কখন পাশের জন বাম পাশে সালাম ফিরাবে , আর ওয়েট করা দোস্ত চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকত তার দিকে , এতেই আরেক হাসি । এমন করে করে নামাজগুলো চলত , মাঝে মাঝে কারো কারো সাথে ঝগড়াও হত , মাঝে মাঝে বড়রা এসে কান টেনে দিত । আবার কিছু দিন মসজিদের ছাদে গিয়ে তাল চুরির রেকর্ডো ছিল । কিছু কিছু পিচ্চি শয়তান এতেকাফে বসা মানুষদের খাবার চুরি করে খেয়ে ফেলত ।

নামায শেষে বাহিরে এসে দেখতাম জুতা নাই , কারোটা পাওয়া যাচ্ছে পুকুরের মাঝখানে , কারোটা ওযুখানায় , অন্য শয়তান বাহিনীর কাজ । এগুলোর প্রতিশোধো নেয়া হত পরে । আবার টর্চ নাড়িয়ে নাড়িয়ে বাসায় ফিরে আসতাম । দিন যত যায় দুষ্টমি তত কমতে থাকল , এখনো সব বন্ধুরা নামাজে যাই , কেউ কারো খোঁজ রাখিনা । পাশে দাড়ালে এখন আরো সতর্ক হয়ে নামাজ পড়ি ।

আগের সেই দুষ্টু বুদ্ধি আসেনা মাথায় । এখনো কিছু পিচ্চি মসজিদের ওপরতলায় লাফালাফি করে , চিল্লাচিল্লিতে নামাজ পড়তে পারিনা শান্তিতে , মাঝে মাঝে মনে হয় সবগুলাকে কান ধরে মসজিদ থেকে বের করে দেই । কিন্তু পরক্ষণেই আতীতের কথা মনে হয়ে এক চিলতে হাসি ঠোটের কোণে চলে আসে । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।