আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের অবৈজ্ঞানিক গ্রেডিং সিস্টেম বনাম আমেরিকান গ্রেডিং সিস্টেম।

গালাগালি পাঠাতে srsnipun@gmail.com ফেসবুকে আমি http://www.facebook.com/mrlazy4200 প্রতিবারই এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলে গ্রেডিং পদ্ধতি নিয়ে দুই ধরনের আলোচনা আরম্ভ হয়। এক ধরনের আলোচনায় শিক্ষার্থীদের কৃতিত্বকে ফোকাস করা হয়; অন্য ধরনের আলোচনায় গ্রেডিং পদ্ধতির সমালোচনার পরিমাণটা বেশি থাকে। স্বভাবতই দ্বিতীয় ধরনের আলোচনায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা কম থাকে। এখানে যে বিষয়টি উল্লেখযোগ্য তা হচ্ছে- যারা বর্তমান গ্রেডিং পদ্ধতির সমালোচনা করছেন, তাদের অনেকেই গ্রেডিং পদ্ধতির খুঁটিনাটি বিষয়গুলো জানেন না। কিন্তু তারা তাহাদের স্বাভাবিক প্রজ্ঞা থেকে বুঝতে পারেন, বর্তমান গ্রেডিং পদ্ধতি মোটেই কার্যকর কিছু না।

এর দ্বারা শিক্ষার্থীদের যথাযথ মূল্যায়ন সম্ভব হচ্চে না। বর্তমানে গ্রেডিং পদ্ধতি কীরকম এবং কোন গ্রেডে কত পয়েন্ট, সেগুলো সবাই জানে। ফলে সেগুলো আর এখানে বিস্তারিত উল্লেখ করার প্রয়োজন দেখি না। ইদানিংকালের গ্রেডিং নিয়ে আলোচনা বা সমালোচনাগুলো লক্ষ কলে দেখা যায়, সবাই মূলত দৃষ্টি নিবন্ধ করিতেছেন হাজার হাজার শিক্ষার্থীর জিপিএ ৫ বা এ+ পাওয়ার ওপর। খুব কম সংখ্যকই মানুষই আগের মার্কিং সিস্টেমের সাথে বর্তমান গ্রেডিং পদ্ধতির তুলনা করে দুটির পার্থক্য দেখিয়েছেন।

আসলে সত্য কথা হচ্ছে , আগের মার্কিং পদ্ধতির সাথে বর্তমান গ্রেডিং পদ্ধতির মৌলিক কোনো পার্থক্য নাই, কেবল ফলাফলের প্রকাশভঙ্গী ছাড়া। ৮০-এর উপরে নম্বর পেলে আগে যেখানে লেটার মার্কস বলা হতো, এখন সেইখানে বলা হচ্ছে জিপিএ ৫। অর্থাৎ শুধু মূল্যায়নের স্কেলটি পরিবর্তিত হয়েছে। ৮০-কে এখন পাঁচ বা এ+ বলা হচ্চে- এর বেশি কিছু না। এ ছাড়া আগের তিনটি বিভাগকে ভেঙে এখন ইংরেজি লেটারে সেটিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

এইভাগ আসলে এক ধরনের আইওয়াশ। শিক্ষাক্ষেত্রে মৌলিক কোনো পরিবর্তন না এনে এবং মূল্যায়ন পদ্ধতির ভিত্তি পরিবর্তন না করে এইভাবে গ্রেড পয়েন্ট দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা আসলে নাই। শুধু উন্নত বিশ্বের সাথে নিজেদের ফলাফলটাকে মূল্যায়ন করা ছাড়া এর আর কোনো প্রায়োগিকতা নাই। অথচ গ্রেডিং পদ্ধতির উৎসমূল ভিন্ন এবং চমৎকার। আমাদের দেশের প্রচলিত গ্রেডিং পদ্ধতির সাথে এটার মিল সামান্যই।

আমেরিকার গ্রেডিং স্কেল জানেন?? Grade Percentage A+ 97.00–100.00 A 93.00-96.99 A- 90.00-92.99 B+ 87.00-89.99 B 83.00-86.99 B- 80.00–82.99 C+ 77.00-79.99 C 73.00-76.99 C- 70.00-72.99 D+ 67.00-69.99 D 63.00–66.99 D- 60.00-62.99 F 0.00-59.99 এই পদ্ধতিতে হিসাব করলে প্রতিটি শিক্ষার্থীর যথাযথ মূল্যায়ন সম্ভব। কিন্তু, আমাদের দেশের গ্রেডিং পদ্ধতি আসলে শিক্ষার্থীর যথাযথ মূল্যায়ন করিতে সক্ষম না। আরেকটি গ্রেডিং সিস্টেম আছে যার নাম রিলেটিভ গ্রেডিং। আমি নিজেও খুব ভালো বুঝিনা কিন্তু একটি উদাহরনের মাধ্যমে অনেকটা ক্লিয়ার করা যায়। একটি শ্রেণীতে ১০০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে এবং তারা গণিত পরীক্ষায় গড়ে ৮০ পেয়েছে।

