আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রহস্যময় মহাবিশ্ব ও চিরন্তন জীবন জিজ্ঞাসা -৬

মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল! রহস্যময় মহাবিশ্ব ও চিরন্তন জীবন জিজ্ঞাসা -৬ --------------------------------------ডঃ রমিত আজাদ অপার রহস্যে ঘেরা আমাদের এই মহাবিশ্ব। আর তার মধ্যে রহস্যময় একটি সত্তা আমরা - 'মানুষ'। এই দু'য়ের সম্পর্কও কম রহস্যময় নয়। মহাবিশ্বের বিবর্তন বা বিকাশের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ ফলাফল মানুষ, সেই মানুষই আবার গভীর আগ্রহ নিয়ে অধ্যয়ন ও পর্যবেক্ষণ করছে তার চারপাশের মহাবিশ্বটিকে। কি এই মহাবিশ্ব? আমরা কারা? কি সম্পর্ক মহাবিশ্বের সাথে আমাদের অথবা আমাদের সাথে মহাবিশ্বের? কোথা থেকে এল এই মহাবিশ্ব? তারপর থেকে ক্রমাগত কি ঘটছে? এর শেষ কোথায়? এই সব প্রশ্ন অবিরাম ঘুরে ফিরে মানুষের মস্তিস্ক থেকে হৃদয় আর হৃদয় থেকে মস্তিস্ক পর্যন্ত।

এইসব চিরন্তন জীবন জিজ্ঞাসার যতটুকু উত্তর এ যাবতকাল আমাদের জানা হয়েছে দর্শন ও বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে। সেইসব উত্তর ধারাবাহিকভাবে দেয়ার চেষ্টা করব আমার এই সিরিজে। প্রথম পর্বে বস্তু (matter) সম্পর্কে কিছু আলোচনা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা করা হয়েছে গতি (motion) নিয়ে। তৃতীয় পর্বে আলোচনা করা হয়েছে স্থান ও কাল (space and time) নিয়ে, ইতিহাসের গতিধারায় নিউটন-লেইবনিজ বিতর্ক পর্যন্ত।

চতুর্থ পর্বে আলোচনা করা হয়েছে স্থান ও কাল সংক্রান্ত আলবার্ট আইনস্টাইনের বৈপ্লবিক চিন্তাধারা নিয়ে। পঞ্চম পঞ্চম পর্বের আলোচনা করা হয়েছে স্থান-কাল সংক্রান্ত আরো কিছু দর্শন নিয়ে। এবারের পর্বে আলোচনা করব বিশ্ব জুড়ে নানাবিধ সংস্কৃতি ও শিল্পের ক্যাটাগোরী হিসাবে স্থান ও কাল নিয়ে। প্রথম পর্বের আলোচনা নিম্নের লিংকে পাবেন Click This Link দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা পাবেন নীচের লিংক Click This Link তৃতীয় পর্বের আলোচনা পাবেন নীচের লিংকে Click This Link চতুর্থ পর্বের আলোচনা পাবেন নীচের লিংকে Click This Link পঞ্চম পর্বের আলোচনা পাবেন নীচের লিংকে Click This Link বিশ্ব জুড়ে নানাবিধ সংস্কৃতি ও শিল্পের ক্যাটাগোরী হিসাবে স্থান ও কাল বিশ্ব জুড়ে উদ্ভুত ও টিকে থাকা সকল সংস্কৃতির ভিত্তির সাথে স্থান ও কালের গভীর ও মৌলিক সম্পর্ক রয়েছে। এইভাবে, দুজন ভিন্ন ভিন্ন ব্যাক্তির স্থান ও কাল সম্পর্কে যদি ভিন্ন ভিন্ন ধারণা থেকে থাকে, তবে নিশ্চিত থাকুন যে, তাদের সংস্কৃতিগত দৃস্টিভঙ্গীও ভিন্ন ।

