আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোটবেলার কথা লিখি ...

~ ভাষা হোক উন্মুক্ত ~

ছোটবেলার কথা লিখি, আজও মন ভাল নেই। আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। জানুয়ারী মাস, সবে ক্লাস শুরু হয়েছে। নতুন বই খাতা, নতুন ক্লাস, নতুন ক্লাস টিচার। একদিন কি কারণে যেন ক্লাস হচ্ছিলনা টিফিন টাইমের আগে।

স্কুল থেকে কিছু একটা টিফিন দিতো সে সময়। ছোট কিছু একটা। সেদিন ছিল লুচি আর বুটের ডাল। এমনিতে এই খাবারটা ভাল লাগে না, হাত মেখে যায় খেতে গিয়ে, সেদিন টিফিনের গামলা আসতেই উত্কট গন্ধ পেলাম। হাতে নিয়ে দেখা গেল সেগুলো পচা।

সম্ভবত ডালটা আগের দিন বানানো, নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের ক্লাশের নীচের টিচার্স কমন রুম। দপ্তরিকে দিয়ে টিচারদের জানানো হলো যে টিফিন পচা। আমাদের এসিস্ট্যান্ট হেড মাস্টার স্যার ছেলেন টিফিনের চার্যে, তার হোটেল থেকেই খাবার সাপ্লাই করা হতো। উনি উঠে এলেন নীচ থেকে, এসে বলে গেলেন যা দেয়া হয়েছে তাই খেয়ে নিতে।

আমরা চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিলাম, পাশের ক্লাশের বড় (মানে ক্লাস টেনের) ভাইদের কেউ একজন আমাদের রুমের পাশ দিয়ে যাবার সময় তার টিফিনটা ছুড়ে ফেলে দিলেন নীচে। এসস্ট্যান্ট হেডস্যার তখন নীচে দাঁড়িয়ে কিছু একটা করছিলেন, টিফিনটা সোজা তার টাক মাথায় গিয়ে ল্যান্ড করে। এমনিতে স্যার আমাদের সাথে কথা বলে গেছেন একটু আগে, আর টিফিনটা পড়েছে আমাদের এলাকা থেকেই, কাজেই স্যার রাগে মোটামুটি অন্ধ হয়ে উঠে এলেন সিড়ি বেয়ে, আমরা তখনও ক্লাসেই, ঘটনা জানি না, স্যার এসে আমাদের নয় জনকে (আমরা একটু বেশী ভাল ছেলে হিসেবে ওয়েল নোউন ছিলাম) ডায়াসের উপর দাড়া করালেন। স্যারের হাতে ছিল পাঁচটা বেত। প্রথমেই দাঁড়িয়ে ছিল দিপক নামের একটা ছেলে, স্যার ওকে বললেন, কে টিফিন আমার মাথায় ফেলেছে বল।

সে জবাব দিয়েছে জানেনা বলে, অমনি স্যার বেত দিয়ে ওকে পেটাতে লাগলেন। দিপক " ও বাবা গো …" বলে চিত্কার দিয়ে স্যারের পা জড়িয়ে ধরলো। স্যার ওকে মারতে মারতে বেত ভেঙে ফেললেন। তার পাশের ছেলেটারও একই অবস্থা করলেন। এর পর ছিলাম আমি, স্যার আমার দিকে এগিয়ে আসতেই আমি বললাম যে আমরা সবাই তো ক্লাসের ভেতর, আমাদের টিফিন সব এখানেই, আমরা ফেলিনি, শুনেই স্যারের হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন " তুই ফেলেছিস, আমি জানতাম তুই ফেলেছিস, খানকীর পুলা অফিসারের বাচ্চা, তোর দ্বারাই সম্ভব এই কাজ", বলে পেটাতে লাগলেন।

মেরে কেউ কাঁদাতে পারেনি আমাকে। বাবা ছোটবেলায় ভাঙার মত যাবতিয় জিনিস ভেঙে ফেলেছিলেন পিঠে, কাঁদিনি, সেদিনও ঠায় দাঁড়িয়ে চিলাম। আমার সাদা শার্ট বেতের আঘাতে কেটে ছিড়ে গেল, রক্তে লাল হয়ে উঠিলো। স্যার ক্রমাগত মেরেই যাচ্ছেন আর বলছেন " আমার পা ধর, আমার পা ধর"। মানুষের ব্যাথা সহ্য করার একটা মাত্রা আছে, সেই মাত্রা পেড়িয়ে গেলে ব্যাথা আর লাগে না, আমি তখন সেই পর্যায়ে।

তখন নীচ থেকে আরও স্যারেরা এসে আজম স্যারকে থামালেন, টানতে টানতে নীচে নিয়ে গেলেন। আমি দিপককে ডায়াসের ফ্লোর থেকে উঠিয়ে কেমন করে যেন নীচে নেমে এলাম। পুরো শরীর অবশ তখন। এসে স্কুল মাঠের শেষ মাথায় গিয়ে বসে পড়লাম। দিপকের কান্না থামছে না দেখে দিলাম এক ধমক।

তখন দেখি আমার পেছন পেছন গোটা ক্লাস চলে এসেছে মাঠে। সে সময় টিফিন শেষের ঘন্টা দিলো। কিন্তু কেউ আর ক্লাসে ফিরে গেল না। সবাই চুপ, হতবাক সবাই। আমার সাদা সার্ট পুরো রক্তে ভেজা, কান কেটে গেছে বেতের আঘাতে, গাল ফুলে উঠেছে বিশ্রি ভাবে।

কেমন করে যেন খবরটা ছড়িয়ে গেল, দলে দলে লোক জড় হতে লাগলো আমাদের ঘিরে। কাকে বলে যেন একটা শার্ট আনালাম, সেটা গায়ে দিয়ে চলে গেলাম বাসায়। পরদিন সকালে স্কুলে গিয়ে দেখি আমাদের ক্লাসের ছেলেরা সারা স্কুলে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। আস্তে আস্তে টিচাররা এলেন, সবাই স্কুলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে, আমরা মাঠের অপর প্রান্তে, স্কুলের সব ছেলে বসে আছি। এসিসিট্যান্ট হেড স্যার সে সময় পুলিশে কল করেন।

তখন খবরটা ছড়িয়ে যায় অফিস পাড়ায়। বিকেলের দিকে স্কুল কতৃপক্ষের সাথে আমাদের কয়েকজনের কথা হয়। সেই হোটেলের সাথে টিফিন সাপ্লাইয়ের চুক্তি বাতিল করা হয়। আজম স্যারের কিছুই হয়না তখন। পরের সপ্তাহে আজম স্যারের হোটেলটা আর স্যারের বাসার সামনের প্রাইভেট পড়ানোর বড় ঘরটা কারা যেন ১০ লিটার পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়।

স্যারের মোটর সাইকেলটা জ্বালিয়ে দেয়া হয়। একদিন সকালে স্যারের কলেজ পড়ুয়া বদমাশ ছেলেটাকে কারা যেন পিটিয়ে রক্তাক্ত করে বাসার সামনে ফেলে রেখে যায়। ছেলেটার পরনের সাদা শার্টটাও রক্তে লাল হয়ে ছিল, কান কেটে গিয়েছিল, গালটা বিশ্রি ভাবে ফুলে উঠেহিল। এরপর আজম স্যার এলাকা থেকে পালিয়ে যান …

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।