প্রচলিত পদ্ধতিতে সবাই এ+ পাইছে। কিন্তু এই পদ্ধতিতে এই গড় মানটিকেই ধরা হবে বি+। এটি নির্ণয়ের জন্য কিছু গাণিতিক সূত্র রয়েছে। এই সূাত্রানুসারে, মোট পরীক্ষার্থী, শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত গড় মান, শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মান এবং শিক্ষার্থীদের নম্বরপ্রবণতা ইত্যাদি কিছু বিষয়কে হিসেবের আওতায় আনা হয়। এই উদাহরণে মোট শিক্ষার্থী ১০০, গড় নম্বর ৮০, সর্বনিম্ন নম্বর ৩০ এবং সর্বোচ্চ নম্বর ১০০, নম্বরপ্রবণতা ৭৫ থেকে ৮৬-কে ভিত্তি ধরে হিসেব করলে ৮০ নম্বর হবে বি+ এর সমতুল্য।

এর চাইতে ৩ নম্বর যে বেশি পাবে, তাহার গ্রেড হইবে এ-/এ (যে যেভাবে ধরতে চান)। ৩ নম্বর কম হলে পাবে বি। এ লেভেল এবং ও লেভেল এর রেজাল্ট আমি যতদুর জানি এই সিস্টেমে দেওয়া হয়। [উল্লেখ্য, একটি গ্রেডের সাথে আরেকটি গ্রেডের মধ্যকার নম্বরের পার্থক্য কতো হবে, হিসাবনিকাশের ভিত্তিতে তাও এই সূত্রই বলে দিবে। ] পুরা বিষয়টি ভালো করে বুঝতে পিডিএফ ফাইলটি নামিয়ে নিন।

এই সিস্টেমে সত্যিকার অর্থে শিক্ষার্থীর মেধা ও অবস্থা মূল্যায়ন করা সম্ভব। কিন্তু এই সিস্টেমের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। সব চাইতে বড় সমস্যা হল, এই সিস্টেম ক্ষুদ্র পরিসরে করা সম্ভব। কিন্তু বড় পরিসরে তা করা অনেক দুরহ। সারা দেশব্যাপী এত বিপুল সংখ্যক ছাত্র ও পরীক্ষককে রিলেটিভ গ্রেডিংয়ের আওতায় আনলে তা কোনোমতেই ফেয়ার হবে না।

এখানে পরীক্ষকের মূল্যায়ন দক্ষতাও কোনো কাজে আসবে না। মনে করেন, আমি এবং আপনি দুইজনই মূল্যায়নে দক্ষ পরীক্ষক। এখন আমি যাদের উত্তরপত্র দেখবো, দেখা গেলো কেউই ৮০ পায় নি, তখন আমার কাছে মনে হবে প্রশ্ন খুব টাফ হয়েছে। অতএব, যে ছেলেটা ৭৮ পেয়েচে, তাকেই এ+ দিয়ে শুরু করি। অন্যদিকে আপনার কাছে যারা, তারা দেখা গেলো ৯০ এড় ওপরেই পেয়েছে ৪০% ছাত্রছাত্রী!! তখন?? তাই এই সিস্টেমও আসলে চালু করা সম্ভব নয়।

তাই সব দিক বিবেচনা করে, আমার মতে আমাদের প্রচলিত গ্রেডিং পয়েন্ট এর দুইটি গ্রেডের মধ্যকার নাম্বারের পার্থক্য কমিয়ে এনে মূল্যায়ন করা উচিৎ। আমাদের সরকারের উচিৎ নিজেদের সময় রেজাল্ট ভালো তা না দেখিয়ে আমেরিকান স্টাইল ফলো করা উচিৎ। এতে করে ১ নম্বরের জন্য কোন ছাত্র ছাত্রী অনেক বেশি পিছিয়ে যাবে না আবার, ১৯ নম্বর কম পেয়েও কোন ছাত্র-ছাত্রী একই রেজাল্ট করবেনা। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।