এখান থেকে উদ্ভুত হয় একটি নতুন সমস্যা বা প্রশ্নের: একটি নির্দিষ্ট স্থান-কালের সংস্কৃতিতে বসবাসকারী মানুষ কি করে ভিন্ন কাঠামোর অন্য একটি স্থান-কালের সংস্কৃতিকে বুঝতে পারবে? একজন এটা কেবলমাত্র তখনই করতে পারে যখন সে নিজস্ব সংস্কৃতির সুনির্দিষ্টতা (specifics) এবং অসার্বজনীনতা (Non-universality) বিমূর্ততার মধ্যে দিয়ে অনুধাবন করতে পারে। সাংস্কৃতিক সময় (Cultural time) বলতে আমরা এই বুঝব যে, কিছু ঘটনাবলীর (events) Standard movements যা মানুষের দ্বারা পূর্বনির্ধারিত, এবং ঘটনাগুলো ঘটেছে মানুষেরই তৈরী বিশেষ পরিবেশে। নানাবিধ সময়ে নানাবিধ মানুষ সৃষ্টি করেছে বিভিন্ন সাংস্কৃতি-কালীক আদর্শ (Cultural-temporal standards )। যার ফল হয়েছে বিভিন্ন যুগ ও মেটাযুগের (Epoch) পরিবর্তন, যা মূলতঃ ছিল একটি কালীক সংস্কৃতি থেকে আরেকটি কালীক সংস্কৃতিতে উত্তরণ। মানবজাতির ইতিহাসে আপাতঃদৃষ্টিতে তিন ধরনের সাংস্কৃতি-কালীক আদর্শ একে অপরকে পুনস্থাপিত করেছে - কাল কখনো বদ্ধ চক্র (Closed circle), কখনো বিন্দু (Point ), আবার কখনো রেখা (line)।

আসুন এই বিষয়ে এবার বিস্তারিত আলোচনা করা যাক। আধুনিক যুগের মানুষেরা মনে করে সাংস্কৃতিক সময় অতীত থেকে বর্তমান হয়ে ভবিষ্যতের দিকে যাচ্ছে। আবার আমাদের দূর পূর্বপুরুষরা যারা প্রাচীন সংস্কৃতিসমুহ সৃষ্টি করেছেন, তারা কালের সম্পুর্ণ ভিন্ন মডেল গ্রহন করেছিলেন। অস্ট্রেলীয় এ্যবরিজিন, প্রাচীন চীন, ও প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশে কালকে চক্রাকার ও বদ্ধ জ্ঞান করা হয়েছিল। এটা বলের অপেক্ষা রাখেনা যে, আধুনিক আমরা ও আমাদের পূর্বপুরুষেরা পৃথিবী নামক এই একই গ্রহের অধিবাসী।

তারপরেও তাদের বুঝতে পারা (Understanding ) ও সংস্কৃতিগত উপলদ্ধি (perception) ছিল আমাদের থেকে একেবারেই ভিন্ন। কালের চক্রাকার মডেল তৈরীর কারণ নিম্নরূপ হতে পারে। প্রথমতঃ তাদের দৈনন্দিন জীবনে তারা প্রতিদিন মুখোমুখী হতেন বিভিন্ন ঘটানাবলীর যারা ছিল চক্রাকার এবং দৈবাৎ (Random) অর্থাৎ অপরিক্রমশীল (Non-recurring)। দ্বীতিয়তঃ কিছু ঘটনাবলী আছে যারা Non-recurring ফলতঃ সহজে মনে রাখার মত নয়। এই কারণে তাদেরকে বোঝাও শক্ত ছিল।

অপরপক্ষে, দিন ও রাতের অবিরাম পরিক্রমা (recurrence), চক্রাকারে চাঁদের কলার পূর্ণতা ও ক্ষয়। জোয়ার ভাটার চক্র, ঋতুচক্র, ইত্যাদি অসংখ্য প্রাকৃতিক চক্র ছিল তাদের কাছে সহজে অনুধাবনযোগ্য। এ কথা সকলেই জানি যে, প্রাচীন যুগের মানুষের সময় পরিমাপের জন্য আধুনিক যুগের মত এত সুক্ষ্ম যন্ত্রপাতি ছিলনা। তাই অনিবার্য্যভাবেই তাদেরকে নির্ভর করতে হতো biological time-এর উপর। (আমার দাদার দেরাজ নামের একজন ভৃত্য ছিলেন, আমি তাকে প্রশ্ন করা মাত্রই তিনি ঘড়ি না দেখেই নিখুঁতভাবে সময় বলে দিতেন, এটা পারতেন কারণ তিনি তার দেহের অভ্যন্তরস্থ biological time-এর সাহায্য নিতেন)।

চক্রাকার সময়ে ভবিষ্যৎ অজানা কিছু নয়। অবাক হবার কিছু নাই যে প্রাচীন ভাষাগুলোতে 'ভবিষ্যৎ' বলে কোন শব্দ ছিল না, ছিল কেবল অতীত ও বর্তমান । 'ভবিষ্যৎ' শব্দটির উদ্ভব অনেক পরে। চক্রাকার সময় মডেলের ছাপ আধুনিক যুগেও আছে। যেমন আমরা প্রতি বছর জন্মদিন পালন করি।

ঐদিনটি এমনভাবে উদযাপন করি যেন সে নতুন কেউ, আজই জন্ম নিল। অথবা নববর্ষকে এমনভাবে বরণ করি যেন সবকিছুই নতুনভাবে শুরু হতে যাচ্ছে। আবার প্রাচীন মিশরীয়রা সূর্য ও চন্দ্রগ্রহন হিসাব করতে পারত না। প্রতিটি গ্রহণই তাদের কাছে ছিল অপ্রত্যাশিত। উল্কাপাতের মতই ভয়ংকর এবং দৈবাৎ।

তাই তারা সূর্য ও চন্দ্রগ্রহনকে ভয় পেত। তা তাদের মনে কঠিন অনুরণন সৃষ্টি করত। ইউরোপ মহাদেশের মানুষ বহু শতাব্দী যাবৎ বুঝতে পারেনি যে কোন পথ (route) ধরে ঘটনাবলী চলমান। এবং তারা গঠন করতে ব্যর্থ হয়েছিল উপযোগী একটি Time Matrix , যেখানে সবগুলো ঘটনাবলীকে একটি ধারাবাহিকতায় রাখা যেতে পারে । ফলে যেকোন ঘটনাকেই বর্তমানে ঘটেছে বলে ধরে নিতে হয়েছে।

এটাই হলো 'point time'। (উদাহরণস্বরূপ, আমাদের দেশে কিছু মানুষ আছে যারা বর্তমানকেই সবকিছু মনে করে যাবতীয় দুর্নীতি করে থাকে, ভবিষ্যৎের কথা ভাবেই না। ) এটাকে সময়ের punctate idea-ও বলে। প্রাচীন গ্রীকদের সংস্কৃতি সময়ের punctate idea দ্বারা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত ছিল। গ্রীকরা universally extended time-কে কল্পনা করতে পারত না।

এটাকে এইভাবে উপমা টেনে ব্যাখ্যা করা যায় যে, একটি ফুটবল ম্যাচের প্রথমার্ধের পর ফলাফল যদি হয় ৪:০। আমরা স্পস্টই বুঝতে পারি যে চূড়ান্ত ফলাফল কি হবে। একজন প্রাচীন গ্রীকের কাছে এই ৪:০ স্কোর কোন অর্থবহন করেনা। তার মতে বাকী অর্ধাংশের পর যেকোন ফলাফলই হতে পারে, তার সাথে প্রথমার্ধের কোনই সম্পর্ক নাই। কালের যেকোন মুহূর্তে ঘটনা যেকোন দিকেই মোড় নিতে পারে।

এটাই হলো কালের punctate approach । (চলবে) পরবর্তী পর্বে স্থানের সাথে সংস্কৃতি ও শিল্পের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলব। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।